Ajker Patrika

‘শুধুমাত্র দু-বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই’ 

গোলাম ওয়াদুদ, ঢাকা
আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০২২, ১৭: ৪১
‘শুধুমাত্র দু-বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই’ 

‘শুধুমাত্র দু-বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই’—এমন লেখা সংবলিত একটি পোস্টার দুই দিন হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ঘুরছিল। বলা যায় পোস্টারটি ফেসবুকে একপ্রকার ভাইরাল হয়ে গেছে। 

টিউশনির জন্য এমন একটি পোস্টার লাগিয়েছেন বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের শিক্ষার্থী মো. আলমগীর কবির। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। এখন লড়াই করে যাচ্ছেন চাকরির জন্য। জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে কৃষক পরিবারে তাঁর জন্ম। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। 

আলমগীর কবির তাঁর পোস্টারে লিখেছেন, ‘শুধুমাত্র দু-বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই।’ সকাল ও দুপুরের খাবারের বিনিময়ে তিনি পড়াবেন। এ ছাড়া তিনি লিখেছেন, প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত গণিত ব্যতীত সবকিছুই পড়াবেন। সেই পোস্টারে নিজের পেশা হিসেবে লিখেছেন ‘বেকার’। এতে তাঁর নাম ও মোবাইল নম্বর দেওয়া আছে। 

আলমগীর কবিরের সঙ্গে কথা হয় আজকের পত্রিকার। নিজের পোস্টারটি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনের তাগিদে এই পোস্টার লাগিয়েছি। আমার বন্ধুদের অনেক দিন হলো টিউশনির কথা বলছি, কিন্তু তারা দিতে পারছে না। এর মধ্যে আমি একটা টিউশনি পাই। সেখানে দেড় হাজার টাকা বেতন দেয়। কিন্তু এই টাকা দিয়ে হয় না। আমার পরিবারের অবস্থাও ভালো না।’ 

কবির বলেন, ‘আমি চাচ্ছিলাম নিজে কিছু একটা করি। আমার এই টাকা দিয়ে হচ্ছে না। আমাকে মাঝেমধ্যেই ঢাকায় যেতে হয়, পরীক্ষা দিতে। আমার কিছু জমানো টাকা ছিল, যা দিয়ে বেশ কয়েকবার ঢাকায় গিয়ে পরীক্ষা দিয়েছি। এখন ধার-দেনা করে চলছি। অনেক ঋণের মধ্যে আছি আমি। গত মাসে একাধিকবার (বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষার) ভাইভা দিতে ঢাকায় যেতে হয়েছে। অনেক টাকা খরচ হয়েছে।’ 

দুই বেলা ভাতের বিনিময়ে যিনি পড়াতে চান, সেই আলমগীর থাকেন কোথায়? মেসে? না, একটি বাসায়। আগে মেসে থাকতেন। কিন্তু চলতে কষ্ট হচ্ছিল। মেসে থাকা-খাওয়ার জন্য তো অনেক টাকা দরকার। তিনি তখন চাকরির কোচিং করতেন। তাঁর সঙ্গে একটি মেয়ে পড়তেন। তাঁদের বাসা তাঁর মেসের পাশেই ছিল। ওই মেয়ের পরিবার সেখানে বেশি থাকে না। এখানে সব ভাড়া দিয়ে তাঁরা ঢাকায় থাকেন। কবির সেই মেয়েকে তাঁদের বাসায় থাকার ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করেন। মেয়েটি তাঁর বাবার সঙ্গে কথা বলতে বলেন কবিরকে। তাঁর বাবার সঙ্গে কথা বললে তিনি কবিরকে থাকার জায়গা দেন। সেখানেই এখন থাকেন তিনি। তাই মাথার ওপর একটা ছাদ থাকলেও তিন বেলা খাবারের সংস্থান নেই তাঁর। এ জন্যই তাঁর এই বিজ্ঞাপন। 

একটা চাকরির জন্য বন্ধুদের কাছ থেকে ধার করে টাকা জোগাড় করে আলমগীর কবির ছুটে বেড়ান এদিক-ওদিক। সরকারি চাকরির বয়স চলে গেছে করোনার শুরুর বছরই। ২০২০ সালের আগ পর্যন্ত সরকারি চাকরির জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন, যেমনটা করেন বাংলাদেশের আর দশটা শিক্ষিত তরুণ। কিন্তু সেই তরুণদের মধ্যে সফল গুটিকয়েকের একজন হতে পারেননি আলমগীর কবির, যেমন অধিকাংশই পারেন না। সোনার হরিণ সরকারি চাকরি তো আর সবার ভাগ্যে জোটে না। কেন জোটে না। শুধুই কি যোগ্যতার অভাব? আলমগীর কিছুটা বলেন, অনেকটাই বলেন না। শুধু ইঙ্গিতে বোঝান নিয়োগে আর্থিক লেনদেন, পরিচয়, লবিং ইত্যাদি নানা বিষয়ের কথা। কিন্তু বলেন না। শুধু বলেন, সরকারি চাকরি হলো না। বেসরকারি চাকরিই ভরসা এখন। কিন্তু সেখানেও। 

আলমগীর ডাক পান বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে। তারা ভাইভা নিতে ডাকে। আর ধারদেনা করে রাজধানীর উদ্দেশে ছোটেন আলমগীর। কিন্তু বরাবরের মতোই তাঁকে ফিরতে হয় শূন্য হাতেই; কোনো নিয়োগপত্র ছাড়াই। এই দুঃসময় পাড়ি দিতে অন্য সব মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের তরুণদের মতো তাঁরও ভরসা টিউশনি। ঘরে ঘরে গিয়ে স্কুল বা কলেজের শিক্ষার্থী পড়িয়ে এ দেশের কত তরুণ যে নিজেকে বিরুদ্ধ স্রোতে টিকিয়ে রাখেন, তা বলবার নয়। আলমগীরও সেভাবেই চেষ্টা করছেন। কিন্তু পেরে উঠছেন না। একটি টিউশনি থেকে পাওয়া টাকায় নিজে চলা কঠিন হয়ে পড়েছে। না খেয়েও থাকতে হচ্ছে কখনো কখনো। আর এমন বাস্তবতা থেকেই এ ধরনের পোস্টারের চিন্তা মাথায় আসে। 

আলমগীর কবির বলেন, ‘আমি যেখানে টিউশনি করাই, সেখানে রাতে নাশতা দিত। আমি তাদের বলেছিলাম, রাতে নাশতা না দিয়ে একটু ভাত দিতে; তাহলে আমার রাতে খাবারের চিন্তাটা থাকবে না। তো রাতের খাবারের ব্যবস্থা তো হলোই। এখন চিন্তা ছিল সকাল ও দুপুরের খাবারের। যেহেতু টিউশনি পাচ্ছি না। আর দেড় হাজার টাকায় নিজের হাত খরচ ও সকাল-দুপুরের খাবার জোগাড় সম্ভব না। আমি অনেক দিন না খেয়েও থেকেছি। রাতে গিয়ে ছাত্রের বাসায় খেয়েছি।’ 

কথাগুলো হয়তো খুব সহজে পড়ে যাওয়া গেল, কিন্তু এই কথা আলমগীরের পক্ষে বলাটা সহজ ছিল না। আর এর যে উৎস সেই অভাব ও ক্ষুধার অভিজ্ঞতা তো একেবারেই সহজ নয়। এই কঠিন বাস্তবতার কথা বলতে গলা ধরে আসছিল আলমগীর কবিরের। তিনি বলেন, ‘উপায় না পেয়ে আমি দুই বেলা খাবারের বিনিময়ে টিউশনি করার সিদ্ধান্ত নিই। এর পর এই পোস্টার লাগাই। আমি পোস্টার বেশি লাগাইনি। যেখানে থাকি, সেই গলিতে ৮-১০টা পোস্টার লাগিয়েছি, যাতে বাসার পাশে এক-দুইটা বাচ্চাকে পড়াতে পারি। আমার দুবেলা খাবারও হবে, আর যে টাকা পাব তাতে কোনোমতে হাতখরচ হবে।’ 

বেকারত্ব নিয়ে খুব একটা বাজে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন আলমগীর কবির। নিজের হতাশার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি বেশ কয়েক দিন হলো খুব ডিপ্রেসড। অনেক দিন হলো নিজের চলার জন্য টিউশনি খুঁজছি; পাচ্ছি না। বন্ধুরা নানা কথা বলে। কেউ তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে, গার্মেন্টসে কাজ করতে বলে। এসব কিছু থেকেই আমি এই পোস্টারটি করি।’ 

আগেই বলা হয়েছে আলমগীর কবির সরকারি চাকরির জন্য পড়ালেখা করেছেন। ২০২০ সালে তাঁর সরকারি চাকরির বয়স শেষ হয়ে যায়। এরপরই তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। সঙ্গে যোগ হলো করোনা এবং সেই সূত্রে বাবার অসুস্থতা। বললেন, ‘করোনা এসে আমার জীবন আরও কষ্টের করে তুলেছে। বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছিল করোনার প্রথম দিকে। তাঁর তো সামর্থ্য নেই। যা ছিল, তা দিয়ে নিজের চিকিৎসা করিয়েছেন। এখন কোনোমতে বেঁচে আছেন। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে আমিই ছোট।’ 

এমন পরিস্থিতিতে বন্ধুবান্ধবের কথায় হোক বা নিজের ইচ্ছাতেই হোক অনেকটা নিরুপায় হয়েই গার্মেন্টস কারখানায় যোগ দেন আলমগীর কবির। অবশ্য সেটা সরকারি চাকরির বয়স শেষ হওয়ার পরের ঘটনা। কিন্তু সে চাকরির অভিজ্ঞতা তাঁর ভালো হয়নি। তিনি বলেন, ‘কিছুদিন একটি গার্মেন্টসে কাজ করেছি। কিন্তু খুব ছোট পোস্টে। আমি স্নাতকোত্তর পাস করা একজন ছেলে। কিন্তু আমার সঙ্গে যে ভাষায় তারা কথা বলত, তা মানতে পারিনি। পরে সেটা ছেড়ে দিছি।’ 

এখন কী করছেন তাহলে? শুধু টিউশনি? না আলমগীর কবির এখন টিউশনি করছেন ঠিক, সঙ্গে বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির আবেদন করছেন। কবির বলেন, ‘বেসরকারিতে আবেদন করলে তারা ভাইভাতে ডাকে। টাকা খরচ করে ঢাকায় গিয়ে ভাইভা দিই। তারা বলে, অভিজ্ঞতা নেই এটা-সেটা। চাকরি না দিলে অভিজ্ঞতা কোথায় পাব। আমি গ্রামের ছেলে; তারপর আবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়া। সব মিলিয়ে নানা বিড়ম্বনা।’ 

আলমগীর কবির বলেন, ‘আমার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আর পারছি না। বেকারত্ব যে কত কষ্টের, তা বলে বোঝাতে পারব না। এই বয়সে বাবার কাছ থেকে টাকা চাইতেও লজ্জা করে। আর পরিবারের যে অবস্থা, আমাকে কিছু দিতেও পারবে না তারা।’ নিজের উদাহরণ টেনেই তিনি বলেন, ‘একজন কবির সারা দেশের বেকারদের প্রতিচ্ছবি। আমাকে তো বাঁচতে হবে।’

পোস্টারের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই তাঁকে ফোন দিয়েছেন, সহায়তা করতে চেয়েছেন। এই ছবির নিচে করা মন্তব্যে একেকজন একেক কথা বলেছেন। কেউ কেউ তাঁকে ফোন দিয়ে সহায়তা করতে চেয়েছেন। কিন্তু আলমগীর কবির কারও করুণা চান না। বললেন, ‘আমাকে অনেকে ফোন দিয়ে বলেন, “বিকাশ নম্বর দেন; টাকা পাঠাই কিছু। ” কিন্তু আমি তো দান পাওয়ার জন্য এই পোস্টার দিইনি। সিমপ্যাথি চাই না। আমাকে কাজ দিন। আমাকে আপাতত একটি টিউশনি দিন। আমাকে ভালোভাবে বাঁচার ব্যবস্থা করে দেন। দান চাই না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আশুগঞ্জ সার কারখানায় উৎপাদন চালুর দাবিতে শ্রমিক-কর্মচারীদের বিক্ষোভ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করে আবার উৎপাদন শুরুর দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। আজ বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকালে কারখানার সামনে সার কারখানা শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন এই কর্মসূচি পালন করে।

গত ১ মার্চ আশুগঞ্জ সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয় বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃপক্ষ। এর ফলে প্রতিদিন ১ হাজার ১০০ টনের বেশি ইউরিয়া উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, যার বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা।

আশুগঞ্জ সার কারখানা শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. বজলুর রশিদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন সার কারখানার উপমহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) তাজুল ইসলাম ভূঁইয়া, শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আবু কাউসার, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হারুনুর রশিদ, সার কারখানা শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক সাদী মো. তানভীর রহমান প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, গুণগত মানসম্পন্ন হওয়ায় আশুগঞ্জ সার কারখানার ইউরিয়ার চাহিদা বেশি। কারখানাটি চালু রাখতে পারলে সরকারের লাভ। কিন্তু একটি কুচক্রী মহল বিদেশ থেকে সার আমদানির মাধ্যমে কমিশন-বাণিজ্য করতে বছরের বেশির ভাগ সময় আশুগঞ্জ সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখে। এতে কারখানাটি দিন দিন অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। অবিলম্বে গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে সার উৎপাদন চালু না করলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধের হুঁশিয়ারি দেন বক্তারা। সমাবেশ শেষে সার কারখানা চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামপুরে বিএনপিতে কোন্দল: যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দুই পক্ষের পৃথক শোভাযাত্রা

এম কে দোলন বিশ্বাস, ইসলামপুর
ইসলামপুরে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ এস এম আব্দুল হালিম। ছবি: আজকের পত্রিকা
ইসলামপুরে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ এস এম আব্দুল হালিম। ছবি: আজকের পত্রিকা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশাকে কেন্দ্র করে জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলা বিএনপিতে অন্তর্কোন্দল বাড়ছে।

দলটির সহযোগী সংগঠন যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতেও এই দলীয় কোন্দলের ছাপ ধরা পড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) যুবদলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ইসলামপুর উপজেলা ও পৌর যুবদলের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ ও শোভাযাত্রা করা হয়।

সমাবেশ ও শোভাযাত্রায় এক পক্ষে নেতৃত্ব দেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য সুলতান মাহমুদ বাবু। অন্য পক্ষে নেতৃত্ব দেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের (বিএইচবিএফসি) চেয়ারম্যান এ এস এম আব্দুল হালিম।

যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ঘিরে গতকাল বিকেলে ৫টার দিকে ইসলামপুর উপজেলা ও পৌর বিএনপির ব্যানারে ইসলামপুর কেন্দ্রীয় অডিটরিয়াম মাঠ থেকে একটি শোভাযাত্রা বের করেন দলটির একাংশের নেতা-কর্মীরা। শোভাযাত্রাটি পৌর শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে থানা মোড় বটতলা চত্বরে এসে শেষ হয়। সেখানে সমাবেশ করেন নেতা-কর্মীরা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ এস এম আব্দুল হালিম। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি নবী নেওয়াজ খান লোহানী বিপুল, পৌর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জয়নাল আবেদীন সরকার এবং পৌর যুবদলের সভাপতি এনামুল করিম ডেভিড।

এর আগে দুপুরে যুবদলের উপজেলা ও পৌর শাখার আয়োজনে পৌর শহরের সিরাজাবাদ রোডে উপজেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি পৌর এলাকার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় দলীয় কার্যালয়ে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে এক আলোচনা সভা হয়। এতে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য সুলতান মাহমুদ বাবু।

উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক শেখ হেলাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুদুজ্জামান লুলুর সঞ্চালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নবাব, সিনিয়র সহসভাপতি মিজানুর রহমান খান শাহীন, সহসভাপতি এ কে এম শহিদুর রহমান, পৌর বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম ঢালী, গাইবান্ধা ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি নাজমুল হাসান ফেরদৌস। এতে উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও পৌর যুবদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।

যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠানের নেতৃত্বদানকারী দুই নেতাই আগামী নির্বাচনে জামালপুর-২ ইসলামপুর আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন চান। এ ছাড়া মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের ছোট ভাই ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম খান ফরহাদ এবং ছাত্রদল ও যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য, উপজেলা বিএনপির সদস্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী মোহাম্মদ সেলিম মিয়া। তাঁরাও মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আর্কষণ করতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দলীয় কর্মসূচি পালন করছেন।

পৃথকভাবে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন প্রসঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ এস এম আব্দুল হালিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলের কর্মসূচি পালন করতে পারলে ভালো। তবে গণতান্ত্রিক দেশে একটি দলের মধ্যে পৃথক পৃথকভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন হতেই পারে।’

ইসলামপুরে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য সুলতান মাহমুদ বাবু। ছবি: আজকের পত্রিকা
ইসলামপুরে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য সুলতান মাহমুদ বাবু। ছবি: আজকের পত্রিকা

উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য সুলতান মাহমুদ বাবু বলেন, ‘আমি প্রায় চার দশক ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এখানকার বিএনপির নেতৃত্বে দলের পক্ষ থেকে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলের কাজ করতে আমাদের ঘাটতি নেই। সবাই এক ব্যানারে দলের কর্মসূচি পালন করার মধ্যে আনন্দই আলাদা। অনুষ্ঠানে সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু কেউ যদি আলাদাভাবে দলের কর্মসূচি পালন করেন, এ ক্ষেত্রে কী করার থাকে।’

প্রসঙ্গত, দলীয় অন্তর্কোন্দলের মুখে গত ৩ সেপ্টেম্বর উপজেলা ও পৌর বিএনপির ব্যানারে পৃথক সমাবেশ ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়। এতে এক পক্ষে নেতৃত্ব দেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি সুলতান মাহমুদ বাবু। অন্য পক্ষে নেতৃত্ব দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ এস এম আব্দুল হালিম। এ ছাড়া আরেকটি পক্ষে নেতৃত্ব দেন ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম খান ফরহাদ। এ নিয়ে ৩ সেপ্টেম্বর আজকের পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে খবর প্রকাশিত হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে যুবককে সাজা, ভেকু মেশিন জব্দ

ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি  
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় উপজেলা প্রশাসন। ছবি: আজকের পত্রিকা
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় উপজেলা প্রশাসন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে মো. হৃদয় আহমেদ (২৬) নামের এক যুবককে অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় বালু তোলার কাজে ব্যবহৃত একটি এক্সকাভেটর (ভেকু মেশিন) জব্দ করা হয়।

গতকাল মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত উপজেলার কানিহারী ইউনিয়নের জিলকী বটতলা এলাকায় উপজেলা প্রশাসন এই অভিযান চালায়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন ত্রিশাল উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমান।

সাজাপ্রাপ্ত হৃদয় জিলকী বটতলা এলাকার মো. হেলাল উদ্দিনের ছেলে। ভ্রাম্যমাণ আদালত তাঁকে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ অনুযায়ী ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন।

এসি ল্যান্ড মাহবুবুর রহমান বলেন, জনস্বার্থে এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে, যাতে পরিবেশ ও নদী রক্ষা করা যায় এবং অবৈধ বালু উত্তোলন সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গোপনে সহপাঠীদের অপ্রীতিকর ছবি তুলে সিনিয়র ভাইকে পাঠাতেন বাকৃবি ছাত্রী

বাকৃবি প্রতিনিধি 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) এক ছাত্রীর বিরুদ্ধে গোপনে নারী সহপাঠীদের ছবি তুলে এক সিনিয়র ছাত্রের কাছে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে।

গতকাল মঙ্গলবার ওই ছাত্রীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে ডিনের সঙ্গে বৈঠক করেন অভিযোগকারীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত ছাত্রী বাকৃবি থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। তিনি তাঁর নারী সহপাঠীদের ঘুমন্ত বা ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি গোপনে মোবাইল ফোনে তুলতেন। তাঁর কাছ থেকে যিনি ছবিগুলো গ্রহণ করতেন, তিনি ওই ছাত্রী যে বিভাগে পড়েন, সেই বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র এবং বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার হিসেবে কর্মরত।

ওই ছাত্রী অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন ডিন অধ্যাপক ড. মো. আবদুল মজিদ। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা অভিযোগ নিয়ে আমার কাছে আসে। আমরা অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর মোবাইল ফোন পরীক্ষা করে ছবি আদান-প্রদানের প্রমাণ পাই। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি স্বীকার করেন যে তিনি মেয়েদের বিভিন্ন ছবি তুলতেন এবং তা এক সিনিয়র ভাইয়ের কাছে পাঠাতেন।’ তিনি আরও বলেন, বর্তমানে মোবাইলটি সিলগালা অবস্থায় ডিন অফিসে সংরক্ষিত রয়েছে। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ ও নিরোধ কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হবে।

অভিযুক্ত সিনিয়র শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি মেয়েটির সঙ্গে দীর্ঘদিন কথা বলেছি। সে যেসব ছবি পাঠিয়েছে, আমি তা সংরক্ষণ করিনি। আমার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না; তবে আমি আমার কাজের জন্য অনুতপ্ত। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যা সিদ্ধান্ত নেবে, আমি তা মেনে নেব।’

অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর সহপাঠীদের ভাষ্য, ইন্টার্নশিপ চলাকালে ওই ছাত্রীর সন্দেহজনক আচরণ লক্ষ করে তাঁরা তাঁকে নজরদারিতে রাখেন। পরে নিশ্চিত হন যে ওই ছাত্রী মেয়েদের ঘুমন্ত বা অপ্রস্তুত অবস্থার ছবি তুলতেন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পর তাঁরা বিভাগীয় শিক্ষকদের অবহিত করেন এবং কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত