Ajker Patrika

পুরোনো বেতার ভবন পরিত্যক্ত

মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মৃত্যু’ বেতার ঐতিহ্যের

  • বেতারের শাহবাগের এই ভবন ২০১৮ সালের এপ্রিলে তৎকালীন বিএসএমএমইউকে হস্তান্তর করা হয়।
  • এটি এখন প্রায় পরিত্যক্ত ভবন। বেতারের স্মৃতি-ঐতিহ্যের কিছুই আর অবশিষ্ট নেই।
  • নিচতলায় জরাজীর্ণ কক্ষগুলোতে থাকছেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আনসার সদস্যরা।
শরীফ নাসরুল্লাহ, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ইতিহাস, ঐতিহ্য আর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বাংলাদেশ বেতারের পুরোনো সদর দপ্তর ভবন। রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত এই ভবনের অবস্থা এখন করুণ। বেতারের স্মৃতি-ঐতিহ্যের কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। প্রায় পরিত্যক্ত এই ভবন এখন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (সাবেক বিএসএমএমইউ/পিজি) জন্য কাজ করা আনসার সদস্যদের বাসস্থান।

৭ বছর আগে খাসজমিসহ এই ভবন বিএসএমএমইউকে হস্তান্তরের সময় শর্ত ছিল, বেতারের জিনিসপত্র সংরক্ষণ করে এই স্থাপনা কাজে লাগাবে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু তা করা হয়নি।

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নোমান মোহাম্মদ মোছলেহ উদ্দীন বলেন, ‘আমাদের যে ভবনটি দেওয়া হয়, যদিও কাগজে-কলমে লেখা আছে, এটি সংরক্ষণ করতে হবে, কিন্তু দেওয়ার সময় এবং গ্রহণ করার সময় কোনো এক অদৃশ্য কারণে সম্ভবত ভবন ও যন্ত্রপাতি আর রক্ষা করা হয়নি। যে জিনিসগুলো বেতারের নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, সেগুলো নিয়ে গেছে। বাকিগুলো অকার্যকর, সংরক্ষণ করার মতো ছিল না। এটা এখন পরিত্যক্ত জায়গা।’

ইতিহাস বলছে, ষাটের দশক থেকে প্রায় পাঁচ দশক শাহবাগের এই ভবনে ছিল বাংলাদেশ বেতারের সদর দপ্তর। পরে তা আগারগাঁওয়ে স্থানান্তর করা হলে বেতারের এই জমি ও ভবন হস্তান্তর করা হয় বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে (সাবেক বিএসএমএমইউ)। তখন সংস্কৃতিকর্মীদের আশঙ্কা ছিল, অনেক ঘটনার সাক্ষী এই ভবন অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে দেওয়ায় ইতিহাস-ঐতিহ্য নষ্ট হবে।

১৯৩৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর নাজিমউদ্দিন রোডে ভাড়া করা একটি বাড়িতে যাত্রা শুরু করা বেতারের নাম ছিল ‘ঢাকা ধ্বনি বিস্তার কেন্দ্র’। পরে নামকরণ করা হয় ‘অল ইন্ডিয়া রেডিও’। ১৯৪৭-এ দেশভাগের পরে প্রথমে নাম হয় ‘পাকিস্তান ব্রডকাস্টিং সার্ভিস ঢাকা’; পরে হয়েছিল ‘রেডিও পাকিস্তান’। পাকিস্তান আমলে ১৯৬০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শাহবাগে তিন একর জমির ওপর ভবন নির্মাণ করে সেখানে নেওয়া হয়েছিল বেতারের পুরো কার্যক্রম।

বেতারের শাহবাগের এই ভবন ২০১৮ সালের এপ্রিলে তৎকালীন বিএসএমএমইউকে হস্তান্তর করা হয়। ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ একটি ভবন বা জায়গা বিএসএমএমইউ নিয়ে কী করবে? এমন প্রশ্ন তখন উঠেছিল। তখন জানানো হয়, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতিহাস রক্ষা করেই তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। যদিও এই ভবনে এখন আর বেতারের কিছুই নেই। অনেকটা পরিত্যক্ত হলেও এখানে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত আনসার সদস্যরা থাকছেন।

সম্প্রতি এই প্রতিবেদক শাহবাগে গিয়ে প্রধান ফটক পেরিয়ে বেতার ভবন ঢুকতেই আনসারদের একটি নিরাপত্তাচৌকি চোখে পড়ে। আনসার সদস্যরা ভেতরে যেতে অনুমতি দেন। ভবনের সামনে এবড়োখেবড়ো আঙিনা, বড় একটি ক্রেন। আঙিনাজুড়ে ময়লা ও ইট-সুরকির ছোট ছোট স্তূপ। ভবনটির দেয়ালে সাঁটানো সবুজ রঙের সাইনবোর্ড, ‘বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আনসার ক্যাম্প’। দেয়ালে শেওলা ধরেছে, পলেস্তারা খসে পড়েছে। ভেতরে আবছা অন্ধকার। নিচতলায় রয়েছে বেশ কিছু কক্ষ। তাতে থাকছেন আনসার সদস্যরা। কক্ষগুলোর মধ্যে জামাকাপড় ঝোলানো। ব্যবহৃত আসবাব রাখা। কোনো কক্ষে বেতারের কোনো সরঞ্জাম বা স্মৃতি খুঁজে পাওয়া গেল না।

‘বাংলাদেশের বেতার মানেই গণমাধ্যম সংস্কৃতির একটি ইতিহাস। বেতার মানেই সবার একটা নস্টালজিয়া কাজ করে।’ বলেন বাংলাদেশ বেতারের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অনুষ্ঠান, চলতি দায়িত্ব) মু. আনোয়ার হোসেন মৃধা। তিনি বলেন, ‘আমরা মৌখিকভাবে (তৎকালীন) বিএসএমএমইউকে বলেছি, এটা ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাংলাদেশ বেতারের অংশ হিসেবেই যেন ভবনটি থাকে। তাদের যে কারণে দেওয়া হয়েছিল, সেটা তারা ব্যবহার করতে পারেনি। এখন এটি পরিত্যক্ত অবস্থায়।’

সংস্কৃতিকর্মীরা মনে করেন, ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলো একটা জাতির পরিচয়বাহক। এগুলো সংরক্ষণ করা দরকার। পৃথিবীর নানা দেশে পুরোনো ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো জাদুঘর হিসেবে সংরক্ষণ করার নজির আছে।

প্রাবন্ধিক ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা সংরক্ষণ নিয়ে আমাদের দেশে কোনো আগ্রহ নেই বললেই চলে। বাংলাদেশ বেতার ভবন শুধু গণমাধ্যম সংস্কৃতির সঙ্গেই নয়; মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস ও বাংলাদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে এর সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের সংগীতের বিশাল প্রসারে অসামান্য ভূমিকা পালন করেছে বেতার। সুতরাং এটা সংরক্ষণ করা দরকার। শুধু একটি ভবন টিকিয়ে রাখা নয়, এখানে জাদুঘর করার মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্মের সঙ্গে ইতিহাস-ঐতিহ্যের একটা সেতুবন্ধ তৈরি করা যায়।’

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক বলেন, এটা (বেতার ভবনের পরিত্যক্ত অবস্থা) কীভাবে হলো, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনও অবাক! সে সময় পরিস্থিতি এমন ছিল যে হস্তান্তরের সময় এ বিষয়ে প্রশ্ন করারও সুযোগ ছিল না। যাঁরা হস্তান্তর এবং গ্রহণপ্রক্রিয়ায় ছিলেন, এই দায় কি তাঁরা নেবেন? তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের প্ল্যান দিতে বলা হয়েছে। আমরা এখন ভবন নিয়ে কী করব, সেই পরিকল্পনা করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পাবনায় ট্রাকচাপায় দুই শিক্ষার্থীসহ নিহত ৩

পাবনা প্রতিনিধি
পাবনায় ট্রাকচাপায় তিনজন নিহত হয়। রোববার সকালে পাবনা সদরের ডাঙ্গাবাড়িয়া এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
পাবনায় ট্রাকচাপায় তিনজন নিহত হয়। রোববার সকালে পাবনা সদরের ডাঙ্গাবাড়িয়া এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

‎পাবনায় বাঁশবোঝাই ট্রাকের চাপায় দুই স্কুলশিক্ষার্থীসহ তিনজন নিহত হয়েছে। এই ঘটনায় আরও দুজন গুরুতর আহত হয়েছে। ‎রোববার (২৬ অক্টোবর) সকাল ৭টার দিকে পাবনা সদর উপজেলার গয়েশপুর ইউনিয়নের বাঙ্গাবাড়িয়া এলাকায় ঢাকা-পাবনা মহাসড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে। ‎নিহত ব্যক্তিরা হলো পাবনা কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী তাসমিয়া আক্তার, পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আবু তোহা ও ভ্যানের চালক আকরাম হোসেন।

‎মাধপুর হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ‎

‎‎জানা গেছে, সকাল ৭টার দিকে ৮-১০ জন শিক্ষার্থী ভ্যানগাড়িতে করে পাবনার জালালপুর এলাকার ক্যাডেট কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজে যাওয়ার পথে ঢাকা থেকে পাবনাগামী একটি বাঁশবোঝাই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই ছাত্র-ছাত্রী ও ভ্যানচালক নিহত হয়। এ সময় গুরুতর আহত হয়েছে আরও দুজন পথচারী। স্থানীয় বাসিন্দারা মাধপুর হাইওয়ে থানা-পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মরদেহ উদ্ধার করে। ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। মহাসড়কে যান চলাচল সাময়িক বন্ধ রয়েছে।

ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ভ্যানের ড্রাইভারসহ তিনজন নিহত ও চায়ের দোকানে থাকা দুই ব্যক্তি আহত হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।‎

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সিরাজদিখানে ১৪৩ দিনে কোরআন মুখস্থ করল ৯ বছরের শিশু আরফান

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
মোহাম্মদ আরফান হোসাইন। ছবি: সংগৃহীত
মোহাম্মদ আরফান হোসাইন। ছবি: সংগৃহীত

অভূতপূর্ব এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার কুচিয়ামোড়া গ্রামের ৯ বছর বয়সী মোহাম্মদ আরফান হোসাইন। মাত্র ১৪৩ দিনে পুরো পবিত্র কোরআন মুখস্থ করে হাফেজ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে সে। আরফানের এই অসাধারণ সাফল্যে পরিবার, শিক্ষক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আনন্দ ও গর্বের আবহ বিরাজ করছে।

আরফান বর্তমানে ইসলামপুর কামিল কওমি মাদ্রাসার ছাত্র। এর আগে সে কুচিয়ামোড়া দারুন্নাজাত মাদ্রাসায় অধ্যয়ন করেছে। অল্প বয়সে এমন সাফল্য অর্জন করে স্থানীয়ভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

আরফান কেয়াইন ইউনিয়নের কুচিয়ামোড়া গ্রামের বিশিষ্ট আলেম ও শিক্ষক হাফেজ আব্দুল্লাহ আল মাসরুরের (লাভু হুজুর) ছেলে। লাভু হুজুর বর্তমানে কুচিয়ামোড়া দারুন্নাজাত মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ এবং কুচিয়ামোড়া মিত্রপাড়া বাইতুন নূর জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তিন ভাইবোনের মধ্যে আরফান সবার ছোট। মাত্র ১৪৩ দিনে সম্পূর্ণ কোরআন মুখস্থ করে সে তার পরিবারসহ পুরো এলাকাকে গর্বিত করেছে।

ইসলামপুর কামিল মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক ফখরুদ্দীন রাজি বলেন, ‘আরফান আমাদের মাদ্রাসার গর্ব। ১৪৩ দিনে কোরআন মুখস্থ করা আমাদের মাদ্রাসার ইতিহাসে এই প্রথম। এটি এক বিরল দৃষ্টান্ত। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাবিতে ঘাস কাটার মেশিন ভেঙে যুবকের মাথায় ঢুকল ব্লেড

জাবি প্রতিনিধি 
হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে আহত যুবককে। ছবি: আজকের পত্রিকা
হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে আহত যুবককে। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ঘাস কাটার যন্ত্র (মেশিন) ভেঙে ব্লেড ছিটকে মাথায় ঢুকে সুমন মিয়া (২৬) নামের এক যুবক গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি সাতক্ষীরা জেলার বাসিন্দা এবং জাবি স্পোর্টস ক্লাব আয়োজিত তিন দিনব্যাপী নাইট ফুটবল টুর্নামেন্ট উপলক্ষে বরাদ্দ স্টলে কাঁকড়া ফ্রাই বিক্রি করতেন।

শনিবার (২৫ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। ঘটনার পরপরই তাঁকে প্রথমে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্ট একাধিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২৩ অক্টোবর থেকে জাবি স্পোর্টস ক্লাবের ব্যবস্থাপনায় তিন দিনব্যাপী নাইট ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু হয়। শনিবার ছিল খেলার শেষ দিন। টুর্নামেন্টে ক্লাবের সভাপতি আরশাদ হাবিব বিশালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া এক বন্ধু একটি স্টল বরাদ্দ নেন, যেখানে সুমন মিয়া ও জাবির এক হোটেল কর্মচারী কাজ করতেন।

এদিকে বিশালের অনুরোধে অনানুষ্ঠানিকভাবে মাঠ প্রস্তুতের কাজ করতেন শারীরিক শিক্ষা অফিসের কর্মচারী আবুল হোসেন। গতকাল শেষ দিন উপলক্ষে ক্যাম্পাসে এসে মাঠ প্রস্তুতের কাজ শেষে হাতে সময় থাকায় মেশিন দিয়ে ঘাস কাটা শুরু করেন তিনি। ঘাস কাটার সময় মেশিনের ব্লেড মাটিতে থাকা একটি ইটে লেগে ভেঙে যায়। ব্লেডের সেই অংশ ছিটকে গিয়ে পাশের স্টলে দাঁড়িয়ে থাকা সুমন মিয়ার মাথায় ঢোকে।

সুমন মিয়ার পাশের স্টলে পিঠার দোকান ছিল নাদিয়া মীম নামের সিটি ইউনিভার্সিটির সাবেক এক শিক্ষার্থীর। নাদিয়া বলেন, সুমন স্টলে দাঁড়ানো অবস্থায় ব্লেড ছিটকে এসে লাগার সঙ্গে সঙ্গে ঢলে পড়ে যান। প্রথমে ভয়ে কেউ তাকে উঠায়নি। পরে বিশাল এসে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য মোটরসাইকেলে উঠিয়ে দেন।

কর্মচারী আবুল হোসেন বলেন, ‘হাতে একটু সময় থাকায় ঘাস কাটছিলাম। মেশিনে ইট লেগে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটবে, এটা ভাবতে পারছি না।’

শারীরিক শিক্ষা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক নাসরিন বেগম বলেন, ‘আজ ছুটির দিন থাকায় আমি অফিসে ছিলাম না। আমাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীরাও ছুটিতে ছিল। তবে জাবি স্পোর্টস ক্লাবের নাইট ফুটবল টুর্নামেন্ট চলমান থাকায় তিনি সেখানে ছিলেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমরা দ্রুত আহত ব্যক্তিকে এনাম মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাই। পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। রাত ১টার দিকে তার অপারেশন শুরু হয়।’

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আহত সুমনের মাথায় অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। তবে তিনি আশঙ্কামুক্ত নন। ৭২ ঘণ্টা অবজারভেশনে থাকবেন তিনি। নিবিড় পরিচর্যার পরামর্শ থাকলেও এখন পর্যন্ত তার ব্যবস্থা হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি টেকনাফের বসতবাড়ি ও দোকানে, নারী আহত

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি 
মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি ও ছিদ্র হয়ে যাওয়া টেকনাফের একটি ঘরের বেড়া। ছবি: আজকের পত্রিকা
মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি ও ছিদ্র হয়ে যাওয়া টেকনাফের একটি ঘরের বেড়া। ছবি: আজকের পত্রিকা

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে তীব্র সংঘর্ষের জেরে ছোড়া গুলি বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় এসে পড়েছে। এই ঘটনায় কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের তেচ্ছি ব্রিজ সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় এক নারী গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। এ ছাড়া গুলিতে একটি বসতবাড়ি ও একটি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

শনিবার (২৫ অক্টোবর) বিকেল ৫টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। আহত নারীর নাম ছেনুয়ারা (২৭)। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার বিকেলের দিকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ভয়াবহ গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। কিছু সময় পর ওপার থেকে ছোড়া দুটি গুলি বাংলাদেশ সীমান্তের তেচ্ছি ব্রিজ এলাকার একটি বসতবাড়ি ও কম্পিউটারের দোকানে এসে লাগে। এতে ঘরের টিন ও দেয়াল ছিদ্র হয়ে যায়।

ঘটনার পর সীমান্ত এলাকায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় অনেক পরিবার শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে।

হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহমেদ আনোয়ারী বলেন, ‘মিয়ানমারের দিক থেকে ছোড়া গুলি এপারে এসে পড়ায় একজন নারী আহত হয়েছেন। সীমান্তের মানুষ এখন চরম আতঙ্কে রয়েছে। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

নুর আহমেদ আনোয়ারী আরও বলেন, যদি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে সীমান্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত