Ajker Patrika

তারেক-জোবাইদার মামলা: সাক্ষ্য দিলেন তিন ব্যাংক কর্মকর্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৯ মে ২০২৩, ১৫: ৩৯
তারেক-জোবাইদার মামলা: সাক্ষ্য দিলেন তিন ব্যাংক কর্মকর্তা

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জোবাইদা রহমানের মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন তিন ব্যাংক কর্মকর্তা। আজ সোমবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ ও জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে তাঁরা সাক্ষ্য দেন।

যাঁরা সাক্ষ্য দিয়েছেন তাঁরা হলেন আরব বাংলাদেশ ব্যাংক লিমিটেডের কারওয়ান বাজার শাখার তৎকালীন অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (বর্তমানে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, প্রধান কার্যালয়) এস এম মুসা করিম, কারওয়ান বাজার শাখার তৎকালীন সিনিয়র অফিসার (বর্তমানে অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট, প্রধান কার্যালয়) ওবাইদুর রশিদ খান ও কারওয়ান বাজার শাখার তৎকালীন অফিসার (বর্তমানে এলিফ্যান্ট রোড শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার) এমরান আহাম্মেদ।

সাক্ষীদের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন বিচারক মো. আছাদুজ্জামান। দুর্নীতি দমন কমিশনের পিপি সাক্ষীদের জবানবন্দি দিতে সহযোগিতা করেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে জানান, তিনজন ব্যাংক কর্মকর্তা সাক্ষ্য দিয়েছেন। আগামীকাল মঙ্গলবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। 

এদিকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিদিন মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য থাকায় বিএনপির আইনজীবীরা আদালত কক্ষেই প্রতিবাদ জানান। বিএনপির আইনজীবীদের মধ্যে অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, ওমর ফারুক ফারুকীর নেতৃত্বে তাঁরা প্রতিবাদ করেন। মাসুদ তালুকদার বলেন, সাধারণ মামলার মতো নয় এটা। প্রতিদিন তারিখ ধার্য করা হচ্ছে যেটা ঠিক নয়। আদালত এ সময় বলেন, প্রতিদিন সাক্ষ্য গ্রহণে আইনগত কোনো বাধা নেই। পরে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা আদালত থেকে বের হয়ে মিছিল–সমাবেশ করেন।

তারেক ও জোবাইদা পলাতক থাকায় তাঁদের পক্ষে কোনো আইনজীবী মামলার শুনানিতে অংশ নিতে পারছেন না। গত বৃহস্পতিবার দৈনিক দিনকালের হিসাবরক্ষক সৈয়দ আজাদ ইকবাল ও ইমরাজ আলী শিকদার সাক্ষ্য দেন। ২১ মে মামলার বাদী দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মো. জহিরুল হুদা সাক্ষ্য দেন।

এর আগে গত ১৩ এপ্রিল তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন আদালত। এই দুজনই পলাতক থাকায় তাঁদের পক্ষে ব্যক্তিগত আইনজীবী নিয়োগের আবেদন ওই দিন নামঞ্জুর করা হয়।

এই মামলায় গত ৩১ জানুয়ারি তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমানকে আদালতে হাজির হতে বিজ্ঞপ্তি (গেজেট) প্রকাশ করা হয়। সরকারি মুদ্রণালয় থেকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। আদালত বিশ্বাস করার যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে যে তাঁরা গ্রেপ্তার ও বিচার এড়াতে আত্মগোপনে রয়েছেন। সেহেতু তাঁদের ধার্য তারিখের (গত ৬ ফেব্রুয়ারি) মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় তাঁদের অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ সম্পন্ন করা হবে। গত ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাঁরা আদালতে হাজির না হওয়ায় অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ সম্পন্নের জন্য মামলা প্রস্তুত করা হয়।

গত ৫ জানুয়ারি দুজনের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেন একই আদালত। গত বছরের ১ নভেম্বর এই দুজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ওই দিন দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) গ্রহণ করে পরোয়ানা জারি করা হয়।

২০০৮ সালে জোবাইদাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অন্য দুজন হলেন তারেক রহমান ও জোবাইদার মা ইকবাল মান্দ বানু। এরপরই মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন জোবাইদা। ওই বছরই এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন। এ-সংক্রান্ত চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল হাইকোর্ট জোবাইদার করা মামলা বাতিলের আবেদন খারিজ (রুল ডিসচার্জ) করে রায় দেন। একই সঙ্গে ওই মামলায় আট সপ্তাহের মধ্যে জোবাইদাকে বিচারিক আদালতে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেওয়া হয়। উচ্চ আদালতের এই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে ওই বছরই লিভ টু আপিল করেন জোবাইদা। গত বছর ১৩ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ লিভ টু আপিল খারিজ করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রাখেন। এর ফলে জোবাইদার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলা চলতে আইনগত বাধা কেটে যায়। এই পরিস্থিতিতে নিম্ন আদালতে জোবাইদার মামলা আবার সচল হয়।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ঘোষিত আয়ের বাইরে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক হওয়া এবং সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানায় এই মামলা করে দুদক। মামলায় তারেক রহমান, জোবাইদা রহমান ও তাঁর মা অর্থাৎ তারেক রহমানের শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানুকে আসামি করা হয়। তারেক রহমানের শাশুড়িকে মামলা থেকে হাইকোর্ট অব্যাহতি দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত