Ajker Patrika

আতঙ্কের ভূমিকম্পে কাঁপল দেশ, নিহত ১০ জন

  • মাত্রা রিখটার স্কেলে ৫.৭। উৎপত্তিস্থল নরসিংদী
  • আহত হাজারের বেশি, বেশির ভাগই আহত আতঙ্কে ভবন থেকে নামার সময়
  • হেলে পড়েছে বহু ভবন, ফাটলও ধরেছে অনেকগুলোয়
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০২: ৪৪
পুরান ঢাকার কসাইটুলীতে ভবনের রেলিং ধসে তিনজন নিহত হয়। মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গের সামনে স্বজনদের আহাজারি।	ছবি: আজকের পত্রিকা
পুরান ঢাকার কসাইটুলীতে ভবনের রেলিং ধসে তিনজন নিহত হয়। মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গের সামনে স্বজনদের আহাজারি। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভয়াবহ ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটের ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭। উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার কাছে নরসিংদীর মাধবদী। ভূমিকম্পে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসে।

গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে ঢাকা, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে হাজারের বেশি মানুষ। আহত হওয়ার বেশির ভাগ ঘটনা আতঙ্কে তড়িঘড়ি করে ভবন থেকে নামতে গিয়ে।

পুরান ঢাকায় নিহত ব্যক্তিরা হলেন রাফিউল ইসলাম (২০), আবদুর রহিম (৪৮) ও তাঁর ছেলে মেহরাব হোসেন (১২)। ঢাকার মুগদায় মাকসুদ (৫০) নামের এক নিরাপত্তাকর্মী নিহত হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ১০ মাসের শিশু ফাতেমা নিহত হয়েছে।

ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদীতেই প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচজন। এর মধ্যে সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের গাবতলি এলাকার দেলোয়ার হোসেন উজ্জ্বল (৪০) ও তাঁর ছেলে মো. ওমর (৮), পলাশ উপজেলার মালিতা পশ্চিমপাড়া গ্রামের কাজেম আলী ভূঁইয়া (৭৫) ও কাজীরচর নয়াপাড়া নাসির উদ্দিন (৬৫) এবং শিবপুরের জয়নগর ইউনিয়নের আজকীতলা গ্রামের ফোরকান মিয়া (৪৫)।

ভূমিকম্পে হতাহতের ঘটনায় শোক জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

ভূমিকম্পের এই ঘটনায় ঢাকার বাড্ডা, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, নিউমার্কেট, পঙ্গু হাসপাতালসহ নরসিংদী, গাজীপুর রাজশাহী ও চট্টগ্রামে ভবন হেলে পড়েছে ও ফাটল ধরেছে।

হঠাৎ এমন ভূমিকম্পের বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও ভূমিকম্প গবেষক মেহেদি আহমেদ আনসারী বলেছেন, বড় ভূমিকম্পের আগে ছোট ছোট ভূমিকম্প সতর্কসংকেত হতে পারে। তিনি মনে করিয়ে দেন—বাংলাদেশ ও আশপাশের এলাকায় গত দেড় শ বছরে একটি বড় ও পাঁচটি মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প ঘটেছে। আশপাশে শেষ বড় ভূমিকম্প হয়েছিল প্রায় ১০০ বছর আগে। তাই আরেকটি বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, গত পাঁচ বছরে যতবার ভূমিকম্প হয়েছে, এত শক্তিশালী কম্পন কমই অনুভূত হয়েছে। তিনি জানান, নতুন ভবনে বিল্ডিং কোড মানা হলেও পুরোনো ভবনগুলোর বেশির ভাগই কোনো নিয়ম মেনে নির্মাণ করা হয়নি। রাজউকের তথ্যমতে, ৯০ শতাংশ ভবন বিল্ডিং কোড লঙ্ঘন করে বানানো—এটি নিয়ে গুরুত্বসহকারে কাজ করা প্রয়োজন।

ঢাকাসহ পাঁচ জেলায় হতাহতের চিত্র

ভূমিকম্পে নিহত ১০ জন ছাড়াও ঢাকা, নরসিংদী ও গাজীপুরে সহস্রাধিক মানুষ আহত হয়েছে। কেউ ভবন থেকে লাফ দিয়ে, কেউ ভূমিকম্পের সময় বাসাবাড়ি থেকে সিঁড়ি ভেঙে ধাক্কাধাক্কি করে নামতে আহত হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস জানায়, পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় একটি আটতলা ভবনের পাশের দেয়াল ও কার্নিশ থেকে ইট-পালেস্তারা খসে নিচে পড়লে সেখানে থাকা ক্রেতা ও পথচারীরা আহত হন। স্থানীয়রা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁরা হলেন রাফিউল ইসলাম, আবদুর রহিম ও তাঁর ছেলে মেহরাব হোসেন। ছুটির দিন সকালে মাংস কিনতে পুরান ঢাকার বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন ব্যবসায়ী আবদুর রহিম। সঙ্গে নিয়েছিলেন স্কুলপড়ুয়া ছেলেকে। বংশালের কসাইটুলীতে নয়নের মাংসের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁরা। তখনই ভূমিকম্প; তীব্র ঝাঁকুনিতে ভবনের ছাদের রেলিং ভেঙে পড়ে। তাতে একসঙ্গে প্রাণ হারান বাবা-ছেলে।

সেখানেই নিহত আরেকজন রাফিউল স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। আবার মুগদার মদিনাবাগে নির্মাণাধীন ভবনের রেলিং ধসে মাথায় পড়ে মাকসুদ (৫০) নামের এক নিরাপত্তাকর্মীর মৃত্যু হয়।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গোলাকান্দাইল এলাকায় দেয়াল ধসে মারা গেছে ১০ মাসের শিশু ফাতেমা। শিশুটির মাসহ দুজন আহত হন।

নরসিংদী সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের গাবতলি এলাকায় ভূমিকম্পের সময় নির্মাণাধীন ভবনের দেয়াল থেকে ইট ধসে পাশের বাড়ির সানশেড ভেঙে পড়ে। এতে দেলোয়ার হোসেন উজ্জ্বল, তাঁর ছেলে মো. ওমর এবং দুই মেয়ে আহত হয়। প্রথমে তাদের নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় দেলোয়ার ও ওমরকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হলে চিকিৎসকেরা ওমরকে মৃত ঘোষণা করেন। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যায় দেলোয়ারও মারা যান। দুই মেয়ে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি আছে।

এদিকে পলাশ উপজেলার মালিতা পশ্চিমপাড়া গ্রামে মাটির ঘরের দেয়াল ধসে আহত কাজেম আলী ভূঁইয়া (৭৫) হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। শিবপুর উপজেলার আজকীতলা পূর্বপাড়ায় গাছ থেকে পড়ে আহত ফোরকান মিয়া (৪৫) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর মারা যান। ভূমিকম্পের সময়ে আতঙ্কে দৌড়াতে গিয়ে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে কাজীরচর নয়াপাড়ার নাসির উদ্দিন (৬৫) ঘটনাস্থলেই মারা যান বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে।

স্থানীয় প্রতিনিধি ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুরে আহত ৭২ জন চিকিৎসা নিতে যায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজে। এর মধ্যে ৪৯ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫৩ জন চিকিৎসা নিতে আসে। ভূমিকম্পে আতঙ্কে কারখানা ভবন থেকে নামতে গিয়ে অনেক শ্রমিক আহত হয়েছেন। বিকেল ৫টা পর্যন্ত গাজীপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ছিল ২৫২ জন, যাদের বেশির ভাগই পোশাকশ্রমিক। দেয়াল ধস ও ধাক্কাধাক্কিতে নামতে গিয়ে নরসিংদীতে আহত হয়ে হাসপাতাল চিকিৎসা নেয় ৪৫। তাদের মধ্যে গুরুতর তিনজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহসীন হলের তিন শিক্ষার্থী তিনতলা ও চারতলা থেকে লাফ দিয়ে আহত হয়েছেন। সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পা ভেঙেছেন ছাত্রদল নেতা তানভীর বারী হামিমসহ আরও অনেকে।

তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বলছে, এই তথ্যের বাইরেও বহু রোগী দেশের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে এবং কোথাও কোথাও ভর্তি রয়েছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এখনো হালনাদাগ তথ্যে তা যুক্ত হয়নি। ফলে আহতের সংখ্যা হাজারের বেশি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, ভূমিকম্পের মাত্রার তুলনায় হতাহতের সংখ্যা কিছুটা বেশি হয়েছে—উৎপত্তিস্থল ছিল কাছাকাছি, তাই এমনটা হতে পারে। বেশির ভাগই প্যানিক অ্যাটাকে আহত হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

অনেক ভবন ফাটল ও হেলে পড়েছে

অন্যদিকে রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় ভবন হেলে পড়া ও ফাটল ধরার তথ্য পাওয়া গেছে। নিউমার্কেট থানা ভবনের ৩, ৪ ও ৫ তলায় ফাটল ধরেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহসীন হল, কবি জসীমউদ্‌দীন হল, স্যার এ এফ রহমান হল, মোকাররম ভবনসহ বিভিন্ন স্থানে পলেস্তারা খসে পড়েছে। উত্তর বাড্ডাসহ ঢাকার কয়েকটি ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, আরমানিটোলার কসাইটুলীতে একটি বহুতল ভবনে পলেস্তারার কিছু আলগা অংশ ও কিছু ইট খসে পড়েছে। খিলগাঁওয়ে নির্মাণাধীন ভবন থেকে ইট পড়ে পাশের ভবনের একজন আহত হয়েছেন। সূত্রাপুর ও কলাবাগানে দুটি ভবন হেলে পড়ার খবর পাওয়া গেছে।

গাজীপুরে ছয়তলা একটি ভবন হেলে পড়েছে এবং একটি মাদ্রাসার দেয়ালে ফাটল দেখা গেছে। টঙ্গীর স্টেশন রোডে একটি ভবন হেলে পাশের ভবনে ঠেকেছে। এতে বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নরসিংদীতে সার্কিট হাউস, পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক ভবনসহ বিভিন্ন ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরেবাংলা ফজলুল হক হলের দেয়ালে ফাটল ও পলেস্তারা খসে পড়ায় আতঙ্কিত শিক্ষার্থীরা দ্রুত স্থানান্তর ও হল পুনর্নির্মাণের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। চট্টগ্রাম নগরের মনসুরাবাদ এলাকায় একটি ছয়তলা ভবন পাঁচ বছর আগে ভূমিকম্পে কিছুটা হেলে পড়ে। এবারও কিছুটা হেলে পড়েছে।

কন্ট্রোল রুম চালু

ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি দ্রুত নিরূপণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে তাৎক্ষণিকভাবে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে মাঠপর্যায়ে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কন্ট্রোল রুমের নম্বর ০২৫৮৮১১৬৫১।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রংপুরে মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর স্ত্রীকে হত্যার ঘটনায় টাইলসমিস্ত্রি গ্রেপ্তার

রংপুর প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রংপুরের তারাগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায় ও তাঁর স্ত্রী সুবর্ণা রায়কে নিজ বাড়িতে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের শেরমস্ত বালাপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম মোরছালিন (২২)। তিনি পেশায় একজন টাইলসমিস্ত্রি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবু সাইয়ুম তালুকদার জানান, হত্যার দুই দিন আগে মোরছালিন মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্রের বাড়িতে টাইলস লাগানোর কাজ করেন।

আজ শুক্রবার মোরছালিনকে নিয়ে পুলিশ যোগেশ চন্দ্রের বাড়ির পাশে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারে যাবে বলে জানা গেছে।

গত শনিবার রাতে তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের রহিমাপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক যোগেশ চন্দ্র রায় ও তাঁর স্ত্রী সুবর্ণা রায়কে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। পরদিন রোববার সকালে প্রতিবেশীরা ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে তাঁদের রক্তাক্ত লাশ দেখতে পান। এ ঘটনায় বড় ছেলে শোভেন চন্দ্র রায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে হত্যা মামলা করেন। পুলিশ সেই মামলার অগ্রগতি হিসেবে এ পর্যন্ত একজনকে গ্রেপ্তার করল।

তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ব্যক্তি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁর কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও পাওয়া গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত এখনই জানানো হচ্ছে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ডিএসসিসির ময়লার গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ গেল দুই বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থীর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৪০
সিটি করপোরেশনের ময়লাবহনকারী গাড়ি। ছবি: সংগৃহীত
সিটি করপোরেশনের ময়লাবহনকারী গাড়ি। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর ডেমরায় মোটরসাইকেলে সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ির ধাক্কায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। নিহত শিক্ষার্থীরা হলেন তাহসিন তপু (২৫) ও ইরাম হৃদয় (২৩)। আজ শুক্রবার ভোরের দিকে একটি গায়েহলুদের অনুষ্ঠান শেষে ফেরার সময় ডেমরার মিনি কক্সবাজার রোডের ধার্মিকপাড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাহসিন পরিবারের সঙ্গে ডেমরার সানারপাড়ায় আর ইরাম চিটাগং রোড এলাকার একটি বাসায় থাকতেন।

ডেমরা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রুবেল হাওলাদার গণমাধ্যমকে বলেন, ডেমরার মিনি কক্সবাজার রোডের ধার্মিকপাড়ায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) একটি ময়লাবাহী গাড়ির সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় মোটরসাইকেলে থাকা দুই শিক্ষার্থী রাস্তায় ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন। তাঁদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়ার পর দুজন মারা যান। ময়লাবাহী গাড়িটি জব্দ করা হলেও চালক পালিয়ে গেছেন।

গায়েহলুদে অংশ নেওয়া ধার্মিকপাড়ার বাসিন্দা ও নিহত দুই শিক্ষার্থীর বন্ধু তাওসিফ হোসেন আজ সকালে ঢামেকে সাংবাদিকদের জানান, তাঁরা অনেকে একই এলাকার এক বড় ভাইয়ের গায়েহলুদে গিয়েছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে কয়েকজন চা পান করছিলেন। এ সময় তাহসিন ও ইরাম মোটরসাইকেলে ঘুরতে যান। কিছু দূর যেতেই তাঁরা বিকট শব্দ শুনতে পান। সেখানে গিয়ে গাড়ির নিচে মোটরসাইকেলটি দেখতে পান। রাস্তায় ছিটকে পড়ে ছিলেন তাহসিন ও ইরাম। তাঁদের উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়।

ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের পরিদর্শক মো. ফারুক বলেন, ভোর পৌনে ৫টার দিকে চিকিৎসক তাহসিনকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন। আর ইরাম চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মারা যান। লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আমার একটা কলিজা হারায় ফেলছি, বিচার চাই: সাজিদের বাবা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শিশু সাজিদের বাবা রাকিবুল। ছবি: আজকের পত্রিকা
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শিশু সাজিদের বাবা রাকিবুল। ছবি: আজকের পত্রিকা

ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় বিচার চেয়ে শিশু সাজিদের বাবা রাকিবুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমি ফুটফুটে একটা সন্তান হারিয়েছি। আমার একটা কলিজা হারায় ফেলছি। গোটা পৃথিবী থাকলেও আমি আর এটা পাব না।’

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহীর তানোর উপজেলার কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামের বাড়ির সামনেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন রাকিবুল ইসলাম। ছেলের মৃত্যুর জন্য গর্ত খনন করা ব্যক্তির অবহেলাকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘যারা হাউজিং করেছে, এটা তাদেরই কাজ। গর্তের মুখে তারা অন্য কিছু দিত, তারা যদি একটা নিশানা দিত, তাহলে এ রকম ঘটনা ঘটত না। তারা কিচ্ছু দেয়নি।’ তিনি বলেন, ‘কীভাবে ঘটনা ঘটেছে, তা সবাই দেখেছে। আমি বিচার চাই। প্রশাসনিকভাবে যে বিচার করবে, আমি তাতেই সন্তুষ্ট। সঠিক যেটা, সেটা আমাকে দেবে।’

গত বুধবার দুপুরে বাড়ির পাশে গভীর নলকূপের জন্য খনন করা ৮ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের পরিত্যক্ত এক গর্তে পড়ে যায় শিশু সাজিদ। এর ৩২ ঘণ্টা পর মাটির প্রায় ৫০ ফুট নিচ থেকে গতকাল রাত ৯টার দিকে শিশু সাজিদকে উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা দশের নিচে, বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগ

পঞ্চগড় প্রতিনিধি 
পঞ্চগড় করতোয়া সেতু এলাকায় সকালের চিত্র। আজকের পত্রিকা
পঞ্চগড় করতোয়া সেতু এলাকায় সকালের চিত্র। আজকের পত্রিকা

দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দুই দিন ধরে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। আজ শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ১০০ শতাংশ এবং বাতাসের গতি ঘণ্টায় ৮-১০ কিলোমিটার, যা শীতের দাপটকে আরও তীব্রভাবে অনুভূত করিয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, দিনের বেলায় সূর্য ওঠার কারণে কিছুটা উষ্ণতা থাকলেও বিকেল গড়ানোর পর থেকেই হঠাৎ ঠান্ডা বাড়তে থাকে। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যে ভারী কাপড় ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ভোর পর্যন্ত কুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাস চারপাশকে জমিয়ে রাখে। সাধারণ মানুষ থেকে দিনমজুর সবাই এ সময়টায় শীতের দাপটে সবচেয়ে বেশি ভোগেন।

শীত বাড়ায় পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল এবং বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে গেছে। সর্দি-কাশি, ঠান্ডাজনিত জ্বর, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টের রোগীই বেশি। হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত দুই দিনে রোগীর সংখ্যা ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বেশির ভাগই শিশু ও প্রবীণ।

শিশুরোগীর স্বজন রহিমা বেগম বলেন, ‘শীতের কারণে বাচ্চার সর্দি-জ্বর বেড়ে গেছে, রাতে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারছে না। সকালেই ডাক্তার দেখাতে এসেছি।’ দিনমজুর আলমগীর হোসেন বলেন, দিনে রোদ থাকলেও সন্ধ্যার পর ঠান্ডায় শরীর জমে আসে। দুই দিন ধরে কাশি বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে হাসপাতালে আসতে হলো।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মাহবুব আলম জানান, তাপমাত্রা দ্রুত কমে যাওয়ায় নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট, সর্দি-জ্বরসহ ঠান্ডাজনিত রোগ বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ঝুঁকি বেশি। তিনি সবাইকে গরম কাপড় ব্যবহার, সকাল-সন্ধ্যায় বাইরে কম বের হওয়া এবং গরম পানি পান করার পরামর্শ দেন।

স্থানীয়রা আরও জানান, সকাল ও বিকেলের মধ্যবর্তী সময়ে সূর্যের আলো কিছুটা উষ্ণতা আনে, তবে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার পর শরীরে তীব্র শীত অনুভূত হয়।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যে বলা হয়, তাপমাত্রা ১০ থেকে ৮ ডিগ্রি হলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৮ থেকে ৬ ডিগ্রি হলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ এবং ৬ ডিগ্রির নিচে নেমে গেলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলে গণ্য হয়। ফলে বর্তমানে তেঁতুলিয়ায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহই বইছে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস জানায়, গত এক সপ্তাহে তাপমাত্রায় উল্লেখযোগ্য ওঠানামা ছিল। আজ শুক্রবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৯ দশমিক ৫। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল ৮ দশমিক ৯। এর আগের দিনগুলোতে যথাক্রমে— বুধবার ১০ দশমিক ৭, মঙ্গলবার ১০ দশমিক ৭, সোমবার ১০ দশমিক ৬, রোববার ১০ দশমিক ৫, শনিবার ১০ দশমিক ৫, শুক্রবার ১২ দশমিক ০, বৃহস্পতিবার ১২ দশমিক ৫, বুধবার ১২ দশমিক ২ এবং মঙ্গলবার ১১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। গতকাল দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘গত কয়েক দিনে জেলার তাপমাত্রা ক্রমেই নিম্নমুখী। আজ তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে, যা মৃদু শৈত্যপ্রবাহের আওতায় পড়ে। বাতাসে ১০০ শতাংশ আর্দ্রতা থাকায় শরীরে ঠান্ডার প্রভাব আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে। পরিস্থিতি আরও কয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে বলে ধারণা করছি। রাত ও ভোরের দিকে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে এবং শীতের অনুভূতি বাড়বে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত