Ajker Patrika

চাকরিচ্যুত মান্নানের তিনতলা বাড়ি, বিলাসবহুল গাড়ি

মো. আকতারুজ্জামান, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) 
চাকরিচ্যুত মান্নানের তিনতলা বাড়ি, বিলাসবহুল গাড়ি

চাকরিচ্যুত কর্মচারী আব্দুল মান্নান কুমিল্লার লাকসামে নিজেকে কখনো প্রধানমন্ত্রীর পালক পুত্র, কখনো এপিএস পরিচয় দিতেন। এলাকায় আসতেন বিলাসবহুল গাড়িতে চড়ে। লাকসাম পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের গাজীমুড়া গ্রামে গড়ে তুলেছেন তিনতলা বাড়ি। 

আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে কোটি টাকায় জমি কেনার এবং প্রতিবেশীর জমি দখলেরও অভিযোগ রয়েছে। লাকসামে টিঅ্যান্ডটির জায়গা দখল করে টিনশেড মার্কেট তৈরি করে ভাড়া দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৯ আসন থেকে নির্বাচনও করতে চেয়েছিলেন তিনি। সরকারি চাকরি দেওয়ার নাম করে মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। 

লাকসামের গাজীমুড়া গ্রামের শাহজাহান বলেন, ‘আব্দুল মান্নান নিজেকে এলাকায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এপিএস পরিচয় দিতেন। ২০১৭ সালে আমার ছেলেকে রেলওয়ে ভবনে চাকরি দেওয়ার নাম করে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। আজ পর্যন্ত ছেলের চাকরি হয়নি। টাকা ফেরত চাইলে হুমকি-ধমকি দেন।’ 

রবিউল হোসেন নামের এক যুবক বলেন, ‘আমার ভাই কামরুল হাসানকে আব্দুল মান্নান কক্সবাজারে তাঁর নিজের প্রজেক্টে চাকরি দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেন।’ 

স্থানীয় সূত্র বলেছে, চট্টগ্রামে আব্দুল মান্নানের গার্মেন্টসের ব্যবসা রয়েছে। কক্সবাজারে রয়েছে মৎস্যঘের। তাঁর একমাত্র মেয়ে ঊর্মি পড়াশোনা করে কানাডায়। আব্দুল মান্নান বেশি সম্পদ গড়েছেন গোপালগঞ্জে শ্বশুরবাড়ি এলাকায়। সেখানে তাঁর রয়েছে নামে-বেনামে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লাকসাম উপজেলার গাজীমুড়া গ্রামের মৃত সৈয়দ আহম্মেদের ছেলে আব্দুল মান্নান। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি বড়। তাঁর অন্য ভাই ছোটবেলায় হারিয়ে যায়। বাবা সৈয়দ আহম্মেদ স্থানীয় খেয়াঘাটে দিনমজুর ছিলেন। ১৯৮৭ সালে বাড়িতে কাউকে কিছু না বলে আব্দুল মান্নান ঢাকায় চলে যান। কমলাপুর রেলস্টেশনে কিছুদিন কুলির কাজ করেছেন। ওই বছর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় আব্দুল মান্নান আহত হন। সে সময় হাসপাতালে আহত নেতা-কর্মীদের দেখতে যান আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। আহত সবার স্বজনের দেখা পেলেও আব্দুল মান্নানের কোনো স্বজনের দেখা পাননি শেখ হাসিনা। পরে তাঁর চিকিৎসার সব দায়িত্ব নিয়ে তাঁকে নিজ বাসভবনে নিয়ে যান শেখ হাসিনা। পরে আব্দুল মান্নান বিয়ে করেন গোপালগঞ্জের এক নারীকে। ওই সময় থেকেই তিনি নিজেকে শেখ হাসিনার পালিত ছেলে পরিচয় দিতে থাকেন। 

২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আব্দুল মান্নান নিজ এলাকা লাকসামে যাতায়াত শুরু করেন। এলাকায় গড়ে তোলেন নিজের আলাদা ক্যাডার বাহিনী। নামে-বেনামে কিনতে শুরু করেন জমি। গাজীমুড়ায় ৬ শতাংশ জমির ওপর নির্মাণ করেন তিনতলা বিলাসবহুল বাড়ি। অভিযোগ রয়েছে, আব্দুল মান্নান পৈতৃক সূত্রে ২ শতাংশ জমি পেয়েছিলেন। বাকি ৪ শতাংশ জমি প্রতিবেশী সাইফুল ইসলামের কাছ থেকে দখল করেছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তিনি কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসনে প্রার্থী হতে শোডাউন শুরু করেন। তবে পরে নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে দাঁড়ান। 

স্থানীয় সূত্র আরও বলেছে, আব্দুল মান্নান এলাকার আজগড়া ইউনিয়নের সুখতোলা গ্রামে ১ কোটি টাকা দিয়ে ৯ শতাংশ জমি কিনেছেন। গাজীমুড়া গ্রামে ৫৪ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছেন ৯ শতাংশ কৃষিজমি। 

আব্দুল মান্নানের প্রতিবেশী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘জোর করে আমার জায়গা দখল করে ঘর তুলেছেন। আমাকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করেছেন। আমি তাঁকে জায়গা লিখে না দেওয়ায় সীমানাপ্রাচীর তৈরি করে বাড়িতে ঢোকার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। প্রতিবাদ করায় আমাকে এবং আমার পরিবারের সদস্যদের নির্যাতনও করেছেন।’ 

মাহবুবুল আলম নামের অন্য এক ব্যক্তি বলেন, ‘আব্দুল মান্নানের বিলাসবহুল বাড়ির পাশেই আমার ৬ শতাংশ জায়গার একটি পুকুর ছিল। তিনি পুকুরটি কিনতে চেয়েছিলেন। আমি বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় জোর করে দখল করে মাটি ভরাট করে ফেলেছেন।’ 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুল মান্নান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আমি কাউকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা নিইনি। জোরপূর্বক কারও জায়গা দখলও করিনি।’ প্রধানমন্ত্রীর ছেলে অথবা এপিএস পরিচয় দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আমি প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী ছিলাম। তবে এ জন্য আমি সরকারি কোনো বেতন-ভাতা ভোগ করিনিই। এখন আমি একজন ব্যবসায়ী।’ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বলেছি, দল যদি মনোনয়ন দেয় তবে আমি নির্বাচন করব। মনোনয়ন না দেওয়ায় নির্বাচনে অংশ নিইনি।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ছিনতাই ও হত্যাচেষ্টার মামলায় চাটমোহর মহিলা দলের দুই নেত্রী গ্রেপ্তার

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি 
গ্রেপ্তার দুই নেত্রী। ছবি: সংগৃহীত
গ্রেপ্তার দুই নেত্রী। ছবি: সংগৃহীত

পাবনার চাটমোহরে ছিনতাই ও হত্যাচেষ্টা মামলার পলাতক আসামি হিসেবে উপজেলা মহিলা দলের বহিষ্কৃত দুই নেত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার রাতে চাটমোহর পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মহিলা দল চাটমোহর উপজেলা শাখার সিনিয়র সহসভাপতি (বহিষ্কৃত), পৌরসভার মধ্য শালিখা মহল্লার মৃত কোবাদ হোসেনের মেয়ে বুড়ি সরকার (৪২) এবং একই কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (বহিষ্কৃত), পৌরসভার বালুচর মহল্লার বিএনপি নেতা সেলিম রেজার স্ত্রী রহিমা রেজা (৪৫)।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, চাটমোহর উপজেলা মহিলা দলের বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তামান্না আজিজা স্বর্ণা গত ২৩ আগস্ট বিকেল ৫টার দিকে পৌরসভার আফ্রাতপাড়া এলাকায় বিএনপির কর্মসূচিতে অংশ নিতে গেলে পূর্ববিরোধের জেরে রহিমা রেজা ও বুড়ি সরকার দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাঁর ওপর হামলা চালান। এতে স্বর্ণা আহত হন। পরে তিনি একাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে ছিনতাই ও হত্যাচেষ্টার মামলা করেন।

চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনজুরুল আলম বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত পলাতক আসামি রহিমা রেজা ও বুড়ি সরকারকে পৃথক অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার তাঁদের আদালতের মাধ্যমে পাবনা জেলা কারাগারে পাঠানো হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরিশালে যুবকের লাশ হাসপাতালে রেখে পলায়ন, শরীরে পোড়া দাগ, গ্রেপ্তার ৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
বরিশালে যুবকের লাশ হাসপাতালে রেখে পলায়ন, শরীরে পোড়া দাগ, গ্রেপ্তার ৩

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল (শেবাচিম) কলেজ হাসপাতালে যুবকের মরদেহ রেখে পালিয়ে যান চার তরুণ-তরুণী। বুধবার কোতোয়ালি মডেল থানা-পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এর আগে নগরীর ভাটারখাল এলাকার জেলা পরিষদ মার্কেটের একটি কক্ষে মো. বেল্লাল (২৮) নামের ওই যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।

পুলিশ জানায়, নিহত বেল্লাল বরিশাল সদর উপজেলার পশ্চিম চর আইচা গ্রামের শাহ আলমের ছেলে। তিনি ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাতেন। নিহত বেল্লালের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। বেল্লালের বাবা শাহ আলম পাঁচজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। এই ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন চরমোনাই ইউনিয়নের গিলাতলী গ্রামের সিরাজ হাওলাদারের ছেলে রনি হাওলাদার (২৮), মায়া চৌধুরী (২৬) ও সাদিয়া (২৪)। পলাতক দুজন হলেন পলাশপুর বস্তির রিপন রানা এবং চরবাড়িয়া ইউনিয়নের সবুজ।

স্থানীয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে মার্কেটের তৃতীয় তলা থেকে বেল্লালের লাশ সিঁড়ি বেয়ে নামাচ্ছিলেন এক যুবকসহ চার তরুণ-তরুণী। পরে তাঁরা লাশ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রেখে সরে পড়েন। ঘটনাটি জানাজানি হলে পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।

ভাটারখাল এলাকার বাসিন্দা মো. টিপু বলেন, সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন আলোর ভাড়া করা একটি রুমে প্রতিদিন কয়েকজন মদ্যপান করতেন। মঙ্গলবার রাতে মদ্যপানের একপর্যায়ে বেল্লালকে বেধড়ক মারধর করা হয়। মারধরে তাঁর মৃত্যু হলে লাশ সিঁড়ি দিয়ে নামিয়ে হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যান তাঁরা।

নিহত ব্যক্তির বাবা শাহ আলম বলেন, ‘আমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করে শাস্তি দেওয়া হোক।’

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, ‘লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। বেল্লালের শরীরে মারধর ও পোড়ার স্পষ্ট চিহ্ন রয়েছে। তদন্ত চলছে।’

শেবাচিম হাসপাতালের মর্গ-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বেল্লালের শরীরে পোড়া দাগ আছে। মনে হচ্ছে, তাঁকে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে অর্থ দাবি: রাজনগরে দুজন ভুয়া সাংবাদিক আটক

রাজনগর (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
আটক দুই ভুয়া সাংবাদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা
আটক দুই ভুয়া সাংবাদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগে দুই ব্যক্তিকে আটক করেছে স্থানীয় লোকজন। বুধবার সন্ধ্যায় মনসুরনগর ইউনিয়ন থেকে তাঁদের আটক করে পরে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

সূত্র জানায়, মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার রাজনগর গ্রামের মিরাজ উদ্দিনের ছেলে আরিফুর রহমান (২৮) এবং গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার দক্ষিণ কোটালীপাড়া গ্রামের রুকন উদ্দীনের ছেলে তরিকুল ইসলাম (৩৬) নিজেদের একটি জাতীয় দৈনিকের সাংবাদিক পরিচয় দিতেন। বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে দেখা করে খোঁজখবর নেওয়ার নাম করে তাঁরা আর্থিক সুবিধা চাইছিলেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

চেয়ারম্যানদের সন্দেহ হলে একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের গতিবিধি নজরদারিতে রাখা হয়। পরে মনসুরনগর ইউনিয়নে সুযোগ পেয়ে স্থানীয় লোকজন দুজনকে আটক করে।

খবর পেয়ে রাজনগর থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের থানায় নিয়ে যায়।

রাজনগর থানার এএসআই হৃদয় বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে। দোষী প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝিনাইদহে প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে শিশুর মরদেহ উদ্ধার

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
নিহত শিশু সাইমা আক্তার ছাবা। ছবি: সংগৃহীত
নিহত শিশু সাইমা আক্তার ছাবা। ছবি: সংগৃহীত

ঝিনাইদহে পবাহাটি গ্রামে প্রতিবেশীর খাটের নিচ থেকে সাইমা আক্তার ছাবা (৪) নামের এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার রাত ১০টার দিকে পবাহাটি গ্রামের ঈদগাহ পাড়ায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত শিশু ওই গ্রামের ভ্যানচালক মো. সাইদুল ইসলামের মেয়ে। এই ঘটনায় সাইদুল ইসলামের প্রতিবেশী আক্তারুজ্জামান মাসুদের স্ত্রী সান্ত্বনা খাতুনকে (৩২) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়েছে পুলিশ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সায়মা আক্তার ছাবা সকাল থেকে নিখোঁজ ছিল। আশপাশের পুকুর, বাড়িসহ সব জায়গায় খুঁজে তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। সারা দিন মাইকিং করা হয়েছে। পরে রাতে সাইদুল ইসলামের প্রতিবেশী সান্ত্বনা খাতুনের বাড়ি থেকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।

নিহত শিশুর বাবা সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘সকালে মেয়ে ঘুম থেকে তুলে আমার মুখে চুমু দেয়। আর বলে আব্বু কাজে যাবা না? আমার জন্য মিষ্টি কিনে আনতে হবে না। তার কথা শুনে আমি দ্রুত উঠে পড়ি। পরে ভ্যান নিয়ে কাজে বের হওয়ার সময় মেয়েকে ভ্যানে চড়িয়ে একটু ঘুরিয়ে নামিয়ে দিই। পরে আমার স্ত্রী ফাতেমাকে বলেছে, আম্মু তুমি ভাত রান্না করো। রান্না শেষে আমাকে ডাক দিয়ো, আমি বাইরে খেলছি। পরে আমার স্ত্রী মেয়েকে ডাক দিয়ে আর পায় না; তখন আমার ছেলে আমাকে জানায় ছাবাকে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি বাড়িতে এসে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে বাড়ির পাশের বিভিন্ন পুকুরসহ আশপাশের সব জায়গায় খুঁজে কোথাও পাইনি। পরে থানায় জিডি করি, মাইকিং করি। তবু মেয়েকে পাই না। পরে আমি প্রতিবেশী আখতারুজ্জামান মাসুদের বাড়িতে মেয়েকে খুঁজতে গিয়েছিলাম। তখন মাসুদের স্ত্রী আমাকে জানায়, আমার মেয়ে তাদের বাড়িতে যায়নি। আমার সন্দেহ হলো। পাড়ার সবাই আমার মেয়েকে খুঁজছে, কিন্তু মাসুদের স্ত্রী আসছে না, কোনো খোঁজও করছে না। পরে রাতে পুকুরপাড়ে আবারও যাই, সে সময় দেখি মাসুদের স্ত্রী একটি বস্তা নিয়ে কোথায় যাচ্ছে; তখন আমি চিৎকার দিলে সে আবার ঘরে দৌড়ে চলে যায়। পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে তার ঘরের খাটের নিচ থেকে আমার মেয়ের লাশ উদ্ধার করে।’

ঝিনাইদহ সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ হোসেন বলেন, ‘বাচ্চাটা সকাল থেকে নিখোঁজ ছিল। রাতে আমরা খবর পাই সাইদুল ইসলামের প্রতিবেশীর বাড়িতে মরদেহ পাওয়া গেছে। ঘটনা কী ঘটেছে এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না। খোঁজখবর নিচ্ছি, তদন্ত চলছে। সম্ভাব্য আসামিকে আমরা হেফাজতে নিয়েছি। মরদেহ পোস্টমর্টেমের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর বিস্তারিত বলা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত