Ajker Patrika

চাকসু নির্বাচন: ৩৫ বছর পর ছাত্র প্রতিনিধি পাচ্ছে চবি

  • ছাত্র ভোটার ১৬,০৮৪ এবং ছাত্রী ভোটার ১১,৪৩৪।
  • ভোট উপলক্ষে নেওয়া হয়েছে চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা।
সুমন বাইজিদ, চবি
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রগুলোয় নেওয়া হয় ব্যালট বাক্স। ছবি: আজকের পত্রিকা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রগুলোয় নেওয়া হয় ব্যালট বাক্স। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘চাকসু থাকলে নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, পরিবহন ও আবাসন—এসব ইস্যুতে সরাসরি আলোচনার সুযোগ মিলবে। তাই সবাই এই নির্বাচনের অপেক্ষায়।’ কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তানজিলা হক। এটা শুধু তানজিলার কথা নয়। এমন ছাত্র প্রতিনিধি পাওয়ার অপেক্ষায় অনেকেই।

এই প্রতীক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে আজ বুধবার। ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে মোট ৯০৭ প্রার্থী এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে ৪১৫, হল ও একটি হোস্টেল সংসদে ৪৯২ জন। কেন্দ্রীয় সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৮ নারী প্রার্থী এবং ৩৬৬ পুরুষ প্রার্থী। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ২৭ হাজার ৫১৭। এর মধ্যে ছাত্র ভোটার ১৬ হাজার ৮৪ এবং ছাত্রী ভোটার ১১ হাজার ৪৩৪।

কমিশন জানিয়েছে, নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি অনুষদ ভবনের ৬০টি কক্ষে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত হবে ভোট গ্রহণ। ভবনগুলো হলো—ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ, শহীদ হৃদয় তরুয়া ভবন (নতুন কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ), সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ও বিজ্ঞান অনুষদ। প্রতিটি কক্ষে গড়ে ৪০০-৫০০ শিক্ষার্থী ভোট দেবেন। গোপন বুথ ব্যতীত প্রতিটি কক্ষ সিসিটিভি ক্যামেরার আওতাধীন থাকবে। নির্বাচন পরিচালনার জন্য পাঁচ অনুষদ ভবনের ডিনকে রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং বিভাগীয় চেয়ারম্যানদের প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

একজন ভোটার মোট ৪০টি ভোট দেবেন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে ২৬টি ও হল সংসদে ১৪টি। চাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, ব্যালটে ভোট হবে। গণনা হবে ওএমআর পদ্ধতিতে। একজন ভোটারের ৪০টি ভোট দিতে আনুমানিক ১০ মিনিট সময় লাগতে পারে। তবে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। ভোটাররা যত সময় প্রয়োজন মনে করবেন, তত সময় নিয়ে ভোট দিতে পারবেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) গঠিত হয় ১৯৬৬ সালে। শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা, কল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও সামাজিক পরিবেশে ইতিবাচক ভূমিকা রাখাই ছিল এর মূল লক্ষ্য। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯০ সালে। এরপর নানা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক জটিলতায় তিন দশকের বেশি সময় এই নির্বাচন বন্ধ ছিল। সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, চাকসু হবে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের প্ল্যাটফর্ম। এটি কোনো রাজনৈতিক দলের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করবে না, বরং শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন করতে প্রশাসনকে চাপ দেবেন নির্বাচিত প্রতিনিধিরা।

ইংরেজি বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা এত দিন প্রতিনিধি ছাড়াই ছিলাম। এখন অন্তত আমাদের সমস্যাগুলো প্রশাসনের কাছে তুলে ধরার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এটা অনেক বড় বিষয়। প্রতিনিধি যাঁরা নির্বাচিত হবেন, আশা করি তাঁরা শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করবেন।’

এদিকে চাকসু ভোট উপলক্ষে নেওয়া হয়েছে চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা। পুলিশ, বিজিবি, এপিবিএন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম যৌথভাবে বহিরাগতদের প্রবেশ ঠেকাতে কাজ করছে। এ ছাড়া কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী প্রস্তুত থাকবে, যারা প্রয়োজনে তিন মিনিটের মধ্যে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে। পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বাহিনী, বিএনসিসি ও রোভার স্কাউট সদস্যরাও দায়িত্বে থাকবে।

আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি প্রবেশপথে প্রতিদিন টহল দিচ্ছে দুটি করে টহল টিম। বহিরাগতদের প্রবেশেও কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের ক্ষেত্রে আইডি কার্ড বহন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ৫টি ভবনের জন্য আলাদা নিরাপত্তা স্তর নির্ধারণ করা হয়েছে। ভোট গ্রহণের সময় প্রিসাইডিং কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া কোনো নিরাপত্তাকর্মী কাউকে ভবনে প্রবেশ করতে দেবে না। এ ছাড়া ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে অনুমোদনবিহীন কোনো যান চলাচল করতে পারবে না।

ভোট গণনার ব্যাপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, দুই ধাপে হবে ভোট গণনা—একটি ধাপ পরিচালনা করবে ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান এবং অন্যটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল। ভোট গ্রহণ শেষে প্রতিটি কেন্দ্রে তাৎক্ষণিকভাবে গণনা হবে এবং কেন্দ্র থেকে ফল ঘোষণা করা হবে। চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হবে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের অডিটরিয়ামে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতে আত্মহত্যা করা পুলিশকে ‘দুর্নীতিবাজ’ বলে তদন্ত কর্মকর্তারও আত্মহত্যা, রেখে গেলেন তিন পাতার ‘সুইসাইড নোট’

অব্যাহতি চাওয়ার পর মাউশি মহাপরিচালক আজাদ খানকে ওএসডি

‘জুলাই যোদ্ধাকে’ জুলাই ফাউন্ডেশনে পাইপ দিয়ে মারধর, ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ভারতের হারে বাংলাদেশের বিদায়, হামজার হতাশা

এবার দলগুলো পেল চূড়ান্ত জুলাই সনদ ও স্বাক্ষরের আমন্ত্রণপত্র

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত