Ajker Patrika

গরুর খামারে ভাগ্যবদল শামিমের

 আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি 
আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০২৫, ১৬: ৩০
খামারে গরুকে আদর করছেন শামিম সিকদার। ছবি: আজকের পত্রিকা
খামারে গরুকে আদর করছেন শামিম সিকদার। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিদেশের চাকরি ছেড়ে দেশে ফিরে গরুর খামার গড়ে ভাগ্য বদল করেছেন বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের বাশাইল গ্রামের শামিম সিকদার। তাঁর ‘রাইয়ান ডেইরি অ্যান্ড ফ্যাটেনিং খামার’ এখন এলাকার সফল সমন্বিত খামারগুলোর একটি। খামারের মাধ্যমে নিজের ভাগ্য বদলের পাশাপাশি কর্মসংস্থানও করেছেন গ্রামের বেশ কয়েকজন বেকার যুবকের।

শামিম জানান, জীবিকার টানে ২০০৮ সালে তিনি দুবাই যান। কিন্তু মাত্র এক বছর পরই টান অনুভব করেন জন্মভূমির মাটির প্রতি। সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে স্থায়ীভাবে দেশে ফিরে আসেন। তখন অনেকেই মনে করেছিলেন বিদেশের চাকরি ছেড়ে ফেরা ভুল হবে। কিন্তু ছোটবেলা থেকে বাবার গরু পালনের প্রতি ভালোবাসা তাঁকে অনুপ্রাণিত করে। দেশে ফিরে ২০১২ সালে ২০টি গাভি ও ষাঁড় দিয়ে খামার শুরু করেন।

প্রথম দিকে নানা সংকটের মুখে পড়তে হলেও হাল ছাড়েননি শামিম। তিনি বলেন, ‘শুরুতে অভিজ্ঞ লোক পাওয়া, রোগবালাই সামলানো, বাজারের প্রতিযোগিতা—এসব বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে দেশি প্রযুক্তি, ভালো জাতের গরু আর পশু চিকিৎসকের পরামর্শে খামারটিকে বড় করেছি।’

এখন তাঁর খামারে রয়েছে শতাধিক দেশি-বিদেশি গাভি ও ষাঁড়। গত কোরবানিতে তিনি বিক্রি করেছেন ৪৭০টি গরু। খামারের পাশাপাশি দুটি পুকুরে মাছ চাষ এবং চার একর জমিতে গরুর খাবারের ঘাস চাষ করছেন। খামারে নিয়মিত কাজ করছেন ১০ জন বেতনভুক্ত শ্রমিক।

খামারে কাজ করা ছাব্বির বলেন, ‘এখানে কাজ করে যে আয় করি, তা দিয়ে নিজের ও পরিবারের খরচ চালাতে পারছি। শামিম ভাই দেখিয়েছেন, বিদেশে না গিয়েও নিজের গ্রামে থেকে সফল হওয়া যায়।’

সরেজমিন দেখা গেছে, দুটি পুকুরের মাঝখানে গরুর জন্য দুটি শেড ও একটি দোতলা দালান রয়েছে। শেডে বিদেশি জাতের গাভি ও বাছুর, আর দালানে রাখা আছে ষাঁড়।

শামিম জানান, বর্তমানে তাঁর খামারে প্রায় দুই কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। বছরে খরচ বাদে আয় হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা। খামারের গাভি থেকে প্রতিদিন ৩০০ লিটার দুধ পাওয়া যায়। তবে তা বাজারজাত করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। খামারে ৬০ হাজার টাকা থেকে ৫ লাখ টাকার গরু রয়েছে। ভবিষ্যতে দুধ থেকে ঘি তৈরি ও স্থানীয়ভাবে মিষ্টির দোকান দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে তাঁর।

গর্বের সঙ্গে শামিম বলেন, ‘বিদেশে স্বপ্ন খুঁজতে গিয়েছিলাম, কিন্তু আসল স্বপ্নের ঠিকানা পেয়েছি নিজের গ্রামে। দেশের মাটির ঘ্রাণই আসল সম্পদ।’

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. পলাশ সরকার বলেন, ‘নতুন খামার সৃষ্টির জন্য আমরা উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিই। শামিম সিকদার একটি সমন্বিত খামার গড়ে সফল হয়েছেন। তাঁকে দেখে অনেকেই খামার করতে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। প্রাণিসম্পদ বিভাগ সব ধরনের সহযোগিতা দেবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত