Ajker Patrika

চট্টগ্রামে স্কুলছাত্র হত্যা

‘আমিও ছেলের কাছে যাব, ওখানে নিজ হাতে খাওয়াব, বুকে নিয়ে ঘুমাব’

 নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ২০: ২০
মো. রাহাত। ছবি: সংগৃহীত
মো. রাহাত। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামে স্কুলে গিয়ে নিখোঁজের পরদিন মো. রাহাত (১৩) নামের এক শিক্ষার্থীর লাশ কর্ণফুলী নদীর তীর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। শিশুটির স্বজনদের অভিযোগ, পূর্বশত্রুতার জেরে রাহাতের বন্ধুরা তাকে হত্যা করেছে।

আজ বুধবার ভোরে নগরের চান্দগাঁও থানার হামিদচর এলাকায় কর্ণফুলীর তীরে কর্দমাক্ত অবস্থায় রাহাতের লাশ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।

রাহাত নগরের বহদ্দারহাটে ফরিদারপাড়ার মো. লিয়াকতের ছেলে। সে চান্দগাঁওয়ে সানোয়ারা ইসলাম বালক উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। রাহাত চট্টগ্রামের সিএস স্পোর্টস একাডেমির ক্রিকেট জুনিয়র টিমের হয়ে খেলত।

সংবাদকর্মীদের দেখে শিশুটির মা রোজিনা আক্তার বিলাপ করছিলেন আর বলছিলেন, ‘আমিও আমার ছেলের কাছে যাব। ওখানে আমি নিজ হাতে আমার ছেলেকে খাওয়াব। তাকে আমি বুকে নিয়ে ঘুমাব।’

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, রাহাত স্কুল থেকে বাসায় না ফেরায় তাঁর স্বজনেরা খোঁজাখুঁজি করেন। একপর্যায়ে তাঁরা জানতে পারেন, রাহাতকে তার বন্ধুরা মারধর করে নদীতে ফেলে দিয়েছে। এর আগে খেলার নাম করে তাকে স্কুল থেকে ডেকে নিয়ে হামিদচরে কর্ণফুলী নদীর পড়ে একটি স্লুইসগেটের সামনে নিয়ে আসে। সেখানেই তাকে মারধর করে নদীতে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, রাহাতের মৃত্যুর ঘটনায় চার কিশোরকে গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকে থানা হেফাজতে নেয় পুলিশ। তারা সবাই রাহাতের বন্ধু। হেফাজতে নেওয়া কিশোরদের তথ্য অনুযায়ী রাতেই কর্ণফুলী নদীর তীরে রাহাতের সন্ধান করা হয়। ভোরে তার লাশ পাওয়া যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শিশুটির লাশ কর্ণফুলীর পাড়ে কাদামাখা অবস্থায় ও উপুড় হয়ে পড়ে ছিল। পরনে হাফপ্যান্ট ছাড়া কিছু ছিল না।

এদিকে রাহাতের লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে বহদ্দারহাটে ফরিদারপাড়ায় তাদের বাসায় সকাল থেকে স্বজন ও এলাকাবাসী ভিড় করেন। সন্তানকে হারিয়ে রাহাতের মা রোজিনা আক্তার কান্নায় ভেঙে পড়েন।

এ সময় রোজিনা আক্তারকে বিলাপ করে বলতে শোনা যায়, ‘আমার ছেলেকে ছাড়া আমি বাঁচব না। আমিও ছেলের কাছে যাব। আমি থাকব না। আমি আমার ছেলেকে ছাড়া থাকব কেমনে? আমার ছেলেকে মুখে ভাত তুলে খাওয়াতে হয়, তাকে সঙ্গে নিয়ে আমার ঘুমাতে হয়। সে একা থাকবে কেমনে?’

সংবাদকর্মীদের দেখে রোজিনা আক্তার বলেন, ‘আমিও আমার ছেলের কাছে যাব। ওখানে আমি নিজ হাতে আমার ছেলেকে খাওয়াব। তাকে আমি বুকে নিয়ে ঘুমাব।’

সিএস স্পোর্টস একাডেমির কোচ আমিনুল হক বলেন, ‘রাহাত আমাদের টিমের হয়ে ক্রিকেট খেলত। সে একজন খুবই মেধাবী খেলোয়াড়। নিখোঁজের পর আমরা নিজেরাও বিভিন্ন জায়গায় তাকে খোঁজাখুঁজি করি। পরে ভোরে তার লাশ পাওয়া যায়। শুনেছি এলাকার আশপাশে ছেলেদের সঙ্গে রাহাতের মারামারি হওয়ার পর এই ঘটনা ঘটে। রাহাতের এভাবে মৃত্যু দেখে আমরা খুবই মর্মাহত হয়েছি।’

মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মাহমুদা বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, শিশুটির মৃত্যু অস্বাভাবিক ছিল। এটা নিয়ে সন্দেহ নেই। পুলিশ ঘটনাটি হত্যাকাণ্ড হিসেবে তদন্ত করছে। সন্দেহভাজন কয়েকজনকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তে যদি ঘটনার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় আমরা শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। রাহাতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত