Ajker Patrika

অবৈধ অস্ত্র দিয়েছেন বিএনপি নেতা—এমন ফোনকল রেকর্ডে তোলপাড় চাঁপাইনবাবগঞ্জ

 রিমন রহমান, রাজশাহী
বিএনপি নেতা ওবায়েদ পাঠান। ছবি: সংগৃহীত
বিএনপি নেতা ওবায়েদ পাঠান। ছবি: সংগৃহীত

সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক বিএনপি নেতা আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ-সংক্রান্ত তিনজনের একটি ফোনকল রেকর্ড ছড়িয়ে পড়েছে। এ ফোনকল রেকর্ড নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় চলছে। যদিও অভিযুক্ত বিএনপি নেতা ওবায়েদ পাঠান বলছেন, তিনি কখনো অস্ত্র ছুঁয়েও দেখেননি।

ওবায়েদ পাঠান চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী। এলাকার লোকজন কেউ তাঁকে ওয়াহেদ পাঠান, কেউ ওবায়দুল পাঠান নামেও চেনেন। ফোনকল রেকর্ডে এ দুটি নামই বারবার এসেছে। পুলিশ বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে তদন্ত শুরু করেছে। ওবায়েদ পাঠান যাঁকে অস্ত্র দিয়েছেন বলে অভিযোগ, সেই যুবক ইতিমধ্যে অন্য একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন।

ওই যুবকের নাম রিশান আলী (২৪)। তিনি সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়া সৈনিক। তাঁর বাবার নাম জিয়াউর রহমান। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতিও তিনি। রিশান এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের হোতা হিসেবে পরিচিত। রিশানকে গ্রেপ্তারের পর এক দিনের রিমান্ড নেওয়া হয়েছিল। রিমান্ড শেষে আজ শুক্রবার (১৫ আগস্ট) তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এলাকার একটি বালুমহাল নিয়ে সংঘর্ষের সময় গত জুলাইয়ে এই রিশান প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করেন। এই অস্ত্রের উৎস কী, তা নিয়ে পরদিন রিশানের সহযোগী ইকবাল হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে ইসলামপুর ইউপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নাসির উদ্দিন ও তাঁর চাচাতো ভাই জসিম উদ্দিনের কথা হয়। ওই ফোনকল রেকর্ড সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়ে।

প্রথমে রিশানের সহযোগী ইকবালের সঙ্গে কথা বলেন জসিম। তিনি অস্ত্রের ব্যাপারে জানতে চান, ‘উ (রিশান) কি টাকা দিয়ে (অস্ত্র) কিনেছে জি?’ জবাবে ইকবাল বলেন, ‘না, ওকে এমনি দিয়েছে। ভ্যাজালের সমাতে। হামি ধরেন যদি ই করতুং, তো হামিই প্যায় যাতুং।’ জসিম বলেন, ‘ওয়াহেদেরা তো ইন্ডিয়া থাইকা, আনা তো ব্যাপার লয়।’ ইকবাল বলেন, ‘বাংলাদেশেই অভাব নাই। হাঁর কাছেই ছিল আগে।’

জসিম জানতে চান, ‘তাহলে তিনটা গুলি আর একখানডা ই (পিস্তল) দিয়েছে?। ইকবাল বলেন, ‘হু, নিজের সেফটির জন্য।’ জসিম জানতে চান, ‘ওয়াহেদ নিজেই দিয়েছে ডাইরেট?’ ইকবাল বলেন, ‘ওয়াহেদ ধরে লেন যে ইয়ে করেছিল। কিন্তু ল্যাওয়ার দিন হামি যাইনি। ল্যাওয়ার দিন আমরুল (রিশানের আরও এক সহযোগী) আর ওই (রিশান) গেছিল খালি। হাঁকে ডেকেছিল, হামি যাইতে পারিনি।’

জসিম বলেন, ‘পিস্তল থাকাতে কত বড় সেফটি দেখেছেন?’ ইকবাল বলেন, ‘সেফটিও আছে, ভয়ও আছে। কেহু যুতি ধরায় দ্যায়।’ জসিম বলেন, ‘ধরাছে কে ওদেরকে? ওরা এখন পাওয়ারে আছে। আর কি দিয়েছিল, নাকি ওইখানডাই?’ ইকবাল বলেন, ‘সন্ধ্যার দিকে খবর লিব। আমরুলকে হামি কহাবো, কি রে কাকা মাল কি একখানডাই দিয়েছে? হাঁরা পাব না? তাহিলেই বুসতে পারব, একখানডা নাকি আরও দিয়েছে।’

জসিম এবার জানতে চান, ‘দেয়ার তো কথা ছিল তিনখানডা?’ ইকবাল বলেন, ‘হ্যাঁ, দেয়ার কথা ছিল তিনখানডা। লাইসেনধারীডা দিতে চাহেনি।’ জসিম জানতে চান, ‘তাহিলে ওয়াহেদের কাছে ব্যাপার না মাল আইন্যা দেয়া?’ কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে ইকবাল বলেন, ‘তুমি কি লিব্যা নাকি মাল? লিলে কহো, আমি আইন্যা দিছি। এইডা ব্যাপার না। তুমি ভাবছ ম্যালা কিছু। ম্যালা কিছু লয়। শিবগঞ্জ থাইকাই আনা যায়। শুধু আনাডা একটু ইয়ে তাই।’ জসিম প্রশ্ন করেন, ‘ওয়াহেদ কি বেরেন কইরে ছোট ছোট ছেইলের হাতে দিল?’ জবাবে ইকবাল বলেন, ‘ওয়াহেদ পাঠান কিন্তু আমরুলকে খুবই ভালোবাসে। উ যুদি কহে, এ মুহূর্তে আসা লাগবে, ওয়াহেদ পাঠান এক ফোঁটাও ভুল কইরাও ই করবে না। হামি ভালো কইর‍্যা দেখেছি।’

এ পর্যায়ে ‘মিম্বার কী কহিছে শুনো তো’ বলে জসিম তাঁর চাচাতো ভাই নাসির উদ্দিনের সঙ্গে ইকবালকে কথা বলতে দেন। নাসির বলেন, ‘কী অবস্থারে কেমন আছিস? চিন্তাও লাগছে একটা পিস্তুল...।’ ইকবাল বলেন, ‘এটা দাদা চার মাস আগে যখুন গন্ডগোল হয়েছিল না, তখনই দিয়েছে। দেয়ার কথা তিনট্যা, দিয়েছে ধরেন একটা।’ ইউপি সদস্য জানতে চান, ‘এর দাম কত পড়ছে?’ জবাবে ইকবাল বলেন, ‘এ্যার দাম মুনে করেন ৩০ হাজার। আর একাডডা গুলি আঠারো শ-উনিশ শ।’ নাসির বলেন, ‘তাহিলে ছোট গ্যালা। বড় গেলা হলে ৬০,৭০, ৮০ হয়্যা যাইত।’ ইকবাল বলেন, ‘হু, সাইলেন্সারসহ যুতি ল্যাও, কোনো আওয়াজ করবে না। গুলি মাইরব্যা কোনো আউয়াজ করবে না। হাঁর কাছেই ছিল, সালেন্সারসহ।’

নাসির প্রশ্ন করেন, ‘ওরাকে দিল কে?’ জবাবে ইকবাল বলেন, ‘এটা ধরেন যে ওবায়দুল পাঠান, ওই সংগ্রহ করে দিয়েছে। এইডা থাকার কথা আমরুলের কাছে।’ ইকবাল বর্ণনা দিতে থাকেন, ‘রাজরামপুরের সামনে পোখরের ওখানে ওবায় পাঠানের জমি আছে ১১ বিঘা। ওই জমির লাইগ্যা বোলে, “ভাই আপনি শুধু হামরাকে ব্যবহার করছেন।” তখুন বলে, “কী লাগবে তোর?” তখন বোলে, “ঠিক আছে তোরা তিনজনাকে তিনখ্যান ব্যবস্থা করে দিছি।” জিনিসগ্যালার অর্ডার হয়েছিল তিনঝোনার লাইগ্যা তিনটা। আমরুল ট্রেনিংও দিয়েছে ১০ দিন।’

এই আমরুল অস্ত্রটি রিশানকে দিয়েছেন বলে কথোপথনে উঠে আসে। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে ইকবাল, জসিম কিংবা আমরুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে যোগাযোগ করা হলে ফোনকল রেকর্ডটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ইউপি সদস্য নাসির উদ্দিন। ফোনকল রেকর্ডটি ছড়িয়ে পড়ার কথা শুনেছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। নাসির উদ্দিন বলেন, ‘কথাটা কিছুদিন আগের। রিশান, আমরুল, ইকবাল—তারা সব একই গ্রুপে চলাফেরা করে। বালু নিয়ে একটা ঘটনা ঘটে, সেখানে রিশান অস্ত্র দেখায়। বিষয়টা জানতে আমি রিশানের ঘনিষ্ঠ ইকবালের সঙ্গে কথা বলি। তার আগে আমার চাচাতো ভাই জসিম কথা বলে।’ তিনি জানান, রাজারামপুরে বিএনপি নেতা ওবায়েদ পাঠানের একটি জমি রয়েছে। এ জমিকে কেন্দ্র করে ওবায়েদ অস্ত্রটি আমরুলকে দিয়েছেন বলে তিনি ইকবালের কাছ থেকে শুনেছেন।

জানতে চাইলে বিএনপি নেতা ওবায়েদ পাঠান বলেন, ‘আমার সঙ্গে রিশানের কখনো দেখা হয়নি। আমি তাকে চিনি না। আমি ফোনকলের ব্যাপারে প্রথম শুনছি। আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বহু দিনের। নিজে হাতে নেড়েও দেখিনি কখনো। আমার লাইসেন্স করা অস্ত্রও নেই।’ অস্ত্র দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘কেউ যদি বলে হাসিনার সঙ্গে আপনার কথা হয়েছে, তাহলে আমি কী করব? রিশান কি আমাদের দল-পার্টির ছেলে? আমাদের সঙ্গে কী সম্পর্ক? আমাদের সঙ্গে তো কোনো মিছিল-মিটিং করে না। দলীয় পদ নাই। তাহলে আমার সঙ্গে কী সম্পর্ক? কেউ যদি আমার নাম ব্যবহার করে কিংবা রেকর্ড করে, সেটার জন্য তো আমি দায়ী না। আমার সঙ্গে তো ডিরেক্ট তাদের কথা হয়নি। কে কী বলল, না বলল—এগুলোতে কিছু যায় আসে না। কার কাছে কী আছে, আমি কিছুই জানি না।’

রিশান গ্রেপ্তার, অস্ত্র উদ্ধার হয়নি

গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে ৫ আগস্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জের মিরের খৈলান এলাকায় একটি সমাবেশ ছিল। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির আরও এক মনোনয়নপ্রত্যাশী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা হারুন-অর-রশিদ। সমাবেশ থেকে ফেরার পথে রিশানের বাড়ির সামনে ইসমাইল হক কিনু নামের একজনের ওপর হামলা হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হামলার সময় রিশানের বাবা জিয়াউর রহমানও ছিলেন।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর ভাই মো. তুফানি ১২ আগস্ট জিয়াউর রহমান, তাঁর ছেলে রিশানসহ ১৪ জনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলার এজাহারের দুটি কপি পাওয়া গেছে। খসড়া কপিতে লেখা হয়েছিল, হামলার সময় ককটেল বিস্ফোরণ হয় এবং রিশান পিস্তল দিয়ে দুই রাউন্ড ফাঁকা ফায়ার করেন। পরে থানায় মামলা হিসেবে যে এজাহার রেকর্ড হয়, সেখানে পিস্তলের প্রসঙ্গটি নেই। পুলিশ পিস্তলের প্রসঙ্গটি বাদ দিতে বাধ্য করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তবে মামলার পরদিন গত বুধবার রাতে রিশানকে গ্রেপ্তার করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানা-পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল হাই আসামিকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। এ সময় আদালত তাঁকে এক দিনের রিমান্ড দেন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজ তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।

যোগাযোগ করা হলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আব্দুল হাই তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে কথা বলবেন না বলে জানিয়েছেন। ছড়িয়ে পড়া ফোনকলের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলেও দাবি করেন। তবে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিউর রহমান জানান, তিনি ফোনকলের বিষয়টি জানেন। রিমান্ডে থাকাকালে অস্ত্রের বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তার পাশাপাশি তিনি নিজেও রিশানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তবে রিশান মুখ খোলেননি। কোনো অস্ত্রও উদ্ধার করা যায়নি। বিষয়টি অত্যন্ত গভীরভাবে তদন্ত করা হচ্ছে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মোহাম্মদপুর-আদাবরে সক্রিয় সন্ত্রাসীদের ১৭টি দল

  • ছিনতাইয়ের ১১টি হটস্পট। গাবতলী স্লুইসগেট থেকে হাজারীবাগ পর্যন্ত চলে ছিনতাই
  • ১৩ মাসে ১৮ খুন। গণপিটুনিতেই নিহত ছয়জন। পিটুনির নামে হত্যার অভিযোগ
  • জেনেভা ক্যাম্পে মাদক কারবারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ৯ মাসে ১৯ সংঘর্ষ, নিহত ৮ জন
  • পুলিশ বলছে, অপরাধ আগের চেয়ে কমে এসেছে। আরও কমবে বলে আশাবাদ
আমানুর রহমান রনি, ঢাকা 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও আদাবরে খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, জমি-ফ্ল্যাট দখল, মাদক কারবার, অস্ত্রের মহড়া, মারধরসহ বিভিন্ন অপরাধের পেছনে রয়েছে ১৭টি গ্রুপের সন্ত্রাসী-অপরাধীরা। এই গ্রুপগুলোর নেতৃত্বে আছেন ১৭ জন। রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এই ১৭ জন চলেন দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীর নির্দেশনায়। পুলিশ, র‍্যাব ও যৌথ বাহিনীর কর্মকর্তাদের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

অপরাধীদের দৌরাত্ম্যে নিরাপত্তা- হীনতায় ভুগছেন বাসিন্দারা। কয়েকটি এলাকায় নিরাপত্তার জন্য গঠিত টহল দলের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। অবশ্য পুলিশের দাবি, মোহাম্মদপুর ও আদাবরে অপরাধ আগের চেয়ে কমেছে। অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হলেও কিছুদিন পর জামিনে বেরিয়ে এসে আবার অপরাধে জড়াচ্ছে।

মোহাম্মদপুর ও আদাবরে অপরাধ এখন যেন স্বাভাবিক ঘটনা। এ দুই থানায় দিনে ৮-৯টি ছিনতাইয়ের অভিযোগ আসছে। অবশ্য ঝামেলার ভয়ে বেশির ভাগ ভুক্তভোগীই মামলা করেন না। ছিনতাই হচ্ছে দিনে-রাতে, বিভিন্ন স্পটে। পূর্বশত্রুতা ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ১৩ মাসে খুন হয়েছে ১৮ জন। মাদক কারবারিদের দুই পক্ষের সংঘর্ষে জেনেভা ক্যাম্পে ৯ মাসে নিহত হয়েছেন আটজন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, মোহাম্মদপুর ও আদাবরে ‘কিশোর গ্যাং’ ও ছিনতাইকারীরা মাঠপর্যায়ে অপরাধ ঘটায়। মাঠের চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করেন ১৭ জন। তাঁরা অপরাধের পুরো নেটওয়ার্ক চালান। তাঁদের চারজন একটি রাজনৈতিক দল ও এর অঙ্গ সংগঠনের পদে ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠলে তাঁদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। তাঁরা মোহাম্মদপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান ওরফে পিচ্চি হেলাল ও ইমনের অনুসারী। তবে তাঁদের মধ্যে পিচ্চি হেলালের অনুসারী বেশি।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র জানায়, এই ১৭ জনের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ৫ থেকে ৩০টি পর্যন্ত মামলা রয়েছে। তাঁদের দুজন বর্তমানে কারাগারে, বাকিরা আত্মগোপনে।

দেড় মিনিটে ছিনতাই

বছিলার স্বপ্নধারা হাউজিংয়ের বাসিন্দা শিরিন বেগম জানান, ১ অক্টোবর বিকেলে তিনি একটি সমিতি থেকে ১ লাখ টাকা ঋণ তুলে মাকে নিয়ে রায়েরবাজার বেড়িবাঁধ হয়ে বাসায় ফিরছিলেন। শহীদ বুদ্ধিজীবী ২ নম্বর গেটে কয়েকজন তরুণ তাঁদের কোপ দিয়ে ওই টাকা ও গয়না ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাটি ঘটে মাত্র দেড় মিনিটে। আশপাশে পথচারী ও যানবাহন চলাচল করলেও কেউ এগিয়ে আসেনি।

শিরিন বেগম আরও বলেন, ওই তরুণেরা পথ আটকে প্রথমে নিজেদের মধ্যে পাতানো মারামারি করে। ছিনতাইয়ের ঘটনায় তিনি সেদিনই মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। তবে আসামিরা কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই ছিনতাইয়ে জড়িত চক্রটি বর্তমানে কারাগারে থাকা এজাজ ওরফে হেজাজের অনুসারী। তিনি শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। এজাজের বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি ও অপহরণের অভিযোগে ১২ থেকে ১৫টি মামলা রয়েছে।

গাবতলী স্লুইসগেট থেকে হাজারীবাগ পর্যন্ত চলে ছিনতাই

গাবতলী স্লুইসগেট থেকে হাজারীবাগ পর্যন্ত বেড়িবাঁধের উভয় পাশে ৮টি নতুন হাউজিং ঘিরে ছিনতাইয়ের বিস্তৃতি ঘটেছে। এই হাউজিংগুলো হলো সুনিবিড় হাউজিং, তুরাগ হাউজিং, নবীনগর হাউজিং, ঢাকা উদ্যান (ওয়াকওয়ে), চন্দ্রিমা মডেল টাউন, চাঁদ উদ্যান, নবোদয় হাউজিং, স্বপ্নধারা ও বছিলা গার্ডেন সিটি। এসব এলাকা থেকে থানা অনেক দূরে। অপরাধীরা ঘটনা ঘটিয়ে কয়েক মিনিটেই পালিয়ে যায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এসব হাউজিংয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস। আছে ছোট ছোট বস্তি। অপরাধীরা কয়েক দিন পরপর বাসা বদল করে। রয়েছে কয়েক শ ব্যাটারিচালিত রিকশার গ্যারেজ। এসব এলাকায় মাদক কারবার, ছিনতাই, জমি ও ফ্ল্যাট দখল নৈমিত্তিক ঘটনা।

সবচেয়ে বেশি ছিনতাই হয় ১১টি স্থানে। এগুলো হলো রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী এলাকা, সোনা মিয়ার টেক, বছিলা ফুটপাত, সুনিবিড় হাউজিংয়ের বেড়িবাঁধ ও বালুর মাঠ, তুরাগ হাউজিংয়ের মসজিদ এলাকা, নবীনগর হাউজিংয়ের ১ থেকে ৪ নম্বর সড়ক, ঢাকা উদ্যান ওয়াকওয়ে, চন্দ্রিমা মডেল টাউনের নদীর তীর, চাঁদ উদ্যানের ভাঙা মসজিদ এলাকা, নবোদয় হাউজিংয়ের বাজারসংলগ্ন এলাকা ও জেনেভা ক্যাম্প।

আদাবর ও মোহাম্মদপুর থানার তথ্যে জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে ৮-৯টি ছিনতাইয়ের অভিযোগ আসে। তবে অনেক ভুক্তভোগী মামলা করেন না।

১৩ মাসে ১৮ খুন

পুলিশ জানায়, মোহাম্মদপুর, আদাবর ও দারুসসালাম এলাকায় গত ৯ মাসে মাদক কারবারের আধিপত্য, গণপিটুনির নামে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন ঘটনায় অন্তত ১৮ জন খুন হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু আদাবর ও মোহাম্মদপুরে মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণের বিরোধে পাঁচজন এবং তথাকথিত ‘গণপিটুনিতে’ ছয়জন নিহত হন।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর ভোরে আদাবরে রিপন সরদার (৪২) নামে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। সেনাবাহিনীর অভিযানে ইমন ওরফে দাঁতভাঙা ইমনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘রাজু গ্রুপ’ ও ‘বেলচা মনির’ বাহিনীর নেতৃত্বে আদাবরের ১০ ও ১৭ নম্বর এলাকায় মাদক কারবার চলে। এই দুই দলের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধে রাজুর চাচাতো ভাই রিপন খুন হন।

নিহত রিপনের ছেলে ইমন সরদার দাবি করেন, তাঁর বাবা পেশায় চা-দোকানি। বেলচা মনিরের লোকজনের সঙ্গে কথা-কাটাকাটির জেরে তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

মাদক কারবারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শুধু জেনেভা ক্যাম্পে বুনিয়া সোহেল ও চুয়া সেলিমের গ্রুপের মধ্যে গত ৯ মাসে ১৯ বার সংঘর্ষ হয়েছে। নিহত হয়েছেন আটজন। এদের মধ্যে সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ভোররাতে সংঘর্ষের সময় ককটেল বিস্ফোরণে একজন নিহত হন। মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ ও ডিবি একাধিকবার অভিযান চালিয়ে দুই শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করলেও মাদক কারবার এবং সংঘর্ষ বন্ধ হয়নি।

এ ছাড়া গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বেড়িবাঁধে সাদেক খান আড়তের সামনে পিচ্চি হেলালের অনুসারীরা নাসির ও মুন্না নামে দুজনকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় পিচ্চি হেলালসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর মামলা হয়।

‘গণপিটুনির’ নামে হত্যার অভিযোগ

চলতি বছরের ১৫ মে থেকে দারুসসালাম, আদাবর ও মোহাম্মদপুরে গণপিটুনিতে ছয়জন নিহত হয়েছেন। তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব ছিল হত্যা।

১৫ মে ভোরে মোহাম্মদপুরের রাকিব ও মিলন নামে দুই তরুণকে ছিনতাইকারী আখ্যা দিয়ে ৭-৮ জন মিলে পিটুনি দেয়। রাকিব মারা যান, মিলনকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সেখানে তখন কোনো ছিনতাই হয়নি।

৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে চন্দ্রিমা মডেল টাউন এলাকায় ফাহিম ও ইয়ামিন নামে দুই তরুণকে পেটানো হয়। মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের ছাত্র ইয়ামিন ঘটনাস্থলেই মারা যান। ভিডিও ফুটেজ দেখে একটি কারখানার এক শ্রমিক বলেন, তাঁদের কারখানার কয়েকজন শ্রমিক ওই পিটুনিতে জড়িত ছিলেন। ঘটনার পর তাঁরা আত্মগোপনে চলে যান।

ইয়ামিনের বাবা মাহবুব মিয়া বলেন, তাঁর ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে নদীর পাড়ে ঘুরতে গিয়েছিল। হঠাৎ তাদের ধরে পেটানো হয়।

১০ সেপ্টেম্বর ভোররাতে নবীনগর হাউজিংয়ের সাঁকোরপাড় এলাকায় চার তরুণকে গণপিটুনির ঘটনায় সুজন ওরফে বাবুল ও হানিফ নামের দুজন নিহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সুজন ও শরীফকে খামার থেকে তুলে এনে এবং হানিফ ও ফয়সালকে হোটেলের সামনে থেকে এনে স্থানীয় টহল দল পেটায়। নিহত দুজন ও মারধরকারীরা একই এলাকার।

নবীনগর হাউজিং, চন্দ্রিমা মডেল টাউন, ঢাকা উদ্যান ও সুনিবিড় হাউজিংয়ে নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় টহল দল করা হয়েছে। এই দলের সদস্যরা রাতে মোটরসাইকেলে টহল দেন। টহল দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে মারধর ও আটকের অভিযোগ উঠেছে।

নবীনগর হাউজিংয়ের ১২ থেকে ১৬ নম্বর সড়ক পর্যন্ত স্থানীয় বিএনপির সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক আক্তার হোসেনের নেতৃত্বে অন্তত ১০ জনের একটি টহল দল কাজ করছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এদের মধ্যে কেউ কেউ ছিনতাই ও মাদক কারবারে জড়িত।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে আক্তার হোসেনের বাসায় গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, বাড়িমালিকেরা এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্ব দিয়েছেন। তাই কয়েকজনকে নিয়ে তাঁর স্বামী টহলের ব্যবস্থা করেছেন।

চাঁদা না দিলে গুলি

গত ২৪ মার্চ রাতে মোহাম্মদপুরের শের শাহ সুরি রোডে আবাসন ব্যবসায়ী মনির আহমেদের অফিসে গুলি চালায় সন্ত্রাসীরা। এর আগে বিদেশি নম্বর থেকে ‘ক্যাপ্টেন’ পরিচয়ে তাঁর কাছে ১ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করা হয়।

ডিবি পুলিশ ও সেনাবাহিনী যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে এ ঘটনায় জাবেদ ও হাসান নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করে। জাবেদের মোবাইলে চাঁদা দাবি করা নম্বরটি ‘দ্য কাউন্ট ডাউন’ নামে সেভ করা ছিল। পুলিশ বলেছে, জাবেদ জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন এই ঘটনার নেপথ্যে ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ হোসেন মোড়ল। তিনি শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের নাম ব্যবহার করে চাঁদা দাবি করেছিলেন। তবে তদন্তে দেখা গেছে, জাহিদ মোড়ল মূলত পিচ্চি হেলালের অনুসারী। তাঁর সঙ্গে গ্রেপ্তার দুজনের একাধিক ছবি পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে জাহিদ মোড়লের বক্তব্য জানতে মোবাইলে ফোন করা হলে বন্ধ পাওয়া যায়।

পুলিশ যা বলছে

পুলিশ বলছে, মোহাম্মদপুর ও আদাবরে আগের চেয়ে অপরাধ কমেছে। আগে প্রতি মাসে ২৫০টি মামলা হতো, এখন কমে ১৫০-এ নেমেছে। অপরাধীরা গ্রেপ্তার হচ্ছে। তবে জামিনে বের হয়ে আবার একই অপরাধে জড়াচ্ছে।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান বলেন, ‘মোহাম্মদপুর অনেক বড় এলাকা। এখানে জেনেভা ক্যাম্প এবং বেশ কিছু বস্তি রয়েছে। এ জন্য কিছু ঘটনা ঘটেছে, যা আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছি। এখন অপরাধের গ্রাফ নিচের দিকে। এটা আরও কমে আসবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফুলবাড়ীর আশ্রয়ণ প্রকল্প: ঘর আছে, বাসিন্দা নেই

  • ঘর বরাদ্দে স্বজনপ্রীতি ও রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ
  • অধিকাংশ আশ্রয়ণে রয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট
  • বরাদ্দ পাওয়া বেশির ভাগ পরিবার সেখানে থাকে না
  • আবাসন থেকে মূল সড়কে যাওয়ার রাস্তা নেই
  • জমি থাকার পরও ঘর বরাদ্দ নিয়ে থাকলে ব্যবস্থা: ইউএনও
ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি 
দীর্ঘদিন ধরে তালাবদ্ধ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো। সম্প্রতি ফুলবাড়ীর বাসুদেবপুরে। ছবি: আজকের পত্রিকা
দীর্ঘদিন ধরে তালাবদ্ধ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো। সম্প্রতি ফুলবাড়ীর বাসুদেবপুরে। ছবি: আজকের পত্রিকা

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা সদর থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে পাকা সড়কে দাঁড়িয়ে তাকালে ফসলি মাঠ পেরিয়ে ছোট ছোট রঙিন ঘর চোখে পড়ে। আশ্রয়ণের এসব ঘর দেখে যে কারও মন জুড়িয়ে যাবে। তবে দুঃখের বিষয়, গৃহহীনদের পুনর্বাসনের জন্য নির্মিত এসব ঘরের অধিকাংশই এখন ফাঁকা। সুবিধাভোগীরা না থাকায় নষ্ট হয়ে গেছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, আশ্রয়ণ থেকে মূল সড়কে যাওয়ার রাস্তা নেই। নেই মসজিদ বা প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। তাই অনেকেই বরাদ্দ পেয়েও থাকছেন না।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ঘর বরাদ্দে স্বজনপ্রীতি, রাজনৈতিক প্রভাব ও অনিয়ম হয়েছে। অনেকে ঘর বরাদ্দ নিয়েও অন্যত্র বসবাস করছেন; কেউ কেউ ঘর অন্যের কাছে দেখাশোনার জন্য দিয়ে গেছেন। কিছু ঘরে হাঁস-মুরগি বা গরু-ছাগল পালন ছাড়া আর কোনো ব্যবহার নেই। বরাদ্দ পাওয়া বেশির ভাগ পরিবার সেখানে থাকে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিগত সরকারের আমলে ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের’ আওতায় ফুলবাড়ী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে চার ধাপে নির্মিত হয় ১ হাজার ২৭০টি বাড়ি। এতে ব্যয় হয় ২৫ কোটি ৫ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি ভূমিহীন পরিবারকে দুই শতক জমির ওপর দুই কক্ষবিশিষ্ট আধপাকা ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। প্রথম পর্যায়ে প্রতিটি ঘরের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা, দ্বিতীয় পর্যায়ে ১ লাখ ৯০ হাজার, তৃতীয় পর্যায়ে ২ লাখ ৬৪ হাজার ৫০০ এবং চতুর্থ পর্যায়ে ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এভাবে চার ধাপে নির্মিত ঘরগুলো এখন অযত্নে পড়ে আছে।

আলাদীপুর ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামে ১৬৫টি বাড়ি নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৫০টি পরিবার বসবাস করছে, বাকিগুলোতে ঝুলছে তালা। সেখানকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, আশ্রয়ণ গ্রাম থেকে মূল সড়কে যাওয়ার রাস্তা নেই। যা আছে, তা কাঁচা ও কাদাময়, বিশেষ করে বর্ষায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। নেই মসজিদ বা প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। তাই অনেকেই বরাদ্দ পেলেও এখানে থাকতে আগ্রহী নয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ আশ্রয়ণে ঘর বরাদ্দ দেওয়ার সময় সঠিক যাচাই-বাছাই করা হয়নি। নির্মাণের পর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাব রয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্পের স্থানগুলোতে যাতায়াত ও জীবিকার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধাও নেই। নেই মসজিদ। সুপেয় পানির সমস্যাও প্রকট। এসব সমস্যা বাসিন্দাদের জীবনযাপন কঠিন করে তুলেছে।

বাসুদেবপুর আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘিরে গড়ে তোলা সমবায় সমিতির সদস্য হানিফ শেখ, হাফিজুল ইসলাম ও জাকির হোসেন বলেন, ‘১৬৫টি ঘরের মধ্যে প্রায় ১১৫টি খালি। মালিক আছেন, কিন্তু তাঁরা আসেন না।’

আশ্রয়ণের বাসিন্দা মানিক মিয়া বলেন, ‘এখানে বিভিন্ন এলাকার মানুষ বাড়ি পেয়েছেন। তবে অনেকে স্থায়ীভাবে থাকতে চান না। রাস্তা ও মসজিদ নেই। এ ছাড়া এখানে কোনো কাজকর্ম নেই। আমাদের অনেক কষ্ট হয়।’

উপজেলার খয়েরবাড়ি ইউনিয়নের বালুপাড়া আবাসনে ২৪৪টি বাড়ি রয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, ১০০টি ঘরে মানুষ বসবাস করছে। বাকিগুলো খালি। ওই আশ্রয়ণের বাসিন্দা মহসিনা ও আমজাদ বলেন, ‘অনেকেই ফুলবাড়ী পৌর এলাকার মানুষ। এখানে কোনো কাজ না থাকায় তাঁরা থাকেন না। মাঝে মাঝে এসে ঘর দেখে যান।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বালুপাড়া আবাসনের এক বাসিন্দা বলেন, ‘১০০টিতে বাসিন্দা থাকলেও এর মধ্যে অনেক বাড়ির মূল মালিক নেই। কিছু বাড়ি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকায় গোপনে বিক্রি বা হস্তান্তর হয়েছে। আবার কেউ কেউ বছরে একবার এসে দখল নিশ্চিত করে চলে যান।’

অন্যান্য আশ্রয়ণেও একই চিত্র। উপজেলার কাজিহাল ইউনিয়নের পুকুরি মোড় আবাসনে ৮টি বাড়ির মধ্যে মাত্র ৩টিতে পরিবার থাকছে। এলুয়াড়ী ইউনিয়নের শিবপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩৪টি ঘরের মধ্যে ৫টি বাদে সব ফাঁকা। বাসিন্দারা জানান, কেউ কেউ মৌসুমভিত্তিক কাজের জন্য ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকায় চলে যান, আবার ফিরে আসেন।

এ বিষয়ে উপজেলার খয়েরবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান শামীম হোসেন বলেন, ‘আমার জানামতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোতে অনেকেই বসবাস করেন না। কেউ অন্যত্র কাজ করেন, অন্যকে থাকার জন্য দিয়ে চলে গেছেন। তদন্ত করে এসব ঘর প্রকৃত ভূমিহীনদের কাছে হস্তান্তর করা গেলে তারা উপকৃত হবে।’

সার্বিক বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসাহাক আলী বলেন, ‘অতীতে যাঁরা ঘর বরাদ্দ দিয়েছেন, তাঁরা যাচাই-বাছাই করেই দিয়েছেন। তবে কিছু লোক হয়তো গার্মেন্টসে কাজ করে বা কাজের জন্য অন্যত্র গেছে, তাই ফাঁকা আছে। কেউ জমি থাকার পরেও ঘর বরাদ্দ নিয়ে থাকার তথ্য পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভাঙাচোরা সড়কে ঢাকাজুড়ে ভোগান্তি

সৈয়দ ঋয়াদ ও জয়নাল আবেদীন, ঢাকা
দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় সড়কের পিচ-পাথর উঠে গেছে আগেই। সামান্য বৃষ্টিতেই কাদায় একাকার। সম্প্রতি রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় সড়কের পিচ-পাথর উঠে গেছে আগেই। সামান্য বৃষ্টিতেই কাদায় একাকার। সম্প্রতি রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

খিলগাঁও ফ্লাইওভারের ওপর দীর্ঘ সারিতে আটকে থাকা গাড়ির ফাঁক গলে পড়িমরি করে ছুটছিলেন এক তরুণ। সঙ্গে থাকা লাগেজ থেকে মনে হচ্ছিল, বিদেশগামী যাত্রী। জিজ্ঞেস করতেই তাঁর সঙ্গে থাকা একজন তা নিশ্চিত করলেন। জানালেন, ফ্লাইট ধরা নিয়ে তাঁরা চরম উৎকণ্ঠায় আছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ফ্লাইওভার থেকে নামার মুখেই সড়কে পানি থাকা এক গর্তে পিকআপের চাকা ফেঁসে গিয়ে এই পরিস্থিতি। রাজধানীজুড়ে নানা কারণে সড়কে এমন জনভোগান্তি নৈমিত্তিক বিষয়। এতে লাখো নাগরিকের মানসিক দুর্ভোগের পাশাপাশি অসংখ্য কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়ে জাতীয় অর্থনীতির ক্ষতি হচ্ছে বিস্তর।

খানাখন্দ, পরিষেবার জন্য সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়ি, যত্রতত্র পার্কিং, হকার-দোকানিদের দখল ইত্যাদি কারণে ঢাকা শহরের বিভিন্ন সড়কে চলাচল করা দুর্ভোগের আরেক নাম হয়ে উঠেছে। যাত্রাবাড়ী থেকে উত্তরা ছাড়িয়ে অনেক দূর পর্যন্ত সড়কপথের স্থানে স্থানে এই চিত্র দেখা যাবে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতায় থাকা ডেমরা, মাতুয়াইল, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, মানিকনগর, মুগদা, কমলাপুর, মালিবাগ, রামপুরা, বাসাবো, মান্ডা এবং উত্তর সিটির (ডিএনসিসি) খিলখেত, উত্তরা, আবদুল্লাহপুর, আশকোনা, উত্তরখান, দক্ষিণখান, কাওলাসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

আশপাশের বড় সড়কগুলো ছাড়াও ডিএসসিসির ৬৯ নম্বর ওয়ার্ডের মাতুয়াইল মুসলিম নগর বাদশা মিয়া সড়ক, ডেমরা বালুরঘাট থেকে ডেমরা বাজার লতিফ বাওয়ানী জুট মিলের পেছনের সড়ক, ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার থেকে ডেমরা থানা হয়ে ৪ নম্বর গেট, ডেমরা-কালীগঞ্জ সড়ক, পাইটি ওয়াসা রোড খানাখন্দে ভরা। যানজট ও দুর্ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। সংস্কারকাজ চলছে ঢিমেতালে। ডেমরার ডগাইর শাপলা চত্বর থেকে পশ্চিম সানারপাড় পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার রাস্তার সংস্কারকাজের মন্থর গতিতে চরম ভোগান্তিতে রয়েছে এলাকাবাসী।

লতিফ বাওয়ানী জুট মিলের কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বললেন, দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি ভাঙাচোরা। সামান্য বৃষ্টিতেও দুর্ভোগ কয়েক গুণ বেড়ে যায়।

মানিক নগর-মুগদা ওয়াসা রোড, বাসাবো, নন্দীপাড়া এবং গোড়ানের অনেক সড়কের অবস্থাও একই রকম। দীর্ঘ সময় পার হলেও ড্রেনেজ ও সড়ক মেরামতের কাজ শেষ হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, সিটি করপোরেশন ও ঠিকাদারদের অবহেলায় দক্ষিণের ৬, ৭১, ৭২—এই তিনটি ওয়ার্ডের লক্ষাধিক মানুষ রয়েছে চরম বিপাকে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতায় থাকা স্টাফ কোয়ার্টার থেকে রামপুরা সড়কটির অবস্থাও খুব খারাপ।

ঢাকা মহানগর উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতায় থাকা ৫৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে গুলশান, বনানী, বারিধারার মতো অভিজাত আবাসিক ও ডিপ্লোমেটিক এলাকা ছাড়া অনেক সড়ক নাজুক। ওয়ার্ডভিত্তিক ছোট ছোট সড়কের পাশাপাশি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উত্তরা থেকে আবদুল্লাহপুর হয়ে ধউর বেড়িবাঁধ পর্যন্ত রাস্তাও ভালো নয়।

দক্ষিণখানের কসাইবাড়ী রেলগেট থেকে উত্তরখানের কাঁচকুড়া বাজার পর্যন্ত, দোবাদিয়া ব্রিজ থেকে কাঁচকুড়া বাজার পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য খুঁড়ে রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন।

কাঁচকুড়ার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা রাজধানীতে বাস করি। এটা ছবি দেখিয়ে কাউকে বললে বিশ্বাসই করবে না।’

এ ছাড়া দক্ষিণখানের গণকবর স্থান সড়ক, আশকোনা থেকে কাওলা সংযোগ সড়ক, খিলক্ষেতের নিকুঞ্জ-২ এর সরকারবাড়ী থেকে নাগরিক টিভি-সংলগ্ন সড়ক হয় ভাঙাচোরা কিংবা ধীরগতিতে সংস্কারকাজ চলছে।

ডিএনসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফারুক হাসান মো. আল মাসুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইউটিলিটি লাইন, অবৈধ দখলের কারণে কাজের ধীরগতি থাকতে পারে। গড়ে ৩০ শতাংশ জনবল নিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়। ঠিকাদারের গাফিলতি থাকলে চুক্তি অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।’

ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যেসব সড়কে পানি জমে থাকে, সেগুলোর কাজ করছি। গুলশান লেক এলাকায় হাঁটা যেত না, আমরা সেই কাজটা করেছি। তেজগাঁও, উত্তরখান, দক্ষিণখানেও কাজ চলছে।’

এ ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জোন-৮-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহেব হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘টেন্ডার হয়ে যাওয়া সড়কের কাজ চলছে। অন্যান্য রাস্তার বিষয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাজেটের স্বল্পতায় আমরা অনেক কাজ করতে পারছি না। নির্বাচিত সরকার না থাকার কারণেও কিছুটা প্রভাব পড়েছে। চেষ্টা করছি, সংস্কারকাজগুলো যেন আটকে না থাকে।’

ঢাকা জেলা সড়ক ও জনপথ দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘ঢাকা নগরে আমাদের অল্প কিছু সড়ক আছে। ডেমরার রাস্তাটি কিছুটা খারাপ আছে। ইটের সোলিং করা আছে। শিগগির মেরামতের কাজে হাত দেব।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি ও নগর-পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘নগরের সড়কে বর্তমানে যে সংকট, তা মূলত স্থানীয় জনপ্রতিনিধি না থাকার কারণে হচ্ছে। আন্তদপ্তর সমন্বয়হীনতার সমাধানও করতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিষিদ্ধ গাছ বিক্রি টেন্ডার ছাড়াই

আনোয়ার হোসেন শামীম, গাইবান্ধা
কাটা গাছ ট্রাকে করে সরিয়ে নিচ্ছেন শ্রমিকেরা। গত শুক্রবার গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শাখাহার ইউনিয়নের কামদিয়া-পানিতলা সড়কে। ছবি: আজকের পত্রিকা
কাটা গাছ ট্রাকে করে সরিয়ে নিচ্ছেন শ্রমিকেরা। গত শুক্রবার গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শাখাহার ইউনিয়নের কামদিয়া-পানিতলা সড়কে। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে টেন্ডার ছাড়াই সরকারি রাস্তার ছয় শতাধিক নিষিদ্ধ ইউক্যালিপটাসগাছ কাটা হচ্ছে প্রকাশ্যে। গাছ কাটার খবর পেয়েও প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। তিন দিন ধরে উপজেলার শাখাহার ইউনিয়নের শালপাড়া থেকে মিরিপুকুর পর্যন্ত এবং কামদিয়া-পানিতলা রাস্তা থেকে শালপাড়া পর্যন্ত এলাকায় এসব গাছ কাটা হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শালপাড়া যুব উন্নয়ন ক্লাব ও শালপাড়া এম এ মান্নান ক্লাবের সদস্যদের না জানিয়ে সভাপতি মাহমুদ হাসান ইউএনওর কথিত ‘মৌখিক অনুমতি’ দেখিয়ে স্থানীয় কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে ঠিকাদারের কাছে গাছগুলো বিক্রি করেন ২৮ লাখ টাকায়। অথচ বন বিভাগের তালিকায় এসব গাছের দাম ধরা হয়েছে মাত্র সাড়ে ১২ লাখ টাকা।

জানা গেছে, ২০০৬ সালে শালপাড়া যুব উন্নয়ন ক্লাব ও শালপাড়া এম এ মান্নান ক্লাবের সদস্যরা প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকায় ৬০০টির বেশি ইউক্যালিপটাসগাছ রোপণ করেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী, গাছ বিক্রির সময় বিক্রয়মূল্যের ২০ শতাংশ ইউপি ও ১০ শতাংশ জমির মালিক পাবেন। এর মধ্যে সমিতির সভাপতি মাহমুদ ও বেলাল নামের দুজনে গোপনে চেয়ারম্যানের কাছে গাছ কাটার আবেদন করলে চেয়ারম্যান বিষয়টি ইউএনওকে জানান।

নিয়ম অনুযায়ী, মূল্য নির্ধারণের পর গাছগুলো বিক্রির জন্য টেন্ডারের সব ব্যবস্থা করবেন ইউপির চেয়ারম্যান। কিন্তু এ বিষয়ে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘সব কাজ ক্লাবের সভাপতি করেছেন।’

গত শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, শ্রমিকেরা ট্রাক ও ট্রলিতে করে দ্রুতগতিতে কাটা গাছ সরিয়ে নিচ্ছেন। সকাল থেকে বেলা ৩টার মধ্যে তিন শতাধিক গাছ কাটা হয়। ক্লাবের সভাপতি মাহমুদ ও তাঁর সহযোগী বেলাল সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ক্লাবের সদস্য নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছিল গাছ ১২ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলছেন দাম ২৮ লাখ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। আমরা টাকা পাইনি, তিনি আমাদের সঙ্গে জালিয়াতি করেছেন। আমরা এর শাস্তি চাই।’

জানতে চাইলে গাছ বিক্রির সঙ্গে জড়িত বেলাল হোসেন বলেন, ‘যেখানে কাগজপত্র দেখানোর, সেখানে দেখানো হবে। না হলে মামলা করুক।’ গাছ ক্রেতা এমরান জানান, ‘সব কাগজপত্র সভাপতির কাছে আছে। আমি তাদের কাছ থেকেই গাছ কিনেছি। দাম প্রায় ১৮ লাখ টাকার মতো।’

অন্য ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি ২৫ লাখ টাকা অফার করেছিলাম। কিন্তু সভাপতি আরও বেশি দাম আশা করায় বিক্রি করেননি।’ ক্লাবের সদস্য মুনছুর আলী বলেন, নিয়ম না মেনে গাছ বিক্রি করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ ও জমির মালিক কেউই টাকার অংশ পায়নি। টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি হলে দাম আরও বেশি পাওয়া যেত।

সভাপতি মাহমুদ হাসান বলেন, ‘ইউএনওর মৌখিক নির্দেশে গাছ বিক্রি করেছি। বন বিভাগের মূল্য অনুযায়ী দাম ১২ লাখ টাকা। ২৮ লাখ টাকায় বিক্রির অভিযোগ সঠিক নয়।’ এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ সামাজিক বনায়ন বিভাগের ফরেস্টার মিজানুর রহমান বলেন, দাম কমবেশি হতে পারে; কিন্তু সরকারি জায়গার গাছ টেন্ডারের বাইরে বিক্রির কোনো সুযোগ নেই।

গোবিন্দগঞ্জ ইউএনও ইয়াসমিন সুলতানা বলেন, ‘উপজেলা সমন্বয় সভায় গাছ বিক্রির অনুমোদনের কথা বলা হয়েছিল। তবে পরবর্তী সময়ে তাঁরা কীভাবে গাছ কাটছেন, তা আমার জানা নেই।’

এ বিষয়ে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জেম আহমদ বলেন, ‘সরকারি জায়গার গাছ বিক্রি করতে হলে অবশ্যই টেন্ডারের মাধ্যমে করতে হবে। এ ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে ইউএনওকে বলে দিচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত