Ajker Patrika

‘ফোন বন্ধ পেলে ধরে নিবা মারা গেছি’, স্ত্রীকে বলেছিলেন ইউক্রেনে নিহত রাজবাড়ীর নজরুল

রাজবাড়ী প্রতিনিধি
আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২৫, ১৩: ৩৮
ইউক্রেনে এক সহযোদ্ধার সঙ্গে নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেনে এক সহযোদ্ধার সঙ্গে নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

আর্থিক সচ্ছলতার স্বপ্ন দেখতে গিয়েই চরম ভুল করেছিলেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার রামকান্তপুর চরপাড়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য নজরুল ইসলাম (৪৭)। দেশের মুদি ব্যবসায় লোকসান হওয়ায় বেছে নিয়েছিলেন রাশিয়ার পথ—শপিং মলের নিরাপত্তাকর্মীর চাকরির প্রলোভনে দালাল ধরে পাড়ি জমিয়েছিলেন সুদূর মস্কোয়। কিন্তু সেখানে গিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে বাধ্য হন এবং শেষ পর্যন্ত তাঁকে ঠেলে দেওয়া হয় ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে।

দীর্ঘ পাঁচ মাস নিখোঁজ থাকার পর অবশেষে বুধবার (৮ অক্টোবর) বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয় পরিবারকে।

নজরুল ইসলাম রামকান্তপুর চরপাড়া গ্রামের মৃত হাতেম আলী ফকিরের ছেলে। তাঁর বড় ভাই অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট রহিম ফকির ভাইয়ের মর্মান্তিক পরিণতির কথা গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন। রহিম বলেন, নজরুল সেনাবাহিনীতে ল্যান্স কর্পোরাল পদে কর্মরত ছিলেন এবং ২০২০ সালে অবসরে যান। অবসরের পর মুদি ব্যবসা শুরু করলেও তাতে লোকসান হওয়ায় পরিবার আর্থিক সংকটে পড়ে। এই সংকটের মধ্যে স্থানীয় দালাল ফরিদ হোসেনের সঙ্গে পরিচয় হয়। ফরিদ তাঁকে রাশিয়ায় শপিং মলে নিরাপত্তাকর্মীর ভালো চাকরির প্রলোভন দেখায়। সেই স্বপ্ন নিয়ে ২০২৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার উদ্দেশে রওনা হন নজরুল।

রহিম ফকির অভিযোগ করেন, সেখানে পৌঁছানোর পর তাঁর ভাই এক মাসের সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে বাধ্য হন এবং প্রশিক্ষণ শেষে তাঁকে ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয়। যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা অবস্থায়ও তিনি নিয়মিত পরিবারের সঙ্গে কথা বলতেন।

নজরুল তাঁর স্ত্রী আইরিন আক্তারকে মাঝেমধ্যে বলতেন সেই ভয়ানক কথাগুলো: ‘এখান থেকে ফিরে আসার আমার কোনো পথ নেই। কখনো আমার ফোন বন্ধ পেলে ধরে নিবা আমি মারা গেছি।’

পরিবারের সঙ্গে তাঁর সর্বশেষ কথা হয় গত ৩০ এপ্রিল। সেই দিন নজরুল স্ত্রীকে বলেছিলেন টাকা পাঠাতে ব্যাংকে যাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পরই ফোন করে দ্রুত চলে যাওয়ার কথা বলে জানান, টাকা পাঠানো হলো না। এর পর থেকেই তাঁর ফোন স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়।

আইরিন আক্তার শোক সামলাতে পারছেন না। চার মেয়েকে নিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সামনে দাঁড়িয়ে এখন শুধু স্বামীর লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের কাছে মিনতি করছেন তিনি।

আইরিন আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী অবসরের পর বাড়িতে থাকত। ব্যবসায় লোকসান হওয়ায় ফরিদ দালালের মাধ্যমে রাশিয়ায় যায়। আমি বারবার নিষেধ করেছিলাম। বলেছিলাম সন্তানদের নিয়ে আমরা একসঙ্গে থাকব। কিন্তু সে বলল রাশিয়ায় ভালো চাকরি আছে নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ। এখন আমি চার মেয়েকে নিয়ে কীভাবে বাঁচব?’

অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে তাঁর একটাই আর্তি, ‘আমার স্বামীর লাশ অন্তত আমার কাছে এনে দিক সরকার। শেষবার আমি একটু আমার স্বামীকে দেখতে চাই।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত দালাল ফরিদ হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে দায় অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমি রাশিয়া পাঠাইনি নজরুলকে। সে গেছে বিকন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস এজেন্সির মাধ্যমে। আমি শুধু যোগাযোগ করে দিয়েছি। সে সব জেনেশুনেই রাশিয়ান সেনাবাহিনীর লজিস্টিক হ্যান্ড হিসেবে গেছে। নো অবজেকশন সার্টিফিকেটে স্বাক্ষরও করে গেছে। এখানে আমার দোষ দিয়ে লাভ কি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘জুলাই যোদ্ধাকে’ জুলাই ফাউন্ডেশনে পাইপ দিয়ে মারধর, ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ভারতের হারে বাংলাদেশের বিদায়, হামজার হতাশা

এবার দলগুলো পেল চূড়ান্ত জুলাই সনদ ও স্বাক্ষরের আমন্ত্রণপত্র

সেনা কর্মকর্তাদের জন্য ‘সাবজেল’ ঘোষণার যৌক্তিকতা কী, টিআইবির প্রশ্ন

ভাবিকে হত্যার ১০ বছর পরে ভাতিজিকে পিটিয়ে হত্যা করলেন হাবিল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত