Ajker Patrika

আমরা একটা দুর্যোগের মধ্যে আছি: আদালতে হাজিরার পর ড. ইউনুস

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৩ মে ২০২৪, ২১: ৪৮
আমরা একটা দুর্যোগের মধ্যে আছি: আদালতে হাজিরার পর ড. ইউনুস

আমরা একটা দুর্যোগের মধ্যে আছি। নিজের মতো করে কাজকর্ম করতে পারছি না, এ বয়সেও মামলায় প্রতিনিয়ত হাজিরা দিতে হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে হাজিরা শেষ হওয়ার পর এমন মন্তব্য করেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি ট্রাইব্যুনাল থেকে বের হয়ে আসার পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। তার আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, যেকোনো আপিল শুনানির সময় আপিলকারীকে বা আসামিকে আদালতে হাজির হতে হয় না। হাজির হওয়ার রেওয়াজ দেশের কোনো আদালতে নেই। অথচ এই মামলায় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ড. মোহাম্মদ ইউনুসকে প্রতিনিয়ত হাজির হতে হচ্ছে। 

এই বক্তব্যের পর সাংবাদিকরা ড. ইউনুসকে প্রশ্ন করেন, নিয়মিত মামলায় হাজিরা দিতে হচ্ছে এতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে কিনা? 

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এর ফলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। 

এদিকে কলকারখানা অধিদপ্তরের পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘উনি (ড. ইউনূস) আপিল করেছেন, উনি সাজাপ্রাপ্ত। একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি কীভাবে বলেন-বাংলাদেশের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে। শ্রম আদালতের আইন ভঙ্গের জন্য ওনার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, এটা তো নতুন কিছু না। এখনো লেবার কোর্টে প্রচুর মামলা পেন্ডিং আছে। বাংলাদেশকে নিয়ে কথা বলার ঔদ্ধত্য ওনার নেই।’ 

আজ শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে চারজনের করা আপিল মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের জামিনের মেয়াদ আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) এম এ আউয়াল জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর এই আদেশ দেন। 

অপর তিনজন হলেন গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।

ড. ইউনুসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ড. ইউনুসসহ চারজন ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে জামিন স্থায়ী করার আবেদন করেন। কিন্তু ট্রাইবুনাল জামিন স্থায়ী না করে আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত জামিন বর্ধিত করেন। একইসঙ্গে ওই দিন আপিল শুনানির দিন ধার্য করেন।’ 

গত ৩ মার্চ ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) এম এ আউয়াল জামিনের মেয়াদ ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানোর আদেশ দেন। ১৬ এপ্রিল জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয় ২৩ মে পর্যন্ত। 

এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি এই চারজনের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করা হয়। একই সঙ্গে ট্রাইব্যুনাল ৩ মার্চ পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন ড. ইউনুসসহ চারজনকে। 

এই মামলায় গত ১ জানুয়ারি ড. ইউনূসসহ চারজনকে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। 

রায় ঘোষণার পর উচ্চ আদালতে আপিল করার শর্তে ড. ইউনূসসহ চারজনকেই এক মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত। 

২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান বাদী হয়ে ড. ইউনূসসহ চার জনের নামে এ মামলা করেন। 

মামলায় শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করায় শ্রম আইনের অভিযোগ আনা হয়। 

আজ ড. ইউনূসসহ চারজনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার খাজা তানভীর আহমেদ ও এস এম মিজানুর রহমান। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দায়িত্বরত চিফ প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী। 

ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমরা ট্রাইব্যুনালকে বলেছি আপিল মামলায় আসামিদের কখনো হাজিরা দিতে হয় না। এই মামলায় কেন আপিলকারী হাজিরা দিবেন। বিচারকও একমত। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের ইচ্ছায় প্রতি ধার্য তারিখে হাজিরা দিতে হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত