Ajker Patrika

চিকিৎসার কথা বলে বেরিয়ে নবজাতককে রাস্তায় ফেললেন ফুফু, ৪ দিন পর উদ্ধার 

সিরাজদিখান (মুন্সিগঞ্জ) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৮ জুন ২০২৪, ২২: ২৮
Thumbnail image

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে চিকিৎসার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে এক দিন বয়সী ছেলেশিশুকে রাস্তায় ফেলে দেয় তার ফুফু। পরে ওই শিশুকে এক ব্যক্তি উদ্ধার করে তাঁর বাড়িতে আনেন। এ ঘটনার চার দিন পর পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করেছে। 

তবে ওই শিশুর মায়ের অভিযোগ; এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিতে গেলে হয়রানির শিকার হয়েছেন তিনি। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানানোর পর পুলিশ অভিযোগটি আমলে নিয়ে শিশুকে উদ্ধারে অভিযানে নামে। 

কিশোরগঞ্জের আড়াইউড়া গ্রামের বাচ্চু মিয়া মেয়ে রিপা আক্তার (২৭)। তাঁর স্বামী আব্দুল করিম। থাকেন ঢাকার লালবাগের নবাব বাগিচা রোড। চার বছর আগে রিপা ও আব্দুল করিমের বিয়ে হয়। এ দম্পতির দুই মেয়েসন্তান রয়েছে। কিন্তু পাঁচ মাস ধরে স্ত্রী-সন্তানের কোনো খোঁজখবর নিচ্ছিলেন না স্বামী আব্দুল করিম। এ অবস্থায় ১ জুন অন্তঃসত্ত্বা রিপা স্বামীর খোঁজে ছুটে আসেন মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার রশুনিয়া ইউনিয়নের দানিয়াপাড়া গ্রামে ননদের বাড়িতে। পরদিন ২ জুন রিপার কোলজুড়ে আসে নতুন অতিথি। 

পরদিন ৩ জুন অসুস্থ রিপার এক দিন বয়সী ছেলেসন্তানকে চিকিৎসার কথা বলে তাঁর ননদের বাড়ি থেকে একই উপজেলার নিমতলা বসুমতি গ্রামে নিয়ে যান আরেক ননদ নাজমা বেগম (৪৫)। এ সময় তিনি ছেলেসন্তানকে এক সড়কে ফেলে আসেন। সন্তানের কথা জানতে চাইলে রিপাকে বাড়ি থেকে বের দেন এবং নবজাতক মারা গেছে বলে জানানো হয়। 

এতে রিপা সিরাজদিখান থানায় ননদ নাজমার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর টানা তিন দিন ধরে পুলিশের দ্বারে দ্বারে ঘুরেন রিপা। কিন্তু সন্তানের খোঁজ পাচ্ছিলেন না। পুলিশও নানা টালবাহানা শুরু করেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। 

সবশেষ গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় সিরাজদিখান উপজেলায় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীদের দ্বারস্থ হন রিপা। এতে সাংবাদিকদের হস্তক্ষেপে নড়েচড়ে বসে পুলিশ। শিশুসন্তান উদ্ধারে শুরু হয় তাদের তৎপরতা। ওই দিন রাত ১০টার দিকে পুলিশ কেয়াইন ইউনিয়নের চালতিপড়া গ্রামের মনসুরের বাড়ি থেকে শিশুকে উদ্ধার করে। ওই ব্যক্তি এক সড়কে শিশুটিকে পড়ে থাকতে দেখে বাড়ি নিয়ে আসেন। 

রিপা আক্তার অভিযোগ করে জানান, প্রথমে তিনি সিরাজদিখান থানার ওসি মুজাহিদুল ইসলামের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরে ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোখতার হোসেনের কাছে যেতে বলেন ওসি। এরপর ছুটতে হয় একজন এসআইয়ের কাছে। এমন করে পুলিশ সদস্যদের জনে জনে ছোটাছুটি করেন তিনি। কিন্তু তাঁরা কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। 

শিশুসন্তান ফিরে পাওয়া প্রসঙ্গে রিপা আক্তার বলেন, ‘সাংবাদিকেরা এগিয়ে আসায় আজ আমার সন্তান ফিরে পেয়েছি। সাংবাদিকেরা অনেক করেছে। তারা এগিয়ে এসেছিল বলেই পুলিশ কাজ করেছে।’ 

দৈনিক সমাচার পত্রিকার সিরাজদিখান প্রতিনিধি আনিছুর রহমান রুবেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘৬ জুন সন্ধ্যায় আমি ওসির সঙ্গে কথা বলার জন্য থানায় আসি। এ সময় এক মহিলা আমার কাছে এসে অভিযোগ করেন, তিনি দুদিন ধরে থানায় ঘুরতেছে, তার বাচ্চা পাওয়া যাচ্ছে না, তাকে কেউ নিয়ে গেছে। এই বিষয়ে অভিযোগ করার জন্য থানায় এসেছে, কিন্তু থানা থেকে কেউ তাকে সহযোগিতা করেনি। পরে আমি আমার সিনিয়র সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ওসির সঙ্গে কথা বলে একটি অভিযোগের ব্যবস্থা করি। অভিযোগের পর বাচ্চাটিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।’ 

সিরাজদিখান থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. মোখতার হোসেন বলেন, ‘ওই নারী অভিযোগ করার জন্য ওসি সাহেবের কাছে এসেছে। তখন ওসি সাহেব এসআই সালাহউদ্দিনের কাছে দায়িত্ব দিয়েছে। আমি এ বিষয়ে আর কিছুই জানি না।’ 

এ ব্যাপারে সিরাজদিখান থানার ওসি মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। বাচ্চা উদ্ধার হয়েছে—এটাই তো বড় কথা। আর আমার কাছে আসেনি। ওই মহিলা থানায় অভিযোগ করেছে। আমি পরে জেনেছি। এরপর তদন্ত করে বাচ্চা উদ্ধার করে দিয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত