Ajker Patrika

নিহতের বাড়ির সামনেই আসামিদের নিয়ে পুলিশের উঠান বৈঠক

কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০২৩, ১৫: ১১
নিহতের বাড়ির সামনেই আসামিদের নিয়ে পুলিশের উঠান বৈঠক

চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে চাঞ্চল্যকর মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর হত্যাকাণ্ড মামলার তিন আসামিকে মঞ্চে বিশেষ অতিথিদের আসনে বসিয়ে উঠান বৈঠক করেছে পুলিশ। শুধু তাই নয়, নিহতের বাড়ির সামনেই বৈঠকের আয়োজন করে মামলার সাক্ষীদের প্রচ্ছন্ন হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের। সেই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা। 

ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয়রা বলছে, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে কর্ণফুলী উপজেলার ইছানগর গ্রামে জনসচেতনতামূলক সভার আয়োজন করে সিএমপি ৮৯ নম্বর বিট পুলিশিং কমিটি। এ সময় ৮৯ নম্বর বিট পুলিশিং ইনচার্জ ও উপপরিদর্শক আবদুর রাজ্জাকের সঞ্চালনায় এবং ওসি (তদন্ত) মেহেদী হাসানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিএমপি কর্ণফুলী জোনের সহকারী কমিশনার আরিফ হোসেন। ওই উঠান বৈঠকে পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে একই মঞ্চে বসতে দেখা গেছে এক দশক আগে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর হত্যাকাণ্ডের তিন চার্জশিটভুক্ত আসামিকে। মোহাম্মদ রাশেদ রানা ও হোসাইন মামুন পিতা মোহাব্বত আলী হলেন এই হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা ও প্রধান আসামি। 

২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর কর্ণফুলী ডক এলাকায় ইছানগর গ্রামের বাসিন্দা ইমতিয়াজ উদ্দিনের ছেলে মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরকে কুপিয়ে খুন করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে কর্ণফুলী থানায় মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে পুলিশ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। পুলিশের চার্জশিটে অভিযুক্তদের নাম উঠে আসে। চার্জশিটে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, অভিযুক্ত আসামিরা এলাকায় চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতা ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। নিহত মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ও তাঁর পরিবারের লোকজন অভিযুক্ত আসামিদের কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটান। 

চার্জশিটভুক্ত তিন আসামি হলেন মৃত রবি আলীর ছেলে আজগর আলী পাপন, মোহাব্বত আলীর ছেলে মোহাম্মদ রাশেদ রানা ও হোসাইন মামুন। 

এদিকে পুলিশের এমন ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি। স্থানীয় বাসিন্দা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থী জোবায়ের রিফাত বলেন, ‘দিনদুপুরে নৃশংসভাবে কুপিয়ে মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীরকে হত্যা করা হয়। এই চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি কীভাবে পুলিশের অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে মঞ্চে বসতে পারে!’ 

নিহত মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই সাজ্জাদ হোসেন ওই হামলায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন। এ ঘটনার বিষয়ে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আসামিরা এমনিতে রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় থেকে প্রতিনিয়ত আমাদের পরিবার ও সাক্ষীদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসছে। সাক্ষীদের মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছে। এখন চার্জশিটভুক্ত আসামিদের পুলিশ মাদকবিরোধী সমাবেশে অতিথি করায় সাক্ষীরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে।’ 

মামলার বাদী নিহত জাহাঙ্গীরের স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পুলিশের সঙ্গে আসামিদের এত সখ্য কিসের! এতে করে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা বোধ করছি।’ 

এ বিষয়ে জানতে অনুষ্ঠানের সভাপতি কর্ণফুলী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মেহেদী হাসানকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

পুলিশের উঠান বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কর্ণফুলী জোনের সহকারী কমিশনার আরিফ হোসেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মঞ্চে চার্জশিটভুক্ত ব্যক্তিদের বসার দায়টা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। অনুষ্ঠানে সামনে বসা ছিলেন স্থানীয় তিনজন জনপ্রতিনিধি। আগে থেকে ওই ব্যক্তিদের আমরা চিনতাম না। চিনলে কখনো তাঁদের মঞ্চে বসতে দিতাম না।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘স্থানীয় জনপ্রতিনিধি আর ডিউটি অফিসার অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেন। আমি অতিথি ছিলাম। হত্যাকাণ্ডের বিষয়টিও আমি জানি না। কেউ যদি তখনই বলত পেছনে বসা লোকগুলো হত্যাকাণ্ডের আসামি, তাহলে তখনই ব্যবস্থা নিতাম তাদের বিরুদ্ধে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সেনানিবাস ঘিরে ‘নাশকতার পরিকল্পনা’, বরখাস্ত সৈনিকসহ গ্রেপ্তার ৩

বাংলাদেশ এড়িয়ে সমুদ্রপথে সেভেন সিস্টার্সকে যুক্ত করতে নতুন প্রকল্প ভারতের

থাইল্যান্ডে পর্যটন ভিসা পেতে আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ দিতে হবে

দক্ষিণপন্থীদের কবজায় বাংলাদেশের রাজনীতি: বদরুদ্দীন উমর

বন্দর-করিডর আপনার এখতিয়ারে নেই, বিদেশি উপদেষ্টাকে বিদায় করুন: ইউনূসকে সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত