Ajker Patrika

মহিনের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে সোহাগকে হত্যা করা হয়—আদালতে সজীবের স্বীকারোক্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
মিটফোর্ড এলাকায় নিহত মো. সোহাগের ওপর হামলার ঘটনার চিত্র। তিনি এলাকায় ভাঙারিসামগ্রীর ব্যবসা করতেন। ছবি: সংগৃহীত
মিটফোর্ড এলাকায় নিহত মো. সোহাগের ওপর হামলার ঘটনার চিত্র। তিনি এলাকায় ভাঙারিসামগ্রীর ব্যবসা করতেন। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর পুরান ঢাকায় ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে মো. সোহাগকে (৪৩) পাথর দিয়ে আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আরও এক আসামি হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আজ শনিবার (১৯ জুলাই) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আসামি সজীব ব্যাপারী ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

বিকেলে আসামি সজীব ব্যাপারী ও তাঁর ভাই রাজীব ব্যাপারীকে আদালতে হাজির করে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মনিরুজ্জামান সজীবের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুল ইসলাম তাঁর জবানবন্দি গ্রহণ করেন। এরপর তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এদিকে অপর আসামি রাজীব ব্যাপারীকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। তাঁকেও কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কোতোয়ালি থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই তানভীর এসব বিষয় নিশ্চিত করেন।

১৪ জুলাই সজীব ব্যাপারী ও রাজীব ব্যাপারীকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এর আগের দিন তাঁদের নেত্রকোনা থেকে আটক করে পুলিশ।

সূত্রমতে, সজীব ব্যাপারী তাঁর জবানবন্দিতে জানিয়েছেন, তিনি সোহাগ হত্যাকাণ্ডে নিজে জড়িত ছিলেন। অন্যদের সঙ্গে তিনিও সোহাগকে মারধর করেছেন।

জবানবন্দিতে আরও বলেছেন, আসামি মাহমুদুল হাসান মহিনের সঙ্গে দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক বিরোধের জের ধরে মহিন সোহাগকে হত্যার পরিকল্পনা করেন এবং তাঁর নেতৃত্বে ওই দিন সোহাগকে নির্মমভাবে ইট ও সিমেন্টের ব্লক দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়।

জবানবন্দিতে সজীব আরও বলেন, মূল পরিকল্পনাকারী ও নেতৃত্ব দেওয়া মাহমুদুল হাসান মহিন ও রেজওয়ান উদ্দিন অভি ঘটনার আগে সোহাগকে তাঁর দোকান থেকে টেনে বের করে নিয়ে আসেন। পরে সবাই মিলে তাঁকে টেনেহিঁচড়ে মিটফোর্ডের ৩ নম্বর গেট এলাকায় নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে উলঙ্গ করে মারধর করা হয়। কিলঘুষি ও লাথি মারতে থাকেন সবাই। পরে ইট ও পাথর দিয়ে তাঁর মাথায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করা হয়। মহিন, লম্বা মনির ও অভি পাথর দিয়ে আঘাত করেন।

এর আগে ১৭ জুলাই টিটন গাজী, মো. আলমগীর ও মনির ওরফে লম্বা মনির হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। এ নিয়ে মোট চারজন আদালতে স্বীকারোক্তি দিলেন।

১০ জুলাই এই মামলায় গ্রেপ্তার মাহমুদুল হাসান মহিনকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ১৫ জুলাই আবার পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। ১৬ জুলাই আসামি নান্নু কাজী, রেজওয়ান উদ্দিন ওরফে অভিজিৎ বসু ও তারেক রহমান রবিনকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।

৯ জুলাই (বুধবার) সন্ধ্যা ৬টার দিকে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর গেট-সংলগ্ন রজনী ঘোষ লেনে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। মিটফোর্ড এলাকায় ৪ নম্বর রজনী ঘোষ লেনে দীর্ঘদিন ধরে ভাঙারি ব্যবসা করতেন সোহাগ। সোহাগ কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পূর্ব নামাবাড়ি গ্রামের ইউসুফ আলী হাওলাদারের ছেলে।

ঘটনার পর এর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়। এ ঘটনায় নিহতের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম বাদী হয়ে ১৯ জনের নামে মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি ১৫-২০ জন।

মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন মাহমুদুল হাসান মহিন, তারেক রহমান রবিন, টিটন গাজী, সারোয়ার হোসেন টিটু, মনির ওরফে ছোট মনির, আলমগীর, মনির ওরফে লম্বা মনির, মো. নান্নু, সজীব, রিয়াদ, রাজীব, সাবা করিম লাকী, কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালু, রজব আলী পিন্টু, সিরাজুল ইসলাম, মিজান, অপু দাস, হিম্মত আলী ও আনিসুর রহমান হাওলাদার।

এই মামলায় এখন পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাঁরা হলেন মো. রেজওয়ান উদ্দিন অভি, নান্নু কাজী, মাহমুদুল হাসান মহিন, তারেক রহমান রবিন, আলমগীর, মনির ওরফে লম্বা মনির, টিটন গাজী, দুই সহোদর সজীব ব্যাপারী ও মো. রাজীব ব্যাপারী।

মামলার এজাহারে বাদী বলেছেন, সোহাগ দীর্ঘদিন ওই এলাকায় ব্যবসা করায় ব্যবসায়িক বিভিন্ন বিষয়সহ আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আসামিদের সঙ্গে তাঁর বিরোধ চলছিল। এর জের ধরে তাঁরা সোহাগের গুদাম তালাবদ্ধ করে রেখেছিলেন। সেই সঙ্গে তাঁকে এলাকাছাড়া করতে নানারকম ভয় দেখিয়ে আসছিলেন। এরপর বুধবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে তাঁরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সোহাগের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে তাঁকে টেনেহিঁচড়ে বের করেন। সোহাগকে মারধর করে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের ভেতরে নিয়ে যান। একপর্যায়ে রড, লাঠি, সিমেন্টের ব্লক বা ইট দিয়ে আঘাত করেন। মারতে মারতে তাঁকে বিবস্ত্র করে ফেলেন। একপর্যায়ে সোহাগ নিস্তেজ হয়ে ড্রেনের পাশে লুটিয়ে পড়েন। তখন তাঁর নিথর দেহ টেনে হাসপাতালের সামনের রাস্তায় নিয়ে যাওয়া হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কাও ঢাকায় এসিসির সভা বর্জন করল

মুক্তি পেয়ে আ.লীগ নেতার ভিডিও বার্তা, বেআইনি বলল বিএনপি

গাড়ি কেনার টাকা না দেওয়ায় স্ত্রীকে মারধর, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে মামলা

যুদ্ধবিমানের ২৫০ ইঞ্জিন কিনছে ভারত, ফ্রান্সের সঙ্গে ৬১ হাজার কোটি রুপির চুক্তি

সালাহউদ্দিনকে নিয়ে বিষোদ্‌গার: চকরিয়ায় এনসিপির পথসভার মঞ্চে বিএনপির হামলা-ভাঙচুর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত