Ajker Patrika

নদভীর ইন্ধনে ক্যানসার আক্রান্ত ব্যবসায়ীর ইটভাটা দখলের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৭ মে ২০২৩, ২৩: ৪৪
নদভীর ইন্ধনে ক্যানসার আক্রান্ত ব্যবসায়ীর ইটভাটা দখলের অভিযোগ

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় একটি ইটভাটার মালিক মো. কামালউদ্দিন নামের এক ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এই প্রতিষ্ঠান দেখাশোনা করতেন। কয়েক মাস আগে তাঁর কোলন ক্যানসার ধরা পড়ে। অপারেশন হওয়ার পর গত ১৫ দিন ধরে নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন। এই সুযোগে স্থানীয় এমপি আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর ইন্ধনে দিনদুপুরে প্রকাশ্য অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ইটভাটাটি দখলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। 

আজ শনিবার চট্টগ্রাম নগরের একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করে কামালউদ্দিনের স্ত্রী মোর্তজা বেগম এ অভিযোগ করেন। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিকের নেতৃত্বে শাহ মজিদিয়া ব্রিকস (এসএমবি) নামের ওই ইটভাটায় লুটপাট ও ভাঙচুর হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। 

সংবাদ সম্মেলনে মোর্তজা বেগম বলেন, ‘‘আমার স্বামী মো. কামালউদ্দিন একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। সম্প্রতি তাঁর ক্যানসার ধরা পড়ে। তিনি এখন চট্টগ্রাম নগরীর একটি হাসপাতালে অপারেশন পরবর্তী চিকিৎসাধীন আছেন। গত ১৬ মে থেকে তিনি মুমূর্ষু অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। এই সুযোগে স্থানীয় একটি চক্র আমার স্বামীর অংশীদারি প্রতিষ্ঠান এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলায় অবস্থিত শাহ মজিদিয়া ব্রিকস (এসএমবি) দখলের চেষ্টা শুরু করে। আর এতে সরাসরি সহযোগিতা করছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আবু রেজা নদভী। 

‘ইটভাটাটি দখল করার জন্য এমপি নদভীর ইশারায় আমার অসুস্থ স্বামীসহ ১৪ জনকে আসামি করে গত ২৩ মে একটি ভুয়া চাঁদাবাজি মামলা করা হয়েছে। এই সুযোগে একই দিন বেলা ২টার দিকে আমার স্বামীর অংশীদারি প্রতিষ্ঠান এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলায় অবস্থিত শাহ মজিদিয়া ব্রিকস (এসএমবি) দখল ও লুটপাট শুরু করে একদল অস্ত্রধারী। মারণাস্ত্র ঠেকিয়ে আমার স্বামীর নিয়োগকৃত কর্মচারীদের ইটভাটা ছাড়তে বাধ্য করে এবং অস্ত্রের মুখে কয়েকজনকে জিম্মি করে ইট, ৫ লাখ টাকা ও হিসাবের খাতাপত্র নিয়ে যায়। এতে নেতৃত্ব দেন এওচিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিক।’ 

‘সেই ২৩ তারিখ থেকে আজ ২৭ তারিখ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে লুটপাট চলছে। প্রতিদিন ব্রিক ফিল্ড থেকে ৩০-৪০ গাড়ি ইট নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই পর্যন্ত যা ইট নিয়ে গেছে তার আর্থিক মূল্য প্রায় পঞ্চাশ লাখ টাকা। আমাদের একজন কর্মচারী ইসহাক ও একজন ভূমি মালিক সৈয়দুল হক ঘটনাস্থলে গেলে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। এমনকি সৈয়দুল হকের বাড়িতেও হামলা করেছে। এই বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে স্থানীয় থানা ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে প্রতিকার চেয়ে বারবার যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু কোনো পক্ষই আমাদের ডাকে সাড়া না দেওয়ায় অসহায় হয়ে পড়েছি। তাই বাধা হয়ে এই সাংবাদিক সম্মেলন করছি। প্রশাসনের এই নীরবতা রহস্যজনক বলে আমার কাছে মনে। হয়। একই সঙ্গে আমার আশঙ্কা করছি, সময়ক্ষেপণ হলে ভাটার সব ইট নিয়ে যাবে।’ 

লিখিত বক্তব্যে মোর্তজা বেগম আরও বলেন, ‘এমপি নদভী সাহেবের প্রত্যক্ষ ছত্রচ্ছায়ায় আমাদের এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। যে সব সন্ত্রাসীরা ব্রিক ফিল্ড লুটপাট করে যাচ্ছে তাদের অনেক ভিডিওচিত্র আমাদের হাতে আছে। আমরা ভিডিওতে দেখতে পাই তারা সবাই একাধিক হত্যা, খুন, ধর্ষণ অপহরণ, নাশকতার মামলার আসামি। তাদের সবার হাতে অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। এমপির আশকারা পেয়ে এই সন্ত্রাসীরা ধরাকে সরা জ্ঞান করছে।’

‘এই সন্ত্রাসীরাই গত ঈদুল ফিতরের পরদিন ৪ বছরের শিশু রাফিকে গুলিবিদ্ধ করে গুরুতর আহত করে। এত কিছুর পরও এমপির প্রভাবে পুলিশ প্রশাসন তটস্থ ও নীরব দর্শক এখন। ব্রিক ফিল্ডে মজুত থাকা ইট তারা ট্রাকযোগে বোঝাই করে লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। আজকে যখন সাংবাদিক সম্মেলন চলছে তখনো পর্যন্ত উক্ত ব্রিক ফিল্ড এলাকায় সন্ত্রাসীরা অবস্থান করছে। এই লুটপাটের সমস্ত ঘটনার নেতৃত্ব দিয়েছেন এওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিক।’ 

অভিযুক্ত সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিক আজকের পত্রিকাকে জানান, এ বিষয়ে তাঁর কাছে কোনো উত্তর নেই। 

চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম শফিউল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইটভাটা নিয়ে দুপক্ষ মামলা করেছে। মামলা চলতেছে। মামলার ফলাফল কী হয় সেটি আদালতের মাধ্যমে জানা যাবে। এ ছাড়া এমপি (নদভী) সাহেব নাকি সমাধান করছে।’

এমপি কী আদালত কি না, বা তাঁর বিচার করার ক্ষমতা আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এমপি (নদভী) বিচার ভেঙে দিয়েছেন। তিনি বিচার করতে পারেন কি না, সেটি এমপি সাহেবের বিষয়।’ 

সার্বিক বিষয়ে জানতে এমপি আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এমপির কাজ জনগণকে সহযোগিতা করা। এই ইটভাটার প্রকৃত মালিক বাঁশখালীর একজন। যিনি আমার কাছে ২০ বার এসেছেন, সাহায্য চেয়েছেন। আমি দুপক্ষের কাগজপত্র দেখে, সমাধান করে দিয়েছি। এখন এটির মালিক যিনি, তিনিই ইটভাটাটি বুঝে নিচ্ছেন। এখানে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’

এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আজ থেকে ১০ মাস আগে ওই ইটভাটা শামসু এবং আবু সালেহ দখল করে নিয়েছিল। তাঁদের সহযোগিতা করেছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের এক লোক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদির ওপর হামলাকারীরা সীমান্ত দিয়ে পালিয়েছে কি না—তা শতভাগ নিশ্চিত নয় বিজিবি

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান । ছবি: আজকের পত্রিকা
বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান । ছবি: আজকের পত্রিকা

বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, ঢাকায় শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলি বর্ষণকারী ব্যক্তিরা ময়মনসিংহ সীমান্ত ব্যবহার করে ভারতে পালিয়েছে কি না—তা এখনো শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।

সোমবার ময়মনসিংহ নগরীর খাগডহর বিজিবি ক্যাম্পে তিনি আরও জানান, শুক্রবার ৯টার মধ্যে বিজিবি সদর দপ্তরের নির্দেশনায় সম্ভাব্য পাচারের রুটগুলো চিহ্নিত করে টহল এবং চেকপোস্ট বসানো হয় সীমান্তের অধিকাংশ স্থানে। পরদিন অর্থাৎ শনিবারে পুলিশ এবং বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ অপারেশনের প্ল্যান করা হয়। ঢাকা থেকে আগত পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বিজিবি ময়মনসিংহ সেক্টর কমান্ডারের নিয়মিত যোগাযোগ এবং অপারেশন সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হয়।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আলোচনায় দুটি স্থানে একসঙ্গে অপারেশনের প্ল্যান করা হয়। সন্দেহভাজন হিসেবে শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে অবস্থানরত ফিলিপ স্নালকে আটকের পরিকল্পনা করা হয়। পুলিশের আরেকটি টিম হালুয়াঘাট এলাকায় অপারেশনের প্ল্যান করে। হালুয়াঘাটে অপারেশনের বিষয়ে বিজিবির সোর্স এবং অন্যান্য বিষয়ে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করেছে। অপর দিকে নালিতাবাড়ীর বারোমারি এলাকায় অপারেশন পরিচালিত হয় বিজিবির নেতৃত্বে এবং ঢাকা হতে আগত ও হালুয়াঘাট থানার পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে। কিন্তু ফিলিপকে পাওয়া যায়নি। তবে তার স্ত্রী ডেলটা চিরান, শ্বশুর ইয়ারসন রংডি এবং মানব পাচারকারী লুইস লেংমিঞ্জাকে আটক করা হয়। তাদের বাড়ি থেকে একটি মোটরসাইকেলও উদ্ধার করা হয়।’

তাঁদের পরিবারের তিনজনসহ এ পর্যন্ত বিজিবি চারজনকে আটক করেছে। এঁদের মধ্যে সোমবার সকালে মানব পাচারকারী বেঞ্জামিন চিরামকে আটক করা হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরগুনায় স্বামীকে গলা টিপে হত্যা, স্ত্রী ও পরকীয়া প্রেমিক আটক

বরগুনা প্রতিনিধি
আটক পরকীয়া প্রেমিক আলামিন। ছবি: সংগৃহীত
আটক পরকীয়া প্রেমিক আলামিন। ছবি: সংগৃহীত

বরগুনার বামনা উপজেলায় পরকীয়া প্রেমের জেরে এক প্রবাসফেরত স্বামীকে গলা টিপে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহত ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ আব্দুল জলিল (৪৫)। তিনি উপজেলার রামনা ইউনিয়নের ঘোপখালী গ্রামের বাসিন্দা।

এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৫) ও তাঁর পরকীয়া প্রেমিক আলামিনকে (৩০) আটক করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দুজনই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে আব্দুল জলিলের নিজ বাড়িতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

স্থানীয় ও থানা সূত্রে জানা যায়, প্রায় পাঁচ বছর ধরে একই এলাকার আবু খতিবের ছেলে আলামিন নিহতের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে নাজমা বেগমের পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রায় ১৫ দিন আগে প্রবাস থেকে বাড়িতে ফিরে স্ত্রীর সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারেন আব্দুল জলিল।

অভিযোগ রয়েছে, রোববার বিকেলে স্ত্রী ও ওই গৃহকর্মী মিলে ঘুমন্ত অবস্থায় আব্দুল জলিলকে গলা টিপে হত্যা করেন।

হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করে বামনা থানায় নিয়ে যায়। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নিহতের স্ত্রী ও তাঁর পরকীয়া প্রেমিককে তাৎক্ষণিকভাবে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা দুজনই হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মামলা দায়েরের পর আসামিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মহান বিজয় দিবসে মেট্রোরেল সাময়িক বন্ধ থাকবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আগামী ১৬ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) মেট্রোরেল চলাচল সাময়িক বন্ধ থাকবে। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় প্যারাজাম্প অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে প্যারাট্রুপারদের নিরাপত্তার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ডিএমটিসিএল ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছে, আগামী ১৬ ডিসেম্বর দুপুর ১১টা ৫০ মিনিট হতে ১২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত, অর্থাৎ মোট ৪০ মিনিটের জন্য মেট্রোরেল চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।

ডিএমটিসিএল সাময়িক অসুবিধার জন্য যাত্রীসাধারণের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে। যাত্রীদের এই সময়সূচি মেনে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইডেনের সেই ছাত্রীকে বিয়ের ছয়মাস পর নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জশিট

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
নোবেল। ছবি: সংগৃহীত
নোবেল। ছবি: সংগৃহীত

বাসায় আটকে রেখে ইডেন কলেজের এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় গায়ক নোবেলের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। গত ২৯ নভেম্বর ডেমরা থানার উপপরিদর্শক এসআই মুরাদ হোসেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন প্রসিকিউশন বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) ইলামনি আজ সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, আগামী ২৮ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্রটি উপস্থাপন করা হবে। পরে এ সংক্রান্ত মামলা বিচারের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে।

নোবেলের আইনজীবী মোসতাক আহমেদ জানান, এই ধর্ষণ মামলার বাদীকে বিয়ে করেছেন নোবেল। তাঁরা সংসার করছেন।

গত ১৯ মে নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করেন ইডেন কলেজের ওই ছাত্রী। নোবেলকে গ্রেপ্তার করার পর কারাগারে পাঠানো হলে বিয়ের শর্তে তিনি জামিন পান। ১৯ জুন ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বসে ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে নোবেল ওই ছাত্রীকে বিয়ে করেন।

এই মামলায় অভিযোগ করা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ছাত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয় নোবেলের। এরপর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর নোবেল তাঁর স্টুডিও দেখানোর কথা বলে ছাত্রীকে ডেমরার বাসায় নিয়ে যান। সেখানে আটকে রাখেন, মোবাইল ফোন ও টাকা কেড়ে নেন। এরপর ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ করেন। কথামতো না চললে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ও দেখান।

অভিযোগে বলা হয়, ওই তরুণীকে ছয় মাস ধরে ডেমরার ওই বাসায় আটকে রাখা হয়, মারধর করা হতো প্রায়ই। দু-তিন জনের সহায়তায় বাদীকে চুল ধরে টেনেহিঁচড়ে একটি কক্ষে আটকে রাখেন নোবেল। ওই ঘটনার ভিডিও ছড়ালে বাদীর বাবা-মা তাঁকে চিনতে পারেন। এরপর পরিবার পুলিশের সহায়তায় তাঁকে ১৯ মে উদ্ধার করে এবং পুলিশ নোবেলকে গ্রেপ্তার করে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, নোবেল বাদীকে আটক রেখে ধর্ষণ করেন এবং ধর্ষণের ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে রাখেন। বাসায় না থাকলে ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। নোবেল নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বিভিন্ন সময়ে তাঁকে মারপিট করেছেন।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, বাদীর অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। আসামি নোবেল জামিনে আছেন।

তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে আরও বলেছেন, বাদীকে মারধর ও ধর্ষণে আসামিকে আরও কয়েকজন সহযোগিতা করেছেন। তবে তাঁদের নাম-ঠিকানা উদ্‌ঘাটন করা সম্ভব হয়নি। অদূর ভবিষ্যতে তাঁদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করা সম্ভব হলে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

এখন কী হবে:

নোবেলের আইনজীবী বলেছেন, নোবেল মামলার বাদীকে বিয়ে করে সংসার করছেন। তাই এই অভিযোগপত্রে নোবেলের কোনো সমস্যা হবে না। বিচারিক ট্রাইব্যুনালে বাদী আপসনামা দেওয়ার পর মামলা নিষ্পত্তি হবে। খালাস পাবেন নোবেল।

উল্লেখ্য, ভারতের সংগীত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান ‘সা রে গা মা’ দিয়ে পরিচিতি পান এই গায়ক। এর আগে মাদকে আসক্ত হয়ে সংগীত ছেড়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ বিরতির পর আবারও শ্রোতাদের সামনে হাজির হন। সেবার নোবেল জানিয়েছিলেন, তিনি আর কখনো দর্শকদের হতাশ করবেন না। সব অতীত পেছনে ফেলে নিয়মিত গান উপহার দেবেন।

কিন্তু ২০২৩ সালে অগ্রিম টাকা নিয়ে গান গাইতে না যাওয়ায় প্রতারণার অভিযোগে রাজধানীর মতিঝিল থানায় নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা হয়। জানা যায়, ওই বছর ১৬ মে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ হেডকোয়ার্টার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি ব্যাচ ২০১৬-এর অনুষ্ঠানে গান গাইতে গিয়ে ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা অগ্রিম নেওয়ার প্রতারণায় অভিযোগে আটক হয়েছিলেন। সে সময় একদিন রিমান্ডেও ছিলেন এই গায়ক। পরে আপসের মাধ্যমে ওই মামলা থেকে অব্যাহতিও পান নোবেল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত