Ajker Patrika

জাতীয় কবির স্মৃতিবিজড়িত কুমিল্লায় ৩ দিনব্যাপী অনুষ্ঠান, থাকবেন ২ উপদেষ্টা

দেলোয়ার হোসাইন আকাইদ, কুমিল্লা 
জাতীয় কবির স্মৃতিবিজড়িত কুমিল্লায় ৩ দিনব্যাপী অনুষ্ঠান, থাকবেন ২ উপদেষ্টা

‘আমি চিরতরে দূরে চলে যাবো/তবু আমারে দেবোনা ভুলিতে...।’ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই চয়নটুকু চিরভাস্বর হয়ে আছে কুমিল্লাবাসীর হৃদয়ে। আজ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী। ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান: কাজী নজরুলের উত্তরাধিকার’। এই প্রতিপাদ্য নিয়ে কবির স্মৃতিবিজড়িত কুমিল্লায় এবার জাতীয় পর্যায়ে নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে তিন দিনব্যাপী ১২৬তম জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান। সম্পন্ন হয়েছে সব প্রস্তুতি। এ নিয়ে উৎসবের আমেজ কুমিল্লায়।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও সাহিত্যকর্মের বিরাট অংশজুড়ে রয়েছে কুমিল্লা। কুমিল্লায় বিচরণের মধ্য দিয়ে নজরুল হয়ে উঠেছিলেন বিদ্রোহী কবি। কবির প্রেম, বিয়ে, সুরকার-গায়ক, অভিনয়শিল্পী হয়ে ওঠার অনেক কিছুর প্রথম এই কুমিল্লা। দ্রোহ ও প্রেমের কবি নজরুল ১৯২১ সালের এপ্রিল থেকে ১৯২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ দফায় ১১ মাস কুমিল্লায় অবস্থান করেছিলেন। এই দীর্ঘ অবস্থান ঘিরে নজরুলের জীবনের মোড় ঘোরার প্রেক্ষাপট এই কুমিল্লাতেই সৃষ্টি হয়েছিল। কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড়ের ইন্দ্রকুমার সেনের বাড়ি, ধর্মসাগর পাড়, রাণীর দীঘির পাড়, মহেশাঙ্গন, দারোগাবাড়ি, টাউন হল ময়দান, উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ শচীনদেব বর্মনের চর্থার রাজবাড়ি, নবাববাড়িসহ কুমিল্লার আনাচে-কানাচে এবং কুমিল্লার মুরাদনগরের দৌলতপুরে তাঁর সদর্প পদচারণার অসংখ্য স্মৃতি কুমিল্লাবাসীর হৃদয়ে জেগে আছে। ১৯২১ সালের ২১ নভেম্বর ব্রিটিশ নেতা প্রিন্স অব ওয়েলসের কলকাতায় আগমন উপলক্ষে ভারতীয় কংগ্রেস হরতাল ডাকে। ওই হরতালে কবি নজরুল গলায় হারমোনিয়াম ঝুলিয়ে প্রতিবাদী গানে মিছিল করেন। এই অপরাধে রাজগঞ্জ থেকে তাঁকে আটক করা হয়। এ ঘটনাই কবির বিদ্রোহী কবিতার প্রেক্ষাপটের অনেক অনুষঙ্গের একটি বলে মনে করেন গবেষকেরা।

এ ছাড়া কবির জীবনে কুমিল্লার মুরাদনগরের খাঁ-বাড়ির নার্গিস আসার খানম আর এই শহরের পশ্চিম কান্দিরপাড়ের আশালতা সেন গুপ্তা ওরফে প্রমীলা নামের দুই নারী এসেছিলেন জীবনসঙ্গিনী হয়ে। নার্গিস ও প্রমীলা কবির জীবনে দারুণভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল। এ সময় তিনি কুমিল্লায় বসে অজস্র কবিতা ও গান রচনা করেছেন।

আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামে কবির জন্ম হলেও নজরুলের প্রেম, বিয়ে, গ্রেপ্তার, সমাবেশ এবং কাব্য ও সংস্কৃতিচর্চাসহ বহু ঘটনার নীরব সাক্ষী কুমিল্লা। তিনি অমর হয়ে আছেন কুমিল্লাবাসীর হৃদয়ে।

কুমিল্লায় কবি নজরুলের অসংখ্য স্মৃতি রয়েছে। এসব স্মৃতি জাগরুক করে রাখার জন্য কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ডিগ্রি শাখায় ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কবি নজরুল ছাত্রাবাস। ১৯৬২ সালে কান্দিরপাড় থেকে ফরিদা বিদ্যায়তন পর্যন্ত সড়কটির নামকরণ করা হয় নজরুল অ্যাভিনিউ। ১৯৭০ সালে কুমিল্লায় নজরুল সাহিত্যচর্চার লক্ষ্যে গঠিত হয় নজরুল ললিতকলা পরিষদ, যা পরবর্তীতে নজরুল পরিষদ নামে রূপান্তরিত হয়। ১৯৮৩ সালে কুমিল্লা শহরের যেসব স্থানে নজরুল বিচরণ ও অবস্থান করেছিলেন, সেসব স্থানে টিনের স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়। ১৯৯২ সালে ওই সব স্থানে কবি নজরুলের অবস্থান ও ঘটে যাওয়া ঘটনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে পাকা স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়। কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমির সামনে নির্মিত হয় ‘চেতনায় নজরুল’ স্মৃতিস্তম্ভ। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে গবেষণা ও চর্চার করতে প্রতিষ্ঠিত হয় কবি নজরুল ইনস্টিটিউট কেন্দ্র, কুমিল্লা। এ ছাড়া মুরাদনগরের দৌলতপুরে খাঁ-বাড়ির কিছু স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণ করা হয়।

ব্যবহৃত হচ্ছে কবির বাসর ঘরের খাট
ব্যবহৃত হচ্ছে কবির বাসর ঘরের খাট

কুমিল্লা নগরী ও মুরাদনগর উপজেলার দৌলতপুরে জাতীয় কবির স্মৃতিবিজড়িত অনেক নিদর্শন রয়েছে। তবে সংরক্ষণের অভাবে সেগুলো বিলীন হতে শুরু করেছে। এগুলো সংরক্ষণের দাবি স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মীদের।

সাংস্কৃতিক কর্মী আল মামুন বলেন, ‘শুধু জন্মবার্ষিকী বা মৃত্যুবার্ষিকীতে আমরা ব্যাপক আয়োজন করি, কবির স্মৃতিচিহ্নগুলো ধুয়ে-মুছে সাজাই। পরে সারা বছরই এগুলো বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকে। আমরা কবির সব স্মৃতিচিহ্ন স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের পাশাপাশি নিয়মিত পরিচর্যার দাবি জানাই।’

ঐতিহ্য কুমিল্লার পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল জানান, ‘কুমিল্লার দৌলতপুরে কবি যে আমগাছের নিচে বসে গান-কবিতা রচনা করতেন, সেটি পরিচর্যার অভাবে মারা যায়; যে পুকুরঘাটে বসতেন, সেটি ভেঙে গেছে। যে খাটে বাসররাত করেছেন, সেই খাট অরক্ষিত, সেই খাট এখন মানুষ ব্যবহার করছে। এমন অনেক স্মৃতিচিহ্ন অরক্ষিত। এগুলো সংরক্ষণ না করা গেলে একসময় হারিয়ে যাবে। ফলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে অনেক কিছু অজানা থেকে যাবে। দৌলতপুরে একটি অতিথিশালা, পাঠাগারসহ খাঁ-বাড়ির আঙিনাকে ঢেলে সাজানোর দাবি জানাচ্ছি।’

কুমিল্লায় জাতীয় কবির স্মৃতিবিজড়িত পুকুরঘাটের বর্তমান চিত্র। ছবি: আজকের পত্রিকা
কুমিল্লায় জাতীয় কবির স্মৃতিবিজড়িত পুকুরঘাটের বর্তমান চিত্র। ছবি: আজকের পত্রিকা

এ বিষয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউট কেন্দ্র কুমিল্লার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আল আমিন বলেন, ‘কবির স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণ করতে আমাদের মন্ত্রণালয়সহ আমরা চেষ্টা করছি। কবি নজরুলকে নিয়ে চর্চা ও গবেষণার জন্য কুমিল্লায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কবি নজরুল ইনস্টিটিউট কেন্দ্র। এখানে রয়েছে নজরুল জাদুঘর, পাঠাগার।’

জানা যায়, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় এবং কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় ২৫, ২৬ ও ২৭ মে কুমিল্লায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান।

২৫ মে কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বেলা ৩টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করবেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মো. লতিফুল ইসলাম শিবলী এবং কবিপৌত্রী ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউট ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান খিলখিল কাজী। স্মারক বক্তৃতা করবেন অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান এবং স্বাগত বক্তৃতা করবেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার।

২৬ মে দ্বিতীয় দিন অনুষ্ঠান হবে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার দৌলতপুরে এবং ২৭ মে সমাপনী অনুষ্ঠান কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।

আবৃত্তিশিল্পী ও নজরুল গবেষক কাজী মাহতাব সুমন বলেন, আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামে কবির জন্ম হলেও নজরুলের প্রেম, বিয়ে, গ্রেপ্তার, সমাবেশ এবং কাব্য, সংস্কৃতিচর্চাসহ বহু ঘটনার নীরব সাক্ষী কুমিল্লা। তিনি অমর হয়ে আছেন কুমিল্লাবাসীর হৃদয়ে। বাংলাদেশের মধ্যে কুমিল্লায় নজরুলের সৃষ্টিকর্ম বেশি। কুমিল্লা ও দৌলতপুরে কবি অজস্র গান ও কবিতা রচনা করেছেন। তাই নজরুলচর্চা ও গবেষণায় আগ্রহী হয়ে উঠছেন স্থানীয় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। এবার নজরুল জন্মবার্ষিকীর জাতীয় অনুষ্ঠান কুমিল্লায় হওয়ায় খুশি জেলাবাসী।

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক আমিরুল কায়ছার বলেন, ‘জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে ২৫ থেকে কুমিল্লায় শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান। এ নিয়ে সব প্রস্তুতি আমরা সম্পন্ন করেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১৩
নিহত লায়লা আফরোজ ও নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ। ছবি: সংগৃহীত
নিহত লায়লা আফরোজ ও নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ। ছবি: সংগৃহীত

‎রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যার ঘটনায় গৃহকর্মী আয়েশাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার দুপুরে ঝালকাঠি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

‎গ্রেপ্তারের বিষয়টি আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছেন তেজগাঁও বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন।

‎মামুন বলেন, গৃহকর্মী আয়েশাকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঝালকাঠি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত সোমবার সকালে শাহজাহান রোডের ১৪ তলা একটি আবাসিক ভবনের সপ্তম তলায় লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তাঁর মেয়ে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে (১৫) ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।

মা-মেয়ে হত্যায় অভিযুক্ত গৃহকর্মী আয়েশা। ছবি: আজকের পত্রিকা
মা-মেয়ে হত্যায় অভিযুক্ত গৃহকর্মী আয়েশা। ছবি: আজকের পত্রিকা

গতকাল তাঁদের মরদেহ নাটোরে দাফন করা হয়েছে। মামলার এজাহারে বাসা থেকে মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র খোয়া যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ভবনের ভেতরের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, হত্যাকাণ্ডের পর এক নারী স্কুলড্রেস পরে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। চার দিন আগে আয়েশা পরিচয় দিয়ে ওই বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেওয়া তরুণী (২০) এই জোড়া খুনে জড়িত বলে সন্দেহ স্বজনদের। ঘটনার পর থেকে ওই তরুণী পলাতক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি 
গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে মজিরুলের নেতৃত্বে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে মজিরুলের নেতৃত্বে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

জীবন আছে যার, তার মৃত্যু অনিবার্য। মৃত্যুর পর মানুষের শেষ ঠিকানা কবর। মৃতদেহ গোসল করিয়ে কাফন পরানো হয়, জানাজা শেষে তাকে শায়িত করা হয় চিরনিদ্রার ঘরে। এই কবর খোঁড়ার দায়িত্বটি গ্রামের কিছু মানুষ বহু বছর ধরে স্বেচ্ছায়, বিনা পারিশ্রমিকে পালন করে আসছেন, যাঁরা সবার কাছে ‘গোরখোদক’ নামে পরিচিত। আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় তাঁরা করে থাকেন এই কাজ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গোরখোদকেরা কোনো পারিশ্রমিক নেন না। গ্রামের যে কেউ মারা যাক, নিজেদের ব্যস্ততা ফেলে তাঁরা ছুটে আসেন কবর খুঁড়তে। তাঁদের এই মানবিক কাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে গ্রামের লোকেরা দোয়া করেন—আল্লাহ যেন তাদের সুস্থ ও ভালো রাখেন।

দেবীপুর গ্রামের বাসিন্দা গোরখোদক মজিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ৫৫ বছর ধরে কবর খুঁড়ছি। যত দিন সুস্থ থাকব, এই কাজ চালিয়ে যাব। আমাদের গ্রাম ছাড়াও অন্য গ্রাম থেকে কেউ ডাকলে সেখানেও যাই। ছোটবেলায় ওস্তাদের কাছে ডালি ধরেই শিখেছি। গরিব মানুষ, মাঠে কাজ করি; কিন্তু কেউ মারা গেলে দ্বিধা করি না—এই কাজ আমার নেশায় পরিণত হয়েছে।’

মজিরুল আরও জানান, এখন তিনি তরুণদেরও এই কাজ শেখাচ্ছেন।

গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

গোরখোদক শাকের আলী বলেন, ‘আমরা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করি। কখনো কোনো টাকা নিই না। যেখানেই থাকি, গ্রামের কারও মৃত্যুর সংবাদ শুনলে দ্রুত কবর খুঁড়তে চলে আসি।’

গোরখোদক ফুয়াদ হোসেন বলেন, ‘অন্য গ্রাম থেকে ডাক এলেও আমরা যাই। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করি এই কাজ। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’

স্থানীয় বাসিন্দা শাজাহান আলী বলেন, ‘কবর খোঁড়া বড় দায়িত্বের কাজ। গ্রামের এসব মানুষ খবর পেলেই দৌড়ে আসে। আমরা তাদের জন্য দোয়া করি।’

মাওলানা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘মৃত ব্যক্তির জন্য কবর খোঁড়া নিঃসন্দেহে সওয়াবের কাজ। হাদিসে এসেছে—যাঁরা কবর খোঁড়েন, আল্লাহ তাদের জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শ্রীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, ফটকে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুরের শ্রীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে কারখানার ফটকের সামনে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকেরা। আন্দোলনের মুখে কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রধান ফটক তালাবদ্ধ করে সটকে পড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে শিল্প ও থানা-পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসেছেন। আজ বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের সাইটালিয়া গ্রামে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানায় এই ঘটনা ঘটে।

কারখানার নারী শ্রমিক মিনারা আক্তার বলেন, ‘অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের বেতন পরিশোধ করে নাই। এক মাসের বেতন না পেলে আমাদের চলা খুবই কঠিন হয়। আমাদের নাওয়া-খাওয়া বন্ধ হয়। আর সেখানে কারখানা কর্তৃপক্ষ দুই মাসের বেতনভাতা বকেয়া রেখেছে। আজ সকালে শ্রমিকেরা জড়ো হলে তারা পালিয়ে যায়।’

মিন্টু নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘এই কারখানায় আমরা তিন বছর ধরে চাকরি করছি। আমাদের বেতনের বাইরে কোনো সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে না। তবু পেটের দায়ে চাকরি করি। দুই মাসের বেতন বকেয়া। আমাদের তো পেট আছে, সন্তান-সংসার আছে। এক মাস দোকান বাকি পরিশোধ করতে না পারলে পরের মাসে আর দোকানি বাকি দেয় না। আমরা কী অবস্থায় আছি, একবার ভাবুন। বেতন পরিশোধ না করে তারা পালিয়ে গেছে।’

আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

মেহেদী হাসান বলেন, ‘এত দিন ধরে ঋণ করে বলে-কয়ে দোকান থেকে বাকি নিয়ে চলছি। আর পারছি না। এখন দোকান বাকি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতন নিয়ে কমপক্ষে ১০টি তারিখ দিছে। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ বেতন পরিশোধ করেনি। শেষে আজ বেতন পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু তারা কারখানা ফটকে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে গেছে।’

কারখানার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. বুলবুল হাসান বলেন, ‘ব্যাংকের সমস্যার কারণে বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাচ্ছে না। আশা করি, আজকের মধ্যে নভেম্বর মাসের বেতন পরিশোধ করতে পারব।’ বিনা নোটিশে কারখানার ফটক কেন তালাবদ্ধ? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি বলতে পারব না।’

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাছির আহমদ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মাছ ধরতে গিয়ে ভারতে আটক ৬ জেলে, ১৩ মাস পর হস্তান্তর

নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি 
১৩ মাস সাজা ভোগের পর হস্তান্তর হওয়া বাংলাদেশি ছয় জেলে। ছবি: আজকের পত্রিকা
১৩ মাস সাজা ভোগের পর হস্তান্তর হওয়া বাংলাদেশি ছয় জেলে। ছবি: আজকের পত্রিকা

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও সীমান্ত দিয়ে ছয় বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কাছে হস্তান্তর করেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের হস্তান্তর করা হয়।

হস্তান্তর হওয়া মৎস্যজীবীরা কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার বাসিন্দা। তাঁরা হলেন আবুল হোসেনের ছেলে রাসেল মিয়া (৩৫), বাহাদুর মিয়ার ছেলে বিপ্লব মিয়া (৪৫), ইসহাক আলীর ছেলে মীর জাফর আলী (৪৫), ইছাক আলীর ছেলে বকুল মিয়া (৩২), ফকির আলীর ছেলে আমের আলী (৩৫), সলিমুদ্দিন ব্যাপারীর ছেলে চাঁন মিয়া (৬০)।

বিজিবি ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৪ নভেম্বর জিঞ্জিরাম নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে ভুলক্রমে সীমান্ত অতিক্রম করে তাঁরা ভারতের ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় স্থানীয় পুলিশ ও বিএসএফ সদস্যরা তাঁদের আটক করে। অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে তাঁরা সেখানে প্রায় ১৩ মাস সাজা ভোগ করেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সন্ধ্যায় শেরপুর ৩৯ বিজিবির দায়িত্বে থাকা এলাকার হাতিপাগার বিজিবি কোয়ার্টার মাস্টার মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে ভারতের কিল্লাপাড়া বিএসএফ ক্যাম্পের সঙ্গে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে বিএসএফ ছয় বাংলাদেশি নাগরিককে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে। এ সময় নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।

মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর তাঁদেরকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত