Ajker Patrika

সাভারে পাঁচ প্রকল্প বাস্তবায়নে নয়ছয়

অরূপ রায়, সাভার (ঢাকা) 
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৯: ০৯
ঢাকার সাভারের কলকাকলী শিক্ষালয়ের পাশে উপজেলা পরিষদের মাঠের এক কোণে স্থাপিত দোলনা, স্লিপার ও ঢেঁকি। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঢাকার সাভারের কলকাকলী শিক্ষালয়ের পাশে উপজেলা পরিষদের মাঠের এক কোণে স্থাপিত দোলনা, স্লিপার ও ঢেঁকি। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঢাকার সাভার উপজেলা পরিষদ চত্বরে অবস্থিত কলকাকলী শিক্ষালয়ের ‘মিনি পার্কে’ রাইড স্থাপন করা হয়েছে—এমন তথ্য রয়েছে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাগজে। প্রকল্পটিতে ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। কিন্তু সরেজমিনে বিদ্যালয়টিতে কোনো মিনি পার্কের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তবে বিদ্যালয়ের পাশে উপজেলা পরিষদের মাঠের এক কোণে স্থাপিত কয়েকটি খেলনাসামগ্রী পাওয়া গেছে।

শুধু কলকাকলী শিক্ষালয়ের প্রকল্পই নয়, সাভার উপজেলা পরিষদ চত্বরের চারটি প্রকল্পসহ মোট পাঁচটির বিষয়ে অনুসন্ধানে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চারটি প্রকল্পে ১৫ লাখ ৮৩ হাজার টাকা এবং একটিতে ১০ টন গম ব্যয় দেখানো হয়েছে। সাভার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় থেকে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়।

তথ্য অধিকার আইনে সাভার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সাভারে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির আওতায় উপজেলায় ১৬৩টি প্রকল্পের জন্য ২ কোটি ৮৫ লাখ ৪২ হাজার ৩৩৬, গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় ৭৪টি প্রকল্পের জন্য ৩ কোটি ১২ লাখ ৯২ হাজার ৪৪৯ টাকা, একই কর্মসূচির (কাবিখা) আওতায় ২৯টি প্রকল্পের জন্য ২০৮ টন গম এবং ৩৪টি প্রকল্পের জন্য ২০৮ টন চালের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এসব প্রকল্পে অর্থ ও শস্য ব্যয়ের জন্য ৩০০টি প্রকল্প কমিটির গঠন করা হয়। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান অথবা প্রতিষ্ঠান প্রধান কর্তৃক মনোনীত কর্মকর্তা বা ব্যক্তিরা প্রকল্প কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এবং বরাদ্দের অর্থ ব্যয় করেন। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে সার্বিক বিষয়গুলো তদারকি ও বাস্তবায়ন করা হয়।

পিআইওর কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদ চত্বরের চারটি প্রকল্পের মধ্যে কলকাকলী শিক্ষালয়ের ‘মিনি পার্কে’ রাইড স্থাপনের জন্য ৩ লাখ ৯০ হাজার, পরিষদের জামে মসজিদের উন্নয়নের জন্য ৫ লাখ ৩ হাজার, উপজেলা পরিষদ মাঠের চার পাশের হাঁটার পথে বাতি (ওয়াকওয়ের স্ট্রিট লাইট) স্থাপনের জন্য ৩ লাখ ৯০ হাজার, হাঁটার পথ (ওয়াকওয়ে) উন্নয়নের জন্য ৩ লাখ টাকা এবং সাভার পৌর এলাকার ওয়াপদা রোডের সাভার টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের মাঠে মাটি ভরাটের জন্য ১০ টন গম ব্যয় দেখানো হয়েছে।

গত বুধবার কলকাকলী শিক্ষালয়ে গিয়ে মিনি পার্কের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। বিদ্যালয়ের পাশে উপজেলা পরিষদের মাঠের এক কোণে স্থাপিত দুটি স্টিলের দোলনা, একটি স্লিপার ও দুটি ঢেঁকি পাওয়া যায়, যেখানে কলকাকলী শিক্ষালয়ের শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করে সময় কাটাচ্ছিল।

ঢাকার সাভারের কলকাকলী শিক্ষালয়ের পাশে উপজেলা পরিষদের মাঠের এক কোণে স্থাপিত দোলনা, স্লিপার ও ঢেঁকি। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঢাকার সাভারের কলকাকলী শিক্ষালয়ের পাশে উপজেলা পরিষদের মাঠের এক কোণে স্থাপিত দোলনা, স্লিপার ও ঢেঁকি। ছবি: আজকের পত্রিকা

জানতে চাইলে শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের বিদ্যালয়ে কোনো মিনি পার্ক নেই। কয়েক মাস আগে বিদ্যালয়সংলগ্ন উপজেলা পরিষদ মাঠের এক কোণে খেলাধুলার পাঁচটি সরঞ্জাম স্থাপন করা হয়েছে। এরপর থেকে সময় পেলে তারা সেখানে খেলাধুলা করে।

দুটি স্টিলের দোলনা, একটি স্লিপার ও দুটি ঢেঁকি স্থাপনে ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা। তাঁদের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকও।

খেলাধুলার এসব সরঞ্জাম দেখে এবং মাপজোক করে সাভার শীতল অ্যান্ড সন্স ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিক পবন কুমার দাস বলেন, ‘এসব খেলনাসামগ্রী তৈরিতে দেড় লাখ টাকার বেশি খরচ হওয়ার কথা নয়।’

এ বিষয়ে কলকাকলী শিক্ষালয়ের প্রধান শিক্ষক ও খেলাধুলার সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্য গঠিত প্রকল্প কমিটির সভাপতি সেলিমা বেগম বলেন, ‘কাগজ-কলমে আমাকে প্রকল্প কমিটির সভাপতি করা হলেও আমি কোনো টাকা খরচ করিনি। আমার ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে প্রকল্পের টাকা জমা হওয়ার পর সদ্য সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির বিদায়ী সভাপতি মো. আবুবকর সরকারের নির্দেশে সে টাকা উত্তোলন করি। এরপর তা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয়ে জমা দিই। তাঁরা (পিআইওর কার্যালয়) সেই টাকা খরচ করে। আমাদের কোনো ভাউচারও দেয়নি।’

দুটি স্টিলের দোলনা, একটি স্লিপার ও দুটি ঢেঁকি স্থাপনে ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে কি না—এমন প্রশ্ন করা হলে সেলিমা বেগম বলেন, ‘আমার জানা নেই। তবে এই কয়েকটা সরঞ্জামের জন্য এত টাকা খরচ হয়েছে বলে আমার মনে হয় না।’

২০২৪-২৫ অর্থবছরে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের জামে মসজিদের উন্নয়নে দুই দফায় ৫ লাখ ৩ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। কিন্তু ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষ হলেও মসজিদের উন্নয়নে সরকারি বরাদ্দের সেই টাকা খরচ করা হয়নি বলে জানান মসজিদের খাদেম ফজলুল হক।

মসজিদের ইমাম মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘২০২৪-২৫ অর্থবছরে মসজিদ উন্নয়নের জন্য প্রথম দফায় ১ লাখ ১৩ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। আমি প্রকল্প কমিটির সভাপতি হিসেবে ওই টাকা উত্তোলন করে মসজিদের ব্যাংক হিসেবে জমা রাখি। পরে মসজিদ পরিচালনা কমিটি ওই টাকা খরচ করেছে কি না, তা আমার জানা নেই। এ ছাড়া একই অর্থবছরে দ্বিতীয় দফায় আরও ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা পাওয়া যায়। প্রকল্প কমিটির সভাপতি হিসেবে আমি ওই টাকা তুলে ব্যাংক হিসাবে জমা রেখেছি। অর্থবছর শেষ হয়ে গেলও তা এখনো খরচ করা হয়নি।’

তবে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম আব্দুল মজিদ বলেন, ‘গত অর্থবছরের বরাদ্দের টাকা এসি (শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র) কিনে এবং টাইলস স্থাপন করে খরচ করা হয়েছে। কোনো টাকা আমাদের হাতে বা ব্যাংকে জমা নেই।’

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘২০২৪-২৫ অর্থবছরে উপজেলা কমপ্লেক্সের মসজিদের জন্য বরাদ্দের ৫ লাখ ৩ হাজার টাকায় এসি কেনা হয়েছে। এসি কেনার পর প্রকল্প কমিটির সভাপতি মসজিদের ইমাম আমাদের ভাউচার দিয়েছেন।’ কিন্তু ভাউচার দেখতে চাইলে তিনি (অফিস সহকারী রফিকুল ইসলাম) কোনো ভাউচার দেখাতে পারেননি।

উপজেলা পরিষদ মাঠের চার পাশের হাঁটার পথে বাতির (ওয়াকওয়ের স্ট্রিট লাইট) খোঁজ নিতে গিয়ে আটটি বাতির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। মোটা টিনের পাত দিয়ে তৈরি খুঁটির প্রতিটিতে দুটি করে বাতি লাগানো হয়েছে, যা বিদ্যুতের সাহায্যে জ্বলে। পরিষদের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, মাঠের চার পাশের হাঁটার পথে বাতি মাসপাঁচেক আগে স্থাপন করা হয়।

সাভার শীতল অ্যান্ড সন্স ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিক পবন কুমার দাস বলেন, ‘বাজারমূল্য অনুযায়ী প্রতিটি খুঁটি তৈরি করতে ১০ হাজার টাকার বেশি খরচ হওয়ার কথা নয়। এর সঙ্গে লাইট স্থাপনে আরও ৫ হাজার টাকা করে খরচ হতে পারে। কিন্তু এই আটটি বাতি স্থাপনে ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা খরচ হওয়ার কথা নয়।’

অন্যদিকে হাঁটার পথ (ওয়াকওয়ে) উন্নয়নের জন্য ৩ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হলেও তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। হাঁটার পথে যে টাইলস রয়েছে, তা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আগের অর্থবছরের বরাদ্দের টাকা থেকে ব্যয় করা হয়েছে বলে পিআইওর কার্যালয় থেকে জানানো হয়।

মাঠের এক কোণে স্থাপিত ছাউনিতে পরিষদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক আনসার সদস্য বলেন, ‘মাসপাঁচেক আগে পরিষদের মাঠে বালু ফেলে কয়েক ইঞ্চি উঁচু করতে দেখেছি। এরপর মাঠে কিছু ঘাস লাগানো হয়। আর মাঠে জমে থাকা পানি বের হওয়ার জন্য এক পাশে ৫ থেকে ৬ ফুট করে ৪টি সরু নালা তৈরি করা হয়েছে। হাঁটার রাস্তার কোনো সংস্কার বা উন্নয়ন করতে দেখিনি।’

সরবরাহ করা তথ্যে সাভার ইউনিয়নের কাবিখার বরাদ্দ থেকে ‘সাভার টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট’ নামের একটি কলেজের মাঠে মাটি ভরাটের জন্য ১০ টন গম খরচ দেখানো হয়। কিন্তু সাভার ইউনিয়নের কোনো এলাকায় ওই নামে কোনো প্রতিষ্ঠান পাওয়া যায়নি। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়নের ডগরতলি গ্রামে ওই নামে একটি কলেজ রয়েছে।

কলেজের সদ্য সাবেক অধ্যক্ষ হোসনে আরা বলেন, ‘সাভার পৌর এলাকার ওয়াপদা রোডের একটি ভাড়া বাসায় কলেজের কার্যক্রম চলত। পদাধিকার বলে কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে থাকা সাভারের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাঁশবাড়ী মৌজা থেকে কলেজের নামে ৫০ শতাংশ অর্পিত সম্পত্তি একসনা লিজ দেওয়ার পর গত ফেব্রুয়ারি মাসে কলেজটি সেখানে স্থানান্তর করা হয়।’

গত বৃহস্পতিবার ডগরতলিতে গিয়ে দেখা যায়, হাজী যান মোহাম্মদ উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠের এক কোণে কলেজের একটি সাইনবোর্ড রয়েছে। তাঁর পাশেই ২০ বর্গফুট আয়তনের দুটি কক্ষের ছোট্ট একটি আধা পাকা ভবন রয়েছে, যা শিক্ষকদের চাঁদার টাকায় নির্মাণ করা হয় বলে শিক্ষকেরা জানান।

কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, কয়েক মাস আগে ওই ভবনের সামনের কয়েক বর্গফুট নিচু ভূমি বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে, যা কলেজের মাঠ নয়।

কলেজের সহকারী অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘২০২৪-২৫ অর্থবছরে মাঠে মাটি ভরাটের জন্য ১০ টন গম বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই গম বিক্রি করে শ্রেণিকক্ষের সামনে বালু ফেলা হয়েছে। আমরা নিজেরা কোনো খরচ করিনি।’

জানতে চাইলে সাভার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফাইজুল ইসলাম বলেন, ‘টিআর, কাবিটা ও কাবিখার প্রকল্প অনুমোদন হওয়ার পর বরাদ্দের টাকা, চাল বা গম প্রকল্প কমিটির সভাপতিকে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে টাকার ক্ষেত্রে প্রকল্প কমিটির সভাপতির নামে চেক দেওয়া হয়েছে। টাকা, চাল কিংবা গম পাওয়ার পর প্রকল্প কমিটি তা ব্যয় করেছে। সংগত কারণেই আমার দপ্তর থেকে টাকা খরচ বা কেনাকাটা করার কোনো সুযোগ নেই। কেউ এমন তথ্য বা অভিযোগ দিয়ে থাকলে তা সত্য নয়। কোনো প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দের টাকা ও চাল বা গম নয়ছয় হয়ে থাকলে এবং তার প্রমাণ পাওয়া গেলে ওই সব প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সাভারের সদ্য সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুবকর সরকার বলেন, ‘পদাধিকার বলে আমি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ছিলাম। কিন্তু কোনো প্রকল্প কমিটির সভাপতি ছিলাম না। বরাদ্দের অর্থ বা শস্য প্রকল্প কমিটির সভাপতিকে দেওয়া হয়েছে। তাঁরাই ওই সব টাকা বা শস্য খরচ করেছেন। বরাদ্দের অর্থ বা শস্য ব্যয়ের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না, তা আমার জানা নেই।’

সাভারের বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়মের বিষয়ে কথা হলে সাভারের বর্তমান ইউএনও মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমি সদ্য যোগদান করলাম। আগের কোনো প্রকল্পে অনিয়ম হলে খোঁজখবর নিয়ে দেখব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক উদ্বোধন বৃহস্পতিবার, তোলা যাবে ২ লাখ টাকা

তালাকের ১ মাসের মাথায় ফের বিয়ে করলেন ত্বহা-সাবিকুন

হঠাৎ বিদেশে শাহবাজ শরিফ, সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে সিডিএফ নিয়োগ নিয়ে বিড়ম্বনায় পাকিস্তান

খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে গেলেন ৩ বাহিনীর প্রধানেরা

তালাকের পরে ফের বিয়ে নিয়ে সমালোচনা, যে ব্যাখ্যা দিলেন সাবিকুন নাহার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভাগ্যবদলের স্বপ্নে ছুটছেন গাইবান্ধার চরাঞ্চলের নারীরা

আনোয়ার হোসেন শামীম, গাইবান্ধা
বাড়ির আঙিনায় চাষ করা সবজির পরিচর্যা করছেন এক নারী। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাড়ির আঙিনায় চাষ করা সবজির পরিচর্যা করছেন এক নারী। ছবি: আজকের পত্রিকা

উত্তরের জেলা গাইবান্ধা সাতটি উপজেলা নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে সুন্দরগঞ্জ, সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা—এই চারটি উপজেলা চরবেষ্টিত। এসব চরে প্রায় ৫ লাখ মানুষের জীবন কাটে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নদীভাঙন, ভূমিক্ষয়, বন্যা, ঝড় আর দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে। নদীভাঙনের ধাক্কা সামলে টিকে থাকতে তাঁদের এক চর থেকে অন্য চরে ছুটে বেড়াতে হয়।

এই পিছিয়ে থাকা মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি কাজ করছে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের নারীরা প্রশিক্ষণ নিয়ে বসতবাড়ির আঙিনায় শাকসবজি চাষ, হাঁস-মুরগি ও ভেড়া পালন শুরু করেছেন। এতে নিজেদের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি বাড়তি আয় করে ভাগ্যবদলের স্বপ্ন দেখছেন তাঁরা।

দুর্যোগে চরের মানুষের ধানের বীজতলা, মাঠের ফসল, ঘরবাড়ি, গরুর খাবার, খড়ের গাদা পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায়। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ফ্রেন্ডশিপসহ কয়েকটি এনজিও এগিয়ে এসেছে। ফ্রেন্ডশিপের ট্রান্সিশন ফান্ড (এএসডি) প্রকল্পের সহায়তায় এসব পরিবার বসতভিটায় সবজি চাষ এবং ভেড়া, হাঁস-মুরগি পালন শুরু করেছে। তাতেই পাল্টে যাচ্ছে তাঁদের জীবনমান।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার মোল্লারচর ইউনিয়নের মাইজবাড়ী চরের এফডিএমসির সদস্য আসমা বেগম ফ্রেন্ডশিপের প্রকল্প থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা মূল্যের একটি ভেড়া পেয়েছিলেন। সেই ভেড়া থেকে এখন তাঁর পাঁচটি ভেড়া হয়েছে। বাজারে এগুলোর দাম প্রায় ৩২ হাজার টাকা।

মালেকা বেগম বলেন, ‘আধুনিক পদ্ধতিতে শাকসবজি উৎপাদনের প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর আমার বসতবাড়িতে সবজি উৎপাদন করে এ বছর ৫ হাজার ১০০ টাকার সবজি বিক্রি করেছি, যা আমার সংসারের ব্যয়ভার বহনে খরচ হচ্ছে এবং আমি সবজি বিক্রির ৮ হাজার টাকায় একটি ছাগল কিনেছি।’

গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের কড়াইবাড়ী চরের মুনসুরা বেগম বলেন, ‘আগে অবহেলিত ছিলাম। ভেড়া পেয়ে এখন স্বাবলম্বী হওয়ার পথে। একটা ভেড়া দিয়ে শুরু করে বর্তমানে আমার ৩০টি ভেড়া হয়েছে। এ ছাড়া শাকসবজি চাষ করি। নিজে খাই, বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করি।’

ভেড়া পালন করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন আসমা বেগমের। ছবি: আজকের পত্রিকা
ভেড়া পালন করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন আসমা বেগমের। ছবি: আজকের পত্রিকা

আম্বিয়া বেগম নামের একজন বলেন, একসময় পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ ছিল। এনজিও থেকে একটি ভেড়া পেয়ে সেটি থেকে একাধিক হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটি ভেড়া বিক্রি করে পরিবারে বেশ সচ্ছলতা ফিরেছে।

চরের নুরুল ইসলাম, রাশেদা বেগম ও মিনারা বেগম বলেন, ‘আগে বাজার থেকে সার কিনতে হতো, এখন আমরা নিজেরাই কম্পোস্ট সার তৈরি করি। পোকামাকড় দমনে ব্যবহার করি ফেরোমন ফাঁদ। সরকারি সেবা পেতে বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করি। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধেও কাজ করছি।’

তাঁরা আরও বলেন, ঘন ঘন দুর্যোগ মোকাবিলা, অবকাঠামো উন্নয়ন, সরকারি সহায়তা ও সচেতনতা বাড়াতে আরও কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন।

ফ্রেন্ডশিপের প্রকল্প ব্যবস্থাপক দিবাকর বিশ্বাস বলেন, ‘চরাঞ্চলের পিছিয়ে থাকা নারীদের ভেড়া ও সবজি চাষে স্বাবলম্বী করতে আমরা সহায়তা দিচ্ছি। বীজ, প্রযুক্তিগত সহায়তা—সবই বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে। গাইবান্ধার চরাঞ্চলে দেশি ভেড়ার বীজ থেকে উন্নত জাত তৈরির কাজ চলছে। এই জাতের ভেড়া দুর্যোগপ্রবণ এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক হবে।’

গাইবান্ধা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘চরাঞ্চলে ভেড়া পালন খুবই লাভজনক। জেলায় সমতল এলাকায় ৭৪ হাজার ভেড়া রয়েছে। চরাঞ্চলে চারণভূমি থাকায় ভেড়া পালন সহজ এবং এতে বাড়তি শ্রমিকও লাগে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক উদ্বোধন বৃহস্পতিবার, তোলা যাবে ২ লাখ টাকা

তালাকের ১ মাসের মাথায় ফের বিয়ে করলেন ত্বহা-সাবিকুন

হঠাৎ বিদেশে শাহবাজ শরিফ, সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে সিডিএফ নিয়োগ নিয়ে বিড়ম্বনায় পাকিস্তান

খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে গেলেন ৩ বাহিনীর প্রধানেরা

তালাকের পরে ফের বিয়ে নিয়ে সমালোচনা, যে ব্যাখ্যা দিলেন সাবিকুন নাহার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জুয়েলারি ব্যবসায়ীকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা

নরসিংদী প্রতিনিধি
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৯
নিহত প্রান্তোষ কর্মকার। ছবি: সংগৃহীত
নিহত প্রান্তোষ কর্মকার। ছবি: সংগৃহীত

নরসিংদীর রায়পুরায় প্রান্তোষ কর্মকার (৪২) নামের এক জুয়েলারি ব্যবসায়ীকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে উপজেলার বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের দিঘলিয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের কাছে এই ঘটনা ঘটে। নিহত প্রান্তোষ কর্মকার বাঁশগাড়ি নতুন বাজারের স্বর্ণকার ছিলেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রান্তোষকে রাতের খাবারের পর কয়েকজন মুখোশধারী ব্যক্তি লেনদেনের কথা বলে বাড়ি থেকে ডেকে বাইরে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর গুলির শব্দ শুনে স্থানীয় বাসিন্দারা বিদ্যালয়ের পাশে তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। পরে দ্রুত উদ্ধার করে রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক প্রথমিক চিকিৎসা দিয়ে নরসিংদী সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখানে পৌঁছানোর পর জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার পর এলাকায় থমথমে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

নিহত ব্যক্তির স্ত্রী স্বর্ণলতা কর্মকার বলেন, কয়েক দিন ধরে কিছু লোকের সঙ্গে তাঁর স্বামীর বিরোধ চলছিল। তারা প্রান্তোষকে নানা সময়ে হুমকি দিত বলেও অভিযোগ করেন তিনি। পরিকল্পিতভাবেই তাঁকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি পরিবারের। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।

নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আসাদুজ্জামান বলেন, ‘হাসপাতালে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। বুক ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলির চিহ্ন রয়েছে।’

জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজন চন্দ্র সরকার বলেন, বাঁশগাড়িতে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক ব্যবসায়ী নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কারা এবং কেন এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে পুলিশের পৃথক টিম মাঠে নেমেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক উদ্বোধন বৃহস্পতিবার, তোলা যাবে ২ লাখ টাকা

তালাকের ১ মাসের মাথায় ফের বিয়ে করলেন ত্বহা-সাবিকুন

হঠাৎ বিদেশে শাহবাজ শরিফ, সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে সিডিএফ নিয়োগ নিয়ে বিড়ম্বনায় পাকিস্তান

খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে গেলেন ৩ বাহিনীর প্রধানেরা

তালাকের পরে ফের বিয়ে নিয়ে সমালোচনা, যে ব্যাখ্যা দিলেন সাবিকুন নাহার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সাংবাদিকদের তালাবদ্ধ রাখার হুমকি দেওয়া যুবশক্তির দুই নেতাকে অব্যাহতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৯
জাতীয় যুবশক্তির দুই নেতা গত সোমবার সাংবাদিকদের হুমকি দিচ্ছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
জাতীয় যুবশক্তির দুই নেতা গত সোমবার সাংবাদিকদের হুমকি দিচ্ছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহীতে সাংবাদিকদের তালাবদ্ধ করে রাখার হুমকি দেওয়া জাতীয় যুবশক্তির দুই নেতাকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে সংগঠনের যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) আসাদুর রহমান এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, গুরুতর সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় যুবশক্তির রাজশাহী মহানগর শাখার মুখ্য সংগঠক মেহেদী হাসান ফারাবি এবং যুগ্ম সদস্যসচিব সোয়াইব আহমেদকে কমিটির সকল দায়িত্ব থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে শৃঙ্খলাভঙ্গজনিত কর্মকাণ্ডের দায়ে এই দুজনকে কেন স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না, সে বিষয়ে আগামী দুই দিনের মধ্যে লিখিত এবং সশরীর উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য আহ্বায়ক তারিকুল ইসলাম এবং সদস্যসচিব ডা. জাহেদুল ইসলাম নির্দেশ দিয়েছেন।

আসাদুর রহমান আরও জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দেওয়া না হলে সংগঠনের নীতিমালা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, সোমবার রাজশাহী পর্যটন মোটেলে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নতুন জেলা কমিটির পরিচিতি সভা ছিল। সে সভা পণ্ড করতে যান মেহেদী হাসান ফারাবি ও সোয়াইব আহমেদসহ এনসিপির কয়েকজন নেতা-কর্মী। তাঁরা অভিযোগ তোলেন, এনসিপির জেলা কমিটির নতুন আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম আওয়ামী লীগের দোসর। তাঁরা তাঁর পদত্যাগ চান।

এ অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকেরা মোটেলের সম্মেলনকক্ষে সাইফুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলছিলেন। প্রশ্নোত্তর পর্ব চলাকালে সম্মেলনকক্ষের ভেতরে প্রবেশ করেন সোয়েব আহমেদ ও মেহেদী হাসান ফারাবি।

ঢুকেই সোয়েব বলেন, ‘ভাই, সাংবাদিক যাঁরা আছেন, এইটা যদি এখনই বন্ধ না করেন, আপনাদেরসহ আমরা তালা মেরে দেব। আপনারা পায়খানা-প্রস্রাব সব এইখানে করতে হবে।’

পাশ থেকে ফারাবি বলেন, ‘এত লোক সব বাইরে বসে আছে। আপনারা ফাইজলামি করছেন এখানে, নাকি?’ সাংবাদিকেরা কিছু না বললে ফারাবি আবার বলেন, ‘ভাই চিল্লাচ্ছি, কানে যাচ্ছে না কথা?’

এরপর সোয়েব তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘এখনই যদি বন্ধ না করেন এটা, আপনাদের সাংবাদিকদেরসহ কিন্তু আমরা তালা মেরে দেব।’

এরপরই সাংবাদিকেরা এসে এর প্রতিবাদ করেন। এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।

সাংবাদিকদের সঙ্গে এমন আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে রাতেই বিবৃতি দেয় রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী শাখা। এ ছাড়া মঙ্গলবার রাজশাহী এডিটরস ফোরাম বিবৃতি দিয়ে এর নিন্দা জানায়।

সাংবাদিক সংগঠনগুলো এই ঘটনাকে স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি হুমকি এবং জুলাইয়ের চেতনাবিরোধী উল্লেখ করে অবিলম্বে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক উদ্বোধন বৃহস্পতিবার, তোলা যাবে ২ লাখ টাকা

তালাকের ১ মাসের মাথায় ফের বিয়ে করলেন ত্বহা-সাবিকুন

হঠাৎ বিদেশে শাহবাজ শরিফ, সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে সিডিএফ নিয়োগ নিয়ে বিড়ম্বনায় পাকিস্তান

খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে গেলেন ৩ বাহিনীর প্রধানেরা

তালাকের পরে ফের বিয়ে নিয়ে সমালোচনা, যে ব্যাখ্যা দিলেন সাবিকুন নাহার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বনের টিলা কেটে ভবন নির্মাণ

  • সংরক্ষিত বনের মধ্যে বসবাসের জন্য অবৈধভাবে চলছে পাকা স্থাপনা নির্মাণকাজ।
  • রাজকান্দি বন রেঞ্জের সংরক্ষিত এলাকায় এমন বেশ কয়েকটি পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়।
মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের কালেঞ্জি গ্রামে বন রেঞ্জের সংরক্ষিত এলাকায় টিলা কেটে চলছে ভবন নির্মাণকাজ। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। আজকের পত্রিকা
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের কালেঞ্জি গ্রামে বন রেঞ্জের সংরক্ষিত এলাকায় টিলা কেটে চলছে ভবন নির্মাণকাজ। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় সংরক্ষিত বনের মধ্যে বসবাসের জন্য অবৈধভাবে চলছে পাকা স্থাপনা নির্মাণকাজ। এ জন্য কাটা হয়েছে টিলা। রাজকান্দি বন রেঞ্জের সংরক্ষিত এলাকায় এমন বেশ কয়েকটি পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বন বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অবৈধভাবে এই স্থাপনা নির্মাণকাজ চলে।

সম্প্রতি রাজকান্দি বন রেঞ্জে আদমপুর ইউনিয়নের কালেঞ্জি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, টিলার একটি অংশ কেটে বসবাসের জন্য ভবন নির্মাণকাজ করছেন শ্রমিকেরা। তবে সাংবাদিক পরিচয় শুনে তাঁরা ভয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আদমপুর ইউনিয়নের কালেঞ্জি গ্রামে সংরক্ষিত বনের জমিতে শতাধিক পরিবার বসবাস করছে। বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে তারা দীর্ঘদিন ধরে কাঁচা ঘরবাড়ি তৈরি করে বাস করে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি সেখানে নুরনবী, আব্দুল নবী, মহেব উল্যাহ নামের তিনজন ব্যক্তি পাশাপাশি তিনটি বাড়িতে পাকা ঘর নির্মাণ করছেন। তাঁদের এই ভবন নির্মাণে বন বিভাগ থেকে কোনো বাধা দেওয়া হয়নি। ঘর নির্মাণের বিষয়টি জানার জন্য এসব বাড়িতে গিয়েও তাঁদের পাওয়া যায়নি। গত কয়েক বছরে এমন আরও কয়েকটি পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হয় সংরক্ষিত এই বনের জমিতে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বনের এই গ্রামে রাস্তার পাশেই বাড়িঘর। বন বিভাগের লোকজন প্রতিদিন কয়েক দফা এদিকে আসা-যাওয়া করেন। তাঁদের অনুমতি ছাড়া পাকা ঘর নির্মাণের সাহস কেউ করবে না।

এদিকে সংরক্ষিত এলাকায় ভবন নির্মাণের ফলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। কাটা পড়ছে টিলা ও গাছপালা।

জানা গেছে, ২০ হাজার ২৭০ একর এলাকা নিয়ে রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। আদমপুর, কুরমা ও কামারছড়া বন বিটের আওতায় রয়েছে এই বন। সীমান্তঘেঁষা এই বনে ২০১৮ সালে ‘বাংলাদেশ জার্নাল অব প্ল্যান্ট ট্যাক্সোনমি’তে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়, বনটিতে ১২৩ উদ্ভিদ পরিবারের প্রায় ৫৪৯ প্রজাতির সপুষ্পক উদ্ভিদ শনাক্ত হয়েছে। প্রায় ১২ প্রজাতির বটগাছ এবং ১০ প্রজাতির কাষ্ঠল লতার বৈচিত্র্য খুব কম বনেই আছে।

বনটিতে সোনালি বিড়াল, এশীয় কালো ভালুক, বনছাগল, খুদে নখের ভোঁদড়, বনরুইও রয়েছে। প্রায় ৩০০ প্রজাতির পাখির বিচরণও এই বনে। ১৯৭৩ সালে গৃহীত বিপন্ন বন্য প্রাণী এবং উদ্ভিদ প্রজাতির বাণিজ্যসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদ বা সাইট্রাসভুক্ত বহু উদ্ভিদ ও প্রাণীর বিচরণস্থল এই বন। বনটিতে বানর, হরিণ, উল্লুক, হনুমান, শূকরসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও পাখির এক জীবন্ত সংগ্রহশালা। নানা প্রজাতির পাখি, বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ বনটিতে শুরু হয়েছে অবক্ষয়। বনের মধ্যে অবৈধভাবে পাকা স্থাপনা তৈরি করা গুরুতর অপরাধ। এটি বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২-এর অধীনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে।

কমলগঞ্জের রাজকান্দি বন রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মামুনুর রশীদ বলেন, শুধু রাজকান্দি রেঞ্জ নয়, কোনো সংরক্ষিত বনের মধ্যে পাকা স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি নেই। পাকা ঘর যারা নির্মাণ করেছে, তাদের বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে।

মৌলভীবাজার বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) নাজমুল আলম বলেন, ‘সংরক্ষিত বনে পাকা ঘর নির্মাণ করা যাবে না। আমি বিষয়টি এখন জানলাম। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক তৌহিদুজ্জামান পাভেল বলেন, ‘বিষয়টি আমি এখন জানতে পারলাম। সংরক্ষিত বনের মধ্যে কেউ অবৈধভাবে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক উদ্বোধন বৃহস্পতিবার, তোলা যাবে ২ লাখ টাকা

তালাকের ১ মাসের মাথায় ফের বিয়ে করলেন ত্বহা-সাবিকুন

হঠাৎ বিদেশে শাহবাজ শরিফ, সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে সিডিএফ নিয়োগ নিয়ে বিড়ম্বনায় পাকিস্তান

খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে গেলেন ৩ বাহিনীর প্রধানেরা

তালাকের পরে ফের বিয়ে নিয়ে সমালোচনা, যে ব্যাখ্যা দিলেন সাবিকুন নাহার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত