Ajker Patrika

চবির ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে গিয়ে আটক হওয়া সেই মাসুদের বিরুদ্ধে মামলা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২১, ২২: ৪৪
চবির ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে গিয়ে আটক হওয়া সেই মাসুদের বিরুদ্ধে মামলা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ‘ডি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অন্যের হয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়ে আটক হওয়া মাসুদ সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে মাসুদ যার পরিবর্তে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে সেই জুলকারনাইনকেও আসামি করা হয়েছে। আজ সোমবার সন্ধ্যায় হাটহাজারী মডেল থানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। 

বিষয়টি নিশ্চিত করে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, দুজনের বিরুদ্ধে ১৯৮০ সালের ‘পাবলিক পরীক্ষা আইনের’ (অপরাধ) ৩ ধারায় মামলা করা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। 

গতকাল রোববার বিকেলে ডি ইউনিটের দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় পর্বের পরীক্ষা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের কলা পাঠকক্ষ থেকে মাসুদকে আটক করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে পাঠানো হলে আদালত মুচলেকা নিয়ে তাঁকে ছেড়ে দেয়। পরবর্তীতে রাতে প্রক্টরিয়াল বডি আবার তাঁকে কয়েক ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ সময় প্রক্টরিয়াল বডিকে বেশ কিছু তথ্য দেন মাসুদ। 

মাসুদ সরকার (২৫) জুলকারনাইন শাহী নামের এক ভর্তিচ্ছুর পরীক্ষা দিতে বসেছিলেন। তিনি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের দহবন্ধ ইউনিয়নের আব্দুল কাদেরের ছেলে। তিনি কারমাইকেল কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী। 

অন্যদিকে জুলকারনাইন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের এ আর এম শরিফুল ইসলাম জর্জের ছেলে। তিনি ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেছেন। 

এদিকে রোববার রাতে প্রক্টরিয়াল বডির জিজ্ঞাসাবাদে মাসুদ জানান, তিনি ভর্তি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা জালিয়াতি চক্রের সদস্য। এই চক্রে তিনি ছাড়াও আছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাসেল সরকার ও তাঁর স্ত্রী সুলতানা রাজিয়া। এ ছাড়া চক্রের মূল হোতা হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ওমর ফারুক। 

মাসুদ জানান, টাকার বিনিময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষায় অন্যের হয়ে অংশ নিয়েছেন তিনি। এ ক্ষেত্রে তাঁর চক্র ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী খুঁজে বের করে বিভিন্ন ধাপে কাজ করত। এমনকি পরীক্ষায় চান্স নিশ্চিত করার কথা বলে তাঁদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা গ্রহণ করতেন তাঁরা। 

পরীক্ষা জালিয়াতি চক্রের সদস্য মাসুদ জানান, প্রথমে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী খুঁজে বের করা হতো। ভর্তিচ্ছু পাওয়া গেলে চক্রের মূল হোতা ওমর ফারুক তাঁদের সঙ্গে টাকার কন্ট্রাক্ট করত। পরে ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীর ছবির সঙ্গে মিলে এমন একজন প্রক্সি দাতাকে খুঁজে নেওয়া হতো। 

মাসুদ আরও জানান, করোনা এবার তাঁদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ ছিল। পরীক্ষার হলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হওয়ায় জালিয়াতি করা তাঁদের জন্য অনেকটা সহজ ছিল। কারণ অনেকেই মাস্ক খুলে চেহারা মিলিয়ে দেখতেন না। 

প্রক্টরিয়াল বডি জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি মাসুদের মোবাইল, ফেসবুক ও মেসেঞ্জার ঘেঁটে বেশি কিছু তথ্য পেয়েছে। যেখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ ও টাকার লেনদের প্রমাণ পাওয়া যায়। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে মাসুদ বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত