Ajker Patrika

অনিরাপদ ওয়াসার পানি

মাহমুদ সোহেল, ঢাকা
অনিরাপদ ওয়াসার পানি

ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব মিলেছে। মানব শরীরের জন্য হুমকিস্বরূপ এই ব্যাকটেরিয়া শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। মলমূত্রবাহিত এসব ব্যাকটেরিয়া এতটাই শক্তিশালী যে, ফুটিয়ে এবং পরিশোধন করেও তা বিনাশ করা যায় না। সম্প্রতি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ঢাকা ওয়াসার পানি নিয়ে গবেষণা করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের একদল গবেষক। এতে নেতৃত্ব দেন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অণুজীব বিজ্ঞানী ড. মাহবুবুল হাসান সিদ্দিকী। এ গবেষণার আওতায় ঢাকাকে ১০টি অঞ্চলে ভাগ করে সরাসরি লাইনের পানি, ফুটানো পানি এবং পরিশোধিত পানির নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তিন ধরনের পানিতেই পাওয়া যায় ক্ষতিকারক দুই ব্যাকটেরিয়া। একটি ব্যাকটেরিয়ার নাম ফিকাল কলিফরম ই.কোলাই, যাতে ৮ ধরনের ক্ষতিকর সংক্রমণ সৃষ্টিকারী জিনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। অন্যটি সালমোনেলা যাতেও দুই ধরনের ক্ষতিকর সংক্রমণ সৃষ্টিকারী জিন।

গবেষকেরা বলছেন, এসব ব্যাকটেরিয়ার জিনগুলো উপযুক্ত পরিবেশে মানুষের পেটের পীড়ার কারণ হতে পারে। স্বাভাবিকভাবে মানুষ বা প্রাণীর মলের ভেতরে ফিকাল কলিফরম ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব থাকে। প্রাণীর মল, অথবা তার থেকে দূষিত পানি যেকোনো উপায়ে ঢাকা ওয়াসার পানির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। ই. কোলাই ও সালমোনেলাযুক্ত পানি নগরবাসীর ডায়রিয়াসহ নানা পানিবাহিত রোগের কারণ হতে পারে।

গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষক মাহবুবুল হাসান সিদ্দিকী বলেন, পানিবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এখনই উদ্যোগ না নিলে স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বাড়বে।

কলেরা বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘ওয়াসার পানিতে ব্যাকটেরিয়া বেশি পাওয়া যাবে বস্তি এলাকা বা চোরাই লাইনের  এলাকাগুলোতে।’ নগরবাসীকে নিরাপদ পানি দিতে হলে বুড়িগঙ্গা নদীর যে জায়গা থেকে ওয়াসা পানি নেয়, তা আগে দূষণমুক্ত করতে হবে বলে মত দেন তিনি।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও পানি গবেষক এ কে এম সাইফুল ইসলাম জানান, সুপেয় পানির অভাবে এই শহর ছেড়ে পালাতে হবে সবাইকে। তিনি বলেন, ‘ঢাকা ওয়াসার মোট পানির ৭৮ শতাংশ উত্তোলন হয় ভূগর্ভ থেকে। বাকি ২২ শতাংশ পানি আনা হয় বুড়িগঙ্গা ও পদ্মা নদী থেকে। ভূগর্ভের পানি এভাবে তুলতে থাকলে বড় ঝুঁকি অপেক্ষা করছে ঢাকার জন্য। সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন শহরের মতো ঢাকাতেও ‘সিঙ্ক হোল’ সমস্যা দেখা দিতে পারে।’  

ওয়াসার ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম বলেন, গ্রাহকের আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভার পর্যন্ত পানি পৌঁছানোর দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার। পরে পানি সংরক্ষণ ও ব্যবহার সবই গ্রাহকের দায়িত্ব। গবেষকেরা বাসার অভ্যন্তরের কলের পানি, ফুটানো পানি ও ফিল্টার করা পানি নিয়ে পরীক্ষা করেছেন, যা কোনোমতেই ঢাকা ওয়াসার পানি বলা যাবে না। ওয়াসার এই কর্মকর্তা জানান, ঢাকা ওয়াসার পানি উৎসে শতভাগ বিশুদ্ধ। সঞ্চালন লাইন কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেলে ওয়াসা তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেয়। ২০১৭ সালে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), আইসিডিডিআরবি থেকে সদস্য নিয়ে গঠিত কমিটি ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ৩৪টি নমুনা পরীক্ষা করে মাত্র ৩টি নমুনায় কলিফর্মের অস্তিত্ব পায়।  তাৎক্ষণিক ব্যবস্থায় তা সমাধান করা হয়।  
এ ছাড়া ঢাকা ওয়াসা রাজধানীর সমস্ত পুরোনো পানির লাইন পরিবর্তন করছে এবং পানির কোয়ালিটি সার্বক্ষণিক মনিটর করছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত