Ajker Patrika

স্বপ্ন ছোঁয়ার অপেক্ষায়

শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা ও লোকমান হাকিম, মহেশখালী (কক্সবাজার)
স্বপ্ন ছোঁয়ার অপেক্ষায়

২৫০ মিটার প্রস্থ আর ১৮ মিটার গভীরতা সমুদ্রবন্দর চ্যানেল। চ্যানেলের সঙ্গে লেগে আছে পণ্য খালাসের জন্য দুটি জেটি। যেখানে ভেড়ানো আছে ব্যাংকক আর গ্রিনল্যান্ডের মালবাহী দুটি জাহাজ।

পাশেই যতদূর চোখ যায়, চলছে মহাকর্মযজ্ঞ। প্রথম দেখায় ঠিক বোঝার উপায় নেই জায়গাটি কোথায়। মনে হয় উন্নত বিশ্বের প্রথম সারির কোনো এক সমুদ্রবন্দর। কিন্তু না, এটি আসলে সাগরবক্ষের দ্বীপ মহেশখালীর মাতারবাড়ী। এই তো কয়েক বছর আগেও এখানকার হাজার হাজার একর জমিতে লোনাপানি জমিয়ে লবণের চাষ হতো। দিনভর মাছ শিকার করত। আজ সেই লবণমাঠেই বাস্তবায়ন হচ্ছে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র ও গভীর সমুদ্রবন্দর। শুধু মাতারবাড়ীই নয়। পুরো মহেশখালীতে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকার ৬৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।

প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাজগুলো শেষ হলে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি ভাগ্য বদলাবে এখানকার মানুষের। মহেশখালী হবে দেশের অর্থনীতির অন্যতম এক চালিকাশক্তি। সম্ভাবনাকে অস্বীকার করছেন না এখানকার সাধারণ মানুষও। তাঁদেরও ইচ্ছে, সময়ের পরিবর্তনে লবণ উৎপাদন আর মাছ শিকার বাদ দিয়ে শামিল হবেন উন্নয়নের এই বিপ্লবে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র বলছে, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল, তেল রিজার্ভ ট্যাংক, পণ্য খালাসের জেটি, গভীর সমুদ্রবন্দর, সোলার পাওয়ার প্ল্যান্টসহ প্রায় ৬৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পগুলোর মধ্যে ৩১টি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের। ৯টি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের, ৮টি সড়ক ও সেতু বিভাগের, ৯টি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের।

কক্সবাজার শহর থেকে সমুদ্রপথে উত্তর দিকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার গেলে মহেশখালীর দ্বীপ ইউনিয়ন এই মাতারবাড়ী। ইউনিয়নের ৮০ হাজার জনসংখ্যার ৯৫ শতাংশের পেশা সমুদ্রের মাছ শিকার এবং খোলা মাঠে লোনাপানি জমিয়ে লবণ উৎপাদন করা। কিন্তু আজ সেখানে নির্মাণকাজে ব্যস্ত ১৭ দেশের ৫৫৪ জন বিদেশি নাগরিক। তাঁদের নির্দেশনায় কাজ করছেন বাংলাদেশি আরও সাড়ে ৬ হাজারের মতো শ্রমিক।

মহেশখালী থেকে সড়কপথে প্রায় ৪০ কিলোমিটার ভাঙা রাস্তা পেরিয়ে পৌঁছাই মাতারবাড়ীর ধলঘাটা। এই মহা প্রকল্পে উত্তর পাশে কুতুবদিয়া চ্যানেল, পশ্চিম ও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, আর পূর্ব পাশে কুহেলিয়া নদী। মধ্যভাগের জমিতে দেশি-বিদেশি সাড়ে ৭ হাজার শ্রমিক-প্রকৌশলীর ঘামে-শ্রমে মাথা তুলেছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল অবকাঠামো। বড় বড় ক্রেন, ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে দিনরাত চলছে নির্মাণকাজ। জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থার (জাইকা) সহযোগিতায় ১ হাজার ৪১৪ একর জমিতে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে সরকার। প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড। ৩৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে জাপানি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুমিতমো, তোশিবা ও আইএইচআই করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে কাজ চলছে। ২০১৮ সালে এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির কাজ শুরু হয়েছে, শেষ হবে ২০২৪ সালে।

সার্বিক অগ্রগতি প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দুটি পাওয়ার প্ল্যান্টে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। এগুলোর ৪৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রথম ইউনিট ২০২৪ সালের জানুয়ারি এবং দ্বিতীয় ইউনিট একই বছরের জুলাইয়ে চালু হবে বলে আশা করছি। সামগ্রিক অগ্রগতি ৫৫ শতাংশ।’

সরকারের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ এলাকা হবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির হাব। এ হাবকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে নতুন শহর। যা এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন ঘটাবে।

স্থানীয় বাসিন্দা আল আমিন শেখ বলেন, সত্যিই এলাকার চেহারা ধীরে ধীরে পাল্টে যাচ্ছে। ভবিষ্যৎতে এ-কেন্দ্রিক নানা ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ তৈরি হবে বলে এলাকাবাসীর বিশ্বাস।  

এ মাসে গভীর সমুদ্রবন্দরের টেন্ডার
দেশে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল ২০০৯ সালে। শুরুতে পরিকল্পনায় ছিল কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপে। এরপর আসে পটুয়াখালীর পায়রায়। কিন্তু সর্বশেষ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো, কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতেই হবে গভীর সমুদ্রবন্দর। আর এটাই হবে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর।

মাতারবাড়ী ধলঘাটার এই বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘিরে ১ হাজার ৮০ একর ভূমিতে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এই বন্দর নির্মাণ বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান।

সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৫ সালে এ বন্দরটি চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। বন্দরের সঙ্গেই গড়ে তোলা হবে কনটেইনার রাখার অবকাঠামো। ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোও (আইসিডি) গড়ে তোলা হবে। 

সমুদ্রবন্দর চ্যানেলে বিদেশি জাহাজ ভিড়ছে
প্রকল্প এলাকার দক্ষিণ-পশ্চিমে চার কিলোমিটার সড়কের শেষ প্রান্তে ১৪ কিলোমিটারের মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর চ্যানেল। চ্যানেলের সঙ্গে তৈরি হয়েছে পণ্য খালাসের দুটি জেটি। বঙ্গোপসাগর থেকে এই চ্যানেলে ঢুকে বিদেশি জাহাজগুলো সেখানে পণ্য খালাস করছে। ১৫ অক্টোবর শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, জেটি দুটিতে দুটি বিদেশি জাহাজ ভিড়ে রয়েছে। জাহাজ থেকে ক্রেনের মাধ্যমে নামানো হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের স্টিল সরঞ্জাম। কর্তৃপক্ষ জানায়, এ পর্যন্ত ৩০টি বিদেশি জাহাজ এসেছে। বর্তমানে একটি তেলের, আরেকটি কয়লার জেটিতে নোঙর করেছে।

তেল খালাসে বাঁচবে বছরে ৮০০ কোটি টাকা
গভীরতা কম হওয়ায় তেলবাহী মাদার ভেসেল চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়তে পারে না। আবার এক লাখ টন তেল নিয়ে কুতুবদিয়া দ্বীপের কাছে আসতে পারে না বড় জাহাজ। তাই ছোট ছোট অয়েল ট্যাংকারে করে তা ইস্টার্ন রিফাইনারির জেটিতে আনা হয়। এ প্রক্রিয়ায় একটি ট্যাংকার থেকে তেল খালাস করতে ৩ থেকে ৭ দিন সময় লেগে যায়। আর অতিরিক্ত সময়ের জন্য সরকারকে জরিমানা গুনতে হয় জাহাজ কোম্পানির কাছে।

তাই মহেশখালীর নিকটবর্তী সমুদ্র এলাকায় নির্মিত হচ্ছে বড় জাহাজ থেকে সরাসরি তেল খালাসের পাইপলাইন। জ্বালানি বিভাগের এই প্রকল্পের নাম সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল পাইপলাইন (এসপিএম)। এই প্রকল্পের জন্য কালারমারছড়ার সোনারপাড়ায় তেল মজুতের জন্য বিশাল অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ প্রকল্পের অগ্রগতি পরিদর্শন করতে গিয়ে বলেন, ৬ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান প্রকল্পের কাজ আগামী বছরের জুনে শেষ হবে। প্রকল্পটি চালু হলে বছরে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।

জ্বালানি হাব
মহেশখালীতেই গড়ে উঠছে জ্বালানির বড় হাব। এখানে হবে ভাসমান ও স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল। যাকে বলা হবে দেশের সবচেয়ে বড় এলপিজি টার্মিনাল। মহেশখালীর ধলঘাটা দুটি এলএনজি টার্মিনাল হবে স্থলভাগে। আবার এখানকারই নিকটবর্তী সমুদ্রে হবে একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল। এই তিন টার্মিনাল থেকে দিনে মিলবে ৩৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস। 

যোগাযোগেও আসবে পরিবর্তন
বিদ্যুৎ প্রকল্প ও সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ করতে হচ্ছে সড়ক উন্নয়ন। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী থেকে মাতারবাড়ী পর্যন্ত চার লেনের ২৭ কিলোমিটার সড়ক ও ১৭টি সেতুর নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বন্দরের সঙ্গে ২৬ কিলোমিটার রেলপথ সরাসরি যুক্ত করতে চায়। এটি চকরিয়ার হারবাং থেকে সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত যাবে। ২০২৪ সালের মধ্যে এসব অবকাঠামো গড়ে তুলতে চায় প্রতিষ্ঠানটি।

লাখো মানুষের কর্মসংস্থান সোনাদিয়ায়
দেশের পর্যটন বিজ্ঞাপনের পোস্টার গার্ল ‘কক্সবাজার’। প্রতিবছর ৬০-৭০ লাখ পর্যটক আসেন। এবার বিদেশিদের আকৃষ্ট করতে ঢেলে সাজানো হচ্ছে সোনাদিয়া দ্বীপ। এ দ্বীপে গড়ে উঠবে পর্যটননির্ভর অর্থনৈতিক অঞ্চল। যেটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক কর্তৃপক্ষ (বেজা)। বেজার চেয়ারম্যান শেখ ইউছুপ হারুন বলেন, ট্যুরিজম পার্ক বাস্তবায়ন হলে লাখো মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

অন্যদিকে সরকারের সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞকে কেন্দ্র করে ক্রমান্বয়ে পরিবর্তন হচ্ছে দ্বীপ অঞ্চলের রাস্তাঘাট, মানুষের জীবনধারা। পুরো মহেশখালীতেই লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। স্থানীয় সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, ‘দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর, বিদ্যুতের হাব, অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে, তা আমরা কখনো ভাবিনি।’

মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এস এম আবু হায়দার বলেন, প্রকল্পের জন্য এই এলাকার মানুষ জায়গা দিয়েছেন। তাঁরা শুধু উন্নয়ন চান। আর এই উন্নয়নের মাধ্যমে কাজের সুযোগ চান তাঁরা। বদলাতে চান নিজেদের ভাগ্য।

রিকশাচালক রহিমের প্রশ্ন, এত উন্নয়নে হয়তো শিক্ষিতরা অনেক কিছু পাবেন। কিন্তু আমাদের কী হবে? এর জবাবে কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী অবশ্য বলেছেন, এ উন্নয়নযাত্রায় স্থানীয় ব্যবসায়ী ও হতদরিদ্রদের সম্পৃক্ত করতে হবে। না হলে একশ্রেণির মানুষ পিছিয়ে পড়বেন। তাঁদের সঙ্গে রাখার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নরসিংদীতে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় ইজিবাইকের চালকসহ নিহত ৩

নরসিংদী প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

নরসিংদীর মাধবদীতে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের চালকসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মাধবদীর রাইনাদী এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন সদর উপজেলার নুরালাপুর ইউনিয়নের রাইনাদী গ্রামের আজিজুল ইসলামের ছেলে সিয়াম মিয়া (২২), আলতাফ হোসেনের ছেলে সাব্বির হোসেন (২৮) ও রবিউল ইসলামের ছেলে অটোচালক ফাহিম মিয়া (৩০)।

নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা জানান, রাতে ইজিবাইকে করে তিনজন মাধবদীর দিক থেকে রাইনাদী এলাকায় যাচ্ছিলেন। ইজিবাইকটি মহাসড়ক পার হওয়ার সময় ঢাকা থেকে সিলেটগামী দ্রুতগতির বাসটি ইজিবাইককে চাপা দেয়। এ সময় দুজন ঘটনাস্থলে নিহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা যান আরও একজন।

ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন বলেন, দ্রুতগতির যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় ঘটনাস্থলে দুজন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও একজন মারা গেছেন। ঘটনার পর পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে। বাসটি জব্দ করা হলেও পালিয়ে গেছেন বাসের চালক ও তাঁর সহযোগী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আগামীকাল শেষ হচ্ছে নিষেধাজ্ঞা, মাছ শিকারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলেরা

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
জাল ও নৌকা মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলেরা। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মজুচৌধুরীরহাট থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জাল ও নৌকা মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলেরা। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মজুচৌধুরীরহাট থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মা ইলিশ সংরক্ষণের জন্য ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে আগামীকাল শনিবার (২৫ অক্টোবর) মধ্যরাতে। এ কারণে লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে মাছ শিকারে নামার জন্য পুরোদমে প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলেরা। জাল ও নৌকাসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম গোছাতে মাছঘাটগুলোতে এখন তাদের ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো। এদিকে, নিষেধাজ্ঞা চলাকালে অভিযান সফল দাবি করে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আশা করছেন, এবার ইলিশের উৎপাদন গত বছরের চেয়ে ৫০০ মেট্রিক টন বেশি হবে।

জাটকা সংরক্ষণ ও মা ইলিশ রক্ষার জন্য ৪ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে ২৫ অক্টোবর মধ্যরাত পর্যন্ত ২২ দিন লক্ষ্মীপুরের রামগতি আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনল এলাকার ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত মেঘনা নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল।

জেলা মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ে দুই শতাধিক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে অর্ধশতাধিক জেলেকে জেল-জরিমানা করা হয়।

অভিযানকালে প্রায় ১০ লাখ মিটার কারেন্ট জাল, ১০টি নৌকা ও প্রায় ১ হাজার কেজি ইলিশ জব্দ করা হয়। জব্দকৃত ইলিশ এতিমখানায় বিতরণ করা হয়েছে।

নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে নামার জন্য জেলেরা এখন নৌকা ও জাল মেরামতের কাজ করছেন। জেলেরা জানান, এবারের অভিযান কঠোর ছিল এবং তারা সরকারের আইন মেনেই মাছ ধরা থেকে বিরত ছিলেন। তবে তাদের অভিযোগ, নিষেধাজ্ঞার সময় বরাদ্দকৃত চাল (৪৪ হাজার জেলেকে ২৫ কেজি হারে মোট ১ হাজার ১৪ মেট্রিক টন) কিছু ক্ষেত্রে অন্য পেশার লোকজনকে দেওয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে তারা পুরোদমে আবার মাছ ধরা শুরু করবেন।

লক্ষীপুর-২
লক্ষীপুর-২

এবারের অভিযান সফল হয়েছে জানিয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, "গতবারের চেয়ে এবার ইলিশের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে। " তিনি আশা করেন, এ বছর লক্ষ্মীপুরে ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৩ হাজার মেট্রিক টন হবে, যা গত বছরের চেয়ে ৫০০ মেট্রিক টন বেশি। তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে এই ধরনের কঠোর অভিযান অব্যাহত ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

লালমনিরহাটে বৈষম্যবিরোধী ও আওয়ামী লীগের ২ শতাধিক নেতা-কর্মীর বিএনপিতে যোগদান

লালমনিরহাট প্রতিনিধি 
রোকন উদ্দিন বাবুলের হাতে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগদান করেন নেত-কর্মীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রোকন উদ্দিন বাবুলের হাতে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগদান করেন নেত-কর্মীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লালমনিরহাট জেলার মুখপাত্র সদস্য রাশেদুল ইসলাম রাশেদের নেতৃত্বে শতাধিক নেতাকর্মী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে (বিএনপি) যোগদান করেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে কালীগঞ্জ কেইউপি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত বিএনপির জনসভায় জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রোকন উদ্দিন বাবুলের হাতে ফুল দিয়ে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দেন। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বী শতাধিক আওয়ামী লীগ সমর্থকও বিএনপিতে যোগদান করেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষিত ‘রাষ্ট্র মেরামত’র ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি এই জনসভার আয়োজন করে। জনসভার প্রধান অতিথি জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও লালমনিরহাট-২ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী রোকন উদ্দিন বাবুলের হাতে ফুল দিয়ে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে দলে যোগ দেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক বিধান চন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন আদিতমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান, কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সামছুজ্জামান সবুজ, আদিতমারী উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক এইচএম ইদ্রীস আলী, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক শাহারিয়ার আলম রনি, কৃষক দলের আহ্বায়ক শরিফুল ইসলাম মিঠু, ছাত্রদলের আহ্বায়ক আব্দুল হালিম এবং কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মতিনুর রহমান মতিন প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নালিতাবাড়ীতে ইসলামি সম্মেলনে চার যুগলের যৌতুকবিহীন বিয়ে

নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি 
বিয়ের খুতবা ও আকদ পরিচালনা করেন খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ কমিটির আমির আল্লামা আবদুল হামিদ। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিয়ের খুতবা ও আকদ পরিচালনা করেন খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ কমিটির আমির আল্লামা আবদুল হামিদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে ইসলামি সম্মেলনে চারটি যৌতুকবিহীন বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে স্থানীয় শহীদ মিনার মঞ্চে মানবকল্যাণ সংস্থা ‘ইনসাফ’-এর আয়োজনে এই বিয়ে চারটি অনুষ্ঠিত হয়।

সম্পূর্ণ বিনা যৌতুকে ও নামমাত্র খরচে আয়োজিত এই বিয়ের আয়োজন স্থানীয়ভাবে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইত্তেফাকুল উলামা নালিতাবাড়ী শাখার সভাপতি মাওলানা উবায়দুর রহমান। বিয়ের খুতবা ও আকদ পরিচালনা করেন খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ কমিটির আমির আল্লামা আবদুল হামিদ।

ইনসাফ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সময়ে বিয়েতে অযথা আড়ম্বর ও ব্যয়বহুল আয়োজনের কারণে অনেক যুবক বিয়ে করতে সাহস পান না। এই পরিস্থিতিতে ইসলামি রীতি মেনে, স্বল্প খরচে ও সম্পূর্ণ যৌতুকবিহীন বিয়ের আয়োজন শুরু করেছে সংস্থাটি।

যৌতুকবিহীন বিয়েতে অংশ নেন চার যুগল। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন,

প্রথম যুগল—পশ্চিম শিমুলতলা গ্রামের সিরাজ আলীর ছেলে ও ইনসাফের চেয়ারম্যান মাওলানা হাবিবুল্লাহ পাহাড়ী এবং বাগিচাপুর গ্রামের বজলুর রশিদের মেয়ে আলেমা মোছাম্মদ হাবিবা।

দ্বিতীয় যুগল—নাকশী গ্রামের সাইফুল আলমের ছেলে ও ইনসাফের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সাব্বির হাসান এবং ফুলপুর বান্দেরবাজার গ্রামের রূপচাঁদ মিয়ার মেয়ে মোছা. ইভা ইসলাম।

তৃতীয় যুগল—বাইপাস দক্ষিণ কালিনগর গ্রামের আবদুর রশিদের ছেলে মোহাম্মদ আবু সাঈদ এবং গাজির খামার গ্রামের রফিকুল ইসলামের মেয়ে মোছা. রেশমা।

চতুর্থ যুগল—ফকিরপাড়া গ্রামের আব্বাস আলীর ছেলে আলি আহসান মোজাহিদ এবং ফুলপুর গ্রামের জয়নাল আবেদীনের মেয়ে জাকিয়া খাতুন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি আল্লামা মুফতি ওয়াহিদুল আলম, মুফতি শহীদুল্লাহ মাহমুদ এবং নালিতাবাড়ী নূর মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা আরিফুর রহমান।

ইনসাফের চেয়ারম্যান মাওলানা হাবিবুল্লাহ পাহাড়ী বলেন, ‘যৌতুক প্রথা ইসলামের দৃষ্টিতে অন্যায় ও সমাজের জন্য অভিশাপ। সমাজ থেকে এই প্রথার অবসান ঘটাতে ইনসাফ যৌতুকবিহীন বিবাহের এই উদ্যোগ নিয়মিতভাবে চালিয়ে যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত