মো. আখতারুজ্জামান, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা)
শাহিন আলম। বয়স ৩২ বছর। ফেনী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ড্রাফটম্যান। ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে চাকরিতে যোগ দেন ২১,৪৭০ টাকা বেতন স্কেলে। এই চাকরি যেন শাহিনের জন্য আলাদিনের চেরাগ হিসেবে এসেছে। এরপর ৬ বছরে তিনি শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, অনিয়ম-দুর্নীতি করে এই কয়েক বছরে শাহিন বিপুল অর্থ উপার্জন করেছেন। এসব অভিযোগে এই ছয় বছরে তাঁকে অন্তত ছয় দফায় ছয় জেলায় বদলি করা হয়। এ ছাড়া বেনামে ঠিকাদারি লাইসেন্স করে তিনি জনস্বাস্থ্যের কোটি কোটি টাকার কাজ ভাগিয়ে নিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
শাহিন আলম কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের শুভপুর ইউনিয়নের তেলিহাটি গ্রামের জয়নাল আবেদীন ও রাবেয়া দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান। গত ২৪ মে শাহিন আলমের তেলিহাটি গ্রামের বাড়িতে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, জয়নাল আবেদীন স্থানীয় কাদৈর বাজারে বাদাম বিক্রি করে সংসার চালাতেন। ফসলি কোনো জমি ছিল না তাঁদের। শাহিন আলম ডিপ্লোমা প্রকৌশলী। ২০১৮ সালে শাহিন আলম তৎকালীন রেলপথমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুল হকের সুপারিশে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ড্রাফটম্যান হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। শাহিন আলমের বড় ভাই রফিক ও ছোট ভাই সোহেল রানা সৌদিপ্রবাসী ছিলেন।
শাহিন আলম প্রথম সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন কুমিল্লার বরুড়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য দপ্তরে। চাকরি হওয়ার দু-এক বছরের মাথায় তিনি ৬ শতক জমিন কিনে ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকায় একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি তৈরি করেন। বরুড়ায় নানা অনিয়মের অভিযোগের মুখে শাহিনকে ২০১৯ সালের মার্চে জেলার লাকসাম উপজেলায় বদলি করা হয়। তারপর তাঁর অনিয়ম-দুর্নীতি যেন বেড়ে যায়। একই গ্রামের বাসিন্দা আবু তাহের বলেন, জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যোগদানের পর শাহিন হঠাৎ কোটিপতি হয়ে যান। নিয়মিত অফিসে যান না তিনি। আর ঠিকাদারি ব্যবসাকে আরও সম্প্রসারণ করতে ছোট ভাইয়ের নামে রানা হাইটেক বিল্ডার্স ও এক নিকটাত্মীয়ের নামে শম্পা এন্টারপ্রাইজ নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স তৈরি করেন। এই লাইসেন্সগুলো দিয়ে শাহিন কোটি কোটি টাকার কাজ ভাগিয়ে নেন।
২৫ মে লাকসাম গিয়ে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৪ মার্চ শাহিন আলম এখানে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক এলজিইডি মন্ত্রী তাজুল ইসলামের শ্যালক আওয়ামী লীগ নেতা মোহব্বত আলীর সঙ্গে সিন্ডিকেট করে শুরু করেন নানা অনিয়ম। মোহব্বতের সহযোগিতায় জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোটি কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ ভাগিয়ে নেন তিনি।
এ ব্যাপারে কথা বলার চেষ্টা করেও মোহব্বত আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা হারানোর পর তিনি আত্মগোপন করেছেন বলে জানা গেছে।
লাকসাম জনস্বাস্থ্যের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শাহিন আলম এই কার্যালয় থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৩৬২টি গভীর নলকূপ স্থাপনে ভুয়া বিল-ভাউচার করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এ ছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে সারা দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহের ৩৮টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন গভীর নলকূপ না বসিয়ে ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ প্রকাশ্যে চলে আসায় শাহিন আলমকে ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর শাস্তি হিসেবে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয় পঞ্চগড় জেলা কার্যালয়ে।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শাহিন আলম জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের একজন ড্রাফটম্যান, যাকে বলা হয় নকশাকারক। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ২০২১ সালে চৌদ্দগ্রামে ১৮ কোটি ৯০ লাখ টাকায় ১৯৭৫ মিটারের একটি ড্রেনের কাজ তিনি তৎকালীন রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হকের প্রভাব খাটিয়ে ভাগিয়ে নেন। কাজগুলো নিম্নমানের হওয়ায় আমরা কয়েকবার বাধা দিয়েছিলাম। কিন্তু সরকারি প্রভাব খাটিয়ে তিনি বিলের সিংহভাগ টাকা উত্তোলন করে কাজ শেষ না করেই পালিয়ে যান।’
শাহিন আলমের যত সম্পদ
শাহিন আলমের সম্পত্তির বেশ কিছু দলিলসহ প্রমাণাধি এই প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, শাহিন ২০২০ সালের ১৮ মার্চ ১৯৭২ নম্বর দলিলে শুভপুরের তেলিহাটি মৌজায় ১০ শতক জমি ক্রয় করেন। যার বাজারমূল্য ৩০ লাখ টাকা। ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট একই মৌজায় ১৫৫৮ নম্বর দলিলে আরও ১০ শতক জমি কেনেন। যার মূল্য ৩০ লাখ টাকা। একই সালের একই তারিখে একই মৌজায় ১৫৫৫ নম্বর দলিলে ১৬ শতক জমি কেনেন। যার বাজারমূল্য ৪৮ লাখ টাকা। ২০২৩ সালের ২৭ আগস্ট জেলার চান্দিনা উপজেলার থানগাঁও মৌজায় ৭৩৭৫ নম্বর দলিলে ৯.৩৪ শতক ভূমি ক্রয় করেন। যার বাজারমূল্য ১ কোটি টাকার বেশি। চান্দিনা উপজেলার বেলাশর মৌজায় ২০২৩ সালের ২৭ আগস্ট দলিল নম্বর ৭৩৭৪ ও ৭৯৭৪-এর মাধ্যমে ২৫.১৪ অযুতাংশ জমি ক্রয় করেন। যার বাজারমূল্য ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। স্থানীয় কাদৈর বাজারে আরও ৪০ শতক ভূমি ক্রয় করেন। যার বাজারমূল্য ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
এ ছাড়া জেলা শহরের বাগিচাগাঁও এলাকায় ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা মূল্যের ২ হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। ঢাকার খিলগাঁওয়ে তাঁর কোটি টাকা মূল্যের আরও একটি ফ্ল্যাট রয়েছে বলে জানা গেছে। এসব সম্পত্তি শাহিন আলম নিজ নামে কিনেছেন।
আজকের পত্রিকার অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, শাহিন আলম ২০২৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ইফাদ মোটরস থেকে ৫টি বিলাসবহুল স্লিপার কোচ ক্রয় করেন। গাড়িগুলো বর্তমানে এশিয়ান ট্রান্সপোর্টের অধীনে ঢাকার আরামবাগ থেকে কক্সবাজার চলাচল করে। প্রতিটি গাড়ির মূল্য ২ কোটি টাকারও বেশি। ঢাকার মিরপুর বিআরটিএ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গাড়িগুলো ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর রেজিস্ট্রেশন নম্বর পেয়ে সড়কে চলাচল শুরু করে।
এ ছাড়া অন্য ট্রান্সপোর্টের অধীনে আরও ৩টি স্লিপার কোচ রয়েছে শাহিনের। এগুলো ছোট ভাই সোহেল রানার নামে কাগজপত্র তৈরি করা হয়েছে। তা ছাড়া পণ্য পরিবহনের জন্য ১১টি ডাম্প ট্রাক রয়েছে; যার বাজারমূল্য ১০ কোটি টাকা। ১৫ কোটি টাকার ১১টি খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) রয়েছে। ৪৫ লাখ টাকা মূল্যের টয়োটা প্রিমিও গাড়িতে চলাফেরা করেন শাহিন আলম। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে শাহিনের কয়েক কোটি টাকার এফডিআর করা রয়েছে বলে জানা গেছে। অভিযোগ উঠেছে দুবাইতেও তাঁর ব্যবসা রয়েছে।
শাহিন আলমের অবৈধ সম্পদের বিষয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ২০২৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর আরমান মিয়া নামের এক ব্যক্তি দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ২১ জুলাই যাত্রাবাড়ীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে হত্যাচেষ্টার একটি মামলার আসামি শাহিন আলম।
ফেনী জনস্বাস্থ্য বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিউল হক বলেন, শাহিন ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বদলি হয়ে ফেনীতে ড্রাফটম্যান হিসেবে যোগ দেন। বিভিন্ন আর্থিক কেলেঙ্কারিতে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। সেই মামলার তদন্ত চলছে।
বিপুল সম্পদ ও অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে শাহিন আলমের বক্তব্য জানার জন্য তাঁর মোবাইল ফোনে গত রোববার বিকেলে কল করা হয়। শাহিন এই প্রতিবেদককে কিছু টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করেন। প্রতিবেদক শাহিনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে তিনি রেগে গিয়ে বলেন, ‘আপনার মন যা চায় তা আমার বিরুদ্ধে লিখে দেন।’
শাহিন আলম। বয়স ৩২ বছর। ফেনী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ড্রাফটম্যান। ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে চাকরিতে যোগ দেন ২১,৪৭০ টাকা বেতন স্কেলে। এই চাকরি যেন শাহিনের জন্য আলাদিনের চেরাগ হিসেবে এসেছে। এরপর ৬ বছরে তিনি শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, অনিয়ম-দুর্নীতি করে এই কয়েক বছরে শাহিন বিপুল অর্থ উপার্জন করেছেন। এসব অভিযোগে এই ছয় বছরে তাঁকে অন্তত ছয় দফায় ছয় জেলায় বদলি করা হয়। এ ছাড়া বেনামে ঠিকাদারি লাইসেন্স করে তিনি জনস্বাস্থ্যের কোটি কোটি টাকার কাজ ভাগিয়ে নিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
শাহিন আলম কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের শুভপুর ইউনিয়নের তেলিহাটি গ্রামের জয়নাল আবেদীন ও রাবেয়া দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান। গত ২৪ মে শাহিন আলমের তেলিহাটি গ্রামের বাড়িতে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, জয়নাল আবেদীন স্থানীয় কাদৈর বাজারে বাদাম বিক্রি করে সংসার চালাতেন। ফসলি কোনো জমি ছিল না তাঁদের। শাহিন আলম ডিপ্লোমা প্রকৌশলী। ২০১৮ সালে শাহিন আলম তৎকালীন রেলপথমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুল হকের সুপারিশে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ড্রাফটম্যান হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। শাহিন আলমের বড় ভাই রফিক ও ছোট ভাই সোহেল রানা সৌদিপ্রবাসী ছিলেন।
শাহিন আলম প্রথম সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন কুমিল্লার বরুড়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য দপ্তরে। চাকরি হওয়ার দু-এক বছরের মাথায় তিনি ৬ শতক জমিন কিনে ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকায় একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি তৈরি করেন। বরুড়ায় নানা অনিয়মের অভিযোগের মুখে শাহিনকে ২০১৯ সালের মার্চে জেলার লাকসাম উপজেলায় বদলি করা হয়। তারপর তাঁর অনিয়ম-দুর্নীতি যেন বেড়ে যায়। একই গ্রামের বাসিন্দা আবু তাহের বলেন, জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যোগদানের পর শাহিন হঠাৎ কোটিপতি হয়ে যান। নিয়মিত অফিসে যান না তিনি। আর ঠিকাদারি ব্যবসাকে আরও সম্প্রসারণ করতে ছোট ভাইয়ের নামে রানা হাইটেক বিল্ডার্স ও এক নিকটাত্মীয়ের নামে শম্পা এন্টারপ্রাইজ নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স তৈরি করেন। এই লাইসেন্সগুলো দিয়ে শাহিন কোটি কোটি টাকার কাজ ভাগিয়ে নেন।
২৫ মে লাকসাম গিয়ে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৪ মার্চ শাহিন আলম এখানে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক এলজিইডি মন্ত্রী তাজুল ইসলামের শ্যালক আওয়ামী লীগ নেতা মোহব্বত আলীর সঙ্গে সিন্ডিকেট করে শুরু করেন নানা অনিয়ম। মোহব্বতের সহযোগিতায় জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোটি কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ ভাগিয়ে নেন তিনি।
এ ব্যাপারে কথা বলার চেষ্টা করেও মোহব্বত আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা হারানোর পর তিনি আত্মগোপন করেছেন বলে জানা গেছে।
লাকসাম জনস্বাস্থ্যের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শাহিন আলম এই কার্যালয় থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৩৬২টি গভীর নলকূপ স্থাপনে ভুয়া বিল-ভাউচার করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এ ছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে সারা দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহের ৩৮টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন গভীর নলকূপ না বসিয়ে ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ প্রকাশ্যে চলে আসায় শাহিন আলমকে ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর শাস্তি হিসেবে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয় পঞ্চগড় জেলা কার্যালয়ে।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শাহিন আলম জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের একজন ড্রাফটম্যান, যাকে বলা হয় নকশাকারক। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ২০২১ সালে চৌদ্দগ্রামে ১৮ কোটি ৯০ লাখ টাকায় ১৯৭৫ মিটারের একটি ড্রেনের কাজ তিনি তৎকালীন রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হকের প্রভাব খাটিয়ে ভাগিয়ে নেন। কাজগুলো নিম্নমানের হওয়ায় আমরা কয়েকবার বাধা দিয়েছিলাম। কিন্তু সরকারি প্রভাব খাটিয়ে তিনি বিলের সিংহভাগ টাকা উত্তোলন করে কাজ শেষ না করেই পালিয়ে যান।’
শাহিন আলমের যত সম্পদ
শাহিন আলমের সম্পত্তির বেশ কিছু দলিলসহ প্রমাণাধি এই প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, শাহিন ২০২০ সালের ১৮ মার্চ ১৯৭২ নম্বর দলিলে শুভপুরের তেলিহাটি মৌজায় ১০ শতক জমি ক্রয় করেন। যার বাজারমূল্য ৩০ লাখ টাকা। ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট একই মৌজায় ১৫৫৮ নম্বর দলিলে আরও ১০ শতক জমি কেনেন। যার মূল্য ৩০ লাখ টাকা। একই সালের একই তারিখে একই মৌজায় ১৫৫৫ নম্বর দলিলে ১৬ শতক জমি কেনেন। যার বাজারমূল্য ৪৮ লাখ টাকা। ২০২৩ সালের ২৭ আগস্ট জেলার চান্দিনা উপজেলার থানগাঁও মৌজায় ৭৩৭৫ নম্বর দলিলে ৯.৩৪ শতক ভূমি ক্রয় করেন। যার বাজারমূল্য ১ কোটি টাকার বেশি। চান্দিনা উপজেলার বেলাশর মৌজায় ২০২৩ সালের ২৭ আগস্ট দলিল নম্বর ৭৩৭৪ ও ৭৯৭৪-এর মাধ্যমে ২৫.১৪ অযুতাংশ জমি ক্রয় করেন। যার বাজারমূল্য ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। স্থানীয় কাদৈর বাজারে আরও ৪০ শতক ভূমি ক্রয় করেন। যার বাজারমূল্য ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
এ ছাড়া জেলা শহরের বাগিচাগাঁও এলাকায় ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা মূল্যের ২ হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। ঢাকার খিলগাঁওয়ে তাঁর কোটি টাকা মূল্যের আরও একটি ফ্ল্যাট রয়েছে বলে জানা গেছে। এসব সম্পত্তি শাহিন আলম নিজ নামে কিনেছেন।
আজকের পত্রিকার অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, শাহিন আলম ২০২৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ইফাদ মোটরস থেকে ৫টি বিলাসবহুল স্লিপার কোচ ক্রয় করেন। গাড়িগুলো বর্তমানে এশিয়ান ট্রান্সপোর্টের অধীনে ঢাকার আরামবাগ থেকে কক্সবাজার চলাচল করে। প্রতিটি গাড়ির মূল্য ২ কোটি টাকারও বেশি। ঢাকার মিরপুর বিআরটিএ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গাড়িগুলো ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর রেজিস্ট্রেশন নম্বর পেয়ে সড়কে চলাচল শুরু করে।
এ ছাড়া অন্য ট্রান্সপোর্টের অধীনে আরও ৩টি স্লিপার কোচ রয়েছে শাহিনের। এগুলো ছোট ভাই সোহেল রানার নামে কাগজপত্র তৈরি করা হয়েছে। তা ছাড়া পণ্য পরিবহনের জন্য ১১টি ডাম্প ট্রাক রয়েছে; যার বাজারমূল্য ১০ কোটি টাকা। ১৫ কোটি টাকার ১১টি খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) রয়েছে। ৪৫ লাখ টাকা মূল্যের টয়োটা প্রিমিও গাড়িতে চলাফেরা করেন শাহিন আলম। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে শাহিনের কয়েক কোটি টাকার এফডিআর করা রয়েছে বলে জানা গেছে। অভিযোগ উঠেছে দুবাইতেও তাঁর ব্যবসা রয়েছে।
শাহিন আলমের অবৈধ সম্পদের বিষয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ২০২৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর আরমান মিয়া নামের এক ব্যক্তি দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ২১ জুলাই যাত্রাবাড়ীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে হত্যাচেষ্টার একটি মামলার আসামি শাহিন আলম।
ফেনী জনস্বাস্থ্য বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিউল হক বলেন, শাহিন ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বদলি হয়ে ফেনীতে ড্রাফটম্যান হিসেবে যোগ দেন। বিভিন্ন আর্থিক কেলেঙ্কারিতে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। সেই মামলার তদন্ত চলছে।
বিপুল সম্পদ ও অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে শাহিন আলমের বক্তব্য জানার জন্য তাঁর মোবাইল ফোনে গত রোববার বিকেলে কল করা হয়। শাহিন এই প্রতিবেদককে কিছু টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করেন। প্রতিবেদক শাহিনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে তিনি রেগে গিয়ে বলেন, ‘আপনার মন যা চায় তা আমার বিরুদ্ধে লিখে দেন।’
আওয়ামী সরকারের পতনের পর রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডি এম জিয়াউর রহমান দলটির ২০০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করতে একটি এজাহার প্রস্তুত করেছিলেন। তবে তা থানায় দেওয়ার আগেই পাঠান আওয়ামী লীগের লোকজনের কাছে এবং মামলার ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নেন মোটা অঙ্কের টাকা।
৬ ঘণ্টা আগেকাজের সময়সীমা ১৮ মাস। কিন্তু সে কাজ দুই মাস করার পর ফেলে রাখা হয়েছে। এদিকে কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু খোঁজ নেই ঠিকাদারের। জানা গেছে, গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরই গা ঢাকা দেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন। এতে সড়ক সংস্কারকাজ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে জনসাধারণকে।
৭ ঘণ্টা আগেমুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার মানুষের যাতায়াতের অন্যতম ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭টি বাঁশের সাঁকো। বর্ষাকালে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের প্রায় ১ লাখ মানুষের এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এসব সাঁকোই ভরসা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাঁদের।
৭ ঘণ্টা আগেধর্মপ্রাণ লেবু মুন্সি নিয়মিত এখানে ইমামতি করতেন। তাঁর মৃত্যুর পর থেকে মসজিদটি ব্যবহারের বাইরে চলে যায় এবং অযত্ন-অবহেলায় ধীরে ধীরে জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। মসজিদটি বর্তমানে গাছপালা, ঝোপঝাড় ও বড় বড় বটগাছে ঘেরা।
৮ ঘণ্টা আগে