বিসিসির কাজ বাগাতে তৎপর বিএনপি নামধারীরা

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) নানা উন্নয়নকাজ একটি সংঘবদ্ধ চক্র (সিন্ডিকেট) দখল করে নিচ্ছে। পদ না থাকলেও বিএনপি নামধারী কয়েক নেতা করপোরেশনের লাখ লাখ টাকার কাজগুলো করেছে বলে অভিযোগ করেছে। এ নিয়ে গত মঙ্গলবারও দুই পক্ষে হাতাহাতি হয়েছে।

এরশাদ শাসনামলের জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আতহারুল ইসলাম চৌধুরী বাবুল গত দুই দশকের বেশি বরিশাল বিএনপিতে কোনো পদে নেই। স্থানীয় কোনো কর্মসূচিতেও তাঁকে দেখা যায় না। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাবুল নগর ভবনে সিন্ডিকেট করতে বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছেন। গত কয়েক মাসে ঘটে যাওয়া একাধিক অপ্রীতিকর ঘটনার হোতাও তাঁরা। বিএনপির আরেক পক্ষ নগর ভবনের নিয়ন্ত্রণ পেতে গত মঙ্গলবার বাবুল ও তাঁর সহযোগীদের ওপর হামলা চালায়।

নগর ভবনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সাধারণ ঠিকাদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঠিকাদারি কাজের ভাগবণ্টনে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় বাবুল চৌধুরী, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান পিন্টুসহ অঙ্গ-সংগঠনের কয়েকজনের বিরুদ্ধে নগর ভবনে ঘাঁটি গাড়ার অভিযোগ ওঠে। প্রতিদিনের বেশির ভাগ সময় তাঁরা নগর ভবনে অবস্থান করেন। কোটেশনে দরপত্রের কাজ বাগানো, ঠিকাদারদের বকেয়া বিল পরিশোধসহ প্রায় সব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতেন। একপর্যায়ে বাবুল চৌধুরী প্রশাসনিক কার্যক্রমেও হস্তক্ষেপের চেষ্টা চালালে একাধিক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। এর রেশ না কাটতেই বিএনপির আরেক পক্ষ মঙ্গলবার দুপুরে নগর ভবনে পিন্টুর ওপর হামলা করে। এ সময় বাবুল চৌধুরীও লাঞ্ছিত হন বলে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র নিশ্চিত করেছে।

করপোরেশনের একাধিক কর্মী জানান, মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে মহানগর যুবদলের সহসভাপতি মো. সামসুল আলমের নেতৃত্বে পিন্টুর ওপর হামলা হয়। এ সময় বাবুল চৌধুরী এগিয়ে এলে তাঁকে গালিগালাজসহ ধাক্কাধাক্কি করা হয়।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সামসুল আলম জানান, তিনি পৌরসভা আমলের ঠিকাদার। আওয়ামী লীগের পতনের পর বিভাগীয় কমিশনার ও প্রশাসক হলে নগর ভবনে বিএনপি নামধারী একটি সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। বিএনপিতে তাঁদের কোনো পদ নেই। তাঁরা কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে কোটেশনের উন্নয়নকাজগুলো বাগাতে থাকেন। বাবুল চৌধুরীকে ইঙ্গিত করে বলেন, কোনো কোনো বড় ভাই আছেন যাঁদের সঙ্গে ছাত্ররাজনীতি করেছি, তাঁদের চরিত্র এমন ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার কাজের লোভও সামলাতে পারেন না। মঙ্গলবারের ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, দলের তরুণ ও ত্যাগী কর্মীদের ছোট কাজগুলো করার সুযোগ দেওয়ার জন্য বাবুল চৌধুরী ও পিন্টুকে বলেছিলাম। এ নিয়েই ঘটনার সূত্রপাত হয়।

তবে পিন্টু হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সামসুল আলমের সঙ্গে তাঁর কথা-কাটাকাটি হয়েছে মাত্র। নিয়মিত নগর ভবনে যাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, তাঁর অনেক টাকা বকেয়া বিল রয়েছে। সেগুলো কীভাবে তোলা যায় সে জন্য যান। নগর ভবনের কোনো বিষয়ে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

সিটি করপোরেশন ঠিকাদার সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর নগর ভবনে রাজনৈতিক পরিচয়ে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে সাধারণ ঠিকাদারদের মধ্যে ক্ষোভ ও নগর ভবনে অস্থিরতা চলছে।

বিএনপির একাধিক নেতা-কর্মী জানান, সাবেক ছাত্রদল নেতা বাবুল চৌধুরীর দীর্ঘ বছর বিএনপির কোনো পদে নেই। তবে বিএনপির সুসময়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঠিকাদারি কাজ নিয়ে নয়-ছয়ের অভিযোগ রয়েছে। তিনি একাধিক চেক প্রতারণা মামলার আসামি।

অভিযোগ প্রসঙ্গে বাবুল চৌধুরী বলেন, সিটি করপোরেশনে তাঁর চৌধুরী কনস্ট্রাকশন নামের একটি লাইসেন্স রয়েছে। আওয়ামী লীগ আমলে নবায়ন করতে না পারায় সেটি বাতিল হয়েছে। ওই লাইসেন্সটি পুনরুজ্জীবিত করতে তিনি নিয়মিত নগর ভবনে যান। নগর ভবনের অন্য বিষয়ে তিনি হস্তক্ষেপ করেন না। তাঁর সঙ্গে কারও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সাউথইস্ট ব্যাংকের সঙ্গে মামলার বিষয়টি স্বীকার করেন বাবুল।

এ প্রসঙ্গে বরিশাল মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন বলেন, করপোরেশনে যাঁরা ঠিকাদারি কাজের নামে বিশৃঙ্খলা করেন তাঁরা বিএনপির কেউ নন। তিনিও শুনেছেন বরিশাল নগর ভবনে ঝামেলা হচ্ছে। তাঁর দাবি, বাবুল চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির কর্মসূচিতে অনুপস্থিত।

এ ব্যাপারে বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা রেজা উল বারী বলেন, নগর ভবনে ঠিকাদারদের মধ্যে হাতাহাতির বিষয় তাঁর জানা নেই। হয়তো ওনাদের মধ্যে কাজ পাওয়া নিয়ে ঝামেলা হয়েছে।