Ajker Patrika

অন্যের হয়ে জেল খাটার মামলায় দুজনের কারাদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ২৩: ০৪
Thumbnail image

নিজের পরিচয় গোপন করে অন্যের হয়ে জেল খাটার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় দুজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন এই রায় ঘোষণা করেন।

সাজাপ্রাপ্ত দুজনের একজন হলেন মো. হোসেন। অন্যজন হলেন সোহাগ ওরফে বড় সোহাগ। মো. হোসেনকে ছয় বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তিনি নিজের পরিচয় গোপন করে বড় সোহাগের নাম ধারণ করে জেল খেটেছেন। আর সোহাগ ওরফে বড় সোহাগকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

কারাদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী আতিকুর রহমান রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি জানান, দুই আসামিকে রায়ের সময় কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় ঘোষণার পর সাজা পরোয়ানাসহ তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়। 

রায় বলা হয়েছে, ইতিমধ্যে তাঁরা যত দিন কারাগারে ছিলেন, তত দিন সাজার মেয়াদ থেকে বাদ যাবে।

বড় সোহাগকে দণ্ডবিধির তিনটি ধারায় ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সাজাগুলো একটির পর একটি চলবে বিধায় তাঁকে ১০ বছরই কারা ভোগ করতে হবে বলে রায় বলা হয়েছে। 

অন্যদিকে মো. হোসেনকে তিনটি ধারায় ছয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে একসঙ্গে সাজার মেয়াদ কার্যকর হবে বিধায় তাঁকে দুই বছরের কারাভোগ করতে হবে। 

মো. হোসেন গ্রেপ্তার হওয়ার পর ইতিমধ্যে দুই বছর কারাগারে থাকায় তাঁকে সাজা ভোগ করতে হবে না বলে রায় বলা হয়েছে।

মামলার সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর কদমতলী থানার একটি হত্যা মামলায় রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে আসামি সোহাগ ওরফে বড় সোহাগ, মো. মামুন শেখ ও রবিন শেখকে ভিকটিম হুমায়ুন কবির টিটুকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে প্রত্যেককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।

রায় ঘোষণার সময় ওই তিনজন আসামিই পলাতক ছিলেন। পরবর্তী সময়ে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি সোহাগ ওরফে বড় সোহাগ নতুন ওকালতনামা যোগে স্বেচ্ছায় আত্মসপর্ণপূর্বক উচ্চ আদালতে আপিল করার শর্তে জামিনের প্রার্থনা করেন। কিন্তু আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে আসামিকে সাজা পরোয়ানাসহ জেলহাজতে প্রেরণ করেন।

২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর জনৈক সাংবাদিক আদালতে একটি দরখাস্ত দাখিল করে উল্লেখ করেন, অনুসন্ধানে তিনি জানতে পেরেছেন সোহাগ ওরফে বড় সোহাগ নাম ধারণ করে যে আসামি স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করে সাজা ভোগরত অবস্থায় কারাগারে আছেন, সে আসামি মামলাটির প্রকৃত আসামি সোহাগ নন। প্রকৃত আসামি স্বাধীনভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

এ বিষয়ে ওই মামলার নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, মামলাটির ১ নম্বর আসামির সোহাগ ওরফে বড় সোহাগকে অন্যান্য আসামির সঙ্গে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। এরপর আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং রিমান্ড শেষে আসামি সোহাগকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। পরে জামিনে মুক্ত হয়ে পলাতক হন সোহাগ। 

এ ঘটনাটি সামনে আসার পর সে সময় কারাগারে থাকা প্রকৃত আসামি সোহাগের ছবির সঙ্গে আত্মসমর্পণ করে জেলে যাওয়া সোহাগের মিল আছে কি না তা পরীক্ষা করে প্রতিবেদন প্রদান করতে নির্দেশ দেন আদালত। সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কারান্তরীণ সোহাগ প্রকৃত সোহাগ নন। তিনি অন্য কেউ।

এরপর তদন্তে নামে পুলিশ। পুলিশ প্রতিবেদনে উল্লেখ করে যে প্রকৃত আসামি সোহাগ ওরফে বড় সোহাগ বর্তমানে কারাগারের বাইরে আছে।
পরবর্তী সময়ে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি র‍্যাব-১০ কর্তৃক মূল আসামি সোহাগকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। 

এ ঘটনায় চারজনকে আসামি করে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪-এর বেঞ্চ সহকারী মিজানুর রহমান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন।

তদন্তকালীন দুজনই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে স্বীকার করেন, একজনের পরিবর্তে অন্যজন জেল খেটেছেন। মো. হোসেন টাকার বিনিময়ে সোহাগের পরিবর্তে জেল খাটেন।

মামলাটি তদন্ত করে ২০২২ সালের ৩১ মে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। পরবর্তী সময়ে ২০২৩ সালের ২১ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। মামলার বিচার চলাকালে দুই ম্যাজিস্ট্রেটসহ চারজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত