Ajker Patrika

মডেল তিন্নি হত্যা মামলার রায় আজ হচ্ছে না, ফের নেওয়া হবে সাক্ষ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫: ১৭
মডেল তিন্নি হত্যা মামলার রায় আজ হচ্ছে না, ফের নেওয়া হবে সাক্ষ্য

মডেল সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি হত্যা মামলার রায় আজ সোমবার ঘোষণা করা হচ্ছে না। এই মামলায় পুনরায় সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে বলে আদালত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। আজ রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু বাদীর একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক কেশব রায় চৌধুরী মামলাটি রায় ঘোষণা থেকে উত্তোলন পূর্বক আগামী ৫ জানুয়ারি পুনরায় সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছেন। 

গত ২৬ অক্টোবর রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য ছিল। ওইদিন রায় ঘোষণা না করে বিচারক আজ ১৫ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।

আজ সকালে মামলার বাদী তিন্নির বাবা সৈয়দ মাহবুব করীম ও চাচা সৈয়দ রেজাউল করিম পুনরায় আদালতে জবানবন্দি দিতে আবেদন করেন। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে সাক্ষ্যগ্রহণের নতুন তারিখ ধার্য করেন। 

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জানান, তিন্নির বাবা ও চাচার আংশিক সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছিল। তাঁরা তাঁদের সাক্ষ্য পুনরায় গ্রহণের আবেদন করেন। 

অভির সঙ্গে ঘর বাঁধতে চেয়েছিলেন তিন্নি

তিন্নির চাচা সৈয়দ রেজাউল করিম জানান, তাঁরা এই মামলায় সম্পূর্ণ বক্তব্য দিতে পারেননি। আগে রাষ্ট্রপক্ষ যারা মামলা পরিচালনা করতেন তাঁরা যোগাযোগ না করায় অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। তিন্নির রায়ের তারিখ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এই খবর পেয়ে তাঁরা আদালতে এসে পুনরায় সাক্ষ্য দেওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন। 

প্রায় দুই দশক আগে ফ্যাশন মডেল সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নির সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান গোলাম ফারুক অভি। কিন্তু সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত অভি এই মডেলকে কখনোই স্ত্রীর মর্যাদা দিতে চাননি। বরং বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ায় ‘পরিকল্পিতভাবে’ তাঁকে খুন করে গাড়িতে করে মরদেহ চীন-মৈত্রী সেতুর নিচে ফেলে রাখেন। ১৯ বছর ধরে চলা এই মামলাটির একমাত্র আসামি জাতীয় পার্টির সাবেক সাংসদ গোলাম ফারুক অভি। 

এ মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন কেরানীগঞ্জ থানার এসআই মো. কাইয়ুম আলী সরদার। পরে মামলাটিকে ‘চাঞ্চল্যকর মামলা’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয় এবং ২০০২ সালের ২৪ নভেম্বর মামলার তদন্তভার পায় সিআইডি। সাতজন তদন্তকারী এ মামলার তদন্ত করেন। ৬ বছর পর ২০০৮ সালের ৮ নভেম্বর চার্জশিট দিয়েছিলেন সিআইডির এএসপি মোজাম্মেল হক। অভিনেত্রী তমালিকা কর্মকার, অভিনেতা শাহরিয়ার নাজিম জয় এবং নাট্যকার এজাজ খান এই মামলার সাক্ষী ছিলেন। 

মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, খুব কম সময়ে বিখ্যাত মডেল হয়ে যান তিন্নি। তাঁর এই সাফল্যের পেছনের মানুষ ছিলেন স্বামী শাফকাত হোসেন পিয়াল। তাঁদের তিন বছরের সংসারে দেড় বছরের একটি মেয়ে ছিল। কিন্তু হঠাৎই তিন্নির সঙ্গে পরিচয় হয় সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক অভির। অভির প্রেমেও পড়ে যান তিন্নি। তখন অভি থাকতেন নিউ ইস্কাটনের প্রোপার্টি এনক্লেভের একটি ফ্ল্যাটে। সেখানে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন তিন্নি। অভির সঙ্গে কয়েকবার বিদেশেও যান। নতুন সম্পর্ক নিয়ে পিয়ালের সঙ্গে বিরোধ বাঁধে তিন্নির। তিন্নি সিদ্ধান্ত নেন পিয়ালকে ছেড়ে অভিকেই বিয়ে করবেন। 

২০০২ সালের ৬ নভেম্বর পিয়ালের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করে দেড় বছরের মেয়েকে স্বামীর কাছে রেখে অভির ইস্কাটনের ফ্ল্যাটে চলে আসেন তিন্নি। সেখানে থাকার সময় ২০০২ সালের ১০ নভেম্বর বুড়িগঙ্গার চীন মৈত্রী সেতুর নিচ থেকে তিন্নির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পর দিন অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন কেরানীগঞ্জ থানার তখনকার এএসআই মো. সফি উদ্দিন। পুলিশ মনে করে, মেয়েটি আত্মহত্যার জন্য বুড়িগঙ্গা ব্রিজ থেকে লাফ দিয়েছিল। কিন্তু পানিতে না পড়ে পিলারের ওপর পড়ে। মিটফোর্ড মর্গে মরদেহ থাকে, চার দিনে কেউ তাঁর খোঁজ নিতে আসে না। পরে দৈনিক জনকণ্ঠের একটি প্রতিবেদনে তার পরিচয় নিশ্চিত করেন পরিবার। 

মডেল তিন্নি হত্যা মামলার রায় পেছাল, আসামি এখনো পলাতক

অভি সম্পর্কে অভিযোগ পত্রে বলা হয়, ১৯৯২ সালে রমনা থানায় দায়ের করা একটি অস্ত্র মামলায় ১৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়েছিল অভির। ওই মামলার রায়ের পর হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে পালিয়ে কানাডা চলে যান তিনি। অভিকে ধরার জন্য ২০০৭ সালে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি হয়েছিল, কিন্তু তাঁকে দেশে ফেরানো যায়নি। ২০০২ সালের ১০ নভেম্বর রাতে মডেল তিন্নির মরদেহ উদ্ধারের পর থেকেই দেশ থেকে পালিয়ে বিদেশে গিয়ে লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান অভি। 

জানা যায়, বরিশালের উজিরপুর উপজেলার ধামুড়া গ্রামের আরশাদ আহমেদের ৪ ছেলে ও ৪ মেয়ে। ছেলেদের মধ্যে ছোট গোলাম ফারুক অভি। অসম্ভব মেধাবী অভি এসএসসিতে মেধাতালিকায় স্থান পান। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক হন। আরেক ছাত্রনেতা নীরুর সঙ্গে মিলে গড়ে তোলেন বিশাল এক বাহিনী। ছাত্ররাজনীতির পাশাপাশি তাঁরা নানা ধরনের সন্ত্রাসী কাজে জড়িয়ে পড়েন। 

এরশাদবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন তখন তুঙ্গে। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে ছাত্রদল প্রকাশ্যে থাকলেও অভি-নীরু গোপনে এরশাদের সঙ্গে আঁতাত করেন। এর মধ্যে ১৯৮৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হল থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন অভি। তবে তাঁর ভাগ্য খুলে যায়। জেলে এরশাদের লোকজন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরশাদের পক্ষে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জেল থেকে বেরিয়ে আসেন অভি। ১৯৯০-এর ২৭ নভেম্বর এরশাদের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় দখলে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অভি। ওই দিন গুলিতে ডা. মিলন নিহত হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। 

মিলন হত্যার পর অভি কলকাতায় চলে যান। ফিরে এসে ১৯৯৬ সালে বরিশাল-২ আসন থেকে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে ওই আসনে বিএনপির মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের কাছে হেরে যান। 

অভিযোগ পত্রে বলা হয়েছে, অভির জীবন ছিল বেপরোয়া। বহু অভিনেত্রী, মডেল ও চিত্রনায়িকা তাঁর লালসার শিকার হয়েছেন। একবার ব্যক্তিগত ছবি ফাঁস করার অভিযোগে এক অভিনেত্রী তাঁর মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিলেন। অভির সর্বশেষ শিকার মডেল তিন্নি। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে ‘প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের’ নির্দেশ

কাশ্মীরে বিধ্বস্ত বিমানের অংশবিশেষ ফরাসি কোম্পানির তৈরি, হতে পারে রাফাল

সীমান্তে সাদা পতাকা উড়িয়ে আত্মসমর্পণের ইঙ্গিত দিয়েছে ভারত: পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী

পাকিস্তানে হামলায় ‘লোইটারিং মিউনিশনস’ ব্যবহারের দাবি ভারতের, এটি কীভাবে কাজ করে

নিজ কার্যালয়ে র‍্যাব কর্মকর্তার গুলিবিদ্ধ লাশ, পাশে চিরকুট

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত