Ajker Patrika

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে: বাড়ছে গাড়ি, হাতে হাতে টোল আদায়ে তৈরি হচ্ছে যানজট 

সৌগত বসু, ঢাকা
আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২২: ৩৪
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে: বাড়ছে গাড়ি, হাতে হাতে টোল আদায়ে তৈরি হচ্ছে যানজট 

পদ্মা সেতু ও ঢাকা-ভাঙ্গা বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে পারাপারে ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন সিস্টেম (ইটিসি) পদ্ধতি চালু করলেও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চলছে সনাতন পদ্ধতিতে। ব্যস্ততম শহরে এমন অবস্থায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে চালক ও যাত্রীদের। প্রথম দুই দিনে গাড়ি সংখ্যা কম থাকায় তেমন সমস্যা হয়নি। তবে এখন বাড়ছে গাড়ির সংখ্যা। হাতে হাতে লেনদেন করায় তৈরি হচ্ছে যানজট।

আজ বুধবার রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকার কাওলা টোল প্রান্ত, তেজগাঁও ও বনানী প্রান্তে টোলের কারণে যানজটের দৃশ্য দেখা গিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢাকার মধ্যে ম্যানুয়াল টোল আদায় নিয়ে চলছে আলোচনা ও সমালোচনা

পদ্মা সেতু ও ঢাকা-ভাঙ্গার বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে পদ্মা সেতু এলাকায় ইটিসি পদ্ধতিতে টোল ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা দিচ্ছে কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন (কেইসি)। তবে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইটিসি নিয়ে আলোচনা চলছে। এটির লেন কার্যকর করতে হলে একটা অডিট লাগবে। খুব শিগগির এটা কার্যকর করা হবে।’

এদিকে প্রথম দুই দিনের তুলনায় তৃতীয় দিনে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে বেড়েছে গাড়ির চাপ। ব্যক্তিগত গাড়িগুলো এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করায় নিচের সড়কগুলোতে গাড়ির চাপ অন্যদিনের তুলনায় কম ছিল বলে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার।

প্রথম দুই দিনে গাড়ি সংখ্যা কম থাকায় তেমন সমস্যা হয়নি। তবে এখন বাড়ছে গাড়ির সংখ্যাযেটা আবার গত রোববারের চেয়ে অনেক বেশি। রোববার একইসময়ে অর্থাৎ সকাল ছয়টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ১৪ ঘণ্টায় মোট গাড়ি চলেছিলো ১৪ হাজার ৭২৭ টি।

প্রকল্প পরিচালক জানান, মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় গাড়ি চলাচল করেছে ৩০ হাজার ৯১৯ টি। এতে টোল আদায় হয়েছে ২৫ লক্ষ ৬ হাজার ৮০০ টাকা। এর মধ্যে বিমানবন্দর থেকে বনানী, মহাখালী ও ফার্মগেট গিয়েছে ১৫ হাজার ৬৯০টি গাড়ি। কুড়িল থেকে বনানী ও মহাখালী গিয়েছে ৩ হাজার ৬১৯টি গাড়ি। বিপরীতে বনানী থেকে কুড়িল গিয়েছে ২ হাজার ৮৯৮টি গাড়ি। তেজগাঁও থেকে মহাখালী, কুড়িল, বনানী ও বিমানবন্দর গিয়েছে ৮ হাজার ৭১২টি গাড়ি।

এ রাস্তায় চলাচলকারীরা বলছেন, অধিকাংশ গাড়ি উঠছে বিমানবন্দরের কাওলা র‍্যাম্প দিয়ে, যা এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠা মোট গাড়ির অর্ধেক। ফলে হাতে টোল নেওয়ার কারণে বেড়েছে গাড়ির দীর্ঘ সারি।

এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার বলেন, আপাতত ম্যানুয়াল পদ্ধতি দিয়ে চলতে হবে। মাত্র শুরু হয়েছে। পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। খুব শিগশির এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রথম দুই দিনে গাড়ি সংখ্যা কম থাকায় তেমন সমস্যা হয়নি। তবে এখন বাড়ছে গাড়ির সংখ্যাসম্প্রতি বাংলাদেশের কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশনের (কেইসি) জেনারেল ম্যানেজার জিনউ পার্ক গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, ইটিসি পদ্ধতির মাধ্যমে টোল আদায়ে যানবাহন পারাপারে সময় বাঁচবে। ভোগান্তিও কমবে। এই পদ্ধতি শুধু পদ্মা সেতু ও এক্সপ্রেসওয়েতে নয়। সারা বাংলাদেশেই চালু করা সম্ভব।

জানা যায়, ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন (ইটিসি) সিস্টেমে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে টোল সংগ্রহ করা হয়। রেজিস্ট্রেশনের পর বিআরটিএ কর্তৃক গাড়ির সামনের গ্লাসে একটি আরএফআইডি ট্যাগ সংযোজন করে দেওয়া হয় এবং ব্যবহারকারীকে একটি অ্যাকাউন্ট নম্বর দেওয়া হয়। টোল প্লাজা অতিক্রমকালে উক্ত আরএফআইডি ট্যাগ ব্রিডিং এর মাধ্যমে ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন (ইটিসি) লেন ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট থেকে ঢোলের টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হয়।

গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের সময় সামনের গ্লাসে (উইন্ডশিন্ডে) বিআরটিএ থেকে লাগানো ভারএফআইডি ট্যাগ ব্যবহার করে ইটিসির জন্য রেজিস্ট্রেশন করার মাধ্যমে ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন (ইটিসি) সেবা পাওয়া যাবে।

বর্তমানে পদ্মা সেতু ও এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায়ে তিন ধরনের পদ্ধতি চালু আছে। প্রথমটি টোল বুথে নগদে পরিশোধ, দ্বিতীয়টি কার্ড হাতে নিয়ে বুথের মেশিনে পাঞ্চ করে পরিশোধ ও তৃতীয়টি গাড়িতে লাগানো স্বয়ংক্রিয় সেন্সর কার্ড। এর মধ্যে তৃতীয় পদ্ধতিতেই সবচেয়ে ঝামেলামুক্ত ও কম সময়ে টোল পরিশোধ করা যায়।

প্রথম দুই দিনে গাড়ি সংখ্যা কম থাকায় তেমন সমস্যা হয়নি। তবে এখন বাড়ছে গাড়ির সংখ্যা।এর বাইরে কর্ণফুলী সেতু, চট্টগ্রাম মেঘনা সেতু, নারায়ণগঞ্জ, গোমতী সেতু, কুমিল্লা, ভৈরব সেতু, নরসিংদী, পায়রা সেতু, পটুয়াখালী, খান জাহান আলী (রূপসা) সেতু, খুলনা, চরসিন্দুর সেতু, নরসিংদী শহীদ ময়েজ উদ্দিন সেতু, নরসিংদী, আত্রাই টোল প্লাজা, নাটোর, লালন শাহ সেতু, পাবনা চালু আছে ইটিসি।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নিয়ে ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ বলছে, র‍্যাম্পগুলোতে ওঠানামায় নগরবাসী অভ্যস্ত হলেই বাড়বে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচল, ধীরে ধীরে মিলবে আরও সুফল। কারণ, উড়াল পথের র‍্যাম্পগুলোর সঙ্গে চালকেরা পরিচিত হলে চাপ বাড়বে নতুন পথে, এতে নিচের সড়কে ফিরবে স্বস্তি।

এর আগে গত শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) এই অংশের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চালু হওয়া অংশে ওঠা-নামার জন্য মোট ১৫টি র‍্যাম্প আছে। এর মধ্যে এয়ারপোর্ট দুইটি, কুড়িল তিনটি, বনানীতে চারটি, মহাখালী তিনটি, বিজয় সরণি দুইটি ও ফার্মগেট একটি। বুধবার থেকে ১৩টি র‍্যাম্প যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি এ প্রকল্পের প্রথম চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। এই প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘দুর্ব্যবহারের প্রতিশোধ নিতে’ হোটেলে ঢুকে ৪ কর্মচারীকে কুপিয়ে জখম

খুলনা প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

খুলনা নগরের ডাকবাংলো মোড়ে একটি হোটেলে ঢুকে চার কর্মচারীকে কুপিয়ে জখম করেছে দুর্বৃত্তরা। আজ শনিবার সন্ধ্যায় লাভলু হোটেলে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ বলছে, দুপুরে হোটেলের কর্মচারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারকে কেন্দ্র করে কয়েক যুবকের কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। ওই ঘটনার জেরে সন্ধ্যায় ১৫-২০ জন যুবক হোটেলে ঢুকে হামলা চালায়।

আহত কর্মচারীরা হলেন আইয়ুব, মধু, সজল ও টুটুল। তাঁদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে নগরের প্রাণকেন্দ্র ডাকবাংলো মোড়ে প্রকাশ্যে এই হামলার ঘটনা ঘটলেও আধা ঘণ্টা পর পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ তোলেন।

লাভলু হোটেলের কর্মচারী মো. সাইফুল ইসলাম জানান, দুপুরের দিকে দুই যুবক খাওয়ার জন্য ওই হোটেলে আসেন। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হোটেলে কর্মচারীদের সঙ্গে তাঁরা তর্কে জড়ান। এতে উভয়ের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। হোটেল ব্যবস্থাপক গিয়ে তখন পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তাঁকেও অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন ওই যুবকেরা।

হামলার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সাইফুল ইসলাম জানান, মাগরিবের নামাজের পর ১৫-২০ জন যুবক ওই হোটেলে প্রবেশ করে ধারালো অস্ত্র নিয়ে কর্মচারীদের ওপর হামলা চালান। এতে চারজন আহত হন। উপস্থিত লোকজন আহত ব্যক্তিদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। ঘটনার পরপরই হোটেলের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হকার বলেন, ‘ডাকবাংলো মোড় একটি জনবহুল এলাকা। প্রায় সময় এখানে পুলিশ অবস্থান করে। কিন্তু এ রকম হামলার পর আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। ডাকবাংলো মোড়ে এ ঘটনার পর পুলিশ ২৫ মিনিট পর ঘটনাস্থলে আসে; যা খুবই দুঃখজনক।’

খুলনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, দুপুরে দুই যুবক ওই হোটেলে খাওয়ার জন্য গেলে কর্মচারীরা তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। সন্ধ্যার দিকে ওই যুবকেরা আরও কয়েকজনকে নিয়ে হোটেলে হামলা চালান। তাঁরা চারজনকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে পালিয়ে যান। আহত ব্যক্তিদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের আটকের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভালুকায় কারখানার বর্জ্য মিশ্রিত পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক, ক্ষতিপূরণের দাবিতে মানববন্ধন

ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
ক্ষতিপূরণের দাবিতে কৃষকদের মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ক্ষতিপূরণের দাবিতে কৃষকদের মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ভরাডোবা গ্রামে অবস্থিত এক্সপেরিয়েন্স টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের বর্জ্য ও কেমিক্যাল মিশ্রিত রঙের পানি এবং মুলতাজিম স্প্রিনিং মিলের গরুর গোবর ও অন্যান্য বর্জ্যের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দ্রুত পরিশোধের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন কৃষকেরা।

শনিবার (১ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভরাডোবা এলাকায় কৃষকেরা বিক্ষোভ মিছিল শেষে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করেন।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দাবি উপজেলার ভরাডোবা গ্রামে অবস্থিত এক্সপেরিয়েন্স মিলের বর্জ্য মিশ্রিত পানি এবং মুলতাজিম স্পিনিং মিলের গরুর খামারের বর্জ্যে স্থানীয় কৃষকদের ৩৩৫.৭৪ একর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন থেকে সুপারিশকৃত ক্ষতিপূরণের টাকা মিল কর্তৃপক্ষ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পরিশোধ না করলে তাঁরা কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন।

মানববন্ধন শেষে বক্তব্য দেন কৃষক প্রতিনিধি ইঞ্জিনিয়ার রুহুল আমীন, আবদুর রহিম আকন্দ, মনির তালুকদার, নুরুজ্জামান কবির প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রেমিকাকে বিয়ে করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চীনা যুবক

নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি 
ওয়াং থাও। ছবি: সংগৃহীত
ওয়াং থাও। ছবি: সংগৃহীত

প্রেমের টানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে এসেছেন ওয়াং থাও (৩৫) নামের এক চীনা যুবক। উপজেলার একটি গ্রামের তরুণীর সঙ্গে এক মাস আগে মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে তাঁর পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্ক হয়। তাঁকে বিয়ে করতেই নাসিরনগরে এসেছেন তিনি।

জানা গেছে, ওয়াং থাও চীনের হেনান প্রদেশের বাসিন্দা। গতকাল শুক্রবার এ দেশে আসেন ওই চীনা যুবক। তরুণী ও তাঁর পরিবার তাঁকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নাসিরনগরে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসে। আগামীকাল রোববার (২ নভেম্বর) জেলাজজ আদালতে মুসলিম রীতিতে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবেন ওয়াং থাও। নাম রাখবেন আবদুল্লাহ।

সরেজমিনে দেখা যায়, এ ব্যাপারে তরুণীর গ্রামের বাড়িতে কৌতূহলী মানুষের ভিড় জমেছে। আশপাশের গ্রামের নারী-পুরুষ ও শিশু-বৃদ্ধ সবাই এসেছেন চীনা যুবককে দেখার জন্য। সবার মধ্যে চীনা যুবককে নিয়ে আগ্রহ, কেউ কেউ তাঁর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ সেলফি তুলছেন ও ভিডিও করছেন। ওয়াং থাও চীনা ভাষা ছাড়া অন্য কোনো ভাষা বোঝেন না। মোবাইলে ট্রান্সলেট করে সাধারণ মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন তিনি।

সেই তরুণী বলেন, ‘মোবাইলের একটি অ্যাপসের মাধ্যমে এক মাস আগে আমাদের পরিচয় হয়। সেখানে আস্তে আস্তে আমাদের কথা চলে, পরিচয় রূপ নেয় ভালোবাসায়। পরে সে আমাকে বিয়ে করতে বাংলাদেশে আসছে। সে কোনো ধর্মে বিশ্বাস করে না। এখন আইনানুসারে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে আমাকে বিয়ে করবে। বিয়ের পর আমাকে চীনে নিয়ে যাবে।’

চীনা যুবককে জামাতা হিসেবে পাওয়ায় খুশি তরুণীর পরিবারও। তরুণীর মা বলেন, ‘ছেলে চীন থেকে আমাদের বাড়িতে এসেছে। তার সঙ্গে আমার মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক। আমার মেয়েকে সে বিয়ে করবে।’ তরুণীর বাবা বলেন, ‘আমরা ছেলের ব্যবহারে খুব খুশি। সে অনেক ভালো মানুষ। বাজার থেকে বোয়াল মাছ, দেশি মোরগ কিনে রান্না করে খাওয়াইছি।’

সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দীন বলেন, ‘আমি এ ঘটনা শুনেছি। একজন চীনা নাগরিক প্রেমের টানে এখানে এসেছে।’

নাসিরনগর থানার সহকারী পুলিশ পরিদর্শক জাহান-ই-আলম বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। সব তথ্য যাচাই করেছি। চীনা ওই যুবক বৈধভাবেই বাংলাদেশ এসেছেন। আমরা বলেছি, কোনো ধরনের সমস্যা হলে আমাদের জানাতে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্কুলের পাঠদান বন্ধ রেখে রাজনৈতিক প্রচার বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর

ঝালকাঠি প্রতিনিধি  
ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় আজ শনিবার দুপুরে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর রাজনৈতিক প্রচার। ছবি: সংগৃহীত
ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় আজ শনিবার দুপুরে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর রাজনৈতিক প্রচার। ছবি: সংগৃহীত

ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় একটি বিদ্যালয় পাঠদান বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের মধ্যে লিফলেট বিলি ও রাজনৈতিক প্রচার চালিয়েছেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী গোলাম আজম সৈকত। আজ শনিবার উপজেলার শৌলজালিয়া ইউনিয়নের বলতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে গিয়ে তিনি এ প্রচার চালান।

গোলাম আজম সৈকত ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর–কাঠালিয়া) আসনের বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

বিদ্যালয়ে রাজনৈতিক প্রচারের একটি ভিডিও গোলাম আজম সৈকত তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশ করেন। ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি লেখেন, ‘কাঠালিয়া উপজেলার শৌলজালিয়া ইউনিয়নের বলতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা সম্পর্কে অবহিতকরণ।’

ঘটনাটি নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, বিদ্যালয় ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার স্থান, রাজনীতি শেখার নয়। এগুলো বন্ধ করা উচিত।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহজামাল খান বলেন, ‘সৈকত নামের এক ব্যক্তি এলাকায় জানাজায় এসেছিলেন। পরে বিদ্যালয়ে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করেন। তখন ক্লাস চলছিল, সময় আনুমানিক দুপুর সাড়ে ১২টা। কোনো পূর্বনির্ধারিত প্রোগ্রাম ছিল না। হলরুম না থাকায় একটি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একত্র করে তিনি কথা বলেন ও লিফলেট বিতরণ করেন। এর আগেও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা এভাবে করেছেন।’

অভিযোগে বিষয়ে গোলাম আজম সৈকত বলেন, ‘আমি ওই এলাকায় এক ব্যক্তির জানাজায় গিয়েছিলাম। ফেরার পথে বিদ্যালয়ে ঢুকে শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা করি। পরে তাঁদের অনুমতি নিয়েই শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা সম্পর্কে আলোচনা করি ও লিফলেট দিই। এটি কোনো নির্বাচনী প্রচারণা ছিল না।’

ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় আজ শনিবার দুপুরে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর রাজনৈতিক প্রচার। ছবি: সংগৃহীত
ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় আজ শনিবার দুপুরে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর রাজনৈতিক প্রচার। ছবি: সংগৃহীত

গোলাম আজম সৈকত আরও বলেন, ‘আমরা সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও জনসমাগমস্থলে ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কারের কর্মসূচি তুলে ধরছি। এটি রাজনৈতিক প্রচার নয়, রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও এ বিষয়ে অবহিত করা প্রয়োজন।’

কাঠালিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আনোয়ার আজীম বলেন, ‘বিদ্যালয় চলাকালে পাঠদান বন্ধ রেখে রাজনৈতিক কর্মসূচি করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি অনৈতিক ও আইনবহির্ভূত। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) ঝালকাঠির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সত্যবান সেনগুপ্ত বলেন, ‘বিদ্যালয় হলো শিক্ষা অর্জনের স্থান, রাজনীতি চর্চার নয়। ভবিষ্যতে যেন কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি এ ধরনের কাজ না করেন, তা নিশ্চিত করতে হবে।’

কাঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জহিরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি আপনার মাধ্যমেই জানতে পেরেছি। বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রেখে রাজনৈতিক কার্যক্রমের কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি সম্পর্কে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রতিবেদন চাওয়া হবে। প্রয়োজন হলে এ বিষয়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত