Ajker Patrika

গুগল-উইকিপিডিয়ায় চাকরির নামে শতাধিক তরুণীকে ব্ল্যাকমেল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৪: ৪৮
গুগল-উইকিপিডিয়ায় চাকরির নামে শতাধিক তরুণীকে ব্ল্যাকমেল

বিশ্ব প্রযুক্তি জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান গুগল ও উইকিপিডিয়ায় পার্টটাইম টাইপিস্টের চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে ফাঁদ পাততেন অষ্টম শ্রেণি পাস তরুণ। এত সহজে চাকরি পেতে দিতে হতো মেডিকেল চেকআপ। আর এভাবেই শতাধিক নারীকে ভার্চুয়াল মেডিকেলের নামে গোপন ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেলিংয়ের মাধ্যমে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। অভিনব এমন প্রতারণার অভিযোগে রাজধানী থেকে আল ফাহাদ (১৯) নামের এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। গতকাল বুধবার রাতে রাজধানীর গুলশানের নৰ্দ্দা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ সময় তাঁর কাছ থেকে একটি দামি ক্যামেরা, ক্যামেরার দুটি লেন্স, একটি মোবাইল ফোন, ছয়টি সিম কার্ড, একটি এক্সটার্নাল মেমোরি কার্ড ও ৪০৩ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। 

আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। 

খন্দকার মঈন বলেন, করোনা মহামারির শুরু থেকেই অপরাধীরা ভার্চুয়াল জগতের অপব্যবহার করে বিভিন্নভাবে মানুষকে প্রতারিত করছে। প্রতারকেরা বিভিন্নভাবে নারীদের হেনস্তা, প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেলিংয়ের মাধ্যমে ফাঁদে ফেলছে। ভুক্তভোগী অনেকে ‘রিপোর্ট টু র‍্যাব’ ও র‍্যাবের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি জানান। এ ছাড়া অনেকে র‍্যাবের কাছে সরাসরি অভিযোগ দেন। এসব তথ্য পর্যালোচনা করে অভিযুক্তদের ধরতে র‍্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব-১-এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নৰ্দ্দা এলাকায় অভিযান চালায়। পরে ‘ভার্চুয়াল মেডিকেল স্ক্যানিং’-এর নামে গোপন ভিডিও চিত্র ধারণ করে ব্ল্যাকমেলিংয়ের অপরাধে আল ফাহাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফাহাদ জানিয়েছেন, প্রতারণার মাধ্যমে অনেকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। 

যেভাবে হচ্ছিল ব্ল্যাকমেলিং
প্রথমে ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে অল্প বয়সী নারীদের দেশি-বিদেশি আন্তর্জাতিক সংস্থায় যেমন গুগল, উইকিপিডিয়ায় উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখাতেন। এ সময় চাকরিপ্রত্যাশী অনেকেই তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। তাঁদের (চাকরিপ্রার্থী) প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা ‘রেজিস্ট্রেশন ফি’ নেওয়া হতো। এভাবে অনেক চাকরিপ্রত্যাশীকে আকৃষ্ট করতেন।

অন্যদিকে মোবাইলে বিশেষ অ্যাপসের মাধ্যমে নারী কণ্ঠে চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হতো। এ ছাড়া বিভিন্ন কৌশলে প্রার্থীদের করোনাকালীন ‘ভার্চুয়াল মেডিকেল’ করা হবে বলে জানানো হতো। প্রার্থীদের (নারীদের) বিভিন্ন সামাজিক চ্যাটিং অ্যাপসের মাধ্যমে ভিডিও কলে যুক্ত করত। এ সময় নিজের মোবাইলের ক্যামেরা বন্ধ রেখে ভিডিওকলে মেডিকেল পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলে কৌশলে ভিকটিমদের গোপন ভিডিও ধারণ করতেন। গোপনে ধারণ করা ভিডিও পরে ফেসবুকে ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হতো। এভাবে অভিযুক্ত ফাহাদ শতাধিক নারীকে ব্ল্যাকমেল করেছেন। 

 চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করতে হতো। ফাহাদ নিজেই বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে ভয়েস পরিবর্তন করে নারীকণ্ঠে চাকরিপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলে ‘ভুয়া নিয়োগ’ প্রক্রিয়া শেষ করতেন। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন নারীর নাম ব্যবহার করে চাকরিপ্রত্যাশীদের প্রথমে নিজেকে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিতেন। একই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চাকরিতে যোগদান করেছেন বলে জানাতেন। পরে নিজেই ওই কোম্পানির অ্যাডমিন অফিসার হিসেবে বিভিন্ন নামে পরিচয় দিতেন এবং ভিকটিমদের ইন্টারভিউ নিতেন। পুনরায় ওই অ্যাপসের মাধ্যমে ভয়েস পরিবর্তন করে নিজেই মেডিকেল অফিসার হিসেবে ভিকটিমদের ভার্চুয়াল মেডিকেল করানোর নামে ভিডিও করতেন। 

যেহেতু করোনার সময়ে হাসপাতালে গিয়ে মেডিকেল করা সহজ ছিল না, সে ক্ষেত্রে গ্রেপ্তার ফাহাদ এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কৌশলে ভিডিও করে ভিকটিমদের ব্ল্যাকমেল করতেন।

দীর্ঘদিন ধরে এই প্রতারণা
শতাধিক নারীকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে গোপনে ভিডিও ধারণ করে প্রতারণা করেছেন ফাহাদ। যাঁরা তাঁর ফাঁদে পা দিয়েছেন, তাঁদের কাছ থেকে ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা করে নেওয়া হতো। এভাবে দেড় বছর ধরে শতাধিক নারীকে গোপন ভিডিও দেখিয়ে প্রতিনিয়ত ব্ল্যাকমেল করতেন।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেপ্তার ফাহাদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। তিনি একটি স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। পরে লেখাপড়া ছেড়ে দেন। পরে তাঁর বাবার সঙ্গে রেলস্টেশনের পাশে একটি ফলের দোকানে বসতেন। ফল বিক্রির আড়ালে ফেসবুকে ‘অনলাইন জব বিডি’, ‘পার্টটাইম জবস ইন ঢাকা’ ও ‘পার্টটাইম জবস ইন বাংলাদেশ’ নামে গ্রুপে সদস্য হিসেবে যোগ দেন। পরে গ্রুপে দেশি-বিদেশি কোম্পানিতে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে চাকরি দেওয়ার নামে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করছিলেন। প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেলিংয়ের কাজে ফেসবুকে বেশ কিছু নারীর ভুয়া আইডি ব্যবহার করতেন। 

ফাহাদের কাছ থেকে ইয়াবা জব্দের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, তিনি ইয়াবা কারবারের সঙ্গে জড়িত না থাকলেও নিয়মিত ইয়াবা সেবন করতেন। ফাহাদের বাবা রেলস্টেশনের ফল বিক্রেতা। কিন্তু ফাহাদ প্রতারণার টাকায় আয়েশি জীবন যাপন করতেন বলে জানান র‍্যাবের এই কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত