Ajker Patrika

মানিকগঞ্জ পৌর মেয়র রমজান আলীর বিরুদ্ধে ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ 

মঞ্জুর রহমান, মানিকগঞ্জ
আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৫: ৩৩
Thumbnail image

মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. রমজান আলীর বিরুদ্ধে স্থানীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া নির্মাণকাজের চূড়ান্ত বিল খালাসের কথা বলে ২০ লাখ টাকা ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ এসেছে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী বেল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে। মেয়র, নির্বাহী প্রকৌশলী, হিসাবরক্ষকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন, স্থানীয় সরকার ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। 

লিখিত অভিযোগের সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (বিএমডিএফ) প্রজেক্টের আওতায় পৌরসভার বিভিন্ন স্থানের সড়ক উন্নয়নের দুটি প্যাকেজের দরপত্র আহ্বান করে মানিকগঞ্জ পৌরসভা। ওই দরপত্রে অংশ নিয়ে ১ নম্বর প্যাকেজে যৌথভাবে সর্বনিম্ন দরদাতা হয় মেসার্স মা ইঞ্জিনিয়ারিং ও হোসাইন কনস্ট্রাকশন। এরপর যাবতীয় কাজের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে ২০১৯ সালের ২ মে পৌর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ১৪ কোটি ৯৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকার একটি চুক্তি তৎকালীন মেয়র গাজী কামরুল হুদা সেলিমের উপস্থিতিতে স্বাক্ষরিত হয়। এরপর দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান (মেসার্স মা ইঞ্জিনিয়ারিং ও হোসাইন কনস্ট্রাকশন) পৌরসভার রাজস্ব তহবিলে ম্যাচিং ফান্ড বাবদ ১০ শতাংশ টাকা না থাকায় চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের স্বার্থে ১ কোটি ৩৯ লাখ ৬৬ হাজার ৪৩২ টাকা মানিকগঞ্জ পৌরসভার জনতা ব্যাংকের হিসাবের মাধ্যমে জমা দেয়। মানিকগঞ্জ পৌরসভা তাদের চূড়ান্ত বিলের সঙ্গে বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (বিএমডিএফ) থেকে প্রাপ্ত ৯০ শতাংশ ও হাওলাত দেওয়া বাবদ ম্যাচিং ফান্ডে ১০ শতাংশ টাকা পরিশোধ করে। 

পৌরসভার রাস্তা উন্নয়নের কাজ শেষ হওয়ার পর ঠিকাদারেরা তাদের কাজের চূড়ান্ত বিল জমা দিলে পৌর কর্তৃপক্ষ কাজের বিল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডে (বিএমডিএফ) জমা দিলে বিএমডিএফ কর্তৃপক্ষ ১৪ কোটি ৫৪ লাখ ৯৬ হাজার টাকা মঞ্জুর করে। 

সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, ওই জামানত, আয়কর, ভ্যাট ও পৌরসভার রোলার ভাড়া বাদ দিয়ে ১১ কোটি ৯৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৬৯ টাকা ঠিকাদারদের পরিশোধ করার কথা ছিল। কিন্তু পৌরসভা ঠিকাদারকে পরিশোধ করে ১১ কোটি ৬৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এর ফলে ঠিকাদারদের চূড়ান্ত বিলের বকেয়া থেকে যায় ২৫ লাখ ২ হাজার ৫১২ টাকা। এ ছাড়া ঠিকাদারদের জামানতের ১ কোটি ৪৫ লাখ ৪৯ হাজার ৬০২ টাকা ও ম্যাচিং ফান্ডে জমা দেওয়া ১ কোটি ৩৯ লাখ ৬৬ হাজার ৪৩২ টাকাসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পাওনা দাঁড়ায় ৩ কোটি ১০ লাখ ১৮ হাজার ৫৪৭ টাকা। 

মেসার্স মা ইঞ্জিনিয়ারিং ও হোসাইন কনস্ট্রাকশনের পক্ষে পৌরসভার কাজটি করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম পুলক। 

জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম পুলক বলেন, ‘আমাদের কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হওয়ার পর মেয়রের কাছে জামানত ও ম্যাচিং ফান্ডের টাকা চেয়ে আবেদন করলে পৌর কর্তৃপক্ষ টাকা দিতে নানাভাবে টালবাহানা করতে থাকে। একপর্যায়ে নির্বাহী প্রকৌশলী বেল্লাল হোসেন আমাদের কাছে ২০ লাখ টাকা দাবি করেন। আমরা বাধ্য হয়ে বেল্লাল হোসেনকে তাঁর রুপালী ব্যাংক মানিকগঞ্জ শাখার অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা প্রদান করি। এর পরও পৌর কর্তৃপক্ষ আমাদের পাওনা পরিশোধ করছে না। আমরা বাধ্য হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’

মানিকগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী বেল্লাল হোসেন ঠিকাদারদের চূড়ান্ত বিল প্রদানের সঙ্গে ২০ লাখ টাকা ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। 

পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী বেল্লাল হোসেন বলেন, ‘ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স মা ইঞ্জিনিয়ারিং ও হোসাইন কনস্ট্রাকশন পৌরসভার কাছে তাদের জামানত বাবদ ১ কোটি ৪৫ লাখ ৪৯ হাজার ৬০২ টাকা ও ম্যাচিং ফান্ডে জমা দেওয়া ১ কোটি ৩৯ লাখ ৬৬ হাজার ৪৩২ টাকা পাওনা রয়েছে। ওই ঠিকাদারদের কাজের মান খুব খারাপ ছিল। বিল পরিশোধ করার নির্দিষ্ট সময়ের আগে অনেক রাস্তা নষ্ট হয়ে গেছে। বারবার বলার পরও ঠিকাদারেরা তাদের কাজ করা রাস্তা পুনরায় সংস্কার করেনি। এ কারণে আইন অনুযায়ী তাদের জামানতের টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি। তবে ভেঙে যাওয়া রাস্তাগুলো সংস্কার করলে তাদের জামানতের টাকা ফেরত দেওয়া হবে।’ 
 
অভিযোগের বিষয়ে পৌর মেয়র মো. রমজান আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি নির্বাহী প্রকৌশলীর সুরে বলেন, ‘আমার আগের মেয়রের সময় পৌরসভার কাজগুলো হয়েছে। আগের মেয়রের নিজস্ব লোক হওয়ায় ঠিকাদারেরা তাদের কাজের মান খুব খারাপ করেছে। ঠিকাদারদের বিলের চেক গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দেওয়ার কথা ছিলে। কিন্তু তার আগেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে একশ্রেণির লোক আমাকে হেয় করতে দুর্নীতি দমন কমিশন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বরাবর অভিযোগ দিয়েছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।’ 

মেয়র ঠিকাদারদের কাজের মান নিয়ে ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে জানান, সিসি ঢালাই রাস্তার ১২ মিলি রডের পরিবর্তে ৮ মিলি রড ব্যবহার করা হয়েছে। এ কারণে রাস্তার অনেক জায়গা ভেঙে গেছে। এ নিয়ে একটি তদন্ত টিম গঠন করে দেওয়া হয়েছে। 

বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (বিএমডিএফ) টাকা নির্ধারিত ঠিকাদারের বাইরে উত্তোলন করার বিধান আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র রমজান আলী জানান, পৌরসভার প্রয়োজনে এ টাকা তোলা যায়। 

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল লতিফ জানান, ‘এ বিষয়ে আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশন বরাবর যে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে তার কপিও পেয়েছি। যেহেতু তারা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশন বরাবর অভিযোগ দিয়েছে, সেখান থেকে নির্দেশনা পেলে আমরা ঠিকাদারদের অভিযোগের তদন্ত করব। তদন্তের পরে অভিযোগের সত্যতা পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত