Ajker Patrika

ব্যাটারিচালিত রিকশা বৈধ হলে বাড়বে আরও বিশৃঙ্খলা

 রাসেল মাহমুদ, ঢাকা
আপডেট : ১৮ মার্চ ২০২৫, ১১: ০৩
রিকশা চলাচলে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যানজট সৃষ্টি হওয়ায় বিভিন্ন সময়ই রিকশা জব্দ করতে দেখা গেছে পুলিশকে। গতকাল ঢাকার শান্তিনগর মোড়ে এমন অভিযান চালিয়ে জব্দ করা হয় বেশ কয়েকটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। ছবি: মেহেদী হাসান
রিকশা চলাচলে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যানজট সৃষ্টি হওয়ায় বিভিন্ন সময়ই রিকশা জব্দ করতে দেখা গেছে পুলিশকে। গতকাল ঢাকার শান্তিনগর মোড়ে এমন অভিযান চালিয়ে জব্দ করা হয় বেশ কয়েকটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। ছবি: মেহেদী হাসান

ঢাকা মহানগরে বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ২২ লাখের বেশি মোটরযানের নিবন্ধন (রেজিস্ট্রেশন) রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে পায়েচালিত কয়েক লাখ রিকশা। এসব যানবাহনের চাপে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে দিনে-রাতে যানজট লেগেই থাকে। চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। এ পরিস্থিতিতে বর্তমানে অবৈধ ব্যাটারিচালিত কয়েক লাখ রিকশা-অটোরিকশাকে লাইসেন্স দিতে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাটারিচালিত রিকশাকে বৈধতা দিলে এগুলোর বেপরোয়া চলাচলে সড়কে বিশৃঙ্খলা চরমে পৌঁছাবে। ঢাকা হবে ব্যাটারির রিকশায় স্থবির নগরী। চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়বে নগরবাসীর। কারণ, বর্তমানে অনুমতি ছাড়াই অনেক সড়ক চলে গেছে ব্যাটারির রিকশা-অটোরিকশার দখলে। লাইসেন্স দিলে সংখ্যা বাড়তেই থাকবে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্যমতে, ঢাকায় বর্তমানে ২২ লাখ ১ হাজার ৫৫০টি মোটরযানের নিবন্ধন রয়েছে। এর মধ্যে বাস, প্রাইভেট কার, ট্রাকসহ ২০ ধরনের মোটরযান রয়েছে। রিকশার লাইসেন্স দেওয়ার কর্তৃপক্ষ সিটি করপোরেশন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষমতা দিতে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯-এর তফসিলের একটি অনুচ্ছেদ সংশোধন করে এ ক্ষমতা দেওয়া হবে।

বর্তমানে দেশে কত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে, সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তার সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। তবে বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে ৪৮ থেকে ৫০ লাখ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চলে রাজধানীতে। ঢাকায় গত কয়েক বছরে ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা বেড়েছে। একসময় বেশির ভাগই চলত মহল্লার রাস্তায়। তবে গত বছরের ৫ আগস্টের পর রাজধানীর ট্রাফিক পুলিশবিহীন প্রধান অনেক সড়কে উঠে আসে ব্যাটারিচালিত রিকশা। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বিমানবন্দরের টার্মিনাল এলাকায়ও দেখা গেছে চলতে।

পরে সড়কে ট্রাফিক পুলিশ ফিরলেও ব্যাটারিচালিত রিকশা আর এলাকার রাস্তায় ফেরেনি। বড় সড়কগুলোতে চলছে। এগুলোর বেপরোয়া চলাচল, ট্রাফিক আইন না মানায় বিভিন্ন সড়কে যানজট আরও তীব্র হয়েছে।

ব্যাটারিচালিত রিকশা–অটোরিকশার লাইসেন্স দেওয়ার উদ্যোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার আজকের পত্রিকাকে বলেন, মোডিফিকেশন করা ব্যাটারিচালিত রিকশা ফিডার রোডের আয়তন, জনসংখ্যা ও এলাকার চাহিদা বুঝে অনুমতি দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। যারা মোডিফিকেশন করতে পারবেন তাদেরকেই হয়তো ফিডার রোডের জন্য বৈধতা দেওয়া হবে। এগুলো মূল সড়কের জন্য নয়। অতিরিক্ত যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা ট্রাফিক পুলিশের জন্য আসলেই চ্যালেঞ্জ। এর সংখ্যা যত বেশি হবে তত ট্রাফিকে চাপ বাড়বে।

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) এক কর্মকর্তা বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশাকে লাইসেন্স দেওয়ার সঙ্গে ব্যবসায়িক স্বার্থ জড়িত, জনগণের স্বার্থ নেই। বরং এই যানটি মানুষের জন্য বিপজ্জনক। জনগণের মধ্যে যানবাহনের চাহিদা থাকলেও বিপজ্জনক যান দেওয়ার সুযোগ নেই। ডিটিসিএ–এর আইনেও বলা আছে, ঢাকা শহরে কোন ধরনের যান ও কতগুলো চলবে। তারপরও কেন সিটি করপোরেশনকে এই ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে, তা জানা নেই। ব্যাটারিচালিত যানবাহনকে লাইসেন্স দিলে শৃঙ্খলা আনা সম্ভব নয়। অনুমতি ছাড়াই রাস্তায় নেমে গেছে। লাইসেন্স দিলে কখনোই সরানো যাবে না। যানজট আরও বেশি হবে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যানুযায়ী, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিন চাকার এমন যানের দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৬ হাজার ৪২২ জন। এসব যানের মধ্যে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, নছিমন, করিমন, আলমসাধু, ভটভটি, ইজিবাইক ও পাখির কোনো নিবন্ধন নেই।

দুর্ঘটনা বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষক ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ব্রেক, লাইটসহ ব্যাটারিচালিত রিকশা–অটোরিকশার কাঠামোগত দুর্বলতা কমাতে হবে। কিন্তু তাই বলে যেকোনো সড়কে চলতে পারবে–এই নীতি নিলে তা হিতে বিপরীত হবে। অর্থাৎ, রোড পারমিটগুলো ঠিক করতে হবে। এই ধরনের যান মহাসড়কে চলার মতো কখনোই উপযোগী হবে না। গ্রামীণ সড়ক বা কোথায় কোথায় চলতে পারবে, এর সুস্পষ্ট নীতিমালা লাগবে।

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় লাইসেন্স দেওয়ার এখতিয়ার সিটি করপোরেশনকে দিলে আইনি কোনো জটিলতা হবে কি না—প্রশ্নে বিআরটিএ–এর পরিচালক (রোড সেফটি) শীতাংশু শেখর বিশ্বাস বলেন, ‘সিটি করপোরেশন আইনে অটোরিকশাকে একটি শৃঙ্খলায় আনতে চাইছে। মোটরযান আইনে অনেক ধরনের সিকিউরিটি আইটেম লাগে, সেগুলো সম্পূর্ণ না হলে আমরা অনুমতি দেই না। তারা আইন করে অনুমতি দিলে সেটা সড়ক পরিবহন আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে না। কোন কোন রাস্তায় চলবে সেটা হয়তো ঠিক করেই অনুমতি দেবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১৩
নিহত লায়লা আফরোজ ও নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ। ছবি: সংগৃহীত
নিহত লায়লা আফরোজ ও নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ। ছবি: সংগৃহীত

‎রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যার ঘটনায় গৃহকর্মী আয়েশাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার দুপুরে ঝালকাঠি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

‎গ্রেপ্তারের বিষয়টি আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছেন তেজগাঁও বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন।

‎মামুন বলেন, গৃহকর্মী আয়েশাকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঝালকাঠি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত সোমবার সকালে শাহজাহান রোডের ১৪ তলা একটি আবাসিক ভবনের সপ্তম তলায় লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তাঁর মেয়ে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে (১৫) ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।

মা-মেয়ে হত্যায় অভিযুক্ত গৃহকর্মী আয়েশা। ছবি: আজকের পত্রিকা
মা-মেয়ে হত্যায় অভিযুক্ত গৃহকর্মী আয়েশা। ছবি: আজকের পত্রিকা

গতকাল তাঁদের মরদেহ নাটোরে দাফন করা হয়েছে। মামলার এজাহারে বাসা থেকে মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র খোয়া যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ভবনের ভেতরের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, হত্যাকাণ্ডের পর এক নারী স্কুলড্রেস পরে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। চার দিন আগে আয়েশা পরিচয় দিয়ে ওই বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেওয়া তরুণী (২০) এই জোড়া খুনে জড়িত বলে সন্দেহ স্বজনদের। ঘটনার পর থেকে ওই তরুণী পলাতক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি 
গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে মজিরুলের নেতৃত্বে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে মজিরুলের নেতৃত্বে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

জীবন আছে যার, তার মৃত্যু অনিবার্য। মৃত্যুর পর মানুষের শেষ ঠিকানা কবর। মৃতদেহ গোসল করিয়ে কাফন পরানো হয়, জানাজা শেষে তাকে শায়িত করা হয় চিরনিদ্রার ঘরে। এই কবর খোঁড়ার দায়িত্বটি গ্রামের কিছু মানুষ বহু বছর ধরে স্বেচ্ছায়, বিনা পারিশ্রমিকে পালন করে আসছেন, যাঁরা সবার কাছে ‘গোরখোদক’ নামে পরিচিত। আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় তাঁরা করে থাকেন এই কাজ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গোরখোদকেরা কোনো পারিশ্রমিক নেন না। গ্রামের যে কেউ মারা যাক, নিজেদের ব্যস্ততা ফেলে তাঁরা ছুটে আসেন কবর খুঁড়তে। তাঁদের এই মানবিক কাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে গ্রামের লোকেরা দোয়া করেন—আল্লাহ যেন তাদের সুস্থ ও ভালো রাখেন।

দেবীপুর গ্রামের বাসিন্দা গোরখোদক মজিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ৫৫ বছর ধরে কবর খুঁড়ছি। যত দিন সুস্থ থাকব, এই কাজ চালিয়ে যাব। আমাদের গ্রাম ছাড়াও অন্য গ্রাম থেকে কেউ ডাকলে সেখানেও যাই। ছোটবেলায় ওস্তাদের কাছে ডালি ধরেই শিখেছি। গরিব মানুষ, মাঠে কাজ করি; কিন্তু কেউ মারা গেলে দ্বিধা করি না—এই কাজ আমার নেশায় পরিণত হয়েছে।’

মজিরুল আরও জানান, এখন তিনি তরুণদেরও এই কাজ শেখাচ্ছেন।

গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

গোরখোদক শাকের আলী বলেন, ‘আমরা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করি। কখনো কোনো টাকা নিই না। যেখানেই থাকি, গ্রামের কারও মৃত্যুর সংবাদ শুনলে দ্রুত কবর খুঁড়তে চলে আসি।’

গোরখোদক ফুয়াদ হোসেন বলেন, ‘অন্য গ্রাম থেকে ডাক এলেও আমরা যাই। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করি এই কাজ। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’

স্থানীয় বাসিন্দা শাজাহান আলী বলেন, ‘কবর খোঁড়া বড় দায়িত্বের কাজ। গ্রামের এসব মানুষ খবর পেলেই দৌড়ে আসে। আমরা তাদের জন্য দোয়া করি।’

মাওলানা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘মৃত ব্যক্তির জন্য কবর খোঁড়া নিঃসন্দেহে সওয়াবের কাজ। হাদিসে এসেছে—যাঁরা কবর খোঁড়েন, আল্লাহ তাদের জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শ্রীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, ফটকে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুরের শ্রীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে কারখানার ফটকের সামনে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকেরা। আন্দোলনের মুখে কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রধান ফটক তালাবদ্ধ করে সটকে পড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে শিল্প ও থানা-পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসেছেন। আজ বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের সাইটালিয়া গ্রামে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানায় এই ঘটনা ঘটে।

কারখানার নারী শ্রমিক মিনারা আক্তার বলেন, ‘অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের বেতন পরিশোধ করে নাই। এক মাসের বেতন না পেলে আমাদের চলা খুবই কঠিন হয়। আমাদের নাওয়া-খাওয়া বন্ধ হয়। আর সেখানে কারখানা কর্তৃপক্ষ দুই মাসের বেতনভাতা বকেয়া রেখেছে। আজ সকালে শ্রমিকেরা জড়ো হলে তারা পালিয়ে যায়।’

মিন্টু নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘এই কারখানায় আমরা তিন বছর ধরে চাকরি করছি। আমাদের বেতনের বাইরে কোনো সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে না। তবু পেটের দায়ে চাকরি করি। দুই মাসের বেতন বকেয়া। আমাদের তো পেট আছে, সন্তান-সংসার আছে। এক মাস দোকান বাকি পরিশোধ করতে না পারলে পরের মাসে আর দোকানি বাকি দেয় না। আমরা কী অবস্থায় আছি, একবার ভাবুন। বেতন পরিশোধ না করে তারা পালিয়ে গেছে।’

আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

মেহেদী হাসান বলেন, ‘এত দিন ধরে ঋণ করে বলে-কয়ে দোকান থেকে বাকি নিয়ে চলছি। আর পারছি না। এখন দোকান বাকি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতন নিয়ে কমপক্ষে ১০টি তারিখ দিছে। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ বেতন পরিশোধ করেনি। শেষে আজ বেতন পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু তারা কারখানা ফটকে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে গেছে।’

কারখানার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. বুলবুল হাসান বলেন, ‘ব্যাংকের সমস্যার কারণে বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাচ্ছে না। আশা করি, আজকের মধ্যে নভেম্বর মাসের বেতন পরিশোধ করতে পারব।’ বিনা নোটিশে কারখানার ফটক কেন তালাবদ্ধ? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি বলতে পারব না।’

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাছির আহমদ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মাছ ধরতে গিয়ে ভারতে আটক ৬ জেলে, ১৩ মাস পর হস্তান্তর

নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি 
১৩ মাস সাজা ভোগের পর হস্তান্তর হওয়া বাংলাদেশি ছয় জেলে। ছবি: আজকের পত্রিকা
১৩ মাস সাজা ভোগের পর হস্তান্তর হওয়া বাংলাদেশি ছয় জেলে। ছবি: আজকের পত্রিকা

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও সীমান্ত দিয়ে ছয় বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কাছে হস্তান্তর করেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের হস্তান্তর করা হয়।

হস্তান্তর হওয়া মৎস্যজীবীরা কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার বাসিন্দা। তাঁরা হলেন আবুল হোসেনের ছেলে রাসেল মিয়া (৩৫), বাহাদুর মিয়ার ছেলে বিপ্লব মিয়া (৪৫), ইসহাক আলীর ছেলে মীর জাফর আলী (৪৫), ইছাক আলীর ছেলে বকুল মিয়া (৩২), ফকির আলীর ছেলে আমের আলী (৩৫), সলিমুদ্দিন ব্যাপারীর ছেলে চাঁন মিয়া (৬০)।

বিজিবি ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৪ নভেম্বর জিঞ্জিরাম নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে ভুলক্রমে সীমান্ত অতিক্রম করে তাঁরা ভারতের ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় স্থানীয় পুলিশ ও বিএসএফ সদস্যরা তাঁদের আটক করে। অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে তাঁরা সেখানে প্রায় ১৩ মাস সাজা ভোগ করেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সন্ধ্যায় শেরপুর ৩৯ বিজিবির দায়িত্বে থাকা এলাকার হাতিপাগার বিজিবি কোয়ার্টার মাস্টার মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে ভারতের কিল্লাপাড়া বিএসএফ ক্যাম্পের সঙ্গে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে বিএসএফ ছয় বাংলাদেশি নাগরিককে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে। এ সময় নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।

মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর তাঁদেরকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত