Ajker Patrika

মামুনের মাথার খুলি ফ্রিজে, ব্যান্ডেজে লেখা ‘হাড় নেই, মাথায় চাপ দিবেন না’

চবি সংবাদদাতা 
আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০: ৩৬
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মামুনের মাথার খুলি খুলে রাখা হয়েছে ফ্রিজে। এখন তাঁর মাথার ব্যান্ডেজে লেখা—‘হাড় নেই, মাথায় চাপ দিবেন না’। ছবি: আজকের পত্রিকা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মামুনের মাথার খুলি খুলে রাখা হয়েছে ফ্রিজে। এখন তাঁর মাথার ব্যান্ডেজে লেখা—‘হাড় নেই, মাথায় চাপ দিবেন না’। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মামুনের ওপর স্থানীয় বাসিন্দাদের নির্মম হামলার পর তাঁর মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। যেখানে তাঁর মাথার খুলি খুলে সংরক্ষিত রাখা হয়েছে ফ্রিজে। তাঁর মাথার ব্যান্ডেজে লেখা রয়েছে—‘হাড় নেই, মাথায় চাপ দিবেন না’।

অন্যদিকে পাঁচ দিনেও জ্ঞান ফেরেনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চতুর্থ বর্ষের আরও এক শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েমের। নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) পড়ে রয়েছেন অচেতন অবস্থায়। বাইরে ছেলের জেগে ওঠার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন বাবা-মা।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মামুনের অবস্থা আশঙ্কামুক্ত। তিনি কথা বলার পাশাপাশি খেতে পারছেন। সায়েমের অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি। এ ছাড়া একই দিনে গুরুতর আহত ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের আরও এক শিক্ষার্থী নাঈমুল ইসলাম ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁর অবস্থার উন্নতি হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মামুন। ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মামুন। ছবি: সংগৃহীত

গত শনি ও রোববার স্থানীয় বাসিন্দাদের হামলায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আনুমানিক, নথিভুক্তসহ ৪২১ জন শিক্ষার্থী আহত হন। যেখানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ছিলেন একাধিক শিক্ষার্থী। এমনকি আইসিইউতে ভর্তি করতে হয়েছিল তিন শিক্ষার্থীকে। এর মধ্যে একজন ঢাকায় ও দুজন চট্টগ্রামের পার্ক ভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

জানা যায়, হামলার সময় ধারালো দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মামুনের মাথার পেছনের অংশে মারাত্মকভাবে আঘাত করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অপারেশনে তাঁর মাথা থেকে ১৩ টুকরো হাড় বের করা হয়েছে। তাঁর খুলি এখন ফ্রিজে সংরক্ষিত আছে। সুস্থ হয়ে উঠলে দুই মাস পর মামুনের মাথার খুলি লাগাতে হবে বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। এ ছাড়া তাঁর নাকে ও মুখে অনেক রক্তক্ষরণের পাশাপাশি কানের পর্দা ফেটে যায়।

অন্যদিকে সায়েমের মাথার পেছনে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের ফলে ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এখনো আশঙ্কামুক্ত নন সায়েম।

মামুনের সহপাঠী রাসেল রানা বলেন, তাঁর অবস্থা বর্তমানে উন্নতির দিকে যাচ্ছে। কেবিনের শিফট করা হয়েছে। ইশারায় কথা বলার চেষ্টা করছেন। তার মাথার হাড় ভেঙে ভেতরে টুকরা টুকরা হয়ে গিয়েছিল। ভেতরে রক্ত জমাট বেঁধেছিল। এ জন্য মাথার পেছনে ব্রেনের অংশে অপারেশন করা হয়েছে।

সায়েমের সহপাঠী আশিকুর রহমান বলেন, ‘আমি পাঁচ দিন ধরে এখানে রয়েছি। সায়েমের কোনো উন্নতি হয়নি। চিকিৎসকেরা আগামীকাল আবার সিটি স্ক্যান করাবেন। এরপর তার আরও একটি অপারেশন করতে হবে কি না জানাবেন। সায়েমের বাবা-মা এখানে আছেন। তার অবস্থা দেখে তাঁরা খুবই কষ্ট পাচ্ছেন।’

চবির সমাজতত্ত্ব বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী জানান, ৩১ আগস্ট সেদিন প্রায় চার ঘণ্টা ধরে মামুনের অপারেশন করা হয়েছে। অপারেশনে মামুনের মাথা থেকে ১৩ টুকরো হাড় বের করা হয়েছে। তাঁর খুলি এখন ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। তাঁকে ধারালো দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার ফলে মস্তিষ্কের ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়েছে।

ড. আনোয়ার হোসেন আরও জানান, মামুন সুস্থ হলে দুই মাস পর তাঁর খুলি লাগাতে হবে বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানিয়েছেন। তাঁর অবস্থা এখন কিছুটা ভালো। তিনি এখন কেবিনে রয়েছেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েম। ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েম। ছবি: সংগৃহীত

পার্ক ভিউ হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) জিয়াউদ্দিন জানান, মামুন মোটামুটি ভালো আছেন। তাঁর সেন্সও ফিরে আসছে। এখন কেবিনে তাঁর চিকিৎসা চলছে। মাথার ব্রেনের অংশে অপারেশন করায় আপাতত খুলি খুলে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এই অবস্থায় তাঁর মাথায় হাড় নেই। এক-দুই মাস পর অথবা অবস্থা অনুযায়ী খুলি আবার লাগানো হবে।

এ ছাড়া সায়েমের অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনকই বলা যায়। তাঁর জ্ঞানের লেভেল ৩-এ চলে গিয়েছিল। পরে ৩ থেকে ৫-৬, এরপর গতকাল বুধবার পর্যন্ত ৮-৯-এ ছিল। জ্ঞানের লেভেল সাধারণত আমাদের ১৫ থাকে। সিটি স্ক্যানে তাঁর হালকা হালকা রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। গতকাল মেডিকেল বোর্ড বসেছিল। এখন আবার অপারেশন করতে হতে পারে, নয়তো নরমাল চিকিৎসা যেভাবে চলছে, এভাবে চালিয়ে অপেক্ষা করতে হবে।

উল্লেখ্য, গত শনিবার রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকার একটি ঘটনা থেকে সহিংসতার সূত্রপাত হয়। একজন ছাত্রী ভাড়া বাসায় দেরিতে ঢুকতে চাইলে দারোয়ান তাঁর গায়ে হাত তোলেন। প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন এবং তা গ্রামবাসীর সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ আহত হন প্রায় ৪০০ জন। এখনো তিন শিক্ষার্থী জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত