Ajker Patrika

রাজউকের খালি জমিতে থানার নিজস্ব ভবনের দাবিতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন

উত্তরা (ঢাকা) প্রতিনিধি
রাজউকের খালি জমিতে থানার নিজস্ব ভবনের দাবিতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) খালি জমিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা পশ্চিম থানার নিজস্ব ভবনের দাবিতে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের সোনারগাঁও জনপথ সড়কের গোলচত্বরে আজ শনিবার বেলা ১১টায় এ মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধনটির আয়োজন করে উত্তরা ওয়েলফেয়ার সোসাইটি। এতে উত্তরার সর্বস্তরের কয়েক শ সাধারণ জনগণ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘আবাসিক ভবন থেকে থানা সরিয়ে নিয়ে অ্যাভিনিউ রোডে উত্তরা পশ্চিম থানার জন্য স্থায়ী জায়গা বরাদ্দ দিতে হবে। উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের সোনারগাঁও জনপথ সড়কের রাজউকের ৩১,৩৩ ও ৩৫ নম্বর খালি প্লট বরাদ্দ চাই, দিতে হবে।’

এ সময় উত্তরার সোসাইটির কর্মকর্তা কর্মচারীরা বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে সোনারগাঁ জনপথে কমার্শিয়াল প্লটগুলো দখল করে নামে বেনামে দলের প্রভাব খাটিয়ে দোকানপাট গড়ে তুলে চাঁদাবাদের নৈরাজ্য গড়ে উঠেছে। এসব প্লটে উত্তরা পশ্চিম থানার নিজস্ব ভবন তৈরি করার জন্য বরাদ্দ দিলে সাধারণ জনগণ উপকৃত হবে।’

মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, ‘রাজধানীর জন্য উত্তরা একটি রোল মডেল। বসবাসরতদের মধ্যে অধিকাংশই এলিট শ্রেণির লোকজন, উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, ভিআইপি, সিআইপি। এ ছাড়াও বড়বড় রাজনৈতিক নেতাদের বসবাস এখানে। তাই আমরা উত্তরা পশ্চিম থানার নিজস্ব ভবনের জন্য রাজউকের খালি প্লটটি বরাদ্দের দাবি জানাই।’

এ সময় তাঁরা দাবি পূরণ না করা হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন।

উত্তরা ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সদস্য ও উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টর কল্যাণ সমিতি সভাপতি আলতাবুর রহমান বলেন, ‘কলাবাগান তেঁতুলতলা মাঠের জায়গার কথা মনে আছে? সম্প্রতি জায়গাটিতে থানা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পুলিশ প্রশাসন। থানা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছিল না কলাবাগান এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দা। তাই থানা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসে পুলিশ প্রশাসন। কিন্তু আমাদের এখানে তা উল্টো চিত্র। আমরা উত্তরা পশ্চিম থানার নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য জমি বরাদ্দের দাবি জানাই। এই দাবি উত্তরার লাখো মানুষের। সাধারণ মানুষের চিন্তা করেই সরকারের উচিত প্লটগুলো থানার নিজস্ব ভবন তৈরি করার জন্য বরাদ্দ দেওয়া।’

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া উত্তরা ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সিনিয়র সহসভাপতি শেখ মামুনুল হক বলেন, ‘রাজউক তিনটি প্লট বিক্রির জন্য টেন্ডার হয়েছে। আমরা চাই টেন্ডার বাতিল করে প্লটগুলোকে থানা ভবন নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হোক। এ জন্য আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন জানিয়েছি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও আমাদের দাবিকে নীতিগতভাবে সমর্থন করেছেন।’

দেড় ঘণ্টা ব্যাপী চলা মানববন্ধনটিতে বক্তারা আরও বলেন, উত্তরাকে ঘিরে সরকারের নানারকম মেগা প্রজেক্ট রয়েছে। সেই প্রজেক্টগুলোর নিরাপত্তার জন্যও পুলিশের সুষ্ঠু কার্যক্রম পরিচালনা হওয়া জরুরি। আর তাই উত্তরা পশ্চিম থানার স্থায়ী ভবনের জন্য জায়গা বরাদ্দ এখন সময়ের দাবি।

উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘উত্তরা পশ্চিম থানার নিজস্ব জমি না থাকার কারণে একটি পুরো বিল্ডিং ভাড়া নিয়ে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যাত্রা শুরু করে। ভবনটি ছোট ছোট কক্ষ ও পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় এখানকার পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। একদিকে পর্যাপ্ত জায়গার অভাব, অন্যদিকে গার্ড রুম ও অস্ত্র গোলাবারুদ রাখার স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নেই। গুরুত্বপূর্ণ মামলার ডকেট, আলামত জব্দ করা গাড়িসমূহ থানার আশপাশে রাস্তায় রাখায় তীব্র যানজট লেগেই থাকে।’

থানা ভবনে অফিসারদের অফিস কক্ষ না থাকায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের মামলার তদন্তসহ সার্বিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

ঢাকা ১৮ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব হাবিব হাসান বলেন, ‘গত ১৯ অক্টোবর রাজউক চেয়ারম্যান বরাবর আমার স্বাক্ষরিত ডিও লেটার দেওয়া হয়েছে। সেখানে উত্তরা পশ্চিম থানার নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য ৩১,৩৩ ও ৩৫ এর মোট ৩০ কাঠা জমি বরাদ্দের সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়াও রাজউকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। থানাটি যাতে নিজস্ব ভবনের যেতে পারে, সে জন্য সবাই চেষ্টা করে যাচ্ছে।’

উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, ‘থানা এলাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ দমন, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নাগরিক সেবা ও ফোর্সের রোল কলসহ অন্যান্য জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য কৌশল নির্ধারণের লক্ষ্যে প্রায় সময় অফিসারদের নিয়ে সভা করতে হয়। এ বিষয় মাথায় রেখে উত্তরা পশ্চিম থানার নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য রাজউক ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আমি আশা করি রাজউক জনগণের কথা বিবেচনা করে থানার জন্য প্লট বরাদ্দ দেবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৩ হাজারের তার কেনা হলো ১৬ হাজারে

  • ২৫০ টাকার এলইডি বাল্ব ৩১৮ ও ৭০ টাকার লাইট হোল্ডার কেনা হয়েছে ২১০ টাকায়।
  • ফ্লাডলাইট, হোল্ডার ও সার্কিট ব্রেকারসহ বিভিন্ন ইলেকট্রিক পণ্য কেনাকাটায় বাড়তি মূল্য পরিশোধ।
  • বাড়তি বিল পরিশোধ দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ।
 রিমন রহমান, রাজশাহী
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাজারে এক কয়েল (এক আরএম) তারের দাম ২ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। রাজশাহীর নওহাটা পৌরসভা এই তার কিনেছে ১৬ হাজার ২০০ টাকায়। শুধু তা-ই নয়, বৈদ্যুতিক বাল্ব, ফ্লাডলাইট, হোল্ডার ও সার্কিট ব্রেকারের মতো ইলেকট্রিক পণ্য কেনাকাটায় বাড়তি মূল্য পরিশোধ দেখানোর অভিযোগ উঠেছে পৌরসভার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় ১০ শতাংশ ভ্যাট ও ৫ শতাংশ আয়কর ধরা হয়। তাই দাম কিছুটা বেশি হয়। বাজারমূল্যের সঙ্গে বিলের পার্থক্য থাকা অস্বাভাবিক নয়।

জানা গেছে, গত জুলাই-আগস্টে মেসার্স রুমেল এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোটেশনে এসব মালামাল ক্রয় দেখানো হয়। প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা রাজশাহীর রাজপাড়া এলাকায়। তবে অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটিকে দেখিয়ে মালামাল সরবরাহ করেছেন পৌরসভার দুই কর্মকর্তা। তাঁরা বাড়তি বিল পরিশোধ দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। গত জুলাইয়ে মালামাল সরবরাহ দেখিয়ে আগস্টে পৌরসভায় বিল দাখিল করা হয়।

বিলের কাগজে দেখা গেছে, ৫০০ পিছ ১৫ ওয়াটের এলইডি বাল্ব কেনা হয়েছে ৩১৮ টাকা দরে, এই বাল্ব বাজারে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় পাওয়া যায়। তিন কয়েল (১ আরএম) তার কেনা হয়েছে ৪৮ হাজার ৬০০ টাকায়। প্রতি কয়েল তারের দাম পড়ে ১৬ হাজার ২০০ টাকা। অথচ বাজারে এই তার ২ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় পাওয়া যায়।

বিলে দেখা যায়, ১০০টি লাইট হোল্ডার কেনা হয়েছে প্রতিটি ২১০ টাকা দরে। স্থানীয় বাজারে এই হোল্ডার বিক্রি হয় ৭০ টাকায়। ১০০ ওয়াটের ১৩টি ফ্লাডলাইট কেনা হয়েছে ৩ হাজার ৬৪০ টাকা দরে। বাজারে এর দাম ৩ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে। অভিযোগ রয়েছে, সরবরাহ করা হয়েছে ৫০ ওয়াটের ফ্লাডলাইট, কিন্তু বিল দেখানো হয়েছে ১০০ ওয়াটের হিসেবে।

স্থানীয় এক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, এভাবে বছরের পর বছর পৌরসভায় কেনাকাটার নামে লুটপাট চলছে। এই ইলেকট্রিক পণ্য কেনাকাটা করেছেন দুই কর্মকর্তা। তাঁরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দেখালেও বাস্তবে নিজেরাই মালামাল কিনে সরবরাহ করেছেন। এ কারণে দামও বেশি দেখিয়েছেন।

অভিযুক্ত দুই কর্মকর্তার একজন পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রহিম। জানতে চাইলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, মালামাল সরবরাহ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি। নিয়ম মেনেই দর দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে পৌরসভার প্রশাসক ও পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরাফাত আমান আজিজ বলেন, কাজটি কোটেশনের মাধ্যমে হয়েছে, এটি দ্রুত ভিত্তিতে ক্রয়ের একটি সরকারি প্রক্রিয়া। বাড়তি মূল্য পরিশোধ করার সুযোগ নেই। এটি হয়েছে কি না খতিয়ে দেখা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভাসমান স্কুল: চলনবিল থেকে বিশ্বমঞ্চে

­­শাহীন রহমান, পাবনা
মোহাম্মদ রেজোয়ান
মোহাম্মদ রেজোয়ান

বাংলাদেশের স্থপতি মোহাম্মদ রেজোয়ানের সৌরচালিত ভাসমান স্কুল উদ্যোগ ইউনেসকোর মর্যাদাপূর্ণ কনফুসিয়াস সাক্ষরতা পুরস্কার ২০২৫ পেয়েছে। শিক্ষায় নতুন উদ্ভাবন ও জীবনব্যাপী শিক্ষার প্রসারে এটি বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ সম্মান, যা চীনা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দেওয়া হয়। গতকাল ‘সিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থা’ এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে শত শত মনোনয়নের মধ্যে ইউনেসকো তিনটি উদ্যোগকে বিজয়ী হিসেবে নির্বাচন করেছে। সেগুলো হলো বাংলাদেশের সিধুলাই ভাসমান স্কুল, আয়ারল্যান্ডের লার্ন উইথ নালা ই-লার্নিং এবং মরক্কোর সেকেন্ড চান্স স্কুল অ্যান্ড ইনক্লুসিভ এডুকেশন প্রোগ্রাম। ২০তম পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানটি গত ২৭ সেপ্টেম্বর চীনের শানডং প্রদেশে কনফুসিয়াসের জন্মস্থান চুফু শহরে অনুষ্ঠিত হয়।

স্থপতি মোহাম্মদ রেজোয়ানের সৌরচালিত ভাসমান স্কুল। ছবি: সংগৃহীত
স্থপতি মোহাম্মদ রেজোয়ানের সৌরচালিত ভাসমান স্কুল। ছবি: সংগৃহীত

রেজোয়ান তাঁর প্রতিষ্ঠান সিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থার পক্ষে ট্রফি ও সনদ গ্রহণ করেন। ছোটবেলায় তিনি চলনবিল এলাকায় বড় হয়েছেন, যেখানে প্রতিবছর বন্যায় স্কুল বন্ধ হয়ে যেত। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই ২০০২ সালে তিনি উদ্ভাবন করেন এক অনন্য সমাধান। স্থানীয় নৌকাকে স্কুলে রূপান্তর, যা বিশ্বের সর্বপ্রথম ভাসমান স্কুল হিসেবে পরিচিত। আজও এসব সৌরচালিত নৌকা স্কুল, লাইব্রেরি ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে, যা বর্ষায় পানিবেষ্টিত গ্রামগুলোতেও বছরজুড়ে শিক্ষা চালিয়ে যেতে সাহায্য করছে।

ইউনেসকো এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেছে, ‘বন্যাপ্রবণ অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্থানীয়ভাবে তৈরি উদ্ভাবনী উপায়ে সাক্ষরতা শিক্ষা পৌঁছে দেওয়াই এ ভাসমান স্কুলের সাফল্য।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সমন্বয়হীনতায় চালু হয়নি খুলনার শিশু হাসপাতাল

  • গণপূর্ত বলছে, কাজ শেষ এখন বুঝে নিতে পারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
  • স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এক পাশে প্রাচীর ও প্রধান ফটক নির্মাণ না হওয়ায় এটি অরক্ষিত।
  • ভবন নির্মাণকাজ শেষে বছর পেরিয়েছে, কেনা হয়নি আসবাব। নিয়োগ হয়নি জনবল।
  • সেবা থেকে বঞ্চিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার শিশু।
কাজী শামিম আহমেদ, খুলনা
খুলনায় বিভাগীয় শিশু হাসপাতালের অবকাঠামো নির্মাণের এক বছরের বেশি সময় পার হলেও সেটি চালু হয়নি। ছবি: আজকের পত্রিকা
খুলনায় বিভাগীয় শিশু হাসপাতালের অবকাঠামো নির্মাণের এক বছরের বেশি সময় পার হলেও সেটি চালু হয়নি। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত শিশুদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০০ শয্যাবিশিষ্ট খুলনায় বিভাগীয় শিশু হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। প্রথম ধাপে হাসপাতাল ভবনের পঞ্চম তলা পর্যন্ত নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১১৪ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের জুনে প্রথম ধাপের কাজও শেষ হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে এক বছরের বেশি সময় পার হলেও হাসপাতালটি চালু করা যায়নি। এতে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার শিশুরা।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রথম ধাপের কাজ শেষ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে ভবন হস্তান্তরের জন্য তিন দফায় চিঠি দেওয়া হয়েছে, তাতে সাড়া দেয়নি তারা। ফলে ভবন নির্মাণ হলেও হস্তান্তর করা যাচ্ছে না। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, কাগজ-কলমে প্রকল্প শেষ দেখানো হলেও হাসপাতাল এলাকার এক পাশে প্রাচীর ও প্রধান ফটক নির্মাণ করা হয়নি। এ কারণে হাসপাতাল ভবন ও স্থাপনা এলাকা অরক্ষিত থাকছে। আর হাসপাতালের কার্যক্রম শুরুর জন্য আসবাবপত্র ও জনবলের ব্যবস্থাও এখনো করা যায়নি।

খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার শিশুদের জন্য হাসপাতালটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গণপূর্ত বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগের যদি কোনো সমন্বয়হীনতা থাকে, তাহলে তার সমাধান করে দ্রুত হাসপাতালটি চালু করা দরকার।

গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা প্রসারের লক্ষ্যে ২০১৭ সালে খুলনা বিভাগীয় শিশু হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন মেলে। হাসপাতালটি নির্মাণে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কেডিএ) ময়ূরী আবাসিক এলাকার বিপরীতে সিটি বাইপাস সড়কের পাশে জমি চূড়ান্ত করা হয়। ২০১৯ সালে জেলা প্রশাসন ৫২ কোটি ২ লাখ টাকায় ৪ দশমিক ৮০ একর জমি অধিগ্রহণ করে গণপূর্ত বিভাগের কাছে হস্তান্তর করে।

গণপূর্ত বিভাগ ২০২০ সালে প্রথম পর্যায়ে হাসপাতালের বেসমেন্ট ও একতলা ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। দরপত্রে নির্বাচিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রৈতি এন্টারপ্রাইজ ২০২০ সালের ১৪ মে কার্যাদেশ পায়। ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ের এ কাজের মেয়াদ ছিল ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত। দ্বিতীয় পর্যায়ে সংশোধিত প্রস্তাবে ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতাল ভবনের দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের অনুমোদন মেলে। এতে রান্নাঘর, সাবস্টেশন, পাম্পহাউস, সীমানাপ্রাচীর, রাস্তা, নালা ও গভীর নলকূপ স্থাপনের কাজও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ কাজের মেয়াদ শেষ হয় ২০২৩ সালের জুনে। তবে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের কোনো কাজই নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি। বারবার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুনে কাগজ-কলমে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত দেখানো হয়। অন্যদিকে নতুন করে হাসপাতালটির ষষ্ঠ থেকে দশম তলার কাজ শুরু করার জন্য নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে গণপূর্ত বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসান বলেন, ‘হাসপাতালটি নির্মাণে জমি অধিগ্রহণে দেরি হয়েছে। এ কারণে দরপত্র আহ্বানও বিলম্বিত হয়। কাজ শুরুর পর জমির প্রবেশপথ নিয়ে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জটিলতা দেখা দেওয়ায় বেশ কিছুদিন কাজ বন্ধ ছিল। প্রথম ধাপের পঞ্চম তলা পর্যন্ত কাজ শেষ করে জেলা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে ভবন হস্তান্তরের জন্য তিন দফা চিঠি দেওয়া হয়েছে; কিন্তু তারা সাড়া দেয়নি। ফলে ভবন নির্মাণ হলেও হস্তান্তর করা যাচ্ছে না।’

খুলনা সিভিল সার্জন মাহফুজা খাতুন চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘কাগজ-কলমে প্রকল্প শেষ দেখানো হলেও হাসপাতাল এলাকার এক পাশে প্রাচীর ও প্রধান ফটক নির্মাণ করা হয়নি। ফলে হাসপাতাল ভবন ও স্থাপনা এলাকা অরক্ষিতই থাকছে। হাসপাতালের কার্যক্রম শুরুর জন্য আসবাবপত্র ও জনবলের ব্যবস্থাও নেই। গণপূর্তসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

সীমানাপ্রাচীর ও প্রধান ফটক নির্মাণ প্রসঙ্গে গণপূর্ত বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসান বলেন, ‘প্রকল্পে পুরো বাউন্ডারি ওয়াল ও প্রধান ফটকের কাজ অন্তর্ভুক্ত ছিল না। তবে ভবনটি ছয়তলা থেকে দশতলা পর্যন্ত সম্প্রসারণসহ বাকি রাস্তা, বাউন্ডারি ওয়াল, নালা, প্রধান ফটক, নার্স ও স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণে ৯৮ কোটি টাকার নতুন প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। অনুমোদন পেলে দ্রুত এসব কাজ শেষ করা হবে।’

এ বিষয়ে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মুজিবুর রহমান বলেন, সরকারি এ হাসপাতাল নির্মিত হলে শিশুদের স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়বে। হাসপাতালকে আরও আধুনিক চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে নির্মাণকাজ দ্রুত সম্পন্ন হওয়া প্রয়োজন। তাহলে অন্য হাসপাতালগুলোরও চাপ কমবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাইবান্ধায় পাট চাষ: লোকসানে চাষি, লাভে ফড়িয়া

  • মাসখানেক আগে ফড়িয়ারা কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি মণ পাট কেনেন ২ হাজার ৫০০ টাকায়।
  • অধিকাংশ কৃষকের কাছে পাট না থাকলেও বাজারদর বেড়ে ৪২০০ টাকায় পৌঁছেছে।
  • ধারদেনা শোধের চাপে থাকা কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে পাট কিনে মুনাফা গুনছেন ফড়িয়ারা।
আনোয়ার হোসেন শামীম, গাইবান্ধা
বিক্রির জন্য চরাঞ্চল থেকে নৌকায় করে পাট নিয়ে আসেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি গাইবান্ধার পুরাতন ফুলছড়ি বাজারের একটি ঘাটে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিক্রির জন্য চরাঞ্চল থেকে নৌকায় করে পাট নিয়ে আসেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি গাইবান্ধার পুরাতন ফুলছড়ি বাজারের একটি ঘাটে। ছবি: আজকের পত্রিকা

জমি বর্গা নিয়ে ও ধারদেনা করে পাট চাষ করেছিলেন কৃষকেরা। তাঁরা দেনা শোধ করার জন্য মাসখানেক আগে খেতের পাটগাছ কেটে সোনালি আঁশ বিক্রি করে দেন। সে সময় ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা প্রতি মণ পাট ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা দরে কিনে নেন। এতে কৃষকদের আবাদ ও শ্রমিক খরচও ওঠেনি। কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ কৃষকের কাছেই পাট নেই। অথচ প্রতি মণ পাটের দাম বেড়ে ৪ হাজার ২০০ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ফলে কৃষকেরা লোকসানে থাকলেও লাভবান হচ্ছেন পাট মজুত করে রাখা মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীরা।

সম্প্রতি গাইবান্ধার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এবং পাটের বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে। কৃষকদের অভিযোগ, মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ী চক্রের কারণে পাটচাষিরা লোকসানে পড়েন। মৌসুমের সময় তাঁরা কম দামে পাট কিনে এখন চড়া দামে কারখানায় বিক্রি করছেন। প্রতিবছর ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়ায় কৃষকেরা পাট চাষ কমিয়ে দিয়েছেন। অনেকে পাটের আবাদই ছেড়ে দিয়েছেন।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ছয় বছর ধরেই পাটের আবাদ কমছে। যদিও গত বছরের তুলনায় এবার কিছুটা বেড়েছে। এর মধ্যে ২০২১ সালে জেলায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছিল। পরের বছর ২০২২ সালে তা নেমে আসে ১৪ হাজার ৩১৩ হেক্টরে। ২০২৩ সালে তা পরিবর্তিত ছিল। ২০২৪ সালে এসে আরও কমে দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৭৯০ হেক্টর। সর্বশেষ ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৩২ হেক্টর জমিতে আবাদ বাড়লেও এখনো লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি কৃষি বিভাগ।

জেলার বিভিন্ন হাটে দেখা গেছে, প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৯০০ থেকে ৪ হাজার ২০০ টাকায়; যা এক মাস আগেও ছিল ২ হাজার ৫০০ থেকে হাজার ৭০০ টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে মণপ্রতি ১ হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে কৃষকদের কাছে পাটের মজুত নেই। এখন বেচাকেনা চলছে মধ্যস্বত্বভোগী ও বড় ব্যবসায়ীদের মধ্যে। ফলে পাটের মূল্য বাড়লেও তা কৃষকদের লাভে আসছে না। কারণ, অধিকাংশ কৃষক আগেই ধারদেনা শোধ করতে কম দামে পাট বিক্রি করে দেন।

কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে পাটের দাম নির্ধারণ করেন পাটকলমালিক ও ফড়িয়া সিন্ডিকেট। মৌসুমের শুরুতে তাঁরা কম দামে পাট কিনে মজুত রাখেন। পরে বাজারে চাহিদা বাড়লে দাম বাড়িয়ে দেন। ফলে কৃষকেরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন।

গাইবান্ধার ফুলছড়ির চরাঞ্চলের কৃষক মতি মিয়া বলেন, ‘এখন পাটের দাম ভালো, কিন্তু আমাদের ঘরে তো পাট নাই। কাটার সময় বিক্রি করেছি ২ হাজার ৮০০ টাকায়। তখন বিক্রি না করলে ধারদেনা শোধ হতো না। যাঁরা সেই পাট কিনে মজুত করে রেখেছেন, এখন তাঁরাই লাভ করছেন।’

কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের কৃষক সোবাহান মিয়া বলেন, সার, বীজ, শ্রমিক—সবকিছুতেই খরচ বেশি। আবার ঝুঁকি নিতে হয় বন্যা-খরার। এত কষ্ট করে পাট চাষ করে লাভ হয় না।

একই গ্রামের নাজমুল হোসেন বলেন, ‘সরকার যদি মৌসুমের শুরু থেকেই কৃষকের কাছ থেকে পাট কিনত, তাহলে আমরা লোকসানে পড়তাম না। এখন তো আমরা শুধু সিন্ডিকেটের হাতে মরছি।’

ফুলছড়ি হাটের পাইকারি ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, ‘আমরা স্থানীয়ভাবে পাট কিনি, কিন্তু দাম ঠিক হয় ঢাকার মিলমালিকদের নির্দেশে। আমরা শুধু তাঁদের দেওয়া দামে বেচাকেনা করি।’

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আতিকুল ইসলাম দৈনিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, বর্তমানে পাটের বাজার ভালো। পাট চাষে উৎসাহিত করতে এ বছর জেলায় দুই হাজার কৃষককে বিনা মূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। তবে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে পারলে কৃষকদের পাট চাষে আগ্রহ ফিরবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত