Ajker Patrika

ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যার ২৮ বছর: ‘সবাই ভুললেও আমি ভুলতে পারি না’

অর্চি হক, ঢাকা
আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২৩, ০৯: ৫২
ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যার ২৮ বছর: ‘সবাই ভুললেও আমি ভুলতে পারি না’

উপার্জনক্ষম একমাত্র মেয়েকে হারিয়েছিলেন ২৮ বছর আগে। এখন দুই ছেলে রয়েছে শরিফা বেগমের। তবে তাঁদের একজন শয্যাশায়ী, অন্যজন মায়ের খোঁজখবর নেন না। শরিফা বেগমকে তাই মানুষের বাড়িতে কাজ করে দুমুঠো খাবার জোগাতে হয়।

পুলিশ সদস্যদের দ্বারা ধর্ষণ ও হত্যার শিকার কিশোরী ইয়াসমিনের মা এই শরিফা বেগম। ১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট হত্যা করা হয় ইয়াসমিনকে। মেয়ের জন্য আজও কাঁদেন শরিফা বেগম। অভাব-অনটনের মধ্যেও মেয়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে আজ বাড়ির পাশের মসজিদে মিলাদের ব্যবস্থা করেছেন শরিফা বেগম। তিনি আজকের পত্রিকাকে বললেন, ‘আমার তো মেয়ে। সবাই ভুললেও আমি ভুলতে পারি না। যেটুক সামর্থ্য আছে, তাই দিয়ে মিলাদ পড়াই।’

শরিফা বেগম আরও বলেন, ‘আগস্ট মাসটা আসলেই কলিজাটার মদ্দি কেমন করে। ভাবি, মেয়েটা আমার বেইচে থাকলে কত বড় হতো এখন।’

শরিফা বেগম এখন মানুষের বাড়িতে কাজ করে মাসে দুই হাজার টাকা পান। শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ বাসা বেঁধেছে শরীরে। টানাটানির সংসারে নিজের জন্য ওষুধও সব সময় কিনতে পারেন না।

শরিফা বেগম বলেন, ইয়াসমিন হত্যার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তাঁকে ১ লাখ টাকা অনুদান দেন। জাতীয় পার্টির নেত্রী রওশন এরশাদ দিয়েছিলেন ১০ হাজার টাকা। আরও দুজন মন্ত্রী ৫০০ করে টাকা দেন, যাঁদের নাম তিনি মনে করতে পারেননি। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি একাধিক সংস্থা বিভিন্ন সময় সহায়তার আশ্বাস দিলেও তা আর পূরণ হয়নি।

কী ঘটেছিল সেদিন
১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট মাকে দেখার জন্য ঢাকা থেকে দিনাজপুরে বাড়ি ফিরছিল কিশোরী গৃহকর্মী ইয়াসমিন। দিনাজপুরের বাস না পেয়ে পঞ্চগড়গামী একটি বাসে ওঠে সে। বাসের লোকজন তাকে মাঝরাতে দিনাজপুরের দশমাইল এলাকায় নামিয়ে সেখানকার একটি চায়ের দোকানে জিম্মায় দিয়ে যায়। সেখানে পুলিশ সদস্যরা এসে দিনাজপুর শহরে মায়ের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে নিয়ে যান তাকে। এরপর পুলিশ ভ্যানের মধ্যেই কিশোরী ইয়াসমিনকে দলবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। তার লাশ রাস্তার পাশে ফেলে পালিয়ে যান পুলিশ সদস্যরা।

ঘটনা জানাজানি হলে বিক্ষুব্ধ জনতা দিনাজপুর শহরের রাস্তায় প্রতিবাদ মিছিল বের করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। তৎকালীন পুলিশ প্রশাসন হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে ইয়াসমিনকে ‘যৌনকর্মী’ হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে গোটা দেশ।

১৯৯৭ সালে রংপুর বিশেষ আদালত ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় তিনজনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। ২০০৪ সালে রায় কার্যকর করা হয়।

ইয়াসমিন হত্যার দিনটিকে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন করছে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। এ উপলক্ষে দিনাজপুরে আজ সভা ও র‍্যালিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে। তবে মানবাধিকার ও নারী অধিকার কর্মীরা বলছেন, ইয়াসমিন হত্যার ২৮ বছর পরেও নারীর জন্য নিরাপদ সমাজ গড়ে ওঠেনি। নারীরা আজও রাতের বেলা ঘরের বাইরে অনিরাপদ। 

আইন ও সালিস কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে ধর্ষণের পর হত্যার শিকার ২৫ নারী। অর্থাৎ গড়ে প্রতি মাসে অন্তত তিনজন নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারীরা আজও অনিরাপদ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একের পর এক ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হলে এবং মানুষের মানসিকতায় পরিবর্তন না এলে রাতারাতি এ অবস্থার পরিবর্তন হবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত