Ajker Patrika

লতিফ সিদ্দিকী, ঢাবি অধ্যাপক কার্জনসহ ডিবি হেফাজতে ১৫ জন সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০২৫, ২৩: ২৭
আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ও শেখ হাফিজুর রহমান (কার্জন)। ছবি: সংগৃহীত
আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ও শেখ হাফিজুর রহমান (কার্জন)। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধানবিষয়ক গোলটেবিল আলোচনা থেকে আটক আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেতা আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জনসহ ১৫ জনকে গ্রেপ্তার দেখাবে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তাঁদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডিবির নতুন প্রধান মো. শফিকুল ইসলাম।

ডিআরইউ ভবনের শফিকুল কবির মিলনায়তনে ‘আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের সংবিধান’ শীর্ষক ওই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজক ছিল ‘মঞ্চ ৭১’ নামের একটি সংগঠন। গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু কামাল হোসেন ও সভার অন্যতম আয়োজক আইনজীবী জেড আই খান পান্নার আসতে বিলম্ব হওয়ায় সভা শুরু হতে দেরি হয়।

এর মধ্যে সভায় চলে আসেন ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, সাংবাদিক মাহবুব কামাল, সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জনসহ অনেকে। বেলা ১১টার দিকে অনুষ্ঠান শুরু হয়।

আয়োজকদের একজন অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বীর প্রতীকের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, একটা শক্তি মুক্তিযুদ্ধকে, একাত্তরকে চব্বিশের মুখোমুখি দাঁড় করাতে চায়। তারা বাংলাদেশের বিরোধীশক্তি। তারা বাংলাদেশের সংবিধানকে ছুড়ে ফেলে দিতে চায়। বাংলাদেশকে ‘নাই’ করে দেওয়ার পেছনে এ শক্তি জামায়াত-শিবির। আর তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কিছু বিভ্রান্ত বাম তাত্ত্বিক।

শেখ হাফিজুর রহমানের বক্তব্য শেষ হলে সাংবাদিক মাহবুব কামালের নাম ঘোষণা হয়। এর মধ্যেই একদল ব্যক্তি হট্টগোল করে স্লোগান দিয়ে সভাস্থলে ঢুকে পড়েন। এ সময় তাঁরা হ্যান্ডমাইকে ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘জুলাইয়ের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘লীগ ধর, জেলে ভর’, ‘জুলাইয়ের যোদ্ধারা, এক হও লড়াই করো’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। তাঁদের কেউ কেউ লাঠিসোঁটা নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকে পড়েন। একপর্যায়ে তাঁরা অনুষ্ঠানস্থলের দরজা বন্ধ করে দেন এবং আয়োজকদের সঙ্গে হাতাহাতি শুরু করেন। অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া কয়েকজনকে লাঞ্ছিতও করেন নিজেদের জুলাই যোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দেওয়া এ ব্যক্তিরা। পরে তাঁরা আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে দেখে উত্তেজিত হয়ে মঞ্চের দিকে এগিয়ে যান। লতিফ সিদ্দিকীর উদ্দেশে একজন বলেন, ‘তুই ফ্যাসিস্ট পুনর্বাসন করতে আসছিস। নাস্তিক কোথাকার! তুই হজ নিয়ে কটূক্তি করিস।’

হট্টগোলকারীরা গোলটেবিল আলোচনার ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন এবং আলোচনায় অংশ নেওয়াদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। একপর্যায়ে অতিথিদের অনেককে বের করে দেওয়া হলেও আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ও অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমানকে অবরুদ্ধ করে রাখেন তাঁরা। পরে পুলিশ এসে তাঁদের দুজনসহ অন্তত ১০ জনকে নিরাপত্তার খাতিরে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে যায়।

জানতে চাইলে রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বলেন, ‘লতিফ সিদ্দিকীসহ কয়েকজনকে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে; মূলত উনাদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এখন সিনিয়রদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।’

হট্টগোলের বিষয়ে জানতে চাইলে ‘চানখাঁরপুলের জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয় দেওয়া আল আমিন রাসেল উপস্থিত গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পতিত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জড়ো হয়ে ষড়যন্ত্র করছেন, যা আমরা হতে দিতে পারি না।’

নিজেকে জুলাই যোদ্ধা পরিচয় দেওয়া পল্টন থানা জামায়াতে ইসলামীর নেতা শামীম হোসাইন বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ বিভিন্ন মোড়কে বিভিন্নভাবে এখন পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে। উনি (লতিফ সিদ্দিকী) হজ নিয়ে কটূক্তি করেছেন। বিগত ১৫ বছর বিএনপি, জামায়াতের লোকদের কত নির্যাতন করেছে। আর অভ্যুত্থানপরবর্তী এ রকম একটি সময়ে কারা তাদের অনুষ্ঠান করার অনুমতি দিয়েছে, তার জবাব দিতে হবে।’

ডিবি হেফাজতে থাকা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আবদুল লতিফ সিদ্দিকীসহ অন্যদের মুক্তি চেয়েছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। আজ বিকেলে টাঙ্গাইলে তাঁর নিজ বাসভবন সোনার বাংলায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান।

কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘মঞ্চ ৭১ নামে এক সংগঠনের ব্যানারে রিপোর্টার্স ইউনিটিতে একটি আলোচনা সভায় আমাদের নেতা বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী গিয়েছিলেন। সেখানে কিছু লোক মব তৈরি করে অনুষ্ঠান বানচাল করে দিয়েছে। কোনো গণতান্ত্রিক দেশে কারও সভা-সমাবেশ বানচাল করার আইনানুগ কোনো সুযোগ নেই।’

লতিফ সিদ্দিকীর মুক্তি চেয়ে কাদের সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘লতিফ সিদ্দিকীর জন্ম না হলে টাঙ্গাইলের রাজনীতিতে অনেক কিছুই হতো না। আমি তাঁদের সসম্মানে মুক্তি চাই। ভবিষ্যতে আর যাতে এমন কোনো ঘটনা না ঘটে, সে জন্য অধ্যাপক ইউনূসের কাছে আহ্বান জানাই।’

কাদের সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘আমি আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে এবং আন্তর্জাতিক দুনিয়াকেও জানাতে চাই, চব্বিশের আগস্টের বৈষম্যবিরোধী বিজয়কে আমি স্বাধীনতার কাছাকাছি মনে করি। সেই বিজয়ের সফলতা আমি সব সময় কামনা করি। কিন্তু সেই বিজয়ী বীরদের কার্যকলাপে দেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। আমি তো ভেবেছিলাম, তাদের এই বিজয় হাজার বছর চিরস্থায়ী হবে। কিন্তু এক বছরেই তাদের এই বিজয় ধ্বংসের দিকে চলে যাবে, এটা আমি কখনো আশা করি নাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র পরিদর্শনের পর যা জানাল আইএইএর বিশেষজ্ঞ দল

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে লতিফ সিদ্দিকী অবরুদ্ধ, নেওয়া হলো পুলিশি হেফাজতে

লতিফ সিদ্দিকী, ঢাবি অধ্যাপক কার্জনসহ ডিবি হেফাজতে ১৫ জন সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার

আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী, ঢাবি শিক্ষক কার্জনসহ ১১ জন ডিবি হেফাজতে

পুলিশের ওপর ৪ দফা হামলা, গাজীপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ছিনিয়ে নিল দুর্বৃত্তরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত