Ajker Patrika

রাখাইনে সংঘাত: আবারও দলে দলে রোহিঙ্গা আসছে

কক্সবাজার প্রতিনিধি
আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২২: ১৭
রাখাইনে সংঘাত: আবারও দলে দলে রোহিঙ্গা আসছে

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ দখল নিয়ে দেশটির সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) লড়াই তীব্র হয়ে উঠেছে। এতে রোহিঙ্গাদের জীবন আবারও হুমকির মুখে পড়েছে। গত কয়েক দিনে ভিটেমাটি ফেলে মংডু ও আশপাশের এলাকা থেকে দলে দলে রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে।

অভিযোগ উঠেছে, নাফ নদ পাড়ি দিয়ে দালালদের সহযোগিতায় কাঠের নৌকা করে কক্সবাজারের টেকনাফের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ঢুকছে রোহিঙ্গারা। এরপর তারা টেকনাফ ও উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির এবং টেকনাফে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছে।

সীমান্তে বিজিবি ও কোস্ট গার্ডসহ প্রশাসনের কড়া নজরদারির মধ্যে আবারও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনায় জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ উদ্বেগ জানিয়েছেন।

তবে নতুন করে আর কোনো রোহিঙ্গার আশ্রয় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। গতকাল রোববার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমরা ইউএনএইচসিআরকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি যে, আমাদের পক্ষে আর কোনো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া সম্ভব নয়।’

গত মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত আট হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। 

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা নতুন আগতদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছিল, যা সরকার দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।’ 

রাখাইনে সংঘাত: আবারও দলে দলে ঢুকে পড়ছে রোহিঙ্গারা। ছবি: আজকের পত্রিকামংডু টাউনশিপ ঘিরে তীব্র লড়াই 
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে আরাকান আর্মির সঙ্গে সরকারি বাহিনীর লড়াই শুরু হয়। আরাকান আর্মি ইতিমধ্যে রাখাইনের ৮০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ দখলের পাশাপাশি বাংলাদেশ সীমান্তের সীমান্ত চৌকি দখলে নিয়েছে। এখন রোহিঙ্গা অধ্যুষিত মংডু টাউনশিপ ও আশপাশের এলাকায় যুদ্ধ চলছে। এ যুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে আরাকান আর্মি। 

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা ও সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, মংডু শহরের সেনা ও বিজিপির দুটি ব্যারাক (ব্যাটালিয়ন) দখলে নিতে হামলা চালাচ্ছে আরাকান আর্মি। দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র গোলাগুলির পাশাপাশি মর্টার শেল নিক্ষেপ ও গ্রেনেড–বোমা ছোড়া হচ্ছে। এর মধ্যে আরাকান আর্মি মংডু টাউনশিপের পাশের পাঁচটি গ্রাম সুধাপাড়া, মংনিপাড়া, সিকদারপাড়া, উকিলপাড়া, নুরুল্লাপাড়া দখল করে ৫০–৬০ হাজার রোহিঙ্গাকে উচ্ছেদ করেছে। 

মংডু ও আশপাশের গ্রামগুলোতে ৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গার বসবাস রয়েছে। রোহিঙ্গারা জানায়, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরেও মংডু এলাকার রোহিঙ্গাদের সমস্যা হয়নি। কিন্তু এবার তাদেরও উচ্ছেদ করা হচ্ছে। 

সাবরাং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রেজাউল করিম বলেন, ‘রোববার রাতেও বিস্ফোরণের বিকট শব্দ এপারে ভেসে আসে। তবে সোমবার ভোর থেকে তেমন বিকট শব্দ শোনা যায়নি। কয়েক দিন ধরে মংডু ও আশপাশের এলাকায় টানা বিমান হামলা ও মর্টারশেল বিস্ফোরণ হয়েছে।’ 

সীমান্তে জড়ো হয়েছে রোহিঙ্গারা
বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য মংডু ও আশপাশের সীমান্তে ৬০–৬৫ হাজার রোহিঙ্গা জড়ো হয়েছে। এরই মধ্যে হাজারো রোহিঙ্গারা নাফ নদ ও সীমান্ত পার হয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ আশ্রয়শিবিরে আত্মীয়স্বজনের কাছে আশ্রয় নিয়েছে। গত এক মাসে অন্তত ১৮ থেকে ২০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। তবে সীমান্তে কর্মরত সরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, এ পর্যন্ত ১০ হাজার মতো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। 
 
একাধিক সূত্রমতে, টেকনাফের জাদিমোরা, দমদমিয়া, কেরুনতলী, বরইতলী, নাইট্যংপাড়া, জালিয়াপাড়া, নাজিরপাড়া, মৌলভীপাড়া, নয়াপাড়া, সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ, জালিয়াপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, ঘোলারচর, খুরেরমুখ, আলীর ডেইল, মহেষখালীয়াপাড়া, লম্বরী, তুলাতলী, রাজারছড়া, বাহারছড়া উপকূল, উখিয়ার বালুখালী, ঘুমধুম সীমান্তসহ অন্তত ৩০টি পয়েন্টে দিয়ে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করছে।

মংডুর উত্তরের প্যারাংপুরু ও দক্ষিণের ফাদংচা এলাকায় জড়ো থাকা রোহিঙ্গারা দালালদের সহায়তায় অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, জনপ্রতি রোহিঙ্গারা দালালদের ৫ লাখ কিয়াত (বার্মিজ মুদ্রা) বা বাংলাদেশি ২০ হাজার টাকা দিয়ে সীমান্ত পার হচ্ছে। 

রাখাইনে সংঘাত: আবারও দলে দলে ঢুকে পড়ছে রোহিঙ্গারা। ছবি: আজকের পত্রিকাএ বিষয়ে জানতে চাইলে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নতুন আসা রোহিঙ্গারা বিভিন্ন ক্যাম্পে আত্মীয়স্বজনদের ঘরে অবস্থান করছেন। এদের মধ্যে অনেকেই গুলিবিদ্ধ ও আহত আছেন। তাঁদের চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আবাসন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা গাদাগাদি করে বসবাস করছেন। এর মধ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরে কয়েক মাসে আট লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।’ 

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের বিষয়টি স্বীকার করে টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আদনান চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আট–নয় হাজারের মতো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের টহল বাড়ানো হয়েছে।’ 

এদিকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কক্সবাজার শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আবারও গণহারে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনায় স্থানীয়রা উদ্বিগ্ন। নাফ নদ–সীমান্তে বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের টহল থাকার পরও দালাল চক্রের মাধ্যমে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের বিষয়টি দুঃখজনক। অবিলম্বে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানো দরকার বলে জানান তিনি। 

রোহিঙ্গাদের সংগঠন ‘আরাকান সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জুবায়ের আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা–সংকট সমাধানে কার্যকর ভূমিকা নিতে পারছে না। এতে নতুন করে আরও রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটছে। রাখাইনের দখল নিয়ে জান্তা বাহিনী ও আরাকান আর্মির যুদ্ধে আবারও রোহিঙ্গারা নির্মূল হচ্ছে।’ এসব বন্ধে আন্তর্জাতিক মহলের কঠোর হস্তক্ষেপ জরুরি বলে মনে করেন তিনি। 
 
উল্লেখ, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পড়ে বাংলাদেশে অন্তত ৮ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়। গত ৭ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি মিয়ানমারের জান্তা সরকার। সম্প্রতি চীনের মধ্যস্থতায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কার্যক্রম শুরু হলেও রাখাইনের যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে থেমে আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পানিতে ডুবে প্রাণ গেল মামা-ভাগনের

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে পুকুরে ডুবে শাহবাব মন্ডল (আড়াই বছর) ও আবু তোহা মন্ডল (৩) নামের দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের যাদুরচর নতুন গ্রাম এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

শাহবাব মন্ডল উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের ধনারচর নতুন গ্রামের শাহজাহান মন্ডলের ছেলে এবং আবু তোহা মন্ডল একই গ্রা‌মের আবু তালেবের ছেলে। এই দুই শিশু সম্পর্কে মামা-ভাগনে।

পরিবারের বরাত দিয়ে যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরবেশ আলী জানান, বুধবার সকালে ওই দুই শিশু তালেব মন্ডলের বাড়িতে খেলা করছিল। এ সময় সবার অজান্তে তারা বাড়ির পা‌শে পুকুরের পানিতে পড়ে যায়। স্বজনেরা পুকুর থে‌কে দুই শিশু‌কে উদ্ধার করে হাসপাতালে নি‌য়ে যান। দা‌য়িত্বরত চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।

খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক একই এলাকার বাসিন্দা ও কুড়িগ্রাম-৪ আসনের বিএনপির মনোনীত সংসদ সদস‌্য প্রার্থী আজিজুর রহমান ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তি‌নি শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

রৌমারী থানার উপপ‌রিদর্শক শাহ‌নেওয়াজ হো‌সেন ব‌লেন, খবর পে‌য়ে ঘটনাস্থ‌লে পু‌লিশ পাঠা‌নো হ‌য়ে‌ছে। সহকারী ক‌মিশনার (ভূ‌মি) ঘটনাস্থ‌লে গি‌য়ে‌ছেন। দুই শিশুর মৃত‌্যুর ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনি ব‌্যবস্থা নেওয়া হ‌বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ৫৭
নিহত লায়লা আফরোজ ও নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ। ছবি: সংগৃহীত
নিহত লায়লা আফরোজ ও নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ। ছবি: সংগৃহীত

‎রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যার ঘটনায় গৃহকর্মী আয়েশাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার দুপুরে ঝালকাঠি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

‎গ্রেপ্তারের বিষয়টি আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছেন তেজগাঁও বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন।

‎মামুন বলেন, গৃহকর্মী আয়েশাকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঝালকাঠি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত সোমবার সকালে শাহজাহান রোডের ১৪ তলা একটি আবাসিক ভবনের সপ্তম তলায় লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তাঁর মেয়ে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে (১৫) ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।

মা-মেয়ে হত্যায় অভিযুক্ত গৃহকর্মী আয়েশা। ছবি: আজকের পত্রিকা
মা-মেয়ে হত্যায় অভিযুক্ত গৃহকর্মী আয়েশা। ছবি: আজকের পত্রিকা

গতকাল তাঁদের মরদেহ নাটোরে দাফন করা হয়েছে। মামলার এজাহারে বাসা থেকে মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিস খোয়া যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ভবনের ভেতরের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, হত্যাকাণ্ডের পর এক নারী স্কুলড্রেস পরে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। চার দিন আগে আয়েশা পরিচয় দিয়ে ওই বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেওয়া তরুণী (২০) এই জোড়া খুনে জড়িত বলে সন্দেহ স্বজনদের। ঘটনার পর থেকে ওই তরুণী পলাতক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি 
গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে মজিরুলের নেতৃত্বে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে মজিরুলের নেতৃত্বে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

জীবন আছে যার, তার মৃত্যু অনিবার্য। মৃত্যুর পর মানুষের শেষ ঠিকানা কবর। মৃতদেহ গোসল করিয়ে কাফন পরানো হয়, জানাজা শেষে তাকে শায়িত করা হয় চিরনিদ্রার ঘরে। এই কবর খোঁড়ার দায়িত্বটি গ্রামের কিছু মানুষ বহু বছর ধরে স্বেচ্ছায়, বিনা পারিশ্রমিকে পালন করে আসছেন, যাঁরা সবার কাছে ‘গোরখোদক’ নামে পরিচিত। আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় তাঁরা করে থাকেন এই কাজ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গোরখোদকেরা কোনো পারিশ্রমিক নেন না। গ্রামের যে কেউ মারা যাক, নিজেদের ব্যস্ততা ফেলে তাঁরা ছুটে আসেন কবর খুঁড়তে। তাঁদের এই মানবিক কাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে গ্রামের লোকেরা দোয়া করেন—আল্লাহ যেন তাদের সুস্থ ও ভালো রাখেন।

দেবীপুর গ্রামের বাসিন্দা গোরখোদক মজিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ৫৫ বছর ধরে কবর খুঁড়ছি। যত দিন সুস্থ থাকব, এই কাজ চালিয়ে যাব। আমাদের গ্রাম ছাড়াও অন্য গ্রাম থেকে কেউ ডাকলে সেখানেও যাই। ছোটবেলায় ওস্তাদের কাছে ডালি ধরেই শিখেছি। গরিব মানুষ, মাঠে কাজ করি; কিন্তু কেউ মারা গেলে দ্বিধা করি না—এই কাজ আমার নেশায় পরিণত হয়েছে।’

মজিরুল আরও জানান, এখন তিনি তরুণদেরও এই কাজ শেখাচ্ছেন।

গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

গোরখোদক শাকের আলী বলেন, ‘আমরা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করি। কখনো কোনো টাকা নিই না। যেখানেই থাকি, গ্রামের কারও মৃত্যুর সংবাদ শুনলে দ্রুত কবর খুঁড়তে চলে আসি।’

গোরখোদক ফুয়াদ হোসেন বলেন, ‘অন্য গ্রাম থেকে ডাক এলেও আমরা যাই। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করি এই কাজ। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’

স্থানীয় বাসিন্দা শাজাহান আলী বলেন, ‘কবর খোঁড়া বড় দায়িত্বের কাজ। গ্রামের এসব মানুষ খবর পেলেই দৌড়ে আসে। আমরা তাদের জন্য দোয়া করি।’

মাওলানা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘মৃত ব্যক্তির জন্য কবর খোঁড়া নিঃসন্দেহে সওয়াবের কাজ। হাদিসে এসেছে—যাঁরা কবর খোঁড়েন, আল্লাহ তাদের জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শ্রীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, ফটকে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুরের শ্রীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে কারখানার ফটকের সামনে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকেরা। আন্দোলনের মুখে কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রধান ফটক তালাবদ্ধ করে সটকে পড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে শিল্প ও থানা-পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসেছেন। আজ বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের সাইটালিয়া গ্রামে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানায় এই ঘটনা ঘটে।

কারখানার নারী শ্রমিক মিনারা আক্তার বলেন, ‘অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের বেতন পরিশোধ করে নাই। এক মাসের বেতন না পেলে আমাদের চলা খুবই কঠিন হয়। আমাদের নাওয়া-খাওয়া বন্ধ হয়। আর সেখানে কারখানা কর্তৃপক্ষ দুই মাসের বেতনভাতা বকেয়া রেখেছে। আজ সকালে শ্রমিকেরা জড়ো হলে তারা পালিয়ে যায়।’

মিন্টু নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘এই কারখানায় আমরা তিন বছর ধরে চাকরি করছি। আমাদের বেতনের বাইরে কোনো সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে না। তবু পেটের দায়ে চাকরি করি। দুই মাসের বেতন বকেয়া। আমাদের তো পেট আছে, সন্তান-সংসার আছে। এক মাস দোকান বাকি পরিশোধ করতে না পারলে পরের মাসে আর দোকানি বাকি দেয় না। আমরা কী অবস্থায় আছি, একবার ভাবুন। বেতন পরিশোধ না করে তারা পালিয়ে গেছে।’

আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

মেহেদী হাসান বলেন, ‘এত দিন ধরে ঋণ করে বলে-কয়ে দোকান থেকে বাকি নিয়ে চলছি। আর পারছি না। এখন দোকান বাকি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতন নিয়ে কমপক্ষে ১০টি তারিখ দিছে। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ বেতন পরিশোধ করেনি। শেষে আজ বেতন পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু তারা কারখানা ফটকে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে গেছে।’

কারখানার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. বুলবুল হাসান বলেন, ‘ব্যাংকের সমস্যার কারণে বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাচ্ছে না। আশা করি, আজকের মধ্যে নভেম্বর মাসের বেতন পরিশোধ করতে পারব।’ বিনা নোটিশে কারখানার ফটক কেন তালাবদ্ধ? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি বলতে পারব না।’

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাছির আহমদ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত