Ajker Patrika

চাঁদপুর সেচ প্রকল্পে হাজার হাজার কৃষকের দুর্ভোগের অবসান

চাঁদপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১: ৪২
চাঁদপুর সেচ প্রকল্পে হাজার হাজার কৃষকের দুর্ভোগের অবসান

দেশের সেচ প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম ‘চাঁদপুর সেচ প্রকল্প’। দীর্ঘ ৪৫ বছর এই প্রকল্পের পাম্প মেশিনগুলো প্রতিস্থাপন না করা, খালগুলোতে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ও পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় চলতি বোরো মৌসুমে নির্দিষ্ট সময়ে সেচ কার্যক্রম শুরু হয়নি। জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে জমিতে পানি দেওয়ার কথা থাকলেও এক মাসের অধিক সময় পার হয়ে যায়। যার ফলে ধান রোপণ করতে না পেরে হতাশায় ভেঙে পড়েন হাজার হাজার কৃষক। শেষ মুহূর্তে পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপে চলতি সপ্তাহে জমিগুলোতে পানি আসতে শুরু করেছে। বর্তমানে ধান রোপণের কাজে ব্যস্ত কৃষক।

চাঁদপুর সেচ প্রকল্পে বোরো মৌসুমে ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত চার মাস পানির সবচাইতে বেশি প্রয়োজন হয়। কিন্তু প্রকল্পের চরবাগাদী পাম্প হাউজের ছয়টি পাম্প মেশিনের মধ্যে দুটি নষ্ট। চারটি পাম্পও কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ায় ২৪ ঘণ্টা পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি, যার ফলে সেচকাজ কিছুটা ব্যাহত হয়েছে বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের যান্ত্রিক বিভাগ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেচ প্রকল্পের ৫৩ হাজার হেক্টর চাষযোগ্য জমিতে মৌসুমের শুরুতে সেচ কার্যক্রম ব্যাহত হয়ে পড়ে ফরিদগঞ্জ, সদর ও হাইমচর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে।

কৃষকদের সেচ সমস্যার বিষয়টি নজরে এলে সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খালগুলোর প্রতিবন্ধকতা দূর করেন। হাইমচর উপজেলায় খালগুলো পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ ছাড়া ফরিদগঞ্জ উপজেলায় বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের খালে পানি না থাকায় জমিগুলো ফেটে যেতে থাকে।

চাঁদপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা শাহনাজ বলেন, ‘কৃষকদের পানির সমস্যার কথা শুনে আমরা তাৎক্ষণিক খালগুলোর প্রতিবন্ধকতা অফসারণ করি। এতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সহযোগিতা করেন। ফসল উৎপাদনের সহযোগিতায় আমরা কৃষকের পাশে আছি।’ 

সবচাইতে বেশি সেচের সংকট দেখা দেয় ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৭ নম্বর পাইকপাড়া উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিয়নে। এই এলাকার জমিগুলো পানি না থাকায় ফেটে যায়। বয়স বেশি হওয়ায় লাল হয়ে যায় বীজতলা।

পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের মদনপুরা মাঠের কৃষক কাদের বলেন, ‘পানি না পেয়ে আমরা হতাশ হয়ে পড়ি। এবার ধান লাগাতে পারব এমন আশা ছেড়ে দিয়েছি। তবে শেষ মুহূর্তে আমাদের একরাম মেম্বার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ইঞ্জিনিয়ার মো. জাহাঙ্গীর দিনরাত কাজ করে খালের প্রতিবন্ধকতা দূর করায় শেষ মুহূর্তে পানি পেয়েছি।’

একই এলাকার আরেক কৃষক সাইফুল ইসলাম জানান, মৌসুম ছাড়া স্থানীয় লোকজন খালের মধ্যে বাঁধ দিয়ে মাছ ধরে এবং ব্রিজ করার সময় খালে বাঁধ দেয়। এসব বাঁধের কারণে পানি আসে না। আবার পলিমাটি পড়েও খাল ভরাট হচ্ছে। এখন খাল খনন করাও জরুরি হয়ে পড়েছে।

ভাওয়াল মাঠের একাধিক কৃষক জানালেন, খালের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আগ থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।  মৌসুমের ঠিক শেষ মুহূর্তে পানি পেয়েছি। ফসল কেমন হবে সেটা আল্লাহর ওপরই নির্ভর করে।

পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য রায়হান কবির বলেন, ‘ডাকাতিয়া নদীর গাজীপুর থেকে শুরু করে আমাদের এলাকা পর্যন্ত খালে বহু বাঁধ ছিল। আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে বহু কষ্ট করে পানির ব্যবস্থা করেছি। কৃষকরা এবার ফসল করতে পারবে না আশা ছেড়ে দেয়। শেষ মুহূর্তে চলনবিল, ভাওয়াল, তামর শাসন, চমুখা, ইছাপুরা, আদশা, খাজুরিয়া ও দক্ষিণ কাওনিয়া মাঠে পানি পেয়ে কৃষকদের অনেকটা হতাশা কেটেছে।’

চাঁদপুর পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু তাহের পাটওয়ারী বলেন, ‘কৃষকদের পানির সংকট আমার ইউনিয়নে প্রথমে দেখা দেয়। দেরিতে হলেও রোপণের কাজ শুরু হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের ইরিগেশন প্রকেল্পর খালগুলোতে কিছু বাঁধ থাকায় কৃষকের পানি পেতে সমস্যা হচ্ছিল। আমাদের দৃষ্টিগোচর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। এখন সবাই ধান রোপণ করছে। পানির কোনো সমস্যা নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদির ওপর হামলাকারীরা সীমান্ত দিয়ে পালিয়েছে কি না—তা শতভাগ নিশ্চিত নয় বিজিবি

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান । ছবি: আজকের পত্রিকা
বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান । ছবি: আজকের পত্রিকা

বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, ঢাকায় শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলি বর্ষণকারী ব্যক্তিরা ময়মনসিংহ সীমান্ত ব্যবহার করে ভারতে পালিয়েছে কি না—তা এখনো শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।

সোমবার ময়মনসিংহ নগরীর খাগডহর বিজিবি ক্যাম্পে তিনি আরও জানান, শুক্রবার ৯টার মধ্যে বিজিবি সদর দপ্তরের নির্দেশনায় সম্ভাব্য পাচারের রুটগুলো চিহ্নিত করে টহল এবং চেকপোস্ট বসানো হয় সীমান্তের অধিকাংশ স্থানে। পরদিন অর্থাৎ শনিবারে পুলিশ এবং বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ অপারেশনের প্ল্যান করা হয়। ঢাকা থেকে আগত পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বিজিবি ময়মনসিংহ সেক্টর কমান্ডারের নিয়মিত যোগাযোগ এবং অপারেশন সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হয়।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আলোচনায় দুটি স্থানে একসঙ্গে অপারেশনের প্ল্যান করা হয়। সন্দেহভাজন হিসেবে শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে অবস্থানরত ফিলিপ স্নালকে আটকের পরিকল্পনা করা হয়। পুলিশের আরেকটি টিম হালুয়াঘাট এলাকায় অপারেশনের প্ল্যান করে। হালুয়াঘাটে অপারেশনের বিষয়ে বিজিবির সোর্স এবং অন্যান্য বিষয়ে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করেছে। অপর দিকে নালিতাবাড়ীর বারোমারি এলাকায় অপারেশন পরিচালিত হয় বিজিবির নেতৃত্বে এবং ঢাকা হতে আগত ও হালুয়াঘাট থানার পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে। কিন্তু ফিলিপকে পাওয়া যায়নি। তবে তার স্ত্রী ডেলটা চিরান, শ্বশুর ইয়ারসন রংডি এবং মানব পাচারকারী লুইস লেংমিঞ্জাকে আটক করা হয়। তাদের বাড়ি থেকে একটি মোটরসাইকেলও উদ্ধার করা হয়।’

তাঁদের পরিবারের তিনজনসহ এ পর্যন্ত বিজিবি চারজনকে আটক করেছে। এঁদের মধ্যে সোমবার সকালে মানব পাচারকারী বেঞ্জামিন চিরামকে আটক করা হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরগুনায় স্বামীকে গলা টিপে হত্যা, স্ত্রী ও পরকীয়া প্রেমিক আটক

বরগুনা প্রতিনিধি
আটক পরকীয়া প্রেমিক আলামিন। ছবি: সংগৃহীত
আটক পরকীয়া প্রেমিক আলামিন। ছবি: সংগৃহীত

বরগুনার বামনা উপজেলায় পরকীয়া প্রেমের জেরে এক প্রবাসফেরত স্বামীকে গলা টিপে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহত ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ আব্দুল জলিল (৪৫)। তিনি উপজেলার রামনা ইউনিয়নের ঘোপখালী গ্রামের বাসিন্দা।

এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৫) ও তাঁর পরকীয়া প্রেমিক আলামিনকে (৩০) আটক করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দুজনই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে আব্দুল জলিলের নিজ বাড়িতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

স্থানীয় ও থানা সূত্রে জানা যায়, প্রায় পাঁচ বছর ধরে একই এলাকার আবু খতিবের ছেলে আলামিন নিহতের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে নাজমা বেগমের পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রায় ১৫ দিন আগে প্রবাস থেকে বাড়িতে ফিরে স্ত্রীর সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারেন আব্দুল জলিল।

অভিযোগ রয়েছে, রোববার বিকেলে স্ত্রী ও ওই গৃহকর্মী মিলে ঘুমন্ত অবস্থায় আব্দুল জলিলকে গলা টিপে হত্যা করেন।

হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করে বামনা থানায় নিয়ে যায়। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নিহতের স্ত্রী ও তাঁর পরকীয়া প্রেমিককে তাৎক্ষণিকভাবে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা দুজনই হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মামলা দায়েরের পর আসামিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মহান বিজয় দিবসে মেট্রোরেল সাময়িক বন্ধ থাকবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আগামী ১৬ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) মেট্রোরেল চলাচল সাময়িক বন্ধ থাকবে। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় প্যারাজাম্প অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে প্যারাট্রুপারদের নিরাপত্তার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ডিএমটিসিএল ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছে, আগামী ১৬ ডিসেম্বর দুপুর ১১টা ৫০ মিনিট হতে ১২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত, অর্থাৎ মোট ৪০ মিনিটের জন্য মেট্রোরেল চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।

ডিএমটিসিএল সাময়িক অসুবিধার জন্য যাত্রীসাধারণের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে। যাত্রীদের এই সময়সূচি মেনে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইডেনের সেই ছাত্রীকে বিয়ের ছয়মাস পর নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জশিট

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
নোবেল। ছবি: সংগৃহীত
নোবেল। ছবি: সংগৃহীত

বাসায় আটকে রেখে ইডেন কলেজের এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় গায়ক নোবেলের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। গত ২৯ নভেম্বর ডেমরা থানার উপপরিদর্শক এসআই মুরাদ হোসেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন প্রসিকিউশন বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) ইলামনি আজ সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, আগামী ২৮ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্রটি উপস্থাপন করা হবে। পরে এ সংক্রান্ত মামলা বিচারের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে।

নোবেলের আইনজীবী মোসতাক আহমেদ জানান, এই ধর্ষণ মামলার বাদীকে বিয়ে করেছেন নোবেল। তাঁরা সংসার করছেন।

গত ১৯ মে নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করেন ইডেন কলেজের ওই ছাত্রী। নোবেলকে গ্রেপ্তার করার পর কারাগারে পাঠানো হলে বিয়ের শর্তে তিনি জামিন পান। ১৯ জুন ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বসে ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে নোবেল ওই ছাত্রীকে বিয়ে করেন।

এই মামলায় অভিযোগ করা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ছাত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয় নোবেলের। এরপর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর নোবেল তাঁর স্টুডিও দেখানোর কথা বলে ছাত্রীকে ডেমরার বাসায় নিয়ে যান। সেখানে আটকে রাখেন, মোবাইল ফোন ও টাকা কেড়ে নেন। এরপর ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ করেন। কথামতো না চললে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ও দেখান।

অভিযোগে বলা হয়, ওই তরুণীকে ছয় মাস ধরে ডেমরার ওই বাসায় আটকে রাখা হয়, মারধর করা হতো প্রায়ই। দু-তিন জনের সহায়তায় বাদীকে চুল ধরে টেনেহিঁচড়ে একটি কক্ষে আটকে রাখেন নোবেল। ওই ঘটনার ভিডিও ছড়ালে বাদীর বাবা-মা তাঁকে চিনতে পারেন। এরপর পরিবার পুলিশের সহায়তায় তাঁকে ১৯ মে উদ্ধার করে এবং পুলিশ নোবেলকে গ্রেপ্তার করে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, নোবেল বাদীকে আটক রেখে ধর্ষণ করেন এবং ধর্ষণের ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে রাখেন। বাসায় না থাকলে ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। নোবেল নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বিভিন্ন সময়ে তাঁকে মারপিট করেছেন।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, বাদীর অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। আসামি নোবেল জামিনে আছেন।

তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে আরও বলেছেন, বাদীকে মারধর ও ধর্ষণে আসামিকে আরও কয়েকজন সহযোগিতা করেছেন। তবে তাঁদের নাম-ঠিকানা উদ্‌ঘাটন করা সম্ভব হয়নি। অদূর ভবিষ্যতে তাঁদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করা সম্ভব হলে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

এখন কী হবে:

নোবেলের আইনজীবী বলেছেন, নোবেল মামলার বাদীকে বিয়ে করে সংসার করছেন। তাই এই অভিযোগপত্রে নোবেলের কোনো সমস্যা হবে না। বিচারিক ট্রাইব্যুনালে বাদী আপসনামা দেওয়ার পর মামলা নিষ্পত্তি হবে। খালাস পাবেন নোবেল।

উল্লেখ্য, ভারতের সংগীত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান ‘সা রে গা মা’ দিয়ে পরিচিতি পান এই গায়ক। এর আগে মাদকে আসক্ত হয়ে সংগীত ছেড়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ বিরতির পর আবারও শ্রোতাদের সামনে হাজির হন। সেবার নোবেল জানিয়েছিলেন, তিনি আর কখনো দর্শকদের হতাশ করবেন না। সব অতীত পেছনে ফেলে নিয়মিত গান উপহার দেবেন।

কিন্তু ২০২৩ সালে অগ্রিম টাকা নিয়ে গান গাইতে না যাওয়ায় প্রতারণার অভিযোগে রাজধানীর মতিঝিল থানায় নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা হয়। জানা যায়, ওই বছর ১৬ মে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ হেডকোয়ার্টার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি ব্যাচ ২০১৬-এর অনুষ্ঠানে গান গাইতে গিয়ে ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা অগ্রিম নেওয়ার প্রতারণায় অভিযোগে আটক হয়েছিলেন। সে সময় একদিন রিমান্ডেও ছিলেন এই গায়ক। পরে আপসের মাধ্যমে ওই মামলা থেকে অব্যাহতিও পান নোবেল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত