Ajker Patrika

বুয়েটের ই-রিকশা চলবে ধানমন্ডি, পল্টন ও উত্তরায়

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৮ জুন ২০২৫, ২০: ৩৩
বুয়েটের নকশা করা ই-রিকশা। ছবি: সংগৃহীত
বুয়েটের নকশা করা ই-রিকশা। ছবি: সংগৃহীত

আগামী আগস্ট মাস থেকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহযোগিতায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের তিন এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে চালু হতে যাচ্ছে ই-রিকশা। রাজধানীর উত্তরা, ধানমন্ডি ও পল্টন এলাকায় ই-রিকশা চালু হবে। আজ শনিবার (২৮ জুন) ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এদিকে দেশের সিটি করপোরেশন এলাকায় ই-রিকশা চলাচলে শৃঙ্খলা আনতে আদালতের নির্দেশনা অনুসরণ করে নতুন নিয়মকানুন কার্যকর করতে যাচ্ছে সরকার। নতুন প্রবিধান অনুসারে সিটি করপোরেশনের অধীনে রিকশা ও চালকদের নিবন্ধন এবং লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একই সঙ্গে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে চালকদের প্রশিক্ষণ, ফিটনেস সনদ এবং দুর্ঘটনা বিমা গ্রহণও।

ডিএনসিসির বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, তিন চাকার স্বল্পগতির ব্যাটারিচালিত রিকশার জন্য নির্ধারিত একটি স্ট্যান্ডার্ড মডেলের ডিজাইন ও স্পেসিফিকেশন অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটি দেশের সব সিটি করপোরেশনকে পাঠানো হয়েছে, যাতে তারা ডিজাইন অনুযায়ী গাড়ি যাচাই-বাছাই করে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করতে পারে।

ই-রিকশা ও চালকদের তথ্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে একটি ইউনিফাইড ফরম তৈরি করে ডেটাবেইস তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। এই তথ্যভান্ডারে রিকশার মালিক, চালক, বিমা, লাইসেন্স ও ফিটনেসসংক্রান্ত সব তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকবে। অতিরিক্ত সচিব এবং বিআরটিএ, বুয়েট, বিএসটিআইসহ বিভিন্ন কারিগরি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কারিগরি কমিটি গঠন কারা হবে, যারা প্রস্তুত করা ই-রিকশার টাইপ অনুমোদন করবে।

ই-রিকশা চলাচলসংক্রান্ত প্রবিধান থেকে জানা যায়, প্রতিটি রিকশার জন্য ইউনিক রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও নম্বরপ্লেট সরবরাহ করবে সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন। একটি জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ তিনটি রিকশা নিবন্ধন করতে পারবেন। প্রতিটি ই-রিকশার দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ২৫০ সেন্টিমিটার এবং প্রস্থ ১১০ সেন্টিমিটার নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া এসব রিকশা শুধু অনুমোদিত কারখানা বা ওয়ার্কশপে প্রস্তুত করা হবে। সেগুলোর প্রতিটিকে নির্ধারিত গাইডলাইনের আলোকে টাইপ-অনুমোদন নিতে হবে।

তিন চাকার এই ই-রিকশার চালকের লাইসেন্স পেতে হলে ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর হতে হবে এবং বাংলা পড়তে ও লিখতে জানতে হবে। চালকদের সিটি করপোরেশন নির্ধারিত সরকারি হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি পাঁচ বছর পর লাইসেন্স নবায়নের সময় চালকদের ড্রাইভিং পরীক্ষা দিতে হবে। চালকদের জন্য সড়ক নিরাপত্তা, ট্রাফিক আইন, রোড মার্কিং, ট্রাফিক সাইন ও ব্যাটারি রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করাও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার বিভাগের তত্ত্বাবধানে ব্র্যাককে অংশীদার করা হয়েছে।

নতুন নিয়ম অনুসারে চালকদের জন্য ব্যক্তিগত দুর্ঘটনা বিমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। চালক কিংবা মালিক যেকোনো পক্ষ এই বিমার প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে পারবেন। বিমার কভারেজ সচল আছে কি না, তা সিটি করপোরেশন নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করবে এবং নবায়নের কপি নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে।

বিমা গ্রহণসংক্রান্ত সব কাগজপত্র চালকের লাইসেন্স ফাইলে সংযুক্ত রাখতে হবে। ইচ্ছুক মালিকগণ অতিরিক্ত বিমাও নিতে পারবেন, যার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সিটি করপোরেশন বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেবে। এ ছাড়া নিবন্ধিত প্রতিটি রিকশার দুই বছর পরপর ফিটনেস পরীক্ষা দিতে হবে এবং নবায়নের জন্য নির্ধারিত ফি জমা দিতে হবে। ফিটনেস সনদ না থাকলে সংশ্লিষ্ট যানবাহন রাস্তায় চলাচল করতে পারবে না।

সড়কে চলাচলের জন্য প্রবিধানে উল্লেখ করা হয়েছে, ব্যাটারিচালিত রিকশা শুধু সিটি করপোরেশন ও সংশ্লিষ্ট ট্রাফিক বিভাগের নির্ধারিত রাস্তায় চলাচল করতে পারবে। হাইওয়ে, এক্সপ্রেসওয়ে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কিংবা বাস চলাচলের জন্য নির্ধারিত সড়কে এসব রিকশার চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যানবাহন নির্ধারিত এলাকার বাইরে চলতে পারবে না। যানজট সৃষ্টি যেন না হয়, সে জন্য চালকদের সর্বদা বাঁ লেনে চলাতে হবে গাড়ি। এ ছাড়া গাড়ির গতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এলাকায় ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৫ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হয়েছে।

রিকশা চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে জরিমানাযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত করা হবে। এই সকল রিকশায় দুজনের বেশি যাত্রী বহন বা অতিরিক্ত মালপত্র পরিবহন পারবে না। সরকারি ভবন, কূটনৈতিক এলাকা ও নিরাপত্তা সংবেদনশীল স্থানে এই রিকশা চলাচল করতে পারবে না। নিয়মবহির্ভূতভাবে ওভারটেক বা লেন পরিবর্তনও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এ ছাড়া ব্যাটারিচালিত রিকশার পার্কিং ও চার্জিং-সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনাও নতুনভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে। সিটি করপোরেশন ও সংশ্লিষ্ট ট্রাফিক বিভাগ ওয়ার্ড বা অঞ্চলভিত্তিক রিকশার সংখ্যা নির্ধারণ করবে। এলাকাভিত্তিক কালার কোড চালু করা হবে, যাতে নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়। প্রতিটি ওয়ার্ডে নির্ধারিত পার্কিং এলাকা থাকবে, যেখানে চার্জিং স্টেশন ও ব্যাটারি বিনিময় কেন্দ্র স্থাপন করা হবে ব্যাটারি চার্জের জন্য।

ব্যবহৃত ব্যাটারির রিসাইকেল প্রক্রিয়াও থাকবে নিয়ন্ত্রিত। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া কেউ ব্যাটারি ভাঙা, আগুনে গলানো বা পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ কার্যক্রম চালাতে পারবে না। ব্যাটারি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহৃত প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশগত ছাড়পত্রপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রিসাইকেল করবে।

ব্যাটারি ব্যবহারকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে পুরোনো বা অকার্যকর ব্যাটারি পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদিত এজেন্ট, ডিলার বা রিসাইকেল কারখানার কাছে হস্তান্তর করতে হবে। নবায়নযোগ্য শক্তি, বিশেষ করে সোলার চার্জিং পদ্ধতি ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া হবে। চালক ও মালিকদের আর্থিক সহায়তা দিতে সহজ শর্তে ঋণ দেবে সরকারি ও বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১৩
নিহত লায়লা আফরোজ ও নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ। ছবি: সংগৃহীত
নিহত লায়লা আফরোজ ও নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ। ছবি: সংগৃহীত

‎রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যার ঘটনায় গৃহকর্মী আয়েশাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার দুপুরে ঝালকাঠি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

‎গ্রেপ্তারের বিষয়টি আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছেন তেজগাঁও বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন।

‎মামুন বলেন, গৃহকর্মী আয়েশাকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঝালকাঠি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত সোমবার সকালে শাহজাহান রোডের ১৪ তলা একটি আবাসিক ভবনের সপ্তম তলায় লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তাঁর মেয়ে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে (১৫) ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।

মা-মেয়ে হত্যায় অভিযুক্ত গৃহকর্মী আয়েশা। ছবি: আজকের পত্রিকা
মা-মেয়ে হত্যায় অভিযুক্ত গৃহকর্মী আয়েশা। ছবি: আজকের পত্রিকা

গতকাল তাঁদের মরদেহ নাটোরে দাফন করা হয়েছে। মামলার এজাহারে বাসা থেকে মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র খোয়া যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ভবনের ভেতরের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, হত্যাকাণ্ডের পর এক নারী স্কুলড্রেস পরে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। চার দিন আগে আয়েশা পরিচয় দিয়ে ওই বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেওয়া তরুণী (২০) এই জোড়া খুনে জড়িত বলে সন্দেহ স্বজনদের। ঘটনার পর থেকে ওই তরুণী পলাতক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি 
গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে মজিরুলের নেতৃত্বে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে মজিরুলের নেতৃত্বে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

জীবন আছে যার, তার মৃত্যু অনিবার্য। মৃত্যুর পর মানুষের শেষ ঠিকানা কবর। মৃতদেহ গোসল করিয়ে কাফন পরানো হয়, জানাজা শেষে তাকে শায়িত করা হয় চিরনিদ্রার ঘরে। এই কবর খোঁড়ার দায়িত্বটি গ্রামের কিছু মানুষ বহু বছর ধরে স্বেচ্ছায়, বিনা পারিশ্রমিকে পালন করে আসছেন, যাঁরা সবার কাছে ‘গোরখোদক’ নামে পরিচিত। আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় তাঁরা করে থাকেন এই কাজ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গোরখোদকেরা কোনো পারিশ্রমিক নেন না। গ্রামের যে কেউ মারা যাক, নিজেদের ব্যস্ততা ফেলে তাঁরা ছুটে আসেন কবর খুঁড়তে। তাঁদের এই মানবিক কাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে গ্রামের লোকেরা দোয়া করেন—আল্লাহ যেন তাদের সুস্থ ও ভালো রাখেন।

দেবীপুর গ্রামের বাসিন্দা গোরখোদক মজিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ৫৫ বছর ধরে কবর খুঁড়ছি। যত দিন সুস্থ থাকব, এই কাজ চালিয়ে যাব। আমাদের গ্রাম ছাড়াও অন্য গ্রাম থেকে কেউ ডাকলে সেখানেও যাই। ছোটবেলায় ওস্তাদের কাছে ডালি ধরেই শিখেছি। গরিব মানুষ, মাঠে কাজ করি; কিন্তু কেউ মারা গেলে দ্বিধা করি না—এই কাজ আমার নেশায় পরিণত হয়েছে।’

মজিরুল আরও জানান, এখন তিনি তরুণদেরও এই কাজ শেখাচ্ছেন।

গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

গোরখোদক শাকের আলী বলেন, ‘আমরা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করি। কখনো কোনো টাকা নিই না। যেখানেই থাকি, গ্রামের কারও মৃত্যুর সংবাদ শুনলে দ্রুত কবর খুঁড়তে চলে আসি।’

গোরখোদক ফুয়াদ হোসেন বলেন, ‘অন্য গ্রাম থেকে ডাক এলেও আমরা যাই। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করি এই কাজ। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’

স্থানীয় বাসিন্দা শাজাহান আলী বলেন, ‘কবর খোঁড়া বড় দায়িত্বের কাজ। গ্রামের এসব মানুষ খবর পেলেই দৌড়ে আসে। আমরা তাদের জন্য দোয়া করি।’

মাওলানা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘মৃত ব্যক্তির জন্য কবর খোঁড়া নিঃসন্দেহে সওয়াবের কাজ। হাদিসে এসেছে—যাঁরা কবর খোঁড়েন, আল্লাহ তাদের জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শ্রীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, ফটকে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুরের শ্রীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে কারখানার ফটকের সামনে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকেরা। আন্দোলনের মুখে কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রধান ফটক তালাবদ্ধ করে সটকে পড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে শিল্প ও থানা-পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসেছেন। আজ বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের সাইটালিয়া গ্রামে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানায় এই ঘটনা ঘটে।

কারখানার নারী শ্রমিক মিনারা আক্তার বলেন, ‘অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের বেতন পরিশোধ করে নাই। এক মাসের বেতন না পেলে আমাদের চলা খুবই কঠিন হয়। আমাদের নাওয়া-খাওয়া বন্ধ হয়। আর সেখানে কারখানা কর্তৃপক্ষ দুই মাসের বেতনভাতা বকেয়া রেখেছে। আজ সকালে শ্রমিকেরা জড়ো হলে তারা পালিয়ে যায়।’

মিন্টু নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘এই কারখানায় আমরা তিন বছর ধরে চাকরি করছি। আমাদের বেতনের বাইরে কোনো সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে না। তবু পেটের দায়ে চাকরি করি। দুই মাসের বেতন বকেয়া। আমাদের তো পেট আছে, সন্তান-সংসার আছে। এক মাস দোকান বাকি পরিশোধ করতে না পারলে পরের মাসে আর দোকানি বাকি দেয় না। আমরা কী অবস্থায় আছি, একবার ভাবুন। বেতন পরিশোধ না করে তারা পালিয়ে গেছে।’

আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

মেহেদী হাসান বলেন, ‘এত দিন ধরে ঋণ করে বলে-কয়ে দোকান থেকে বাকি নিয়ে চলছি। আর পারছি না। এখন দোকান বাকি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতন নিয়ে কমপক্ষে ১০টি তারিখ দিছে। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ বেতন পরিশোধ করেনি। শেষে আজ বেতন পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু তারা কারখানা ফটকে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে গেছে।’

কারখানার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. বুলবুল হাসান বলেন, ‘ব্যাংকের সমস্যার কারণে বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাচ্ছে না। আশা করি, আজকের মধ্যে নভেম্বর মাসের বেতন পরিশোধ করতে পারব।’ বিনা নোটিশে কারখানার ফটক কেন তালাবদ্ধ? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি বলতে পারব না।’

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাছির আহমদ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মাছ ধরতে গিয়ে ভারতে আটক ৬ জেলে, ১৩ মাস পর হস্তান্তর

নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি 
১৩ মাস সাজা ভোগের পর হস্তান্তর হওয়া বাংলাদেশি ছয় জেলে। ছবি: আজকের পত্রিকা
১৩ মাস সাজা ভোগের পর হস্তান্তর হওয়া বাংলাদেশি ছয় জেলে। ছবি: আজকের পত্রিকা

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও সীমান্ত দিয়ে ছয় বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কাছে হস্তান্তর করেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের হস্তান্তর করা হয়।

হস্তান্তর হওয়া মৎস্যজীবীরা কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার বাসিন্দা। তাঁরা হলেন আবুল হোসেনের ছেলে রাসেল মিয়া (৩৫), বাহাদুর মিয়ার ছেলে বিপ্লব মিয়া (৪৫), ইসহাক আলীর ছেলে মীর জাফর আলী (৪৫), ইছাক আলীর ছেলে বকুল মিয়া (৩২), ফকির আলীর ছেলে আমের আলী (৩৫), সলিমুদ্দিন ব্যাপারীর ছেলে চাঁন মিয়া (৬০)।

বিজিবি ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৪ নভেম্বর জিঞ্জিরাম নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে ভুলক্রমে সীমান্ত অতিক্রম করে তাঁরা ভারতের ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় স্থানীয় পুলিশ ও বিএসএফ সদস্যরা তাঁদের আটক করে। অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে তাঁরা সেখানে প্রায় ১৩ মাস সাজা ভোগ করেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সন্ধ্যায় শেরপুর ৩৯ বিজিবির দায়িত্বে থাকা এলাকার হাতিপাগার বিজিবি কোয়ার্টার মাস্টার মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে ভারতের কিল্লাপাড়া বিএসএফ ক্যাম্পের সঙ্গে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে বিএসএফ ছয় বাংলাদেশি নাগরিককে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে। এ সময় নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।

মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর তাঁদেরকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত