Ajker Patrika

বরিশাল নগরে গৃহকর: ঘুষ দিলে মাপা হয় না ঘর

  • বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঘুষ চাওয়ায় নুর আলম নামের এক কর্মচারীকে প্রত্যাহার।
  • ৩০টি ওয়ার্ডে অনিয়মের তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ৩০ কর্তাকে।
খান রফিক, বরিশাল 
নগর ভবন, বরিশাল। ছবি: সংগৃহীত
নগর ভবন, বরিশাল। ছবি: সংগৃহীত

নগরীতে নতুন করে গৃহকর নির্ধারণে যে মাপজোক হয়েছে তাতে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) এলাকায়। এরপর ৩০ জন কর্মকর্তাকে ৩০টি ওয়ার্ডে কর নির্ধারণে তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এরপরও আতঙ্কে রয়েছেন ভবনমালিকেরা।

বিসিসি এলাকায় ৬ হাজারের বেশি ভবন রয়েছে। এ ভবনের কর নির্ধারণে ভবন পরিমাপ শুরু হয় দেড় মাস আগে। এ কাজ করতে গিয়ে নগরের ৩০টি ওয়ার্ডেই করপোরেশনের কর শাখার কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘুষ চাওয়ায় ইতিমধ্যে কর ধার্য শাখার নুর আলম নামের এক কর্মচারীকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি করপোরেশনের ধার্য শাখার কয়েকজন কর্মচারী নগর ভবনে এক কর্মকর্তার ওপর চড়াও হয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ওই কর্মকর্তা কর নির্ধারণে অনিয়ম নিয়ে বিসিসির শীর্ষ কর্মকর্তাদের অবহিত করেছেন। এরপরই এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।

এ পরিস্থিতিতে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ৩০টি ওয়ার্ডের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের নিয়ে নগর ভবনে এক জরুরি সভা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সাধারণ মানুষের হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণে উল্টাপাল্টা কিছু করা হচ্ছে কি না, তা তদারকির জনই কর্মকর্তারা কাজ করবেন।’

ঘুষ দিলে মাপা হয় না ভবন

অভিযোগ উঠেছে, গৃহকর নির্ধারণে ভবন মাপা শুরু হওয়ার পর অনেক এলাকায় যাননি করপোরেশনের কর্মচারীরা। সে ক্ষেত্রে ভবনমালিকদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়া হয়েছে। আবার যাঁরা ঘুষ দেননি, তাঁরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বিসিসির দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, সরকারনির্ধারিত কর ধার্য না করায় সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের আমলে গৃহকর নির্ধারণের উদ্যোগ ভেস্তে গেছে। এ ছাড়া সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর আমলেও গৃহকর নির্ধারণ করতে গিয়ে জন-অসন্তোষে পড়তে হয়। দায়ের করা হয় একাধিক মামলা।

যিনি ঘুষ দিতে চান না, তাঁকে হয়রানি করা হয়। মাপজোক নিয়ে নগর ভবনে ডেকে ডেকে কর নির্ধারকেরা ভবনমালিকদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। মহসীন-উল-ইসলাম হাবুল, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা

২০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মহসীন-উল-ইসলাম হাবুল বলেন, ‘যাঁরা ঘুষ দেন তাঁদের বিল্ডিং পরিমাপ করা লাগে না। আর যিনি ঘুষ দিতে চান না, তাঁকে হয়রানি করা হয়। মাপজোক নিয়ে নগর ভবনে ডেকে ডেকে কর নির্ধারকেরা ভবনমালিকদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে হয়রানি বন্ধ না হলে সাবেক মেয়র সাদিক কিংবা কামালের মতো তোপের মুখে পড়তে হবে।’

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পরিমাপ শুরু হওয়ার পর বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঘুষ চান নুর আলম নামের এক কর ধার্য সহকারী। পরে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে বিসিসির প্রধান কর নির্ধারক (চলতি দায়িত্ব) মোস্তা গাওসুল হক খুসবু বলেন, ‘অনিয়ম পাওয়ায় ওনাকে পরিমাপের কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা হয়েছে।’ কর নির্ধারণে ভবনের পরিমাপে অনিয়মের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যেসব অভিযোগ তাঁর শাখার বিষয়ে উঠেছে, তা সব যে সত্য, তা নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘কর নির্ধারণে বাড়ি বাড়ি ৭০ ভাগ ভবনের পরিমাপ হয়েছে। আমরা ভবনের পরিমাপে কাজ করছি, তাতে কর ধার্য সহকারীরা অনিয়ম করেছেন কি না, তা তদারকি করার জন্য ৩০টি ওয়ার্ডে ৩০ জন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’

হয়রানি বাড়ছে

নগরের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের ফিশারি রোডে এক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তার বাসা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘ভবনের পরিমাপ করে এসেছেন সিটি করপোরেশনের কর শাখার কর্মচারীরা। কয়েকবার নগর ভবনে গেছি। কিন্তু তাঁরা কিছু বলছেন না, লুকোচুরি খেলছেন।’ ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাজীপাড়ার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মাপজোক করে তো নিয়ে গেল ১৫ দিন আগে। এখন আর কিছুই বলছে না করপোরেশন।’

বরিশাল নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ বলেন, ‘আমাদের দাবি হচ্ছে, অযৌক্তিকভাবে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো যাবে না। তাঁরা প্ল্যান পাস করতে পারেন না অথচ হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে মাপামাপি শুরু করে জনগণকে হয়রানি করছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ডিমলায় টিকা নিতে গিয়ে পিকআপের ধাক্কায় নানি-নাতনি নিহত

ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি 
উপজেলার গয়াবাড়ী ইউনিয়নের গয়াবাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজসংলগ্ন ঘোড়ামারা রোড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ছবি: আজকের পত্রিকা
উপজেলার গয়াবাড়ী ইউনিয়নের গয়াবাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজসংলগ্ন ঘোড়ামারা রোড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ছবি: আজকের পত্রিকা

নীলফামারীর ডিমলায় টিকা নিতে যাওয়ার পথে পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় নানি তাঁর ১৪ দিনের নবজাতক নাতনিসহ নিহত হয়েছেন। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার গয়াবাড়ী ইউনিয়নের গয়াবাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজসংলগ্ন ঘোড়ামারা রোড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন উপজেলার গয়াবাড়ী ইউনিয়নের শুটিবাড়ি বাজারসংলগ্ন এলাকার আব্দুস ছাত্তার খানের স্ত্রী মোছা. সূর্য খাতুন (৫৫) এবং তাঁর নাতনি সামিয়া আক্তার (১৪ দিন) একই এলাকার বাসিন্দা বাবুল হোসেনের মেয়ে।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সকালে সূর্য খাতুন নাতনি সামিয়াকে নিয়ে টিকাদান কেন্দ্রে যাচ্ছিলেন। রাস্তা পার হওয়ার সময় দ্রুতগতির একটি মালবাহী পিকআপ তাঁদের ধাক্কা দেয়। ঘটনাস্থলেই নবজাতক সামিয়া মারা যায়। স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় সূর্য খাতুনকে উদ্ধার করে ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

দুর্ঘটনার পর পিকআপের চালক পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

নিহত নবজাতকের স্বজনেরা বলেন, নানি তাঁর নাতনিকে নিয়ে টিকা দিতে গিয়েছিল। সকালবেলায় হাসিখুশি ছিল সবাই। কিন্তু মুহূর্তেই সব শেষ হয়ে গেল।

স্থানীয়রা জানান, ওই সড়কে বেপরোয়া গতির কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।

ডিমলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করেছে। পিকআপের চালককে শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্টেশনমাস্টারের দুর্নীতি-স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে মানববন্ধন

আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি 
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের স্টেশনমাস্টারের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের স্টেশনমাস্টারের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা

জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের স্টেশনমাস্টার খাদিজা খাতুনের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে মানববন্ধন করা হয়েছে। আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে আক্কেলপুর রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ‘আক্কেলপুরবাসী’র ব্যানারে এই মানববন্ধন হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অর্ধশতাধিক মানুষ অংশ নেন।

মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, খাদিজা খাতুন ২০ বছরের বেশি সময় ধরে আক্কেলপুরের স্টেশনমাস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সান্তাহার জংশনের দায়িত্বেও আছেন। স্থানীয় যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া এবং তাঁর মনগড়া প্রতিবেদনের কারণে চিলাহাটী এক্সপ্রেস ট্রেনের আক্কেলপুরে যাত্রাবিরতি বন্ধ রয়েছে বলে অভিযোগ করেন বক্তারা। তাঁকে দ্রুত এখান থেকে অপসারণের দাবি জানান তাঁরা।

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন আক্কেলপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও চিলাহাটী এক্সপ্রেসের যাত্রাবিরতির সমন্বয়ক আব্দুর রউফ মাজেদ। বক্তব্য দেন পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র রফিকুল ইসলাম চপল, তিলকপুর ইউপির সদস্য মামুনুর রশিদ পিন্টু, কলেজশিক্ষক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী, ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম তুহিন, মাসুদ চৌধুরী, ছাত্রদল নেতা আরমান হোসেন কানন প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, আক্কেলপুর, ক্ষেতলাল, নওগাঁর বদলগাছী-পত্নীতলা এবং বগুড়ার দুপচাঁচিয়া এলাকার যাত্রীরা এই স্টেশন ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করে। চিলাহাটী এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রাবিরতি পেলে মানুষের ভোগান্তি অনেকটা কমবে। কিন্তু স্টেশনমাস্টার খাদিজা খাতুনের মনগড়া প্রতিবেদনের কারণে তা বন্ধ রয়েছে।

এ বিষয়ে আক্কেলপুরের স্টেশনমাস্টার খাদিজা খাতুন বলেন, ‘আমি চিলাহাটী এক্সপ্রেসের যাত্রাবিরতির বিরোধিতা করে কোনো মৌখিক বা লিখিত প্রতিবেদন দিইনি। ২০২৪ সাল থেকে সান্তাহার জংশনের অতিরিক্ত দায়িত্বও পালন করছি। এক বছর তিন মাসে কোনো যাত্রী আমার দ্বারা হয়রানির শিকার হয়নি। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। একটি স্বার্থান্বেষী মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বন্য প্রাণী সংরক্ষণের নতুন আইনে জামিনের সুযোগ না রাখার প্রস্তাব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।  ফাইল ছবি
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ফাইল ছবি

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘বন্য প্রাণী সংরক্ষণে নতুন করে যে আইন করা হচ্ছে, তার খসড়ায় জামিনের সুযোগ না রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। আমরা বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন যেটা নতুন ড্রাফট করেছি, সেখানে কগনিজেবল (পুলিশ যেখানে আদালতের অনুমতি ছাড়াই গ্রেপ্তার ও তদন্ত শুরু করতে পারে) এবং নন-বেইলেবল (জামিন অযোগ্য) অপরাধ যুক্ত করেছি, যা এখনো খসড়া আকারে রয়েছে এবং ক্যাবিনেটে যায়নি।’

আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বন ভবনে ‘আন্তর্জাতিক মিঠাপানির ডলফিন দিবস ২০২৫’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘বন্য প্রাণী রক্ষায় শুধু আইন নয়, মনস্তাত্ত্বিক ও আচরণগত পরিবর্তন জরুরি। যদি মানুষ নিরীহ প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুর হয়, তা সমাজের মূল্যবোধের অবক্ষয়ের প্রতিফলন। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর মেছো বিড়াল নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করলাম। মেছো বিড়ালকে শুধু শুধুই আমরা মেছো বাঘ বলি। বাঘ বলে একটা ভীতি সঞ্চার করি। নিরীহ একটা প্রাণীকে মেরে ফেলি। মারি যে, লজ্জাও পাই না। মেরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা প্রকাশ করি। বন্য প্রাণী আইন বলেন, বিধিমালা বলেন, বন বিভাগ বলেন, সব যদি সক্রিয় হয়; কিন্তু মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন যদি না আসে, তাহলে এই প্রাণীগুলোকে বাঁচানো যাবে না। এই নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে সমাজকে দাঁড়াতে হবে।’

অনুষ্ঠানে ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটির কান্ট্রি ডিরেক্টর ও ডলফিন বিশেষজ্ঞ ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘দেশের ৪৫টি বড় নদীতে জরিপ করে ৩৯টি নদীতে ২ হাজার ৮২টি ডলফিনের সংখ্যা নির্ণয় করা হয়েছে। আমাদের প্রায় ২৫০টি ডলফিন মারা যাওয়ার তথ্য আছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ আমরা দেখেছি কারেন্ট জাল অথবা ফাঁস জালে আটকে মারা গেছে।’

এ বিষয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘ডলফিনগুলোকে বাঁচানোর জন্য বা বংশবৃদ্ধি করার জন্য যা প্রয়োজন, তা একটা সভ্য সমাজের মানদণ্ডের নির্ণায়ক। আপনি যদি বলেন, শুশুক বা আমাদের ডলফিন থাকবে পরিষ্কার পানিতে, তাহলে যেকোনো সভ্য জাতিও থাকবে পরিষ্কার পানির পাশেই। যে জাতি নিজেকে সভ্য দাবি করবে, সে জাতি তার নদীগুলোকে আবার দূষিত করবে—দুটো একসঙ্গে হতে পারে না। দুটো সাংঘর্ষিক হয়ে যাচ্ছে।’

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘যখন ডলফিনের সংখ্যা বাড়বে, তখন বুঝতে হবে, নদীদূষণ আমরা নিয়ন্ত্রণ করছি। যখন আমার ডলফিনের সংখ্যা কমবে, তখন আমি বুঝব, নদীগুলোকে আমি ঝুঁকিপূর্ণ করে ফেলছি। নদী মানুষের জন্য যখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়, তখন তা ডলফিনের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। নদী যখন ডলফিনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, তখন তা মানুষের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ।’

ডলফিন নদীর ‘সুস্থতার প্রতীক’ উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, যেখানে ডলফিন টিকে থাকে, সেখানে নদীও টিকে থাকে। আর নদী টিকে থাকলেই মানুষ বাঁচে। ডলফিন নিয়ে কথা বলা মানে আমাদের বেঁচে থাকার কথাই বলা। কারণ নদীর পানি যদি দূষিত হয়, তাহলে তা যেমন ডলফিনের জন্য বিপদ, তেমনি মানুষের জন্যও। নদী পরিষ্কার রাখাই মানুষের ও ডলফিনের জীবনের অন্যতম শর্ত।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি আশা করি, দেশের প্রতিটি জেলায় বন বিভাগকে সহায়তা করার জন্য স্বেচ্ছাসেবী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হবে। এতে প্রাণী উদ্ধার ও সুরক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হবে। বন্য প্রাণী রক্ষায় যাঁরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করছেন, তাঁদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’

প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বন সংরক্ষক মো. ছানাউল্যা পাটওয়ারী, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মির্জাপুরে নিখোঁজের তিন দিন পর তিন সন্তানের জননীর পা বাঁধা লাশ উদ্ধার

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ৪০
নিহত গোলাপী বেগম । ছবি: সংগৃহীত
নিহত গোলাপী বেগম । ছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে নিখোঁজের তিন দিন পর গোলাপী বেগম (৩৫) নামের তিন সন্তানের জননীর পা বাঁধা অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার (২৬ অক্টোবর) সকালে মির্জাপুর থানা-সংলগ্ন বারোখালী খাল থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত গোলাপী বেগম মির্জাপুর পৌর এলাকার বাওয়ার রোডের বিশু মিয়ার মেয়ে ও পোষ্টকামুরী দক্ষিণ পাড়ার আব্দুল কাদের মিয়ার স্ত্রী।

পারিবারিক সূত্র জানায়, তিন দিন আগে গোলাপী বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। এর পর থেকে তাঁর আর খোঁজ মেলেনি। রোববার সকালে স্থানীয় লোকজন থানার পাশে খালে ভাসমান লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জিআই তার দিয়ে পা বাঁধা অবস্থায় অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে।

মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘গোলাপী বেগম তিন দিন আগে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। পরনের কাপর দেখে তাঁর লাশ স্বামী কাদের মিয়া শনাক্ত করেছেন। এটি একটি হত্যা। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত