Ajker Patrika

বিমানবন্দরে মারধরের শিকার সেই প্রবাসীকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা  
আপডেট : ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫: ২৭
Thumbnail image
ছবি: ভিডিও থেকে

ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তাকর্মীদের মারধরে রক্তাক্ত হওয়া সেই প্রবাসীকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন বিমানবন্দরের নির্বাহী আদালত। নরওয়ে থেকে আসা সেই প্রবাসীকে জরিমানা করতে গতকাল বুধবার গভীর রাতে বিমানবন্দরে নির্বাহী আদালত কোর্ট হাজির করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ম্যাজিস্ট্রেট মো. ফারুক সুফিয়ান মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে প্রবাসী সাঈদ উদ্দিনকে অর্থদণ্ড দেন। প্রবাসী সাঈদ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ১৯৮০ দণ্ডবিধির ১৮৯ ধারায় ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এই ধারায় সরকারি কর্মচারীকে হুমকি কিংবা তাঁর কর্তব্য পালনে বাধা সৃষ্টির অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত সর্বোচ্চ দুই বছরের জেল বা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।

এর আগে বুধবার রাত সোয়া ৯টার দিকে নরওয়েপ্রবাসী সাঈদ উদ্দিন বিমানবন্দরের ২ নম্বর ক্যানোপি গেট দিয়ে বেরিয়ে আসেন। গেট-সংলগ্ন ডান পাশে দাঁড়ানো অবস্থায় এক এভসেক সদস্যের সঙ্গে তাঁর কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ওই যাত্রী উত্তেজিত হয়ে ওই নিরাপত্তাকর্মীকে ধাক্কা দেন। এর পরপরই অন্যান্য এভসেক ও আনসার সদস্যরা সাঈদকে কনকর্স হলের দিকে নিয়ে যান। এ সময় সাত-আটজন মিলে তাঁকে বেদম মারধর করেন। এতে সাঈদের মাথা-মুখ ফেটে রক্তাক্ত হয়ে যায়। পরে সেখান থেকে সাঈদ বেরিয়ে এলে এমন পরিস্থিতি দেখা যায়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে এভসেক সদস্যরা তাঁকেসহ তাঁর আত্মীয়স্বজন সবাইকে আবারও ভেতরে নিয়ে যান। পরে গভীর রাতে তাঁকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এদিকে বিষয়টি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ চেপে যাওয়ার চেষ্টা করলেও মারধরের শিকার যাত্রীর রক্তমাখা শরীর ও কিছু কথা-কাটাকাটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিও দেখার পর এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ।

ভিডিওতে মারধরের শিকার ব্যক্তিকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘আপনারা পাঁচ-ছয় জন ধরে আমাকে মারছেন।’

আর পাশে থাকা এভসেক সদস্য বলছেন, ‘আমাকে ধাক্কা দিলেন। আমি কি সাধারণ মানুষ? আমার ইউনিফর্ম আছে।’

তবে ধাক্কা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আহত ব্যক্তি বলছেন, ‘আমার কথা শোনেন ভাইয়া, আমি (ধাক্কা) দেইনি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম লিখিত আকারে তাঁর বক্তব্য পাঠান। তিনি তাঁর লিখিত বক্তব্যে আহত যাত্রীর নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘রাত সোয়া ৯টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক আগমনী ক্যানোপি-২-এর সামনে দুজন যাত্রী কর্তৃক বিমানবন্দরের একজন নিরাপত্তা সদস্যকে শারীরিকভাবে আঘাতের ঘটনা ঘটে।’

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা এবং প্রাথমিক তদন্তের বরাত দিয়ে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘পাঁচজন আগমনী যাত্রীর একটি দল বিমানবন্দরের কার্যক্রম শেষ করে ক্যনোপি-২ এলাকা দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় তাঁদের মধ্যে একজন ট্রলিসহ গেটের ঠিক সম্মুখভাগে অবস্থান করলে সব আগমনী যাত্রীর জন্য প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। ওই সময় ওই এলাকায় সম্মানিত আগমনী যাত্রীদের চাপ বেশি থাকায় কর্তব্যরত এক নিরাপত্তাকর্মী বিনীতভাবে উক্ত যাত্রীকে কিছুটা সরে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি তাতে কর্ণপাত না করে দাঁড়িয়ে থাকেন। কিছুক্ষণ পরে উক্ত নিরাপত্তাকর্মী পুনরায় ওই যাত্রীকে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করতে গেলে তিনি প্রচণ্ড রাগান্বিত হন এবং অকথ্য ও অশ্রাব্য ভাষায় উক্ত নিরাপত্তাকর্মীকে গালিগালাজ করতে থাকেন।’

কামরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘এ সময় সেখানে নিয়োজিত আরও একজন নিরাপত্তাকর্মী ওই যাত্রীকে শান্ত করার চেষ্টা করলে একপর্যায়ে ওই যাত্রীর ছেলে (একই ফ্লাইটের যাত্রী, যিনি পেছনে অবস্থান করছিলেন) ঘটনাস্থলে এসে বিমানবাহিনীর ওই নিরাপত্তাকর্মীকে শারীরিকভাবে আঘাত ও লাঞ্ছিত করেন। যাত্রীরা ওই নিরাপত্তাকর্মীকে কিলঘুষি মারা শুরু করলে তাঁদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয় এবং ওই নিরাপত্তাকর্মী মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। একপর্যায়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেখানে নিয়োজিত আনসার এবং অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটির সদস্যরা এগিয়ে এলে ওই নিরাপত্তাকর্মীদের উল্লেখিত দুজন যাত্রীর হাত থেকে মুক্ত করা হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত