Ajker Patrika

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতাদের রক্ষার অভিযোগ

বাগেরহাট ও চিতলমারী প্রতিনিধি
সাতজন শিক্ষকের লিখিত অভিযোগপত্র। ছবি: সংগৃহীত
সাতজন শিক্ষকের লিখিত অভিযোগপত্র। ছবি: সংগৃহীত

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের পদধারী শিক্ষকদের পক্ষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাঁর ষড়যন্ত্র থেকে বাঁচতে কালশিরা রাজেন্দ্র স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাতজন শিক্ষক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খুলনা অঞ্চলের উপপরিচালকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন করেছেন।

আবেদনকারী শিক্ষকেরা জানান, শিক্ষা কর্মকর্তা মফিজুর রহমান বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পীযূষ কান্তি রায়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অবনী মোহন বসু এবং দপ্তর সম্পাদক বিধান চন্দ্র ব্রহ্মকে নিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসকে দলীয় কার্যালয়ে পরিণত করেছিলেন। এখন তিনি অন্য দলের সমর্থক বলে দাবি করছেন।

আবেদনপত্র থেকে জানা যায়, চিতলমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও কালশিরা রাজেন্দ্র স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র ব্রহ্ম বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের ২৬ অক্টোবর বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা একটি নিরীক্ষা কমিটি গঠন করেন। কমিটির প্রতিবেদন প্রধান শিক্ষক বিধান কুমার ব্রহ্মের ৪৫ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মেলে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গেল বছরের ১৯ ডিসেম্বর শিক্ষকেরা চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

ইউএনও তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। সে সময় দায়িত্বে ছিলেন মোসা. কামরুন্নেছা। তদন্তের প্রথম দিনে তিনি শুনানির তারিখ পরিবর্তন করেন। পরবর্তীকালে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি আবারও শিক্ষকদের পরদিন আসতে বলা হয়। তদন্তকাজে গাফিলতি দেখে শিক্ষকেরা বাগেরহাট জেলা প্রশাসক ও জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে অভিযোগ করেন।

রহস্যজনক কারণে তদন্তের কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় শিক্ষকেরা গত ২ ফেব্রুয়ারি নিরীক্ষা প্রতিবেদন ও তদন্তে সমাজসেবা বা সমবায় কর্মকর্তাকে যুক্ত করার জন্য আবেদন করেন। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সমবায় কর্মকর্তাকে যুক্ত করার ব্যবস্থা নেন।

গত ৭ এপ্রিল মোসা. কামরুন্নেছার বদলির কারণে মো. মফিজুর রহমান চিতলমারীতে অতিরিক্ত দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি এর আগে প্রায় ছয় বছর চিতলমারীতে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেই সময় তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে মিলে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছিলেন। তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান অশোক কুমার বড়াল আইনশৃঙ্খলা সভায় এ বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন, যার পর মফিজুর রহমানের বদলি হয়।

বর্তমানে দায়িত্বে যোগদানের পর থেকেই মফিজুর রহমান প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র ব্রহ্মসহ নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগ সংগঠনের পদধারী শিক্ষকদের রক্ষায় পক্ষপাতিত্ব করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

কালশিরা রাজেন্দ্র স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এবং আবেদনকারীদের একজন প্রভাত কুমার মজুমদার বলেন, ‘যোগদানের পর থেকেই শিক্ষা কর্মকর্তা মফিজুর রহমান তাঁর পুরোনো সহযোগীদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন। তাঁর যোগদানের পর এখনো কোনো তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়নি, যা খুবই রহস্যজনক। বরং তিনি বারবার প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র ব্রহ্মের সঙ্গে আপস করার জন্য চাপ প্রয়োগ ও হুমকি দিচ্ছেন।’

এ বিষয়ে জানতে প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র ব্রহ্মকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

বিগত সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সখ্যের কথা অস্বীকার করে চিতলমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি মোল্লাহাটের অফিসার। চিতলমারীতে অতিরিক্ত দায়িত্বে আছি। যারা অভিযোগ করেছে, তারা খারাপ লোক। ডিজি কেন, তার ওপরে অভিযোগ করুক, আমার কোনো সমস্যা নেই।’

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খুলনা অঞ্চলের উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান মোবাইল ফোনে বলেন, ‘শিক্ষকদের করা দরখাস্তটি আমরা পেয়েছি। কেউ যদি দুর্নীতি করে, অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুর্নীতিবাজদের কোনো প্রশ্রয় আমাদের কাছে নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ