Ajker Patrika

খুনের পর পরিবহন শ্রমিকের বেশে ১২ বছর, পালিয়ে আরও দুই খুন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২২: ৩১
খুনের পর পরিবহন শ্রমিকের বেশে ১২ বছর, পালিয়ে আরও দুই খুন

রাজধানীর মিরপুরের শাহ আলী থানার চটবাড়ি নবাবেরবাগ এলাকার বাসিন্দা বাসু মিয়া ও বাদী চিনু মিয়ার চটবাড়ি এলাকায় ১০ শতাংশের একটি পৈতৃক দখলিয় সম্পত্তি ছিল। জমিটি আজগর আলীর কাছে বাৎসরিক ভিত্তিতে লিজ দেওয়া ছিল। লিজে নেওয়া জমি জাল দলিলে আত্মসাৎ করেন আজগর আলী। সেই জমিটি স্থানীয় মৎস্য সমিতিতে দিয়ে দেন তিনি। সেখানে ২০১২ সালে ভবন নির্মাণকে কেন্দ্র করে জমির মালিক বাসুর ওপর হামলা করেন সমিতির লোকজন। 

সমিতির সদস্য আলকেস অবৈধ অস্ত্র দিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলি করেন। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন বাসু। এ ঘটনায় নিহতের ভাই চিনু মিয়া ঘাতক আলকেসসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৬ থেকে ৭ জনকে আসামি করে মিরপুর শাহ আলী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় আলকেস গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান। এ ঘটনায় নিজের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তিনি। এরপর জামিনে বের হয়ে আত্মগোপনে চলে যান। বাসু হত্যা মামলার দীর্ঘ ১২ বছর ধরে পলাতক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত, হত্যা, ডাকাতিসহ একাধিক মামলার আসামি আলকেসকে (৫২) গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-৪। 

১২ বছর ধরে আলকেস ঠিকানা পরিবর্তন করে ছদ্মবেশ ধারণ করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় নিজের পরিচয় গোপন করার জন্য ক্রমাগতভাবে সে পেশা পরিবর্তন করে আসছিলেন। এমনকি কারাগার থেকে বের হয়ে দুই সহকারীকে হত্যা করেন আলকেস। বরিশাল গিয়ে বাস ও ট্রাকে পরিবহন শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। বেপরোয়াভাবে বাস চালাতে গিয়ে সিলেটে এক পথচারীকে হত্যা করেন। এ ঘটনায় সিলেটের ওসমানীনগর থানায় হত্যা মামলা হলে সে পালিয়ে কুয়াকাটা মাছ ধরার ট্রলারে কাজ শুরু করে। মাছ ধরার পাশাপাশি সাগরে বিভিন্ন ট্রলারে ডাকাতি করতে থাকেন। র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত গত দেড় বছর ধরে একটি দূরপাল্লার পরিবহনের চালক হিসেবে কাজ করে আসছিলেন আলকেস। 

আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব-৪ এর অধিনায়ক ডিআইজি মোজাম্মেল হক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। 

ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, তিনটি হত্যা মামলার আসামি মো. আলকেস, মামলার বাদী চিনু মিয়া ও নিহত বাসু মিয়া (৪৮) একই এলাকার বাসিন্দা। মামলার বাদী চিনু মিয়া নিহত বাসু মিয়ার আপন ছোট ভাই। গ্রেপ্তার আলকেস রাজধানীর শাহ আলী থানার চটবাড়ি নবাবেরবাগ এলাকার মৎস্যজীবী সমিতির সদস্য। নিহত বাসু মিয়া ও বাদী চিনু মিয়ার চটবাড়ি এলাকায় ১০ শতাংশের একটি পৈতৃক দখলিয় সম্পত্তি ছিল। জমিটি আজগর আলীকে লিজ দেওয়া হয়। কিন্তু আজগর আলী জাল দলিল করে জমিটি আত্মসাৎ করেন। অবৈধভাবে ২০১০ সালে সেই জমিটি সমিতির নামে হস্তান্তর করা হয়। এতে করে ওই জমি মালিকানা নিয়ে মামলার বাদী চিনু মিয়া এবং নিহত বাসু মিয়ার সঙ্গে মৎস্যজীবী সমিতির বিরোধ সৃষ্টি হয়। জমিটি প্রকৃতপক্ষে মূল মালিক চিনু মিয়া ও বাসু মিয়া। সমিতির সদস্য আলকেসসহ অন্যান্যরা মিলে আজগর, গিয়াস উদ্দিন, সুনু মিয়া, জিন্নাত, রুমা, কদর আলীদের নেতৃত্বে ওই সমিতির নামে রাখা জমি জোরপূর্বক দখল করে জায়গাটিতে সীমানা প্রাচীর তৈরি করে। তখন মামলার বাদী চিনু মিয়া ও নিহত বাসু মিয়া আসামিদের সঙ্গে বিরোধে না জড়িয়ে সিভিল আদালতে মামলা দায়ের করার পর প্রায় দুই বছর পর আদালত বাদী চিনু মিয়া ও বাসু মিয়ার পক্ষে রায় প্রদান করেন। 

পরবর্তীতে মামলার বাদী এবং ভিকটিম আদালতের রায় পেয়ে ওই জমিতে ২০১২ সালের শুরুতে ভবন নির্মাণ করা শুরু করে প্রথম তলার ছাদ পর্যন্ত নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ হয়। ২০১২ সালের ১৪ মে ঘটনার দিন চিনু মিয়ার ভাই বাসু নবনির্মিত ভবনের ছাদে পানি দিচ্ছিলেন। তখন সমিতির সদস্য ও বাসু হত্যা মামলার আসামি আলকেস, আজগর, রাজু, খলিল, সেলিম, কদর আলী, লেদুসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৬ থেকে ৭ জন আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও লোহার রড নিয়ে হামলা করে। এ সময় আলকেসের কাছে থাকা অবৈধ অস্ত্র দিয়ে গুলি করলে বাসুর মাথার বাম পাশে লেগে ডান পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ বাসু ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনায় নিহতের ভাই চিনু মিয়া শাহ আলী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-২৪। 

ঘটনার পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে আলকেসসহ অধিকাংশ আসামিদের পুলিশ গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন সময়ে আলকেস নিজেকে সম্পৃক্ত করে অন্যান্য আসামির নাম উল্লেখপূর্বক আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দেয়। কিন্তু আসামিরা চার মাস কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পেলে অন্যান্য আসামিরা আদালতে হাজিরা দিলেও আলকেস জামিন নিয়ে আত্মগোপনে চলে যায় এবং এই মামলায় আর কখনো হাজিরা দেয়নি। 

র‍্যাব-৪ অধিনায়ক আরও বলেন, মামলাটি তদন্ত করে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে ১৩ জন এবং তদন্তে প্রাপ্ত একজনসহ মোট ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করলে আদালত পর্যাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে বিচারকার্য পরিচালনা করা হয়। ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর আলকেস, আজগর আলী, খলিল, সেলিম ও রাজুসহ মোট ৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড, কদর আলী ও লেদুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। জামিনে থাকা অবস্থায় আলকেস গংয়ের সঙ্গে আজাহার ও সানুর মতবিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় আলকেস গং আজাহার ও সানুকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই ডাবল মার্ডারের মূল আসামি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আলকেস। 

এ ঘটনায় আলকেসের বিরুদ্ধে আরও একটি হত্যা মামলা আদালতে বিচারাধীন এবং তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট পেন্ডিং আছে। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কদর আলী হাজতে থাকা অবস্থায় অসুস্থ হয়ে মারা যান। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত নসু, জিন্নাত, গিয়াস, সালেম উদ্দিন এবং রুমাসহ পাঁচজনকে খালাস প্রদান করেন। 

র‍্যাব-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, গত ১২ বছর ধরে আলকেস ঠিকানা পরিবর্তন করে ছদ্মবেশ ধারণ করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় নিজের পরিচয় গোপন করার জন্য ক্রমাগতভাবে পেশা পরিবর্তন করে আসছিলেন। প্রথমদিকে সাভারের বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকের কাজের পাশাপাশি হত্যা ও ডাকাতি করত। পরবর্তীতে বরিশাল গিয়ে ট্রাকের হেল্পার ও পরে ড্রাইভার হিসেবে কাজ করে। বেপরোয়াভাবে বাস চালানের সময় সিলেটে তার বাসের নিচে পরে একজন নির্মমভাবে নিহত হয় এবং এ ঘটনায় সিলেটের ওসমানীনগর থানায় পরিবহন আইনে তার বিরুদ্ধে পুনরায় হত্যা মামলা হলে সে পালিয়ে কুয়াকাটায় মাছ ধরার ট্রলারে কাজ শুরু করে। মাছ ধরার পাশাপাশি সাগরে বিভিন্ন ট্রলারে ডাকাতি করত বলে স্বীকার করেছে। প্রকৃতপক্ষে সে একজন অভ্যাসগত কুখ্যাত অপরাধী। গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত আলকেস গত দেড় বছর ধরে একটি দূরপাল্লার পরিবহনের চালক হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। 

ব্যক্তিগত জীবনে আসামি বিবাহিত এবং তার দুইটি সন্তান আছে যারা তাদের মায়ের সঙ্গে নবাবেরবাগে থাকেন। ঘটনার পর থেকে আসামি ঢাকার সাভার এলাকায় নিজের নাম-ঠিকানা গোপন করে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। তবে বেশির ভাগ সময় আসামি আলকেস বাসায়ও অবস্থান করতেন না বরং ফরিদপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান করতেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

গায়ে থুতু পড়া নিয়ে ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

৩৬ বার অপারেশন, অবশেষে বাড়ি ফিরল মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী নাভিদ

আজকের রাশিফল: মুখটা সামলে রাখুন, শত্রুরা ফেসবুক পোস্টে প্রচুর হা হা দেবে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পদ্মার চরে জমি দখল ঘিরে সংঘর্ষ-গুলি, নিহত ২

বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি      
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজশাহীর বাঘায় পদ্মার চরাঞ্চলের জমি দখলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে প্রতিপক্ষের গুলিতে আমান মণ্ডল (৩৬) ও নাজমুল মণ্ডল (২৬) নামের দুজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন মুনতাজ মণ্ডল (৩২), রাবিক হোসেন (১৮) নামের আরও দুই যুবক।

হতাহত ব্যক্তিরা সবাই রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চরাঞ্চল নীচ খানপুর গ্রামের বাসিন্দা।

জানা গেছে, আজ সোমবার বেলা ১১টায় চরের জমি দখলকে কেন্দ্র করে নীচ খানপুর গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে একটি পক্ষের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় প্রতিপক্ষের ছোড়া গুলিতে গুরুতর আহত হন নীচ খানপুর গ্রামের আমান মণ্ডল, মুনতাজ মণ্ডল, নাজমুল মণ্ডল ও রাবিক হোসেন। এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ার কারণে প্রথমে আহতদের উদ্ধার করা যায়নি। পরে আরও গ্রামবাসী ঘটনাস্থলে পৌঁছলে অন্য পক্ষ সরে যায়। তখন আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে আমান মণ্ডল মারা যান। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরেকজন মারা যান।

আমান মণ্ডলের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে ডা. নিহার চন্দ্র মণ্ডল জানান, মুনতাজের শরীরের বিভিন স্থানে অন্তত শতাধিক, রাকিবের শরীরে প্রায় ৮০, নাজমুলের শরীরে প্রায় ৩৫ এবং আমানের মাথাসহ শরীরের ৫ জায়গায় গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। ক্ষতস্থান দেখে পুলিশের ধারণা, পিস্তল ও রাবার বুলেটের ছোড়া গুলিতে হতাহতরা বিদ্ধ হতে পারেন।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র শংকর কুমার বিশ্বাস নাজমুল মণ্ডলের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, রাত ৯টা পর্যন্ত লাশ মেডিকেল কলেজের সামনে অ্যাম্বুলেন্সে রাখা ছিল। অন্য আহত দুজনের অস্ত্রোপচার চলছে। তাঁদের অবস্থা গুরুতর।

হতাহতদের পরিবারের দাবি, চরাঞ্চলে জমির দখল ঘিরে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার কথিত ‘কাঁকন বাহিনী’র লোকজন হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। নীচ খানপুর গ্রামের বেলাল হোসেন জানান, তাঁরা লোকজন নিয়ে চর এলাকায় আগাছা পরিষ্কার করছিলেন। এ সময় কাঁকন বাহিনীর লোকজন সেই জমি দখল নিতে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। তাৎক্ষণিকভাবে কাঁকন বাহিনীর কাউকে না পাওয়ায় তাদের কারও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

বাঘা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুপ্রভাত মণ্ডল জানান, হাসপাতাল থেকে লাশ উদ্ধার করে থানায় নেওয়া হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ আগামীকাল মঙ্গলবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

গায়ে থুতু পড়া নিয়ে ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

৩৬ বার অপারেশন, অবশেষে বাড়ি ফিরল মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী নাভিদ

আজকের রাশিফল: মুখটা সামলে রাখুন, শত্রুরা ফেসবুক পোস্টে প্রচুর হা হা দেবে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গৃহকর্মী নির্যাতন: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিকার মায়ের ৫ বছরের কারাদণ্ড

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় ১৪ বছরের এক কিশোরীকে নির্যাতনের মামলায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির সহকারী অধ্যাপক ইসমত জাহান জনির মা পারভীন চৌধুরীকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩-এর বিচারক মো. গোলাম কবীর এ রায় ঘোষণা করেন।

কারাদণ্ডের পাশাপাশি আসামিকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে। অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে তাঁকে আরও চার মাস বিনাশ্রম কারাভোগ করতে হবে বলে রায়ে বলা হয়েছে।

১৫ বছর আগের ঘটনায় করা এ মামলার রায় ঘোষণার সময় সাজাপ্রাপ্ত পারভীন চৌধুরী ট্রাইব্যুনালে হাজির ছিলেন। তাঁকে সাজা পরোয়ানাসহ কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ১৪ বছরের কিশোরী শিরিন শেওড়াপাড়ায় পারভীন চৌধুরীর বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করত। কারণে-অকারণে পারভীন চৌধুরী ও তাঁর মেয়ে ইসমত জাহান জনি তাকে মারধর করতেন। গরম পানির ছ্যাঁকা দিতেন। ঘরে আটকে রাখতেন। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দিতেন না। ২০১০ সালের ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর গৃহকর্মীকে মারধর করে তাকে জখম করেন মা ও মেয়ে। পরে ২৩ অক্টোবর পারভীন চৌধুরী তাকে মারধর করে বাসা থেকে বের করে দেন। বেলা ৩টার দিকে শেওড়াপাড়ায় শিরিনকে কান্নাকাটি করতে দেখেন তার মায়ের পূর্বপরিচিত প্রতিবেশী আব্দুর রশিদ। তিনি শিরিনের শরীরে ক্ষত দেখতে পান। এ ঘটনায় ওই দিনই আব্দুর রশিদ মিরপুর মডেল থানায় পারভীন চৌধুরী ও ইসমত জাহান জনিকে আসামি দিয়ে মামলা করেন।

মামলাটি তদন্ত শেষে পারভীন চৌধুরীকে অভিযুক্ত করে মিরপুর মডেল থানার এসআই আবু বকর মিয়া অভিযোগপত্র জমা দেন। তবে ইসমত জাহান জনির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে অব্যাহতির আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। পরে ট্রাইব্যুনাল তাঁকে অব্যাহতি দেন।

এরপর ২০১৫ সালের ১৬ এপ্রিল পারভীন চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয়।

মামলার বিচার চলাকালে ১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ছয়জনের সাক্ষ্য নেন ট্রাইব্যুনাল। অন্যদিকে পারভীন চৌধুরী নিজে ও ইসমত জাহান মায়ের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

গায়ে থুতু পড়া নিয়ে ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

৩৬ বার অপারেশন, অবশেষে বাড়ি ফিরল মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী নাভিদ

আজকের রাশিফল: মুখটা সামলে রাখুন, শত্রুরা ফেসবুক পোস্টে প্রচুর হা হা দেবে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিএম কলেজ: বাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে অনশনে দুই ছাত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
বাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে দুই ছাত্রের অনশন। এতে সংহতি জানিয়ে এসেছেন আরও কয়েকজন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে দুই ছাত্রের অনশন। এতে সংহতি জানিয়ে এসেছেন আরও কয়েকজন। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ ছাত্র সংসদ (বাকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে দুই ছাত্র অনশন শুরু করেছেন। ইতিহাস বিভাগের ২১-২২ সেশনের ছাত্র ফেরদৌস রুমি গতকাল রোববার দুপুরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে আমরণ অনশন শুরু করেন। আজ সোমবার বিকেলে রুমির সঙ্গে ছাত্র অধিকার পরিষদের কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হক অনশনে যোগ দেন। আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাকসু নির্বাচনের দাবিতে ছাত্রদের অনশন অব্যাহত রয়েছে।

অনশনরত রুমি বলেন, ‘৩২ হাজার শিক্ষার্থীর পদচারণে মুখর বিএম কলেজ। ছাত্র সংসদ নির্বাচন ছাত্রদের গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু ২৪ বছর ধরে কলেজটিতে নির্বাচন হচ্ছে না। ছাত্র সংসদ না থাকায় শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে ভূমিকা রাখতে পারছে না বাকসু। নির্বাচনের দাবিতে এক মাসের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো কর্ণপাত করছে না। বাধ্য হয়ে অনশনে বসেছেন। নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না করা পর্যন্ত অনশন চলবে।’

অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র কামরুল ইসলাম বলেন, ‘বাকসু নির্বাচনের দাবিতে তাঁরা বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। গতকাল রোববার বেলা ১টা থেকে এ দাবিতে ইতিহাস তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ফেরদৌস রুমি অনশনে বসেন। আজ থেকে ছাত্র অধিকার পরিষদের বিএম কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হক অনশন শুরু করেছেন।’ কামরুল বলেন, বাকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না করলে তাঁরা অনশনের পাশাপাশি অচিরেই কলেজে শাটডাউন ঘোষণা দিতে পারেন।

বিএম কলেজের অধ্যক্ষ ড. শেখ মো. তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। ইতিমধ্যে শিক্ষকদের নিয়ে একটি প্রাথমিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখন ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে চূড়ান্ত রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে।

প্রসঙ্গত, সর্বশেষ বাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৩ সালে। এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন হওয়ায় বিএম কলেজেও নির্বাচনের দাবি ওঠে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

গায়ে থুতু পড়া নিয়ে ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

৩৬ বার অপারেশন, অবশেষে বাড়ি ফিরল মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী নাভিদ

আজকের রাশিফল: মুখটা সামলে রাখুন, শত্রুরা ফেসবুক পোস্টে প্রচুর হা হা দেবে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শাহরাস্তিতে বসতবাড়ি থেকে ১২টি গোখরা সাপ উদ্ধার

চাঁদপুর প্রতিনিধি
সাপগুলো বোতলে ভরে নিয়ে গেছেন স্থানীয় সাপুড়েরা।
সাপগুলো বোতলে ভরে নিয়ে গেছেন স্থানীয় সাপুড়েরা।

চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে ১২টি বিষধর গোখরা সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে পৌরসভার ঠাকুর বাজারসংলগ্ন নিজমেহার গ্রামের সাহাবাড়ি থেকে স্থানীয় সাপুড়েরা সাপগুলো উদ্ধার করেন।

ওই বাড়ির বাসিন্দা মিহির চন্দ্র সাহা বলেন, গতকাল রোববার তিনি নিজ ভবনের টয়লেটের ট্যাংকের পাইপের মুখে দুটি গোখরো সাপ দেখতে পান। ওই সময় পাইপের মুখে গরম পানি ও ব্লিচিং পাউডার ঢেলে একটি সাপ মেরে ফেলা হয়েছে। পরে সাপের খোলস দেখে সন্দেহ হয়, বাড়ির ভেতরে আরও সাপ থাকতে পারে। আজ দুপুরে স্থানীয় সাপুড়েদের সহায়তায় ছোট ভাই বিপ্লব সাহার ভবনের গ্যারেজ রুমের পাশে লাকড়ির স্তূপের নিচ থেকে ১২টি সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা সাপগুলো সাপুড়েরা বোতলে ভরে নিয়ে গেছেন।

ওই বাড়ির যুবক রকি চন্দ্র সাহা জানান, উদ্ধার করা সাপগুলো এক ফুটের চেয়ে বড়। তবে বড় সাপগুলো পালিয়ে গেছে।

স্থানীয় সাপুড়ে কামাল হোসেন জানান, সাপগুলো গোখরা জাতের। এগুলো বিষধর।

শাহরাস্তি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাকসুদ আলম জানান, গোখরাসহ বিষধর সাপ সাধারণত খাবার ও আশ্রয়ের খোঁজে বসতবাড়ির আশপাশে আসে। বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, ইঁদুর দমন করা এবং গর্ত বা ফাঁকফোকর বন্ধ রাখলে এ ধরনের সাপের প্রবেশ অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব। কেউ সাপ দেখলে আতঙ্কিত না হয়ে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস বা বন্য প্রাণী রেসকিউ টিমে খবর দিতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

গায়ে থুতু পড়া নিয়ে ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

৩৬ বার অপারেশন, অবশেষে বাড়ি ফিরল মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী নাভিদ

আজকের রাশিফল: মুখটা সামলে রাখুন, শত্রুরা ফেসবুক পোস্টে প্রচুর হা হা দেবে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত