Ajker Patrika

রাউজানে ঋণের প্রলোভনে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে উধাও ‘ডিপ ফাউন্ডেশন’

রাউজান (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
রাউজানে ঋণের প্রলোভনে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে উধাও ‘ডিপ ফাউন্ডেশন’

মো. আলম (৫২) লাখ টাকা ঋণ নিয়ে দুটি গরু কিনতে চেয়েছিলেন। গরু দুটি লালন-পালন করে কোরবানির হাটে বিক্রি করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন ছিল তাঁর। ডিপ ফাউন্ডেশন নামের একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) সহজ শর্তে ঋণ দিচ্ছে জানতে পেরে ১ লাখ টাকা পেতে ১০ হাজার টাকা জমাও দিয়েছিলেন। কিন্তু ঋণ দেওয়ার নির্ধারিত তারিখে ডিপ ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে গিয়ে দেখতে পান তালা ঝুলছে। তখন জানতে পারেন, তাঁর মতো অনেকেরই টাকা নিয়ে পালিয়েছে ডিপ ফাউন্ডেশনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এই খবর শুনে যেন তাঁর ওপর আকাশ ভেঙে পড়ে। 

গত এপ্রিলের শুরুর দিকে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সংলগ্ন খালেদা বেগমের বহুতল ভবনের তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন ডিপ ফাউন্ডেশনের শাখা ব্যবস্থাপক এবং পরিচালক পরিচয়দানকারী নার্গিস আকতার ও মো. আলম মিয়া। ১০-১৫ দিন পর কার্যালেয়ে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যান তাঁরা। এরপর থেকে ঋণ নিতে প্রতি লাখে ১০ হাজার টাকা করে জমাদানকারী ব্যক্তিরা ওই ভবনের সামনে ভিড় করছেন। মানুষের চাপ সামলাতে বাড়ির মালিক খালেদা আকতার ইতিমধ্যে এনজিওর সাইনবোর্ডটি সরিয়ে নিয়েছেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাউজানের কয়েক শ মানুষের কাছ থেকে কোটি টাকার বেশি টাকা হাতিয়ে পালিয়ে গেছে প্রতারক চক্রটি। বিনাজুরী ইউনিয়নের ভুক্তভোগী মো. ইউসূফ বলেন, ‘আমাকে ২ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার শর্তে আমি ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। যে দিন ঋণের ২ লাখ টাকা দেওয়ার কথা, সেদিন অফিসে গিয়ে দেখতে পাই দরজায় তালা ঝুলছে। আমার মতো প্রতারণার শিকার আরও কয়েকজনের উপস্থিতিতে আমি অবাক হই।’ 

একই এলাকার মনির উদ্দিন ব্যবসা করার জন্য ৪ লাখ টাকা ঋণ নিতে দিয়েছিলেন ৪০ হাজার টাকা। সাদ্দাম হোসেন সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার প্রলোভনে পড়ে মোবাইল ফোন বিক্রি আর ধারদেনা করে ১০ হাজার টাকা জমা দিয়ে প্রতারিত হন। ৬ জনের একটি গ্রুপ ৫৩ হাজার টাকা জমা দিয়ে প্রতারণার শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী এক সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক। 

ফটো বেগম নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘মগদাই এলাকায় আমার সঙ্গে প্রতারক চক্রের পরিচয় হয়। আমি ঋণ নিতে চাইলে গ্রুপভিত্তিক সঞ্চয়ের টাকা জমা দেওয়ার কথা বলার পর আমি কয়েকজনকে তা বলি। পরে তারা টাকা জমা দেয়। আমি অশিক্ষিত মানুষ, শিক্ষিত এক যুবককে নিয়ে সেখানে যাই। সবাই মিলে প্রায় ৮০ হাজার টাকা জমা দিই। পরে জানতে পারি, সবার টাকা মেরে ওরা পালিয়ে গেছে।’ 

ভুক্তভোগীদের দেখানো অফিস তথা নোয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন খালেদা মঞ্জিলের স্বত্বাধিকারী বলেন, ‘আমার কাছ থেকে বাসা ভাড়া হিসেবে মাসিক ৭ হাজার টাকা করে স্ট্যাম্পে চুক্তির মাধ্যমে ভাড়া নিয়েছিল। আমি একজনের জাতীয় পরিচয়পত্রও জমা রেখেছি। ভাড়া নেওয়ার সপ্তাহের মধ্যে তারা উধাও হয়ে যায়। আমি শহরে থাকি। পরে জানতে পারি, এনজিও পরিচয়ে কিছুসংখ্যক লোক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। টাকা জমা দেওয়ার আগে কেউ আমাকে কিছু জানায়নি।’ 

এ প্রসঙ্গে নোয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বাবুল মিয়া বলেন, ‘এনজিও সংস্থার লোক পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিদের টাকা দিয়ে প্রতারণার শিকার কয়েকজন আমার কাছে এসেছিলেন। তাদের কাছে কোনো ডকুমেন্ট ছিল না। তবে যেখানে অফিস ভাড়া নিয়েছিল, সেটি ছিল বাসা। কোনো ডকুমেন্ট ছাড়া কীভাবে তারা টাকা জমা দিয়েছিল, আমার বুঝে আসছে না।’ 

রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমার কাছে কেউ আসে নাই। থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দিয়েছে কিনা ডিউটি অফিসারের কাছ থেকে জানতে হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অংগ্যজাই মারমা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এনজিওটির কথা শুনেছিলাম। পরবর্তী সময়ে খবর নিয়ে জানতে পারি ওরা আর নেই। পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চকরিয়া থানার ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজের আগেই বের হয়ে যেতে বলা হয় জেলেনস্কিকে

‘আমাদের অনুমতি ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করলে থানা ঘেরাও করব’, সরকারি কর্মকর্তার বক্তব্য ভাইরাল

এনসিপির কর্মীদের ঢাকায় আনতে সরকারের বাস রিকুইজিশন, সমালোচনার ঝড়

সিরিয়ায় রাশিয়ার ঘাঁটি রাখতে যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলের তদবির

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত