Ajker Patrika

বেইলি রোডে আগুন, তারপর...

তোফাজ্জল হোসেন রুবেল ও রাসেল মাহমুদ, ঢাকা
রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনে আগুনে ৪৬ জনের প্রাণহানির পর ওই রোডের ১৩টি রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনে আগুনে ৪৬ জনের প্রাণহানির পর ওই রোডের ১৩টি রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনে আগুনে ৪৬ জনের প্রাণহানির পর ওই রোডের ১৩টি রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর নগরীর আরও কিছু স্থানে রেস্তোরাঁয় অভিযান চালায় সিটি করপোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সংস্থা। কিন্তু এ ধরনের দুর্ঘটনা থেকে পুরো রাজধানীকে নিরাপদ করার জন্য সমন্বিত পদক্ষেপের কোনো রূপরেখা নেই। পোড়া ভবনটির কী হবে, তা-ও বলতে পারছে না কেউ। ওই ঘটনায় করা পাঁচটি তদন্ত কমিটির মধ্যে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। অন্য কমিটিগুলোও কিছু সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। তবে কোনো সুপারিশ বাস্তবায়িত হবে কি না, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা সন্দিহান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। তদন্ত কমিটিও কাজ শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। অভিযান এখন যৌথভাবে পরিচালিত হচ্ছে।’

গত ২৮ মার্চ বিকেলে বেইলি রোডে গিয়ে দেখা যায়, আটতলা গ্রিন কোজি কটেজের নিচে পড়ে আছে ভাঙা কাচের টুকরা। সামনের ফুটপাত ঘেঁষে ব্যারিকেড দেওয়া। ফুটপাত দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই চলছে মানুষ। মোহাম্মদ আব্দুল কাইয়ুম নামের এক পথচারী বলেন, ভবনটির সামনের অংশ পরিষ্কার না করেই ফুটপাত খুলে দিয়েছে। ঝুঁকি ভেবেও চলতে হচ্ছে। সড়ক দিয়ে তো আর হাঁটা যায় না।

সামনে দাঁড়িয়ে পোড়া চিহ্ন দেখছিলেন চার নারী ও এক শিশু। কিছুক্ষণ পর ভবনটি দেখছিলেন মাঝবয়সী আরেক ব্যক্তি। কাছে গিয়ে জানা গেল, তাঁর নাম মো. রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘এক মাস হয়ে গেল এখনো ভবনটি পড়ে আছে। মানুষের শোক শেষ হয়ে গেলে আবার আগের মতোই চলবে হয়তো।’

বাইরে থেকে ভবনটি দেখেই এখনো বোঝা যায়, আগুন কতটা ভয়াবহ ছিল। কয়েকটি তলায় পড়ে আছে পুড়ে যাওয়া আসবাব। আগুন নেভাতে ব্যবহৃত পানি জমে আছে বেসমেন্টে। নিচতলায় লাগানো ‘ক্রাইম সিন’ লেখা ফিতা। নিচতলায় বসা কয়েকজন পুলিশ সদস্য। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা রমনা থানার সহকারী উপপরিদর্শক আহসান হাবিব বলেন, ‘আমরা ২৪ ঘণ্টা ভবনের নিরাপত্তার জন্য দায়িত্ব পালন করছি। ভেতরে কারও ঢোকার সুযোগ নেই। ভবনটিতে যাঁরা ব্যবসা করতেন, তাঁরাও কেউ আসেন না। কিছুই সরানো হয়নি।’

গত ২৯ ফেব্রুয়ারির আগুনে আহত আরও ১৫ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সবাই বাড়ি ফিরে গেছেন। নিহতদের পরিবার ও আহত অনেককেই আর্থিক সহযোগিতা করেছে জেলা প্রশাসন।

এ বিষয়ে ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, ‘যারা এসেছে, তাদের আমরা সহযোগিতা করেছি। নিহতদের ১৩টি পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে সহযোগিতা করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে ১০ জনকে ১০ হাজার এবং ২ জনকে ১৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।’

আহত রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘বাসায় এসে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাচ্ছি। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় জেলা প্রশাসন থেকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছিল। অফিস থেকেও ওষুধের টাকা দিয়েছিল।’

স্বামীর সঙ্গে ওই ভবনে গিয়ে আহত হয়েছিলেন উম্মে হাবিবা সুমাইয়া। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখনো ইনহেলার ব্যবহার করতে হচ্ছে। শ্বাসনালিতে ক্ষত রয়েছে।’

বেইলি রোডের একাধিক দোকানি জানান, গ্রিন কোজি কটেজসহ বেইলি রোডের রেস্টুরেন্টগুলোতে প্রতিবছর রমজানে দুপুরের পর থেকেই ইফতারি কেনার জন্য ব্যাপক ভিড় থাকত। আগুনের পর বেইলি রোডের রেস্টুরেন্টগুলোতে বেচাকেনায়ও ভাটা পড়েছে।

গ্রিন কোজি কটেজের পাশের ভবনেই পিৎজা হাট। কর্মী মুনিয়া বলেন, আগে দিনে এক-দেড় লাখ টাকা বিক্রি হতো, এবার ৬০ হাজারের বেশি হচ্ছে না। রোজার শুরুতে অবস্থা আরও খারাপ ছিল।

আগুনের ঘটনায় শুধু কলকারখানা অধিদপ্তরের কমিটি তদন্ত শেষ করেছে। কমিটির সদস্যসচিব ও উপমহাপরিদর্শক মো. আকিদ-উল-হাসান বলেন, দোতলার একটি কফিশপের ইলেকট্রিক কেটলি থেকে আগুনটা লাগে। তারা নেভানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পাশেই সিলিন্ডার থাকায় সেখানে আগুন লেগে রান্নাঘরে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি আরও বলেন, সিঁড়ির পাশে প্রতিটি তলায় সিলিন্ডার ছিল। ফলে আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন থাকায় আগুন বা ধোঁয়া বাইরে যেতে পারেনি। ধোঁয়ার কারণেই অনেকে মারা যায়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখান থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিরাপত্তা, লাইসেন্স, শ্রমিকদের বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। এমনকি একটি মামলাও করা হয়েছিল। তারপরও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান বলেন, ‘বেইলি রোডের ঘটনায় ২০-২৫ দিন আগে তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছি। তদন্তকাজ এগোচ্ছে। আলামত সংগ্রহের পর আমাদের ফরেনসিকে পরীক্ষা চলছে। রিপোর্ট এখনো পাইনি।’

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ও অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। চায়ের কেটলি থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। সেখানে গ্যাসের উপস্থিতির ফলে আগুন ছড়িয়ে যায়। ভবন থেকে বেরোনোর কোনো ব্যবস্থা ছিল না। ভেন্টিলেশন ছিল খুবই কম। ধোঁয়ার কারণেই অনেকে মারা যায়। ভবনের ধরন পাল্টানো হয়েছে। বাণিজ্যিক অফিস ভবনকে রেস্তোরাঁ করা হয়েছে। অগ্নিনিরাপত্তা পরিকল্পনাও ছিল না।

রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘শিগগির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব। এর বেশি বলতে পারছি না।’

আগুনের ঘটনায় স্বরাষ্ট্রসচিবের নেতৃত্বে কমিটি করে দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। কমিটিকে চার মাসের মধ্যে কারণ অনুসন্ধানসহ এর জন্য কারা দায়ী তা খুঁজে বের করতে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, রাজধানীতে একটি স্থাপনার অনুমোদন এবং সেখানে রেস্তোরাঁ করতে কমপক্ষে ১০টি সরকারি সংস্থার অনুমতি লাগে। সংস্থাগুলো হলো রাজউক, সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, তিতাস, ডিপিডিসি, কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ঢাকা ওয়াসা এবং এনবিআর। গ্রিন কোজি কটেজেও অধিকাংশ সংস্থারই অনুমোদন ছিল।

রাজউকের তদন্তকাজে যুক্ত এক কর্মকর্তা বলেন, যেসব সংস্থার কাছে তদন্তের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছিল, তারা জবাব দেয়নি। কীভাবে রেস্তোরাঁটি অনুমোদন পেয়েছিল, তা-ও জানায়নি। ভবনমালিক, নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ও রেস্তোরাঁমালিকদের চিঠি দিয়েও পাওয়া যায়নি। এই অবস্থায় কিছু সুপারিশ দিয়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (যুগ্ম সচিব) আরিফুল হক বলেন, ‘আমাদের একটি কমিটি কাজ করছে। তারা রাজস্ব বিভাগ থেকে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুসহ অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করেছে। এটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগুনের ঘটনায় অনুমোদনের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের যেমন দায় আছে, তেমনি ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে ভবনটিতে রেস্তোরাঁ ব্যবসা চলতে দেওয়ায় বর্তমান কর্মকর্তারাও দায় এড়াতে পারেন না।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, স্থাপনাটির এখন যে অবস্থা, তাতে ব্যবহারের আগে সামগ্রিক কারিগরি দিক মূল্যায়ন করে দেখা উচিত। যদি কাঠামোগত ক্ষতি না হয়ে থাকে, তাহলে পুনরায় তা মেরামত করে ব্যবহার উপযোগী করা যাবে। তিনি বলেন, আগুনের পর কিছু বিচ্ছিন্ন অভিযান চলেছে। কিন্তু এসব অভিযানে সফলতা আসবে না। পুরো রাজধানীকে নিরাপদ করার জন্য সমন্বিতভাবে কী কী অভিযান চলতে পারে, তার একটি গাইডলাইন তৈরি করা উচিত টাস্কফোর্স বানিয়ে। কিন্তু তেমন কোনো উদ্যোগ এখনো দেখা যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নারায়ণগঞ্জে ডাইং কারখানায় গ্যাস বিস্ফোরণ, দগ্ধ ৬ শ্রমিক

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ২২
এম এস ডাইং প্রিন্টিং অ্যান্ড ফিনিশিং কারখানা। ছবি: সংগৃহীত
এম এস ডাইং প্রিন্টিং অ্যান্ড ফিনিশিং কারখানা। ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার এনায়েতনগর বিসিক শিল্প এলাকায় একটি কারখানায় লিকেজ থেকে গ্যাস বিস্ফোরণে ছয় শ্রমিক দগ্ধ হয়েছেন। রোববার ভোরে এম এস ডাইং প্রিন্টিং অ্যান্ড ফিনিশিং নামে ওই কারখানায় এই ঘটনা ঘটে। গুরুতর অবস্থায় দগ্ধ শ্রমিকদের জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। আহত ব্যক্তিরা হলেন আল আমিন (৩০), আজিজুল্লাহ (৩২), সেলিম (৩৫), জালাল মোল্লা (৪০), নাজমুল হুদা (৩৫) ও কারখানার নিরাপত্তাকর্মী নুর মোহাম্মদ (৩৫)।

ারখানার শ্রমিকেরা জানান, নিচতলায় বয়লার রুমে শ্রমিকেরা কাজ করছিলেন। ভোরের দিকে সেই রুমে গ্যাসলাইন থেকে বিকট বিস্ফোরণ ঘটে। মুহূর্তেই দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে। এতে ছয়জনের শরীর ঝলসে যায়।

ার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন শাওন বিন রহমান জানান, দগ্ধ ব্যক্তিদেরকে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সবার অবস্থা গুরুতর। কার শরীরের কত শতাংশ পুড়েছে, তা নির্ণয় করে পরে জানানো যাবে।

ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আগুনে দগ্ধের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হচ্ছে। অফিশিয়ালি আমাদের এই বিষয়ে কেউ তথ্য দেয়নি। গণমাধ্যমে সংবাদ পেয়ে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কেশবপুরে হাডুডু খেলায় অতর্কিত হামলা: ছাত্রদলের আহ্বায়কসহ আহত ১০

কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি 
আহত ব্যক্তিদের কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আহত ব্যক্তিদের কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

যশোরের কেশবপুর উপজেলায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী হাডুডু খেলার অনুষ্ঠানে অতর্কিত হামলায় উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়কসহ অন্তত ৯ জন আহত হয়েছেন। শনিবার (২৬ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার পাঁজিয়া ইউনিয়নের সাগরদত্তকাটি গ্রামের মধ্যপাড়ায় হাডুডু খেলার পুরস্কার বিতরণের সময় এই ঘটনা ঘটে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৯ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

হামলায় আহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আজিজুর রহমান, বিদ্যানন্দকাটির কামরুজ্জামান (২৮), মির্জাপুর গ্রামের আবু মুসা (২০), পাত্রপাড়া গ্রামের নয়ন (২১), সাগরদত্তকাটি গ্রামের সুমন হোসেন (২৫), মইনুল ইসলাম (২৫), মনোহরনগর গ্রামের আলী হাসান, মজিদপুর গ্রামের রিয়াদ হোসেন (২২) ও মাদারডাঙ্গা গ্রামের মাসুদ হোসেন (২৩)। রাতে আহত ব্যক্তিদের কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এই ঘটনার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

খেলা দেখতে আসা একাধিক দর্শক জানান, আটদলীয় হাডুডু টুর্নামেন্টের উদ্বোধন ও অতিথি নির্বাচন নিয়ে আয়োজক কমিটির দুটি গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়।

শনিবার দুপুরে পাঁজিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন মুকুল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করার পরই আয়োজক কমিটির একটি অংশ এতে আপত্তি জানিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি করে।

একপর্যায়ে তারা অনুষ্ঠানের মঞ্চে থাকা মকবুল হোসেন মুকুলকে উদ্দেশ করে অশালীন কথাবার্তা বলতে থাকলে তিনি মঞ্চ থেকে চলে যান।

সন্ধ্যায় ওই হাডুডু খেলার ফাইনাল দেখার জন্য মঞ্চে আসেন উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আজিজুর রহমান। ফাইনালে উপজেলার বুড়ুলি দল খুলনার চুকনগর দলকে ২-০ ব্যবধানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। খেলা শেষে চ্যাম্পিয়ন দলের কাছে পুরস্কার হিসেবে ফ্রিজ হস্তান্তর করার সময় একদল যুবক মঞ্চে এসে অতর্কিত হামলা চালান। এ সময় মঞ্চে থাকা উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আজিজুর রহমানসহ আরও কয়েকজন আহত হন। হামলার কারণে দর্শকেরা ভয়ে দিগ্‌বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন এবং এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

খেলার রেফারি শওকত হোসেন বলেন, সুষ্ঠুভাবে হাডুডু খেলা সম্পন্ন হলেও পুরস্কার বিতরণের সময় ওই ঘটনা ঘটে। টুর্নামেন্টের সভাপতি রেজাউল করিম সরদার বলেন, ‘হামলা শুরু হলে আমি দ্রুত এলাকা ত্যাগ করি।’

পাঁজিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মকবুল হোসেন মুকুল বলেন, ‘কিছু যুবক পুরস্কার বিতরণের সময় হামলা চালিয়েছে। ওই সময় আমি সেখানে ছিলাম না এবং এটি কোনো রাজনৈতিক বিষয়ও নয়।’

এ ব্যাপারে উপজেলার পাঁজিয়া ইউনিয়নের বিট পুলিশিংয়ের সহকারী কর্মকর্তা সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মামুন বলেন, খেলার অনুষ্ঠানে মারামারির ঘটনায় এখনো কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নোয়াখালীতে ট্রাকের পেছনে মাইক্রোবাসের ধাক্কা, নিহত ১

নোয়াখালী প্রতিনিধি
আবুল কালাম আজাদ। ছবি: সংগৃহীত
আবুল কালাম আজাদ। ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবে পবিত্র ওমরাহ শেষে বাড়ি ফেরার পথে নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদী বাজারের টিভি সেন্টার এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আবুল কালাম আজাদ (৫৩) নামের এক ব্যবসায়ী মারা গেছেন। রোববার (২৬ অক্টোবর) ভোরে মাইজদী টিভি সেন্টার এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় আবুল কালামকে বহনকারী মাইক্রোবাসটি দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দেয়। তখন মাইক্রোবাসের যাত্রী আবুল কালাম আজাদ মারা যান এবং আহত হন আরও তিনজন।

আবুল কালাম আজাদ জেলার সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নুরুল হক ছোট মিয়ার ছেলে। তিনি স্থানীয় উত্তর ওয়াপদা বাজারের ব্যবসায়ী ছিলেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সৌদি আরবে পবিত্র ওমরাহ পালন শেষে শনিবার রাতে দেশে ফেরেন আজাদ। এরপর মাইক্রোবাস যোগে স্ত্রী নাসিমা আক্তার, মা ও ভাতিজা লিমনসহ গ্রামের বাড়ি ফিরছিলেন। যাত্রাপথে মাইক্রোবাসটি সোনাপুর-চৌমুহনী আঞ্চলিক মহাসড়কের মাইজদী বাজারের টিভি সেন্টার এলাকায় পৌঁছালে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দেন।

এতে মাইক্রোবাসটি ধুমড়েমুচড়ে যায়। ঘটনার পরপরই চালক পালিয়ে যান। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক আজাদকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত ব্যক্তিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

সুধারাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ঘটনার পরপরই মাইক্রোবাসের চালক পালিয়ে যান। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে নেমেছেন জেলেরা, মাছঘাটে কর্মচাঞ্চল্য

চাঁদপুর প্রতিনিধি
চাঁদপুরে মাছঘাটে মাছ দরদাম করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। ছবি: আজকের পত্রিকা
চাঁদপুরে মাছঘাটে মাছ দরদাম করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় পর আবারও নদীতে নেমেছেন চাঁদপুরের জেলেরা। আড়তগুলোয় শুরু হয়েছে কর্মচাঞ্চল্য। তবে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পেয়ে অনেকেই হতাশ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইলিশ কম পাওয়া গেলেও দাম বাড়েনি।

রোববার (২৬ অক্টোবর) ভোর থেকে সদর উপজেলার অন্যতম হরিণা মাছঘাট ক্রেতা-বিক্রেতায় সরগরম হয়ে ওঠে। ঘাটসংলগ্ন এলাকা থেকে কয়েকজন জেলে নদীতে নামছেন। আবার কেউ ইলিশ ধরে ঘাটে নৌকা নিয়ে আসছেন। ঘাটে ইলিশ উঠানোর পরে হাঁকডাক দিয়ে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।

জেলেরা নদী থেকে সরাসরি এই ঘাটে ইলিশ নিয়ে আসেন। যে কারণে টাটকা ইলিশ কেনার জন্য এই ঘাটে পাইকারি ও খুচরা ক্রেতা সব সময় বেশি থাকেন।

লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামের ছেলে মিজানুর রহমান বলেন, ‘পেশা ইলিশ ধরা। অন্য কাজ করি না। যে কারণে ধারদেনা করে হলেও নদীতে নামতে হয়। যে পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে, তাতে খরচ বাদ দিয়ে তেমন আর থাকে না।’

হরিণা ফেরিঘাট এলাকার জেলে হুমায়ুন ঢালি বলেন, ‘পাঁচজনে মিলে মধ্যরাতে মেঘনায় ইলিশ ধরতে নেমেছি। যে পরিমাণ ইলিশ পেয়েছি, তাতে খরচ বাদে তেমন একটা থাকবে না। হয়তো জনপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পাওয়া যাবে।’

হরিণা মাছঘাটে ইলিশ কিনতে এসেছেন ফরিদগঞ্জ থেকে সাইফুর রহমান ও হাবিবুল্লা। তাঁরা বলেন, ঘাটে মাছ থাকলেও দাম কমেনি। দাম আগের মতোই।

চাঁদপুরে মাছঘাটে মাছ দরদাম করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। ছবি: আজকের পত্রিকা
চাঁদপুরে মাছঘাটে মাছ দরদাম করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। ছবি: আজকের পত্রিকা

এই ঘাট থেকে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ ক্রয় করে চাঁদপুর শহরের বাজারগুলোয় বিক্রি করেন খুচরা মাছ ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান।

আব্দুর রহমান বলেন, মাছের দাম কমেনি বা বাড়েনি। ওজনে এক কেজিতে ৪টা, এমন প্রতি হালি ইলিশ কিনেছেন ৮০০ টাকা দরে। ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা। বড় সাইজের পাঙ্গাশ কিনেছেন প্রতি কেজি সাড়ে ৮০০ টাকা ধরে।

এই ঘাটের প্রবীণ মাছ ব্যবসায়ী আবুল কাশেম কালু হাওলাদার বলেন, জেলেরা রাত থেকে নদীতে নামলেও কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাচ্ছেন না। তবে যে পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে, তাতে দাম বাড়েনি। আগের দামে বিক্রি করছেন তাঁরা। তবে কয়েক দিন অতিবাহিত হলে বোঝা যাবে নদীতে ইলিশ আছে কি না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত