Ajker Patrika

বিক্রি ভালো হলেও দাম কম, লোকসানে নৌকা ব্যবসায়ীরা

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
শ্রীনগর উপজেলার বাড়ৈখালী ইউনিয়নের শিবরামপুর সাপ্তাহিক হাটে সারি সারি কোষা ও চোষা নৌকা সাজানো। ছবি: আজকের পত্রিকা
শ্রীনগর উপজেলার বাড়ৈখালী ইউনিয়নের শিবরামপুর সাপ্তাহিক হাটে সারি সারি কোষা ও চোষা নৌকা সাজানো। ছবি: আজকের পত্রিকা

মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার বাড়ৈখালী ইউনিয়নের শিবরামপুর সাপ্তাহিক হাটে বর্ষা মৌসুমে জমজমাট নৌকা বেচাকেনা হলেও প্রত্যাশিত দাম না পাওয়ায় লোকসানে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতি শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বসে এই হাট। শ্রীনগর, সিরাজদিখান ও নবাবগঞ্জ উপজেলার ব্যবসায়ীরা শত শত নৌকা নিয়ে হাটে আসেন। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি।

শনিবার (১৯ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাটজুড়ে সারি সারি কোষা ও চোষা নৌকা সাজানো। তবে চাহিদা থাকলেও দাম কম থাকায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন বিক্রেতারা।

ব্যবসায়ীরা জানান, আগের মতো এখন আর খাল-বিল, নদীনালা নেই। পানির সংকটে নৌকার ব্যবহার কমেছে। পাশাপাশি মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও হ্রাস পেয়েছে। ফলে আগের তুলনায় কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে, যাতে লাভ দূরের কথা, পুঁজি তুলে আনা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

বাড়ৈখালী ইউনিয়নের নৌকা ব্যবসায়ী শেখ মানিক বলেন, এবার মৌসুম শুরুর আগে আমি শতাধিক কোষা নৌকা তৈরি করেছিলাম। প্রতিটি নৌকা তৈরিতে খরচ পড়েছে প্রায় ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। কিন্তু বাজারে দাম মিলেছে সাড়ে ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকার মতো। সব মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ টাকার মতো লোকসান গুনতে হয়েছে। আজকেও হাটে ১০টি নৌকা এনেছি, এর মধ্যে পাঁচটি বিক্রি হয়েছে, প্রতিটি ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকায়।

নবাবগঞ্জের বাঘমারা থেকে আসা নৌকা ব্যবসায়ী সৈয়দ আলী বলেন, এবার আমি প্রায় ২৫০টি নৌকা তৈরি করেছিলাম, এর মধ্যে ২২০টির মতো বিক্রি হয়েছে। আজকের হাটে এনেছিলাম ছয়টি নৌকা, এর মধ্যে দুটি বিক্রি হয়েছে। একটি বিক্রি করেছি ৫ হাজার টাকায়, আরেকটি ৪ হাজার টাকায়। অথচ এই চোষা নৌকাগুলোর প্রতিটিতে খরচ পড়েছে ৫ হাজার থেকে ৫ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। আমরা শুধু লোকসানই করছি।

শেখনগর থেকে নৌকা কিনতে আসা ক্রেতা ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘আমি আজ ৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি কোষা নৌকা কিনেছি, যা চাম্বল গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। নৌকাটি গরুর জন্য কচুরি কাটার কাজে ব্যবহার করব। আগের তুলনায় দাম এখন মোটামুটি সহনীয় পর্যায়ে আছে, তাই কিনে ফেললাম।’

ক্রেতারা অবশ্য বলছেন, এখনকার দামে তারা কিছুটা স্বস্তিতে নৌকা কিনতে পারছেন। শেখনগর থেকে আসা ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘৫ হাজার টাকায় একটি কোষা নৌকা কিনেছি, যা গরুর জন্য কচুরি কাটতে ব্যবহার করব। কাঠের মানও ভালো, দামও সহনীয়।’

বাড়ৈপাড়া থেকে আসা ক্রেতা জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমার বাড়ির পাশে খালে মাছ ধরার জন্য নৌকা দরকার হয়। আজ ৪ হাজার টাকায় একটা হালকা নৌকা কিনেছি। এখন তো সারা বছর নৌকা লাগে না, তাই ছোটটাই নিয়েছি।’

নৌকা ব্যবসায়ীদের মতে, সরকার যদি স্থানীয় খাল-বিল, নদীনালা খনন ও সংস্কারে উদ্যোগ নেয়, তাহলে আবারও বাড়বে নৌকার ব্যবহার ও চাহিদা। নইলে এই ঐতিহ্যবাহী হাট ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত