Ajker Patrika

চট্টগ্রামে নারীকে লাথি মেরে ফেলে দেওয়া ‘শিবিরের লোক’ আকাশ চৌধুরীকে ধরছে না পুলিশ

 নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৯ মে ২০২৫, ২২: ৫৫
চট্টগ্রামে নারীকে লাথি মেরে ফেলে দেওয়া ‘শিবিরের লোক’ আকাশ চৌধুরীকে ধরছে না পুলিশ

‘শিবিরের লোক’ হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের আলোচিত সেই আকাশ চৌধুরী আবারও আলোচনায় এসেছেন। এবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে প্রকাশ্যে এক নারীকে সজোরে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দিয়েছেন তিনি।

গতকাল বুধবার (২৮ মে) গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কর্মসূচিতে ওই নারীর ওপর হামলার সময় আকাশ নারীসহ দুই ব্যক্তিকে পেছন থেকে লাথি মারেন. যা ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

এর আগে নগরের মুরাদপুরে মাওলানা মুহাম্মদ রইস উদ্দিনকে হত্যার প্রতিবাদে সুন্নিপন্থীদের কর্মসূচিতে পুলিশের সামনে লাঠিপেটা করে ভাইরাল হয়েছিলেন আকাশ।

এতসব অপকর্মের পরও আকাশ রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাঁকে আনা হয়নি আইনের আওতায়। ছাত্র জোটের কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় মামলা হলেও তাঁকে আজ বৃহস্পতিবার (২৯) পর্যন্ত গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, ‘অ্যান্টি শাহবাগ মুভমেন্ট’-এর ব্যানারে একটি সংগঠন ছাত্র জোটের কর্মসূচিতে হামলা চালায়। এতে অন্তত আট থেকে দশজনের মতো আহত হন। তাঁদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর।

গুরুতর আহত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের চট্টগ্রাম নগর সভাপতি রিপা মজুমদার, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক শ্রীকান্ত বিশ্বাস সিকু ও অর্থ সম্পাদক সুদীপ্ত গুহ।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কর্মসূচিতে ‘অ্যান্টি শাহবাগ মুভমেন্ট’ কর্মীদের হামলার পর প্রেসক্লাবসংলগ্ন চট্টগ্রাম ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের সামনে আশ্রয় নেন ছাত্র জোটের নেতা-কর্মীরা। সেখানে একজন পুলিশ সদস্যকেও দেখা গেছে। আকাশ পুলিশের চোখ এড়িয়ে ছাত্র জোট নেতা-কর্মীদের পেছনে যান। সেখানে দাঁড়িয়ে হঠাৎ একজনকে লাথি মারেন। এরপর ঘুরে আবার আরেক নারীকে লাথি মারেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আকাশ চৌধুরী চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার বাসিন্দা। তাঁর বাবার নাম নেছার চৌধুরী। তিনি ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কর্মী। এ ছাড়া আকাশ নগর জামায়াতের আমির শাহজাহান চৌধুরীর কর্মী বলে পরিচিত স্থানীয় লোকদের কাছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরীর সঙ্গে আকাশের একাধিক ছবিও রয়েছে।

‘শিবিরের লোক’ হিসেবে পরিচিত আকাশ চৌধুরীকে দেখা যায় বিভিন্ন কর্মসূচিতে। ছবি: সংগৃহীত
‘শিবিরের লোক’ হিসেবে পরিচিত আকাশ চৌধুরীকে দেখা যায় বিভিন্ন কর্মসূচিতে। ছবি: সংগৃহীত

হামলার বিষয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সহসভাপতি পুষ্পিতা নাথ জানান, গতকাল প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত কর্মসূচিতে পরিকল্পিতভাবে শিবিরের নেতা-কর্মীরা হামলা করেছেন। তিনি আরও জানান, যে নারীকে লাথি মারা হয়েছে, তিনি গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এ্যানি চৌধুরী। যিনি মেরেছেন, তিনি ছাত্রশিবিরের কর্মী।

তবে ঘটনাস্থলে শিবিরের কেউ ছিলেন না বলে বিবৃতি দিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর শাখার শিবিরের সভাপতি মো. তানজীর হোসেন জুয়েল ও সেক্রেটারি মুমিনুল হক। তাঁদের দাবি, শিবিরের কোনো কর্মী এ ধরনের কাজে জড়িত নন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘যে ব্যক্তি হামলার সঙ্গে জড়িত, তিনি ইতিপূর্বে ছাত্রশিবিরের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে সম্পৃক্ত নন। তাঁর ব্যক্তিগত আচরণের দায়ভার ছাত্রশিবির নেবে না। একজন আদর্শবাদী ও শান্তিপূর্ণ ছাত্রসংগঠন হিসেবে আমরা সব সময় নারীর সম্মান ও অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট। নারীর প্রতি সহিংস মনোভাব আমাদের নীতিমালার পরিপন্থী।’

প্রসঙ্গত, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে খালাসের প্রতিবাদে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। কর্মসূচি শুরুর পরপর সেখানে মিছিল নিয়ে আসে শাহবাগবিরোধী ঐক্য। দুই পক্ষ মুখোমুখি হলে তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। এ সময় শাহবাগবিরোধী ঐক্যের লোকজন ছাত্র জোটের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালান।

এ হামলার সময় ঘটনাস্থল থেকে দুজনকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। তবে পুলিশ তাঁদের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করেনি। এরপর তাঁদের মুক্তির দাবিতে রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগরের কোতোয়ালি থানার সামনে অবস্থান নেন শাহবাগবিরোধী ঐক্যের নেতা-কর্মীরা। রাত ১১টা পর্যন্ত তাঁরা সেখানে অবস্থান করেন। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে চলে যান।

‘শিবিরের লোক’ হিসেবে পরিচিত আকাশ চৌধুরীকে দেখা যায় বিভিন্ন কর্মসূচিতে। ছবি: সংগৃহীত
‘শিবিরের লোক’ হিসেবে পরিচিত আকাশ চৌধুরীকে দেখা যায় বিভিন্ন কর্মসূচিতে। ছবি: সংগৃহীত

এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল করিম জানান, হামলার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। দুজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। যেহেতু মামলা হয়েছে, বাকিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিএমইউজে) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র জোটের নেতা-কর্মীরা পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। লিখিত বক্তব্যে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এ্যানি চৌধুরী বলেন, গত কয়েক দিনে দেশের বিচারব্যবস্থা, গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর একের পর এক আঘাত এসেছে, যা উদ্বেগজনক ও লজ্জাজনক।

চট্টগ্রাম-আকাশ-১

তিনি বলেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এ টি এম আজহারুল ইসলামকে ত্রুটিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় খালাস দেওয়ার প্রতিবাদে ২৭ মে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত জোটের শান্তিপূর্ণ মিছিলে ছাত্রশিবির দফায় দফায় হামলা চালায় বলে অভিযোগ করা হয়। এর প্রতিবাদে পরদিন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে একই দাবিতে জোটের পক্ষ থেকে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। কিন্তু জামায়াত-শিবিরপন্থী একটি সংঘবদ্ধ দল সমাবেশে হামলা চালায়।

সমাবেশে পুলিশের উপস্থিতিতেই হামলা হয়েছে উল্লেখ করে জোটের নেত্রী আরও বলেন, প্রেসক্লাব চত্বরে উপস্থিত জোটের কর্মীদের ওপর জামায়াত-শিবিরসংশ্লিষ্ট একটি দল পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায়। নেতা-কর্মীদের মারধর করা হয়, ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে আগুনে পোড়ানো হয়, নারী কর্মীদের অকথ্য গালিগালাজ, শারীরিক লাঞ্ছনা ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। তাদের এই হামলায় আহত হন অন্তত ১৫ জন নেতা-কর্মী।

সংবাদ সম্মেলনে হামলাকারী কয়েকজনের নাম প্রকাশ করা হয়। তাঁরা হলেন আবরার হোসাইন রিয়াদ, আকাশ চৌধুরী, তৌকির ও আসফার। তাঁরা জামায়াত ও শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়।

রিপা মজুমদার সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রিপা মজুমদার ছিলেন জুলাই অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামের সমন্বয়ক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত