Ajker Patrika

বাজেটে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ সময়ের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
বাজেটে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ সময়ের দাবি

বিগত অর্থবছরের বাজেটে ‘আদিবাসীদের’ জন্য নির্দিষ্ট করে কোন বাজেট দেওয়া হয়নি। হিজড়া জনগোষ্ঠীও জীবনমান উন্নয়নে সেইরকম বরাদ্দ পান না। কৃষকেরাও ন্যায্যমূল্যে বীজ পাচ্ছেন না। অন্যদিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরও অবস্থা ভালো নেই। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকেরা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। শিক্ষার্থীদেরও অনেকে পড়াশোনা বাদ দিয়ে দিয়েছেন। শিশুদের স্কুলে ফেরানো এবং অন্যদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিও জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সব সমস্যা সমাধানে আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ দেওয়া এখন সময়ের দাবি।

আজ রোববার নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত ‘আসন্ন বাজেট নিয়ে জনমানুষের প্রত্যাশা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে ওয়ার্ল্ড ভিশনের পরিচালক টোনি মাইকেল গোমেজ বলেন, ‘আসন্ন বাজেটে অন্তত পক্ষে শিশুদের জন্য যেন ১০ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়। আজকের শিশু আগের ৫০ বছরের শিশুর মতো নয়। তারা আজ প্রযুক্তির ব্যবহারসহ নানা কিছুর মধ্যে দিয়ে বড় হচ্ছে। করোনার কারণে দুই বছর এই সব শিশুরা স্কুলে যেতে পারেনি সুতরাং তাদের দিকে নজর দেওয়া জরুরি। পাশাপাশি যা বরাদ্দ দেওয়া হয় তা কেন ব্যয় করা হয় না সেটা নিয়েও ভাবতে হবে।’

শিক্ষক সমাজের পক্ষ থেকে গাইবান্ধার বগাজান আদর্শ শিক্ষালয় এর প্রধান শিক্ষক সাধন কুমার বলেন, ‘করোনায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের অবস্থা খুবই করুণ। যেসব শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্কুল চালাব তারা ঝরে পড়েছে, আমরা কমিউনিটির সহযোগিতা নিয়ে স্কুল চালাই। আসন্ন বাজেটে বেসরকারি স্কুল পরিচালনার খরচ, বেতন-ভাতা ইত্যাদি নিয়ে বরাদ্দ রাখা জরুরি। সবচেয়ে ভালো হয় এগুলো জাতীয়করণ করা। আমাদের মনে রাখতে হবে ৯৭ ভাগ শিক্ষক কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে।’ 

প্রতিবন্ধীদের পক্ষ থেকে সেন্টার ফর সার্ভিস অ্যান্ড ইনফরমেশন অন ডিজএ্যাবেলিটি এর নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলম বলেন, আমরা প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ রাখতে খুব কম মন্ত্রণালয়কে দেখি। সোশ্যাল সেফটি নেটের অধীনে মাত্র ৭৫০ টাকা দেওয়া হচ্ছে। 

প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি না করতে পারলে দেশ ৩ ভাগের অধিক জিডিপি থেকে বঞ্চিত হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তো আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাজ করবে না। তাই সব মন্ত্রণালয়ে প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে। 

হিজড়া জনগোষ্ঠীর বিষয়ে অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘এদের সংজ্ঞা ঠিক হয়নি। কাজেই বাজেট কার জন্য দেওয়া হচ্ছে সেটা নিয়েও সমস্যা থেকে যাচ্ছে। দেশে হিজড়া জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কত সেটাও শুমারি করা দরকার। তাদের জন্য বাজেটে বরাদ্দ চাওয়াটাও সমস্যা কারণ আমরা তাদের সংখ্যা জানি না। সমাজ সেবা থেকে তাদেরকে যে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে সেটাকে ১ লাখ করা উচিত। তাদের স্বল্প সুদে লোন দিতে হবে। পরিবারে তাদের ইনক্লুশন দরকার। যেই পরিবারে কেউ হিজড়া আছে সেই পরিবারকে কীভাবে অর্থিত সহায়তা করা যায় সেটার দিকেও নজর দিতে হবে। যত দিন পরিবারে তাদের ইনক্লোশন না হয় ততদিন তাদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা থাকা দরকার। টাকা দেওয়া শর্তেও অনেকে তাদের বাসা ভাড়া দিতে চায় না। এ ছাড়া তারা তাদের সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। তারা যেন স্বাভাবিকভাবে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারে সে জন্য সচেতনতা তৈরি করাও জরুরি।’  

শিশুদের পক্ষ থেকে উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী লামিয়া আক্তার মীম বলেন, ‘দেশের জনগোষ্ঠীর মধ্যে বড় একটা (অর্ধেক) অংশ শিশু। শিশু কল্যাণ কাজ অব্যাহত রাখতে শিশুদের জন্য বাজেট বরাদ্দ সময়ের দাবি। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে শিশুদের জন্য খাত ভিত্তিক বরাদ্দ দিতে হবে। তাদের মতামত অনুযায়ী বাজেট বাস্তবায়ন করতে হবে। শিশুদের জন্য ১০ শতাংশ বরাদ্দ রাখতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি অফিসে শিশু কর্ণার রাখতে হবে। শিশুদের সহিংসতা বন্ধ করা এবং নিয়মিত শিশুদের খেলাধুলা ও সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা, এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রাখতে হবে।’ 

অধিবাসী জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে খোকন মুন্ডু বলেন, ‘বিগত বছরে আলাদাভাবে বাজেটে আদিবাসীদের জন্য বরাদ্দ ছিল না। বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন বরাদ্দ থাকলেও আলাদাভাবে বরাদ্দ থাকেনি। করোনার সময় আদিবাসী শিশুদের পড়াশোনা অনেক পিছিয়ে গেছে। অনলাইনে তারা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারিনি। কেনো আদিবাসী দুই কৃষক আত্মহত্যা করেছে তাও আমরা জানি। আদিবাসীদের জন্য আলাদা প্রণোদনা প্যাকেজ দিতে হবে। সরকারের করোনার প্যাকেজ তাদের কাছে পৌঁছায়নি। পাশাপাশি আদিবাসীদের জন্য বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে এবং নির্দিষ্ট করে বাজেটে বলে দিতে হবে। অনেক জেলায় বিশেষ উন্নয়ন বরাদ্দ গিয়েছে যেখানে আদিবাসী থাকে না। তাই আমাদের জন্য সুনির্দিষ্ট বাজেট থাকবে। আমরা চাই আদিবাসীদের জন্য আসন্ন বাজেটে একটা প্যারা থাকুক।’

কৃষকের পক্ষ থেকে কৃষক আব্দুল আজিজ বলেন, ‘আমি নিজেও বোরো ধান করেছি। দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ত পানির জন্য ধানগুলোয় পুষ্টি কম হচ্ছে। আমাদের বড় সমস্যা লবণাক্ততা তাই আমাদের জন্য মিষ্টি পানির ব্যবস্থা করতে হবে। বিভিন্ন বীজের অনেক দাম। আমাদের সেগুলো চড়া মূল্যে কিনতে হচ্ছে। আমরা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ বিভিন্ন বন্যা মোকাবিলা করি। দক্ষিণাঞ্চলে মিষ্টি পানির নিশ্চিতে বরাদ্দ দিতেই হবে।’ 

শ্রমিকদের পক্ষ থেকে আহসান হাবিব বুলবুল বলেন, ‘সড়কে প্রতিদিন যে ২২ জন মানুষ মারা যাচ্ছে তার মধ্যে ২ থেকে ৩ জন কিন্তু পরিবহন শ্রমিক। নির্মাণ শ্রমিকেরা করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রণোদনায় টাকা তাদের কাছে পৌঁছায়নি। তাই এসব শ্রমিকদের জন্য রেশন এবং বিনা মূল্যে চিকিৎসার জন্য হেলথ কার্ড চালু করতে হবে।’  

দলিত জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বিপ্লব চন্ত্র ঋষি বলেন, ‘আর্থিক সংকটের কারণে সন্তানের শিক্ষার ব্যয় জোগাড় না করতে পেরে দলিত সম্প্রদায়ের শিশুদের মধ্যে ঝড়ে পড়ার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের নিজস্ব জমি নেই তাই আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।’ 

জাতীয় হকার্স সমিতির সভাপতি আরিফ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা একটা জাতীয় নীতিমালা চাই, যেখানে আমরা সরকারকেই টাকা দিয়ে নিতে চাই। আমরা রাস্তায় বসি আর এই টাকা অন্য খাতে চলে যাচ্ছে। আমাদের জন্য জাতীয় নীতিমালা করলে, এনআইডি কার্ডের মতো কার্ড করলে আমরা দেশের বোঝা হব না। আমরা আরও সরকারকে দিতে চাই কিন্তু সরকার নিতে চাচ্ছেনা।’ 

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সদস্য সীমা মোসলেম বলেন, ‘কৃষিতে নারীদের বড় একটা অংশ যুক্ত রয়েছে অথচ সেখানে নারীদের স্বীকৃতি নেই। জমির ক্ষেত্রে, বীজ দেওয়া, সার দেওয়া প্রণোদনা ইত্যাদির জন্য কৃষিতে নারীদের জন্য বাজেট বরাদ্দের বিষয় রয়েছে। নারী পোশাক শ্রমিকদের কারণে বাংলা স্বল্প আয় থেকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর হয়েছে। অটোমেশনের কারণে অনেক নারী পোশাক শ্রমিক চাকরি হারিয়ে গ্রামে চলে যাচ্ছেন। তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করতে হবে। পাশাপাশি অভিবাসী নারীরা বিদেশ থেকে অর্থ আনছেন। তাদের কেবলমাত্র গৃহকর্মী হিসেবে পাঠানো হচ্ছে। তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে পাঠানো যায় কিনা সে বিষয়টি বাজেটে রাখতে হবে। দলিত ও আধিবাসী নারীরাও ভালো নেই।’  

নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘বাজেট দেওয়ার আগে একটা খসড়া নীতিকাঠামো প্রকাশ করা উচিত। যাতে সবাই তাদের মতামত দিতে পারে। করোনায় সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। কোন এলাকার, কোন মানুষ, কত পেল, কোন ভাতার অধীনে দেওয়া হয়েছে তার তথ্য দেওয়া দরকার। তাহলে জবাবদিহিতার বিষয়টি থাকে। করোনায় কর্মহীনতা বেড়েছে, আয় কমেছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটের মূল লক্ষ্য থাকা উচিত কর্মসংস্থান। এর জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। কীভাবে এই কর্মসংস্থান হবে সেটা বাজেটে স্পষ্ট করা উচিত।’ 

এদিকে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের পক্ষ থেকে যারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করে তাদের কাছে থেকে বাজেট সম্পর্কিত প্রস্তাব সংগ্রহ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে তা প্রকাশ করা হয়। সেখানে কোন জনগোষ্ঠীর জন্য কী কী বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন তা উল্লেখ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলা করলেন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী

জামায়াত আমিরের পাঁচ ঘণ্টার কর্মদিবস আদতে নারীর গায়েবি শিকল

ফেসবুকে জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য, তোপের মুখে ওসি

চট্টগ্রাম-৯ আসন: বিএনপিতে হেভিওয়েটের ধাক্কাধাক্কি

চট্টগ্রামে ওসি ও যুবদলের নেতা-কর্মীসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও হত্যা মামলা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ত্রিশালের দুর্গাপুর-কুরুয়াগাছা: রাস্তা নয়, যেন খাল

ত্রিশাল(ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
লাচলের অনুপযোগী ময়মনসিংহের ত্রিশাল-কুরুয়াগাছা সংযোগ সড়ক। ছবি: আজকের পত্রিকা
লাচলের অনুপযোগী ময়মনসিংহের ত্রিশাল-কুরুয়াগাছা সংযোগ সড়ক। ছবি: আজকের পত্রিকা

ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার মঠবাড়ী ইউনিয়নের ত্রিশাল-কুরুয়াগাছা সংযোগ সড়কটি এখন প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। প্রায় দুই কিলোমিটারজুড়ে রাস্তাটি ভেঙে তৈরি হয়েছে হাঁটুসমান গর্ত ও জলাবদ্ধতা। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, এ যেন রাস্তা নয়, খাল। প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে পার্শ্ববর্তী বাদামিয়া, কুরুয়াগাছা ও দুর্গাপুর গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ চলাচল করে।

দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় রাস্তাটির প্রায় সব অংশ ভাঙাচোরা। নিয়মিত ভারী মালবাহী ট্রাক চলাচলের কারণে জায়গায় জায়গায় দেবে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে গভীর খাদ। এখন বড় চাকার লরি ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না। ছোট যান যেমন অটোরিকশা, মোটরসাইকেল কিংবা পথচারীরা পড়েছে চরম দুর্ভোগে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি—দ্রুত সংস্কার না করলে এই সড়কে দুর্ঘটনা বাড়বে। পাশাপাশি এলাকার মানুষ একপ্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।

ত্রিশাল-কুরুয়াগাছা সংযোগ সড়ক। ছবি: আজকের পত্রিকা
ত্রিশাল-কুরুয়াগাছা সংযোগ সড়ক। ছবি: আজকের পত্রিকা

গতকাল সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, একটি অটোরিকশা খাদে পড়লে চালক ও স্থানীয় বাসিন্দারা মিলে প্রাণপণ চেষ্টা করে সেটি তুলছেন। অন্যদিকে অসুস্থ এক নারীকে কয়েকজন মিলে কাদামাটির রাস্তায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাচ্ছেন।

অটোরিকশাচালক খায়রুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আগে জানলে এই রাস্তায় কখনো আসতাম না। গাড়ি খাদে পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এলাকার লোকজন সাহায্য না করলে পার হতে পারতাম না। সরকারের কাছে অনুরোধ, দ্রুত যেন রাস্তা মেরামত করা হয়।’

স্কুলশিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলে, ‘রাস্তাটা এত খারাপ যে স্কুলে যেতে ভয় লাগে। বৃষ্টির সময় পা কাদায় ডুবে যায়, অনেক সময় পড়ে যাই। এতে অনেক দিন ক্লাসে যেতে পারি না। সরকারের কাছে অনুরোধ, রাস্তাটা যেন দ্রুত পাকা করা হয়।’

মঠবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক আবুল কালাম মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘রাস্তার বেহাল অবস্থা সম্পর্কে আমরা অবগত। এই রাস্তার আংশিক কাজের জন্য একটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। শিগগির কাজ শুরু করা যাবে। বাকি অংশও এই অর্থবছরের মধ্যে অনুমোদন নিয়ে শেষ করার আশা করছি।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল বাকিউল বারি বলেন, ‘স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্ভোগের বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে দেখছি। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলা করলেন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী

জামায়াত আমিরের পাঁচ ঘণ্টার কর্মদিবস আদতে নারীর গায়েবি শিকল

ফেসবুকে জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য, তোপের মুখে ওসি

চট্টগ্রাম-৯ আসন: বিএনপিতে হেভিওয়েটের ধাক্কাধাক্কি

চট্টগ্রামে ওসি ও যুবদলের নেতা-কর্মীসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও হত্যা মামলা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শ্রীপুরে গভীর রাতে গার্মেন্টসের ঝুট গুদামে আগুন, সাড়ে চার ঘণ্টায় নিয়ন্ত্রণে

গাজীপুর (শ্রীপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ৫৪
গাজীপুরের শ্রীপুরে কারখানার ঝুট গুদামে অগ্নিকাণ্ড। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাজীপুরের শ্রীপুরে কারখানার ঝুট গুদামে অগ্নিকাণ্ড। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুরের শ্রীপুরে কারখানার ঝুট গুদামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট সাড়ে চার ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তাৎক্ষণিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করতে পারেননি ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।

গতকাল সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে শ্রীপুর পৌরসভার ভাংনাহাটি গ্রামের রাতুল অ্যাপারেলস লিমিটেড নামক তৈরি পোশাক কারখানার ঝুটের গুদামে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

গাজীপুর-২
গাজীপুর-২

রাতুল অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মো. খালিদ হোসেন বলেন, ‘রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঝুট গুদামে হঠাৎ আগুনের ফুলকি দেখা যায়। অল্প সময়ের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও সম্ভব হয়নি। গুদামটি মোটামুটি বেশ বড়। পাশাপাশি অনেক ঝুট কাপড় মজুত রাখা ছিল। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে রাত ৪টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন। ততক্ষণে সবকিছু আগুনে পুড়ে গেছে।’

এ বিষয়ে শ্রীপুর ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যার হাউস ইন্সপেক্টর এ টি এম মাহমুদুল হাসান বলেন, আগুন লাগার খবর পেয়ে রাত ৪টায় আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করা হয়। সাড়ে চার ঘণ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। গুদামে প্রচুর পরিমাণ ঝুট কাপড় থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশি সময় লেগেছে।

গাজীপুরের শ্রীপুরে কারখানার ঝুট গুদামে অগ্নিকাণ্ড।
গাজীপুরের শ্রীপুরে কারখানার ঝুট গুদামে অগ্নিকাণ্ড।

মাহমুদুল হাসান আরও বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। তদন্ত করে বিস্তারিত জানানো হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলা করলেন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী

জামায়াত আমিরের পাঁচ ঘণ্টার কর্মদিবস আদতে নারীর গায়েবি শিকল

ফেসবুকে জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য, তোপের মুখে ওসি

চট্টগ্রাম-৯ আসন: বিএনপিতে হেভিওয়েটের ধাক্কাধাক্কি

চট্টগ্রামে ওসি ও যুবদলের নেতা-কর্মীসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও হত্যা মামলা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঘর আলো করেছে ৫ নবজাতক, চোখে অন্ধকার দেখছেন মুদি দোকানি সোহেল

বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি 
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ৩৪
গত ৬ অক্টোবর স্বাভাবিকভাবে পাঁচ সন্তানের জন্ম দেন লামিয়া বেগম।  ছবি: আজকের পত্রিকা
গত ৬ অক্টোবর স্বাভাবিকভাবে পাঁচ সন্তানের জন্ম দেন লামিয়া বেগম। ছবি: আজকের পত্রিকা

একসঙ্গে পাঁচ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন লামিয়া বেগম। তবে এই আনন্দের সংবাদের পরই দুশ্চিন্তা ভর করেছে সোহেল হাওলাদারের মাথায়। নবজাতকদের পুষ্টি ও চিকিৎসার খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। সীমিত আয়ে সংসার চালানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁর।

৬ অক্টোবর দুপুর ১২টার দিকে বরিশাল শহরের ডায়াবেটিক হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে একসঙ্গে পাঁচ সন্তান জন্ম দেন লামিয়া বেগম। লামিয়া পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালিশুরী ইউনিয়নের সিংহেরাকাঠী গ্রামের মুদি দোকানদার সোহেল হাওলাদারের স্ত্রী। স্থানীয় বাহেরচর বাজারে তাঁর একটি ছোট মুদি দোকান রয়েছে। সেই দোকানের আয়েই চলে পরিবার।

সোহেল হাওলাদার বলেন, ‘প্রতিদিন দুধ ও ন্যাপকিন কিনতেই এক থেকে দেড় হাজার টাকা খরচ হয়। শিশুরা অসুস্থ হলে তার সঙ্গে যোগ হয় চিকিৎসার খরচ। আমার মতো সীমিত আয়ের মানুষের পক্ষে এই খরচ চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে।’

তিনি আরও জানান, সন্তান প্রসবের পর হাসপাতালে ৯ দিন থাকতে হয়েছে। ধারদেনা ও এনজিওর ঋণ মিলিয়ে এখন প্রায় ২ লাখ টাকা দেনা হয়েছে। স্ত্রীর প্রয়োজন পুষ্টিকর খাবারের, কিন্তু তা কেনার সামর্থ্য তাঁর নেই।

সোহেলের শাশুড়ি শাহনাজ বেগম বলেন, ‘মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার মেয়ে লামিয়া বিয়ের পাঁচ বছর পর একসঙ্গে ৫ সন্তান জন্ম দিয়েছে, আমার খুব খুশি। আমার তিন নাতি ও দুই নাতনির নাম রাখা হয়েছে হাসান, হোসাইন, মোয়াজ্জেম, লাবিবা ও উমামা। সিজার ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে তাদের জন্ম হয়। অনেকেই এসে দেখে গেছেন, সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ সহযোগিতা করেননি। মা-মেয়ে মিলে সারা দিন বাচ্চাগুলোর যত্ন নিচ্ছি, এতে আমাদেরও শারীরিক কষ্ট হচ্ছে।’

সরকারি বা বেসরকারিভাবে যদি কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, তাহলে হয়তো এই নিষ্পাপ শিশুদের ভবিষ্যৎ নিরাপদ হবে, এমনটি আশা করছে শাহনাজ বেগম।

বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবদুর রউফ বলেন, ‘নবজাতকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে আমরা নিবিড়ভাবে কাজ করছি। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে পরিবারটিকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

বাউফল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘এ ধরনের অসহায় পরিবারকে সহায়তার জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের বরাদ্দ থাকে। তারা যদি নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করে, আমরা সহযোগিতা করব।’

বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এটি নিঃসন্দেহে একটি ব্যতিক্রম ঘটনা। যদি পরিবারটি উপজেলা প্রশাসনের কাছে সহায়তা চায়, আমরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলা করলেন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী

জামায়াত আমিরের পাঁচ ঘণ্টার কর্মদিবস আদতে নারীর গায়েবি শিকল

ফেসবুকে জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য, তোপের মুখে ওসি

চট্টগ্রাম-৯ আসন: বিএনপিতে হেভিওয়েটের ধাক্কাধাক্কি

চট্টগ্রামে ওসি ও যুবদলের নেতা-কর্মীসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও হত্যা মামলা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘মানহীন’ বিয়ারিং প্যাডের ওপরই চলছে মেট্রোরেল

  • খসে পড়া বিয়ারিং প্যাডে আঠা ছিল না।
  • আগেরবার প্যাড পড়ার কারণ নিশ্চিত হয়নি।
  • বিয়ারিং প্যাড যাচাই নিয়ে হাইকোর্টে রিট।
  • ১১ ঘণ্টা পর পুরো রুটে স্বাভাবিক মেট্রোরেল।
তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা 
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৭: ৫২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

২০২০ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) পরীক্ষা করে যে বিয়ারিং প্যাড মানহীন ঘোষণা করেছিল, মূলত সেই প্যাড ব্যবহার করেই রাজধানীতে চলছে মেট্রোরেল। মেট্রোরেলের নির্মাতা ও পরিচালনাকারী ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফারুক আহমেদ বলেছেন, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পুরো পথেই থাইল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইতাল-থাইয়ের সরবরাহ করা প্যাড বসানো হয়েছে।

গত রোববার ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড পড়ে এক পথচারীর মৃত্যু হওয়ায় প্যাডের ‘ত্রুটির’ বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। এক বছরের একটু বেশি আগেই কাছাকাছি আরেকটি পিলার থেকে প্যাড খুলে পড়েছিল। এ ধরনের ঘটনায় মেট্রোরেলের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষজ্ঞ ও জনমনে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।

মেট্রোরেলের বর্তমান লাইন-৬-এর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত (প্যাকেজ-৩ ও ৪) অংশের কাজ করেছে থাইল্যান্ডভিত্তিক ইতাল-থাই। আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার (প্যাকেজ-৫) অংশ করেছে স্থানীয় প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম গ্রুপ এবং একটি জাপানি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আর কারওয়ান বাজার থেকে মতিঝিল (প্যাকেজ-৬) অংশে কাজ করেছে ইতাল-থাই ও জাপানি ঠিকাদার এসএমসিসি।

আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার অংশের আগে ও পরে উভয় অংশের লাইনের কাজে যুক্ত ছিল ইতাল-থাই। অর্থাৎ দুই-দুইবার প্যাড পড়ে যাওয়া ফার্মগেট অংশের কাজে তারা সম্পৃক্ত ছিল না। তবে ডিএমটিসিএলের এমডির বক্তব্য অনুযায়ী, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পুরো রুটেই ব্যবহৃত হয়েছে ইতাল-থাইয়ের সরবরাহ করা প্যাড।

ফারুক আহমেদ গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ডিএমটিসিএলের হাতে বর্তমানে এই ইতাল-থাইয়ের বিয়ারিং প্যাড ছাড়া অন্য প্যাড নেই। ক্ষতিগ্রস্ত পিলারেও গতকাল নতুন করে ইতাল-থাইয়ের প্যাডই বসানো হয়েছে। তবে আমরা যথেষ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্যাডটি বসিয়েছি। যেহেতু এই প্যাড নিয়ে কথা উঠেছে, আমরা ভবিষ্যতে অন্য কারও থেকে বিয়ারিং প্যাড নেব।’

ডিএমটিসিএলের তৎকালীন কর্মকর্তাদের অনেকে মেট্রোরেল প্রকল্প বা কোম্পানিতে কর্মরত নন। এমডি ছাড়া বর্তমান কর্মকর্তা বা মেট্রোরেল সম্পর্কে অবগত প্রকৌশলীদের কেউ অবশ্য রুটের ঠিক কোন অংশে কোন কোম্পানির প্যাড ব্যবহৃত হয়েছে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। তবে সব প্যাডই ভিয়েতনাম থেকে আনা হয়েছিল বলে কেউ কেউ জানিয়েছেন।

কংক্রিটের ঘর্ষণজনিত ক্ষতি ও কম্পন নিয়ন্ত্রণ করতে পিলার এবং তার ওপর থাকা ভায়াডাক্টের সংযোগে বসানো হয় রাবার ও ইস্পাতের মিশ্রণে তৈরি বিয়ারিং প্যাড।

ডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, বিয়ারিং প্যাড প্রথমবার ব্যবহারের আগে বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগে ২০২০ সালে এর মান পরীক্ষা করা হয়। সে পরীক্ষায় দেখা যায়, কয়েকটি প্যাডের স্থায়িত্ব, নমনীয়তা ও শক্তি নির্ধারিত মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হয়নি। এরপরও সেই প্যাড পুরো প্রকল্পে ব্যবহার করা হয়েছে।

সূত্র বলেছে, বুয়েটের পরীক্ষায় যখন প্যাডের নিম্নমানের অভিযোগ ওঠে, তত দিনে প্রায় ৮ কিলোমিটার উড়ালপথে প্যাড বসানো হয়ে গিয়েছিল। তারপর বাকি পথেও ইতাল-থাইয়ের প্যাডই বসানো হয়।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে এসেছিল, বুয়েটের ল্যাবের পরীক্ষায় উত্তরা-আগারগাঁও অংশের দুটি প্যাকেজের জন্য আমদানি করা বিয়ারিং প্যাডের মান যথাযথ নয় বলে দেখা যায়। খবরে বলা হয়, এসব বিয়ারিং প্যাড সরবরাহ করেছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতাল-থাই।

প্যাডের কারিগরি মান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারার বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, গুরুত্বপূর্ণ এই উপকরণ মানহীন হলে তা গোটা অবকাঠামোকেই ঝুঁকির মুখে ফেলবে।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র বলছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার সে বছরের নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি উদ্বোধন করতে গিয়ে যথাযথভাবে নিরাপত্তা মূল্যায়ন না করেই মেট্রোরেল চালু করে। সে সময় কম্পন সহনশীলতাসহ প্যাডের মান পরীক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো যথাযথভাবে সম্পন্ন করা হয়নি।

রক্ষণাবেক্ষণে ঘাটতি কিংবা কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে বিয়ারিং প্যাড পড়ে গেছে বলে মনে করছেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান।

সাবেক সচিব এম এ এন সিদ্দিক প্রকল্পের শুরু থেকে একটা সময় পর্যন্ত ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং আফতাব উদ্দিন তালুকদার লাইন-৬-এর প্রকল্প পরিচালক ছিলেন। প্রকল্পের মান ও তদারকির দায়িত্ব তাঁদের হাতে থাকলেও দুজনই ‘নন-টেকনিক্যাল’ হওয়ায় ঠিকাদারি কাজের সম্ভাব্য ভুল কিংবা কারিগরি ত্রুটি শনাক্ত করতে পারেননি বলে অভিযোগ রয়েছে।

প্রথম ঘটনার সুস্পষ্ট কারণ চিহ্নিত হয়নি

জানা গেছে, ২০২৪ সালে প্রথমবার প্যাড খুলে পড়ার পর গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে পাঁচ থেকে সাতটি সম্ভাব্য কারণ উল্লেখ করলেও সুনির্দিষ্ট কারণ নির্ণয় করতে পারেনি। এমআরটি লাইন-৬-এর সাবেক পদস্থ এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রথম প্যাড খুলে পড়ার পর জাপানি বিশেষজ্ঞরা ড্রোন ব্যবহার করে খতিয়ে দেখেছিলেন; কিন্তু এর সুনির্দিষ্ট কারণ জানা সম্ভব হয়নি। একটি প্যাডের ওপর প্রায় ২০০ টনের কংক্রিটের তৈরি ভায়াডাক্টের চাপ থাকে বলে এটি পড়ে যাওয়া খুবই অস্বাভাবিক।

আগেরবারের সেই তদন্ত কমিটির সদস্য ডিএমটিসিএলের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মো. আব্দুল বাকী মিয়া বলেন, ওই সময় বেশ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছিল। কী কী সুপারিশ করা হয়েছিল, এখন তা মনে নেই।

‘মেরামতের দায়িত্ব এখনো ঠিকাদারের’

প্যাডসহ সার্বিক বিষয়ে কী ভাবা হচ্ছে, জানতে চাইলে ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, ‘দু-তিন বছর পরপর প্যাড বদলানোর নিয়ম আছে। আমরা দেড় মাস পরপর মনিটরিং করছি। শর্ত অনুযায়ী মেরামতের দায়িত্ব এখনো ঠিকাদারের হাতে। ঠিকাদার ও পরামর্শক কাজ ঠিকমতো করেছেন কি না, আমরা তা দেখছি। প্রাথমিকভাবে দেখেছি, রোববার পড়ে যাওয়া প্যাডের গ্লু (আঠা) ছিল না। তবে কেন পড়েছে, তা তদন্তের পর বলা যাবে।’

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, প্যাড বসানোর সময় ত্রুটি, উপকরণটির নিম্নমান, রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতি এবং ট্রেন চলাচলের সময় অতিরিক্ত কম্পন বা চাপ—এমন কোনো কারণে প্যাড পড়ে গেছে।

পুরো রুটে তিন মাস পরপর ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, ‘সমস্যা ডিজাইনে নয়। আমার মতে, এটি নির্মাণে ত্রুটি ও তদারকির ঘাটতির ফল। একই জায়গায় অল্প সময়ে দুবার এমন ঘটনা ঘটায় বোঝা যায়, ঝুঁকি এখনো রয়ে গেছে। তাই পুরো প্রকল্পের নিরাপত্তা নিরীক্ষা করা জরুরি, যাতে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো শনাক্ত ও ঠিক করা যায়।’

তদন্ত কমিটির প্রধান যা বললেন

রোববারের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটির প্রধান, মেট্রোর সাবেক এমডি ও সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফ গতকাল বলেন, ‘এখনই ঘটনার কারণ বলা যাচ্ছে না। আমরা কাজ শুরু করেছি। আগের তদন্ত প্রতিবেদনও পর্যালোচনা করা হবে।’

মান যাচাই চেয়ে রিট

এদিকে মেট্রোরেল এবং সব ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের মান যাচাইয়ের জন্য একটি কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে গতকাল হাইকোর্টে রিট করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন। রিটে এসব স্থাপনায় ব্যবহৃত বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান যাচাই করতে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের দাবি জানানো হয়েছে।

২৩ ঘণ্টা পর স্বাভাবিক মেট্রোরেল

ভারী প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যুর ঘটনায় মেট্রোরেলের বিঘ্নিত সেবা গতকাল বেলা ১১টা থেকে আবার স্বাভাবিকভাবে চালু হয়েছে। গতকাল দুপুরে ডিএমটিসিএলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট পিলারের মাথায় নতুন করে প্যাড বসানোর পর উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে দক্ষিণের শেষ গন্তব্য মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে। বিয়ারিং প্যাড পড়ে পথচারীর মৃত্যুর পর রোববার নিরাপত্তার কারণে প্রথমে ৩ ঘণ্টা সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হয় মেট্রোরেল। পরে দুই দফায় ফার্মগেট বাদ দিয়ে উভয় দিকে আংশিকভাবে সেবা চালু করা হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলা করলেন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী

জামায়াত আমিরের পাঁচ ঘণ্টার কর্মদিবস আদতে নারীর গায়েবি শিকল

ফেসবুকে জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য, তোপের মুখে ওসি

চট্টগ্রাম-৯ আসন: বিএনপিতে হেভিওয়েটের ধাক্কাধাক্কি

চট্টগ্রামে ওসি ও যুবদলের নেতা-কর্মীসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও হত্যা মামলা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত