Ajker Patrika

তৈরি পোশাক খাতে হতাহত শ্রমিকের সংখ্যা কমিয়ে দেখানো হয়: সিপিডি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
তৈরি পোশাক খাতে হতাহত শ্রমিকের সংখ্যা কমিয়ে দেখানো হয়: সিপিডি

বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতে দুর্ঘটনা আগের চেয়ে বেড়েছে। আহত ও নিহত শ্রমিকের সংখ্যা কারখানা পরিদর্শনকারী সংস্থা কমিয়ে দেখায়। আজ বুধবার ‘তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা: অর্জন ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী তামীম আহমেদ। 

সিপিডির কার্যালয়ে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে তামীম আহমেদ বলেন, ‘কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর শ্রমিকের কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তার বিষয়টি দেখাশোনা করে। আমরা দেখছি কলকারখানায় দুর্ঘটনা ও শ্রমিকের মৃত্যু নিয়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর যে সংখ্যা দেয় সেটা বাস্তবতা বিবর্জিত। কর্মক্ষেত্রে শ্রমিক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহত হওয়ার ঘটনা কমিয়ে দেখানো হয়। অন্যান্য সরকারি সংস্থা ও এনজিওর দেওয়া সংখ্যার সঙ্গে শ্রমিক মৃত্যুর যে সংখ্যা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর দেয় তার মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে।’ 

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কারখানা পরিদর্শনের মান নিয়ে প্রশ্ন আছে উল্লেখ করে তামীম আহমেদ বলেন, ‘আমরা দেখেছি পরিদর্শকেরা কারখানায় কি কাজ করতে হবে সেটা নিয়ে যায়। কিন্তু কারখানায় গিয়ে পরিদর্শকেরা চা–নাশতা খাওয়ার মধ্যে তাদের কাজ সীমাবদ্ধ রাখে। একই সঙ্গে কারখানার শ্রমিকের কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তাগুলো পরিদর্শনে যাওয়া পরিদর্শকেরা কারখানা থেকে টাকা-পয়সা দাবি করে তাদের পরিদর্শন কাজ শেষ করেন।’ 

তামীম আহমেদ বলেন, ‘এই সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে রানা প্লাজা ঘটনার পর তৈরি পোশাক খাতে কর্মপরিবেশ ও শ্রমিকের নিরাপত্তায় যে উন্নতি হয়েছে সেটা নিয়ে উচ্ছ্বসিত হওয়ার কিছুই নেই। আমাদের আনন্দিত হওয়ার কিছুই নেই যে আমাদের তৈরি পোশাক খাত আমূল পাল্টে গেছে। আমাদের আশঙ্কা তৈরি পোশাক খাতে যেকোনো সময় একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’ 

সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। 

সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর দেশি-বিদেশি একাধিক উদ্যোগে তৈরি পোশাক খাতে কর্মপরিবেশ উন্নয়নে গত ১০ বছরে অগ্রগতি হলেও এখনোও নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েই গেছে। সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে, ৮৫৬টি পোশাক কারখানা কোনো ধরনের তদারকি ব্যবস্থার মধ্যে নেই, যদিও তারা অপ্রচলিত বাজার যেমন—দুবাই, রাশিয়া ও ব্রাজিলে তৈরি পোশাক রপ্তানি করছে। এই পরিদর্শনের বাইরে থাকা কারখানা আছে প্রায় ২৩ শতাংশ, যা ভবিষ্যতে ৩০ শতাংশ হতে পারে।’ 

এসব কারখানার কোনোটিতে দুর্ঘটনা ঘটলে পুরো পোশাক খাতের ওপর নতুন করে চাপ তৈরি হবে বলে উল্লেখ করেন খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। 

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের তথ্য–উপাত্ত উপস্থাপন করে তিনি বলেন, ‘তৈরি পোশাক খাতে দুর্ঘটনা বাড়ছে। ২০২০ সালে তৈরি পোশাক খাতে জড়িত কারখানায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে ১৭৭টি। ২০২১ সালে এসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮০। গত ২০২২ সালে এই খাতে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে ২৪১টি। চলতি ২০২৩ সালেও তৈরি পোশাক কাতে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। 

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম দাবি করেন, অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স যখন বাংলাদেশে কাজ করত তখন তৈরি পোশাক খাতে দুর্ঘটনা কমে এসেছিল কিন্তু তাদের অনুপস্থিতে এই খাতে দুর্ঘটনা বাড়ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত