Ajker Patrika

‘পাহাড়খেকো’ জসিম তিন মামলায় গ্রেপ্তার

 নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কার্যালয়ে আজ হাজির করা হয় চসিকের সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা জহুরুল আলম জসিমকে। ছবি: আজকের পত্রিকা
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কার্যালয়ে আজ হাজির করা হয় চসিকের সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা জহুরুল আলম জসিমকে। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রাম শহরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে তন্ন তন্ন করে খুঁজে না পাওয়া চট্টগ্রাম সিটি কাউন্সিলের (চসিক) সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা জহুরুল আলম জসিম ঢাকার বিলাসবহুল একটি অ্যাপার্টমেন্টে আত্মগোপনে ছিলেন। জুলাই-আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানের পর তিনি চট্টগ্রাম ছেড়ে পালিয়ে সেখানে যান। ওখান থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁকে আটক করা হয়।

পুলিশ বলেছে, আটকের পর জসিমকে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে তিনটি হত্যা ও বিস্ফোরক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

আজ শুক্রবার সকালে দামপাড়ায় চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানায় পুলিশ। এর আগে বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে আটক হন জসিম। পুলিশ জানায়, এ সময় পুলিশের উপস্থিতি দেখে তিনি পালানোর চেষ্টা করেন।

অভিযুক্ত জসিম চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক।

সংবাদ সম্মেলনে নগর পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি-উত্তর) আমিরুল ইসলাম বলেন, গত বছরের ১৬ জুলাই মুরাদপুর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে অভিযুক্ত আসামি জসিমসহ আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করতে আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, ককটেল ও লাঠিসোঁটা নিয়ে অতর্কিতে হামলা করেন।

ওই হামলার ঘটনায় ছাত্রদল কর্মী ওয়াসিম আকরাম, শিবির কর্মী ফয়সাল আহমেদ শান্ত এবং ফার্নিচার মিস্ত্রি মো. ফারুক নিহত ও ৪০-৫০ জন সাধারণ ছাত্র গুরুতর আহত হন। গ্রেপ্তার জসিম নিজে সরাসরি ছাত্রদের ওপর নির্বিচারে হামলা চালিয়েছেন মর্মে সত্যতা পাওয়া গেছে।

ওই ঘটনায় পাঁচলাইশ থানায় পৃথক তিনটি হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৮ আগস্ট করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি জসিম। বাকি দুটি মামলায় তদন্তে পাওয়া আসামি তিনি। ১৮ আগস্ট ও ২৭ ডিসেম্বর মামলা দুটি করা হয়েছিল। ঢাকায় আটকের পর এই তিনটি মামলায় জসিমকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

পুলিশের ক্রাইম ডেটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিডিএমএস) যাচাই করে তাঁর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইন, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, বিস্ফোরকসহ বিভিন্ন আইনে ১৮টি মামলা থাকার তথ্য পাওয়া যায় বলেও জানান পুলিশ কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম।

চট্টগ্রাম পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলায়মান বলেন, ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বিলাসবহুল ওই অ্যাপার্টমেন্টের মালিক অন্য কেউ। তাঁর আশ্রয়ে ছিলেন অভিযুক্ত জসিম।

জানা যায়, জসিমের খোঁজে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে নগরীর এ কে খান মোড়ে ‘গ্রিন গুলবাহার টাওয়ার’ নামের একটি আবাসিক ভবন ঘিরে রেখে রাতভর অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। পরদিন দুপুরে একটি ফ্ল্যাট থেকে জসিমের স্ত্রী তাসলিমা বেগমকে (৪০) গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে হামলার অভিযোগে একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারি নগরীর আকবর শাহ থানার উত্তর পাহাড়তলী এলাকায় পাহাড় কাটা পরিদর্শনে গিয়ে হামলার শিকার হয় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী ও বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধিদল। এ ঘটনায় হওয়া মামলাটি তদন্ত করে ২০২৩ সালের ১২ জুন জহুরুল আলম জসিমসহ ছয়জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

একাধিক ফৌজদারি মামলার আসামি হওয়ায় ২০২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি জসিমকে কাউন্সিলর পদ থেকে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তবে মাসখানেকের মধ্যেই আবার পদ ফিরে পান প্রভাবশালী এই আওয়ামী লীগের নেতা। তিনি চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চসিকের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৩৫ ফুট নিচে ক্যামেরা পাঠিয়েও শিশুটিকে দেখা যায়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
রাত ১টা পর্যন্ত প্রায় ২৫ ফুট খনন করা সম্ভব হয়েছে। মাটি খুড়েই শিশুটির কাছে পৌঁছাতে চান উদ্ধার কর্মীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাত ১টা পর্যন্ত প্রায় ২৫ ফুট খনন করা সম্ভব হয়েছে। মাটি খুড়েই শিশুটির কাছে পৌঁছাতে চান উদ্ধার কর্মীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহীর তানোর উপজেলার কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামে গভীর নলকূপ বসাতে খনন করা গর্তে পড়ে যাওয়া শিশু সাজিদকে (২) দেখতে কয়েক দফা ক্যামেরা নামিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তবে ৩৫ ফুট পরে ক্যামেরায় আর কিছু দেখা যায়নি। উদ্ধারকারীরা শিশুটিকেও দেখতে পাননি।

তানোরের পাঁচন্দর ইউনিয়ন উচ্চ খরাপ্রবণ এলাকা। এখানে মাটির ১২০ থেকে ১৩০ ফুট গভীরেও ভূ-গর্ভস্থ পানির সন্ধান মেলে না। এ জমির মালিক কছির উদ্দিন একটি গভীর নলকূপ বসাতে চেয়েছিলেন। তাই বছর খানেক আগে ৮ ফুট ব্যাসার্ধে খনন করেছিলেন। কিন্তু পানি না পেয়ে গভীর নলকূপ বসানো হয়নি। সেই গর্তে পড়ে গেছে গ্রামের রাকিবুল ইসলামের দুই বছর বয়সী ছেলে সাজিদ।

বুধবার দুপুরের এ ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট উদ্ধার কাজ শুরু করে। ক্যামেরা নামিয়ে তারা শিশুটিকে দেখতে পায়নি। বিকেল থেকে ওই সরু গর্তের পাশে ভেকু (স্কেভেটর) দিয়ে খনন শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিস। রাত ১টা পর্যন্ত প্রায় ২৫ ফুট খনন করা সম্ভব হয়েছে। এভাবে মাটি খুড়েই শিশুটির কাছে পৌঁছাতে চান উদ্ধার কর্মীরা। দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অসংখ্য মানুষ উৎকণ্ঠা নিয়ে উদ্ধার তৎপরতা দেখছেন। ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এ পরিস্থিতিতে ঘটনাস্থলে আছেন তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাঈমা খান। উদ্ধার কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের রাজশাহী স্টেশনের সহকারী পরিচালক দিদারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা ৩৫ ফুট পর্যন্ত গভীরে ক্যামেরা পাঠিয়ে ভিকটিমকে দেখতে পাইনি। আমরা ভিকটিমকে অক্ষতভাবে উদ্ধার করতে চাই। তবে ভিকটিম বেঁচে আছে কি না সেটাও আমরা জানি না। তাকে অক্ষতভাবে উদ্ধার করতে পাশে মাটি খনন করা হচ্ছে।’

ইউএনও নাঈমা খান বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার কাজ করছে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আছে। উদ্ধার কাজ চলমান আছে। আল্লাহ যে শিশুটিকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয়।’

শিশু সাজিদের মা রুনা খাতুন জানান, তাঁর তিন ছেলে। দুই বছরের সাজিদ মেজো। তাঁদের একটি ট্রলি দেবে গেলে ছোট ছেলে সাদমানকে কোলে নিয়ে আর সাজিদের হাত ধরে তিনি বাড়ির পাশের ওই মাঠে আসেন। ফেরার সময় সাজিদ ওই গর্তে পড়ে যায়।

রুনা বলেন, ‘আমি সামনে হাঁটছি, সাজিদ পেছনে। একটু পর পেছনে ঘুরে দেখি, সাজিদ নাই। শুধু মা মা ডাক শুনছি।’

সাজিদের মা জানান, গর্তের মুখে খড় ছিল। তাই গর্ত বোঝা যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কুষ্টিয়ার ৪টি আসন: ভোটার টানতে মরিয়া দুই দল

  • সব কটি আসনেই বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন ঘিরে অস্থিরতা।
  • মনোনয়নবঞ্চিতদের পক্ষে তৎপর তাঁদের অনুসারীরা।
  • বিএনপির বিরোধে ফায়দা তুলতে চায় জামায়াত।
দেবাশীষ দত্ত, কুষ্টিয়া 
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭: ৩৭
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে কুষ্টিয়ার চারটি আসনের সব কটিতেই প্রাথমিক মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী।

তবে চার আসনেই বিএনপির মনোনয়ন ঘিরে চলছে অস্থিরতা। বিক্ষোভ-সমাবেশের মাধ্যমে দলীয় প্রার্থীর প্রতি নিজেদের অনাস্থার জানান দিচ্ছে নেতা-কর্মীদের একাংশ। মনোনয়নবঞ্চিতদের নেতাদের পক্ষে আন্দোলনে নেমেছেন তাঁদের অনুসারীরা। বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিরোধকে কাজে লাগিয়ে ভোটের মাঠে ফায়দা তুলতে তৎপর জামায়াত।

কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের উপজেলা সভাপতি রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা। ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের আহ্বায়ক শরিফ উদ্দিন জুয়েলও এখানে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণার পর তিনি দলের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানালেও এখনো সভা-সমাবেশের মাধ্যমে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। ফলে চাপের মুখে পড়েছেন বাচ্চু মোল্লা। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী দৌলতপুর থানার আমির বেলাল উদ্দিন। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হতে পারেন মুফতি আমিনুল ইসলাম। খেলাফত মজলিসের মনোনয়ন পেতে পারেন শরীফুল ইসলাম। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে আসাদুজ্জামান, এনসিপি থেকে নুসরাত তাবাসসুম জ্যোতি এবং গণঅধিকার পরিষদ থেকে শাহাবুল মাহমুদ প্রার্থী হতে পারেন।

কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী। তবে তাঁকে মেনে নিতে রাজি নন দলের আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক সংসদ সদস্য শহীদুল ইসলামের সমর্থকেরা। এতে স্থানীয় বিএনপিতে বিভাজন দেখা দিয়েছে। রাগীব রউফ চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন শহীদুল ইসলামের অনুসারীরা। তাঁদের অভিযোগ, দল শহীদুলের দীর্ঘদিনের কাজের মূল্যায়ন করেনি। বিএনপির মিত্র হিসেবে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব ও সাবেক এমপি আহসান হাবীব লিংকনও এখানে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর। বিএনপি ও তার মিত্রদের দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে তিনি ফায়দা তুলতে পারেন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। ইসলামী আন্দোলন থেকে মোহাম্মদ আলী, খেলাফত মজলিস থেকে মো. আব্দুল হামিদ ও এনসিপি থেকে নয়ন আহমেদের নাম শোনা যাচ্ছে।

কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার। তবে তাঁর মনোনয়নে ক্ষুব্ধ আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক এমপি অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিনের অনুসারীরা। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী ইসলামি বক্তা মুফতি আমির হামজা। গণঅধিকার পরিষদ থেকে আব্দুল খালেক, খেলাফত মজলিস থেকে সিরাজুল হক, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে আবদুল লতিফ খান এবং ইসলামী আন্দোলন থেকে আহম্মদ আলী প্রার্থী হতে পারেন।

কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী। তবে তাঁর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র নুরুল ইসলাম আনসার প্রামাণিকের অনুসারীরা। জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ সাদী, কৃষক দলের হাফেজ মো. মঈনউদ্দিনও এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। ফলে তাঁদের অনুসারীরাও আসনটিতে প্রার্থী পরিবর্তন চান। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন। বিএনপির অন্তঃকোন্দলে এখানে জয়ের আশা দেখছেন জামায়াতের নেতা-কর্মীরা। খেলাফত মজলিস থেকে আলী আশরাফ, ইসলামী আন্দোলন থেকে আনোয়ার হোসেন খান, গণঅধিকার পরিষদ থেকে শাকিল আহমেদ মনোনয়ন পেতে পারেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২২ ইঞ্জিনের ১৬ টিই মেয়াদোত্তীর্ণ, ঝুঁকি

  • প্রয়োজন কমপক্ষে ৩০টি, আছে ২২টি; ১৬টিই মেয়াদোত্তীর্ণ।
  • চারটির ৫০, আটটির ৩৫, দুটির ৩০ ও দুটির ২০ বছর আগে মেয়াদ শেষ।
খোরশেদ আলম সাগর, লালমনিরহাট ও আজিনুর রহমান আজিম, পাটগ্রাম
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশের পশ্চিমাঞ্চলীয় রেলওয়ে বিভাগ লালমনিরহাটের অধীনে প্রতিদিন ২০ জোড়া যাত্রীবাহী ট্রেন ঢাকাসহ বিভিন্ন রুটে চলাচল করে। এই সেবা নির্বিঘ্নে পরিচালনায় প্রয়োজন কমপক্ষে ৩০টি লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন)। কিন্তু লালমনিরহাট রেল বিভাগে রয়েছে মাত্র ২২টি; এর মধ্যে ১৬টিই দীর্ঘদিন ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ। এ ছাড়া মেয়াদ রয়েছে এমন ছয়টির মধ্যে একটি দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বহুদিন দিনাজপুরের পার্বতীপুরে কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানায় (সিএলডব্লিউ) পড়ে আছে।

রেলওয়ে ডিভিশনাল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, লালমনিরহাটের লোকোমোটিভ রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকি কার্যালয়ের তথ্যমতে, মেয়াদোত্তীর্ণ ১৬টি লোকোমোটিভের মধ্যে চারটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ৫০ বছর আগে, আটটির ৩৫, দুটির ৩০ এবং দুটির ২০ বছর আগে। এমন পরিস্থিতিতে ১০ জোড়া আন্তনগর, ৮ জোড়া মেইল এবং ২ জোড়া লোকাল ট্রেন এখনো চলছে এসব পুরোনো লোকোমোটিভের ওপর নির্ভর করে। ঝুঁকি মাথায় নিয়েই ট্রেন চালাতে হচ্ছে লোকোমাস্টারদের।

লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক লোকোমাস্টার বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ লোকোমোটিভ নিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চালানো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এসব ইঞ্জিন মাঝেমধ্যে শক্তি হারালে ট্রেন মাঝপথে বিকল হয়ে পড়ার শঙ্কা থাকে। চরম দুশ্চিন্তা নিয়ে ট্রেন চালাতে হয়। নিয়মিত শিডিউল ঠিক থাকে না, সময়মতো ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছানো অনেক সময় সম্ভব হয় না। বহুবার নতুন লোকোমোটিভের জন্য চাহিদাপত্র পাঠানো হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

জানতে চাইলে লালমনিরহাট স্টেশনে কর্মরত রেলওয়ের কর্মচারী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘লালমনিরহাট রেল বিভাগ বরাবরই উন্নয়ন বৈষম্যের শিকার। উত্তরাঞ্চলের উল্লেখযোগ্য অংশের ট্রেন পরিচালিত হয় এখান থেকে, অথচ মেয়াদোত্তীর্ণ লোকোমোটিভ দিয়েই সেবা চালানো হচ্ছে। লোকোমোটিভের সংকটের কারণে বেশ কয়েকটি মেইল ও লোকাল ট্রেন বন্ধ হয়ে গেছে।’

বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির সভাপতি মনিরুজ্জামান বলেন, ‘সরকার একাধিকবার নতুন লোকোমোটিভ কিনেছে, কিন্তু লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগকে একটি নতুন ইঞ্জিনও দেওয়া হয়নি।’

এ বিষয়ে লালমনিরহাট রেলওয়ের বিভাগীয় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (ডিএম-লোকো) ধীমান ভৌমিক বলেন, ‘পুরো দেশেই লোকোমোটিভ সংকট রয়েছে। তবে লালমনিরহাটে সংকটটা তুলনামূলক বেশি। এ জন্য আমরা নিয়মিত চাহিদাপত্র পাঠাচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘মেয়াদোত্তীর্ণ লোকোমোটিভ দিয়ে ট্রেন চালানোয় আমাদেরও দুশ্চিন্তা হয়।’

বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) আহমেদ মাহবুব চৌধুরী বলেন, ‘সারা দেশে লোকোমোটিভ সংকট চলছে। ৩০টি নতুন আধুনিক লোকোমোটিভ কেনার পরিকল্পনা রয়েছে, তবে কবে কেনা হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। লোকোমোটিভের পাশাপাশি দক্ষ জনবল তৈরিও জরুরি; আমরা সে দিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র: প্রকল্প স্থানান্তরে ক্ষোভ

বিশ্বজিত রায়, সুনামগঞ্জ
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

২০২৩ সালে অগ্রসরমাণ এলাকায় ৫০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) স্থাপনে প্রকল্পের অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এর মধ্যে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় টিটিসি প্রকল্প ছিল। কিন্তু তাহিরপুরের প্রকল্পটি জেলার জগন্নাথপুর উপজেলায় স্থানান্তর করা হয়। এতে উপজেলাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদানসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন।

জানা গেছে, কৃষিনির্ভর তাহিরপুরে আড়াই লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। এখানে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতাও রয়েছে। শিক্ষা, যোগাযোগ, কর্মসংস্থান—সব দিক থেকেই পিছিয়ে থাকা তাহিরপুরে টিটিসি নির্মাণের খবরে সবাই খুশি হয়েছিলেন। সেটিও অন্যত্র স্থানান্তর করায় এখানের মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতায় ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট একনেকের সভায় ‘উপজেলা পর্যায়ে ৫০টি কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন’ প্রকল্প অনুমোদন হয়। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ৩ হাজার ৭৫১ কোটি ৮ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়সীমা রয়েছে ২০২৮ সালের মার্চ পর্যন্ত।

জানা গেছে, তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের কাছে ১ দশমিক ৫০ একর জমির প্রস্তাব করা হয়।

তাহিরপুর টিটিসি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মেহেদী হাসান উজ্জ্বল ও সদস্যসচিব সোহেল আলম বলেন, এখানে শিক্ষার হার ৩১ দশমিক ২ শতাংশ। প্রকল্পটি বাতিল করায় তাহিরপুরবাসী হতাশ।’

সুনামগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আমজাদ হোসেন বলেন, তাহিরপুরের প্রকল্পটি প্রথম পর্যায়ে ছিল, এখন আছে দ্বিতীয় পর্যায়ে।

‘উপজেলা পর্যায়ে ৫০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন’ প্রকল্পের পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, তাহিরপুরের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প জগন্নাথপুরে স্থানান্তরের বিষয়টি প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে একনেকের পরিকল্পনা কমিশন।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রকল্পটি যেন স্থানান্তর না হয়, সে ব্যাপারে আমরা চেষ্টা করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত