Ajker Patrika

ঢাকায় মার্কেট দখলের চেষ্টায় শীর্ষ সন্ত্রাসীরা

  • নজর চাঁদার ৫০ কোটি টাকায়
  • দখলে এগিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন
  • সামনে রাখা হচ্ছে বিএনপির লোককে
  • আরেক চক্রে পিচ্চি হেলাল ও সুইডেন আসলাম
আমানুর রহমান রনি, ঢাকা 
আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩: ১৫
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর নিউ এলিফ্যান্ট রোড ও নিউমার্কেট এলাকায় রয়েছে ছোট-বড় ৫৭টি মার্কেট। এসব বিপণিবিতানসহ ওই এলাকায় ১১ হাজারের বেশি বিভিন্ন ধরনের দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব দোকান ও মার্কেট থেকে প্রতি মাসে বিভিন্ন সেবা খাত ও সার্ভিস চার্জের নামে ৪৫-৫০ কোটি টাকা চাঁদা তোলা হয়। পরিবর্তিত আইনশৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এই বড় অঙ্কের অর্থের ভাগ পেতে মার্কেটগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে মাঠে নেমেছে দেশের কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসী। ভয়ভীতি দেখিয়ে ও হামলা করে ইতিমধ্যে বেশির ভাগ মার্কেট নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে তারা।

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই নিউমার্কেট ও নিউ এলিফ্যান্ট রোড এলাকার মার্কেট নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার প্রতিযোগিতায় নামে দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও তাদের অনুসারীরা। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রথমেই বিভিন্ন মার্কেট ও দোকানে তালা দেওয়া শুরু হয়। এরপর সংশ্লিষ্ট মার্কেট পরিচালনা কমিটির নেতাদের ফোনে বা তলব করে হুমকি দেওয়া হতে থাকে। এতে আতঙ্কিত হয়ে নেতাদের অনেকে মার্কেটে যাওয়াই বন্ধ করে দেন। এরপর সন্ত্রাসীরা একে একে বিভিন্ন মার্কেট তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং নিজেদের পছন্দের লোক বসায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে মার্কেট পরিচালনা কমিটির নেতাদের ভয় দেখিয়ে লিখিত অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে এলাকার ৫৭টি মার্কেটের পরিচালনা কমিটিতেই হয় সন্ত্রাসীরা নিজেদের লোক বসিয়েছে, না হয় আগের কমিটি গোপনে আপস করে টিকে আছে।

কেস স্টাডি গাউসুল আজম মার্কেট

মোতালেব মিয়াসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী ২০০০ সালের শেষ দিকে নীলক্ষেতের গাউসুল আজম সুপার মার্কেট নামের বিপণিবিতানটি নির্মাণ করেন। বর্তমানে সেখানে ৮৪২টি দোকান রয়েছে। বর্তমান কমিটির সভাপতি মোতালেব মিয়া এবং সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান বাবুল। বাবুল আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই স্থানীয় সন্ত্রাসীরা মার্কেটটিতে তালা দেয়। পরে আইন- শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপে সে তালা খোলা হলেও ঘটনা শেষ হয়নি। এরপর থেকে মোতালেব ও বাবুলকে অপরিচিত ব্যক্তিরা হুমকি দিতে থাকে। আতঙ্কে বাবুল আর মার্কেটে ফেরেননি। মোতালেব হুমকির মধ্যেই নিউমার্কেট থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি মকবুল হোসেন সরদারের মধ্যস্থতায় মার্কেটে যান। এরপরও বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি পেতে থাকায় বিএনপির তরুণ প্রজন্মের এক শীর্ষ নেতার দ্বারস্থ হন মোতালেব মিয়া। মোতালেব মিয়া জানিয়েছেন, গত সেপ্টেম্বরে তিনি রাজধানীর বাংলামোটরে বিএনপির ওই নেতার অফিসে যান। নেতা তাঁর সঙ্গে থাকা কয়েকজনের সঙ্গে মোতালেবের পরিচয় করিয়ে দেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলাল ও সুইডেন আসলাম। মোতালেব মিয়ার দাবি, তাঁর কোনো কথা না শুনেই বিএনপির নেতা বলেন, ‘কামালকে সাধারণ সম্পাদক করে মার্কেট চালান।’ তিনি মোতালেবকে আর কথা বলতে দেননি।

বিএনপির ওই নেতার সুপারিশ করা কামাল হলেন ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক কামাল হোসেন। পিচ্চি হেলালের ঘনিষ্ঠ কামাল একসময় ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের নেতা ছিলেন।

সেদিনের ঘটনার বিষয়ে মোতালেব মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, তিনি বিএনপির নেতার কাছে সমাধানের জন্য গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে পিচ্চি হেলাল ও সুইডেন আসলামকে দেখে ভয় পেয়ে যান। এদিকে বিএনপির নেতার সমর্থন পেয়ে কামাল হোসেন লোকজন নিয়ে গাউসুল আজম সুপার মার্কেট দখলে নিয়ে নিজেকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন। আগের সাধারণ সম্পাদক বাবুলকে হুমকি দিয়ে এ মর্মে লিখিত নিয়ে নেন তিনি।

এ বিষয়ে বদিউজ্জামান বাবুল বলেন, ক্রমাগত হুমকির মুখে তিনি মার্কেটে আসা বন্ধ করেন এবং সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি নেন।

কামাল হোসেন এখন নিয়মিত মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির অফিসে বসেন। এই মার্কেট থেকে প্রতি মাসে অবৈধ দোকানভাড়া, গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ, পরিচ্ছন্নতা, নিরাপত্তা, মার্কেটের কর্মীসহ বিভিন্ন খাতে অন্তত ৫০ লাখ টাকা তোলা হয়। এসব বাবদ কিছু অর্থ পরিশোধ করে বাকিটা নিজেদের পকেটে রাখে মার্কেট পরিচালনা কমিটি।

কামাল হোসেনকে মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক মেনে নিয়েই সভাপতি মোতালেব মিয়া আবার মার্কেটে যাওয়া শুরু করেন। এ অবস্থায় গত ১৮ ডিসেম্বর মার্কেটে তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এ ঘটনায় থানায় করা সাধারণ ডায়েরিতে তিনি কামাল হোসেনকে অভিযুক্ত করেন। তবে কামাল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, তিনি হামলা করেননি; বরং মোতালেব মিয়া আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করছেন খবর পেয়ে হাজারীবাগের কিছু ছেলে এসে তাঁকে ধরেছিল। তিনি খবর পেয়ে এসে মোতালেবকে উদ্ধার করেন।

দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে ইমন

এলাকার সব মার্কেটের পরিচালনা কমিটির সাধারণ সদস্যরা জানিয়েছেন, দখলে এগিয়ে রয়েছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন। অন্যদিকে ইমামুল হাসান হেলাল (পিচ্চি হেলাল), সুইডেন আসলাম এবং কয়েক সন্ত্রাসী জোট বেঁধে আরেকটি বলয় সৃষ্টি করেছে। তবে ইমনের প্রভাবের সঙ্গে তারা পেরে উঠছে না। ধানমন্ডি ও নিউমার্কেট এলাকার ছাত্রদল ও যুবদলের প্রভাবশালী নেতারা ইমনের সঙ্গে রয়েছেন। কয়েকটি মার্কেট পরিচালনা কমিটির নেতা ও পুলিশের সূত্র বলেছে, নিয়ন্ত্রণ দখলের পর মার্কেটগুলোর পরিচালনা কমিটির সামনে রাখা হচ্ছে বিএনপির নেতা-কর্মীদের। নেপথ্যে থাকছে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা।

পিচ্চি হেলালের ভাই ওয়াহেদুল হাসান দীপু এলিফ্যান্ট রোড কম্পিউটার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি। ১০ জানুয়ারি রাতে মাল্টিপ্ল্যান মার্কেটের সামনে হামলার শিকার হন দীপু এবং ইপিএস কম্পিউটার সিটির মাল্টিপ্ল্যান শাখার যুগ্ম সদস্যসচিব এহতেসামুল হক। দীপু এ ঘটনায় করা হত্যাচেষ্টা মামলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনকে আসামি করেছেন।

ওয়াহেদুল হাসান দীপু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে ক্রমাগত চাঁদা দাবি করে আসছিল একটি চক্র। সেপ্টেম্বরে একদিন আমার অফিসে মুন্না, এ কে এম চঞ্চল ও খোকন নামের কয়েকজন আসে। তারা এসে ‘ক্যাপ্টেন কথা বলবে’ বলে একটি ফোন ধরিয়ে দেয় আমাকে। ওপাশ থেকে আমাকে বলা হয়, ‘ওরা যেভাবে বলে, সেভাবে মার্কেট চালাও।’ আমি ফোন রাখার পর ওই লোকদের কাছে ‘ক্যাপ্টেন’ কে জানতে চাই। তারা বলে, ‘ইমন ভাই’।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাল্টিপ্ল্যান মার্কেটে পিচ্চি হেলালের আপন ভাই থাকায় এখনো এটির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেননি ইমন। তবে নিউমার্কেটসহ গাউছিয়া, চাঁদনী চক, ইস্টার্ন মল্লিকা, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট ও ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন তিনি। মার্কেটসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইমনের সঙ্গে পিচ্চি হেলালের দ্বন্দ্ব বাড়ছে। এ নিয়ে ভবিষ্যতে আরও সংঘাতের আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

নিউ এলিফ্যান্ট রোডে পিচ্চি হেলালের ভাই দীপুর ওপর হামলার ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসাইন ওরফে মিথুনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁকে ছাড়িয়ে নিতে নিউমার্কেট থানায় হামলা চালায় অনুসারীরা। ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির আজকের পত্রিকা’কে বলেন, মিথুনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

ব্যবস্থা নেওয়ার প্রত্যয় পুলিশের

বিষয়টি নিয়ে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, মার্কেটের নিয়ন্ত্রণের লড়াই নিয়ে যতগুলো অভিযোগ পুলিশের কাছে এসেছে, সব কটির বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে কিছু লোক নীরবে আঁতাতও করছে, সেখানে তো পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে না। তবে সবকিছু পুলিশের নজরদারিতে আছে। ছোট সন্ত্রাসী, বড় সন্ত্রাসী কিংবা শীর্ষ সন্ত্রাসী—যে-ই হোক, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সড়কের ওপর রাখা ধানে দুর্ঘটনা, কুলাউড়ায় দুই চাচাতো ভাই নিহত

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় সড়কের ওপর রাখা ধানে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুই চাচাতো ভাই নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের তালতলা এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. গিয়াস উদ্দিন (৫৫) ও তাঁর চাচাতো ভাই জালাল আহমদ (৪৫)। তাঁরা দুজনই শরীফপুর ইউনিয়নের তেলিবিল (তালতলা) গ্রামের বাসিন্দা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মোটরসাইকেলে করে বটতলা বাজারে যাচ্ছিলেন গিয়াস ও জালাল। তালতলা এলাকায় সড়কের ওপর জমি থেকে কাটা ধানের গাদা রাখা ছিল। এতে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সামনে থেকে আসা একটি ব্যাটারিচালিত টমটমের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। দুই ভাই গুরুতর আহত হন। স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. লোকমান আহমদ বলেন, একই পরিবারের দুই সদস্যের মৃত্যুতে গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান মোল্যা বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

স্থানীয় সচেতন নাগরিকেরা জানান, আমন মৌসুমে ধান কাটার সময় বিভিন্ন সড়কে ধান ও খড় রাখা সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। কুয়াশায় খড় পিচ্ছিল হয়ে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বাড়ে। এ বিষয়ে প্রশাসন বা স্থানীয়ভাবে কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় অনেকেই প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নরসিংদীতে সংঘাত বন্ধে বিশেষ কম্বিং অপারেশন চালানো হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

নরসিংদী প্রতিনিধি
আজ সকালে নরসিংদী পুলিশ লাইনস পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকালে নরসিংদী পুলিশ লাইনস পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীর চরাঞ্চলে চলমান সংঘাত, দখলবাজি ও সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিশেষ কম্বিং অপারেশন চালানো হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আজ বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে নরসিংদী পুলিশ লাইনস পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এই তথ্য জানান।

পরিদর্শনকালে তিনি পুলিশ লাইনসে বৃক্ষরোপণ করেন এবং হাসপাতাল, রেশন স্টোর, রান্নাঘর, খাবারের মান, পুকুর, প্রশিক্ষণের মাঠসহ বিভিন্ন স্থাপনা ঘুরে দেখেন। সামগ্রিক পরিস্থিতি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। এ সময় নরসিংদীর পুলিশ সুপারসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘নরসিংদীতে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা এখন রায়পুরা উপজেলা। চরাঞ্চলে সন্ত্রাসীদের আড্ডা, আধিপত্য বিস্তার ও অবৈধ অস্ত্রের বিস্তার উদ্বেগজনক। যত দ্রুত সম্ভব কম্বিং অপারেশন চালিয়ে সব সন্ত্রাসীকে আইনের আওতায় আনা হবে।’

রায়পুরার চরাঞ্চলে দীর্ঘদিনের সংঘাত মানুষের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার চরাঞ্চলকে সন্ত্রাসমুক্ত করে স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে সমন্বিত অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিরা মনে করেন, ঘোষিত বিশেষ কম্বিং অপারেশন বাস্তবায়িত হলে বহুদিনের সশস্ত্র সংঘাত, গোলাগুলি ও সন্ত্রাসী তৎপরতার অবসান ঘটবে এবং নরসিংদীর চরাঞ্চলে শান্তি ফিরে আসবে।

পরে দুপুর ১২টার দিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জেলা কারাগার পরিদর্শন করেন। বেলা ২টায় তিনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় অংশ নেন, যেখানে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, কৃষি উৎপাদন, সার-বীজ সরবরাহ ও সেচ ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মাদকসেবী ও বখাটের উৎপাতে অতিষ্ঠ শহরবাসী, প্রতিকার চাইলেন পুলিশ সুপারের কাছে

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
মোহনগঞ্জ থানা। ছবি: আজকের পত্রিকা
মোহনগঞ্জ থানা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাদকে ছেয়ে গেছে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ পৌর শহর। দিনরাত চলে মাদকসেবী ও বখাটেদের উৎপাত। এতে অতিষ্ঠ শহরবাসী। এ ছাড়া শহরের একাধিক স্থানে চলে অসামাজিক কার্যকলাপ। এসব স্থানে মাদকসেবীদের আড্ডা বসে। প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় এসব অসামাজিক কার্যকলাপ দীর্ঘদিন ধরে চললেও স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এসব বন্ধে শহরের বাসিন্দারা অতিষ্ঠ হয়ে এবার পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়েছেন।

শহরের ৮০ জন বাসিন্দা স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগপত্র গত রোববার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। এর অনুলিপি জেলা প্রশাসক, সংশ্লিষ্ট থানার ওসি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরেও পাঠানো হয়েছে।

আজ বুধবার জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) হাফিজুল ইসলাম বলেন, এসব ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ মিলে যৌথ অভিযান পরিচালনা করলে আশানুরূপ ফল আসবে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য থানা-পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, পৌর শহরে মাদকসেবীর সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। মাদকের টাকা জোগাড় করতে তরুণেরা অপরাধে জড়াচ্ছেন। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীরাও মাদকে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

মোহনগঞ্জ থানার ওসির দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শফিকুজ্জামান বলেন, দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমেনা খাতুন বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলব। যৌথভাবে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জেলা প্রশাসক মো. সাইফুর রহমান বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট ইউএনওর সঙ্গে কথা বলেছি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পানিতে ডুবে প্রাণ গেল মামা-ভাগনের

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে পুকুরে ডুবে শাহবাব মন্ডল (আড়াই বছর) ও আবু তোহা মন্ডল (৩) নামের দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের যাদুরচর নতুন গ্রাম এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

শাহবাব মন্ডল উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের ধনারচর নতুন গ্রামের শাহজাহান মন্ডলের ছেলে এবং আবু তোহা মন্ডল একই গ্রা‌মের আবু তালেবের ছেলে। এই দুই শিশু সম্পর্কে মামা-ভাগনে।

পরিবারের বরাত দিয়ে যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরবেশ আলী জানান, বুধবার সকালে ওই দুই শিশু তালেব মন্ডলের বাড়িতে খেলা করছিল। এ সময় সবার অজান্তে তারা বাড়ির পা‌শে পুকুরের পানিতে পড়ে যায়। স্বজনেরা পুকুর থে‌কে দুই শিশু‌কে উদ্ধার করে হাসপাতালে নি‌য়ে যান। দা‌য়িত্বরত চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।

খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক একই এলাকার বাসিন্দা ও কুড়িগ্রাম-৪ আসনের বিএনপির মনোনীত সংসদ সদস‌্য প্রার্থী আজিজুর রহমান ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তি‌নি শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

রৌমারী থানার উপপ‌রিদর্শক শাহ‌নেওয়াজ হো‌সেন ব‌লেন, খবর পে‌য়ে ঘটনাস্থ‌লে পু‌লিশ পাঠা‌নো হ‌য়ে‌ছে। সহকারী ক‌মিশনার (ভূ‌মি) ঘটনাস্থ‌লে গি‌য়ে‌ছেন। দুই শিশুর মৃত‌্যুর ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনি ব‌্যবস্থা নেওয়া হ‌বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত