Ajker Patrika

যেভাবে নামকরণ হয় ঘূর্ণিঝড়ের

মাহমুদ সোহেল
আপডেট : ২৬ মে ২০২১, ২২: ২১
যেভাবে নামকরণ হয় ঘূর্ণিঝড়ের

ঢাকা: ভারত মহাসাগরের একটি শাখা হচ্ছে বঙ্গোপসাগর। এই ভারত মহাসাগরে যত ঝড় হয় তার নামকরণ করে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ১৩টি দেশ।

এবারের ঘূর্ণিঝড় ইয়াস নামটি দিয়েছে ওমান। জানা যায়, এটি ফার্সি শব্দ। একাধিক অর্থ আছে এর। কেউ কেউ এর অর্থ করেছেন দুঃখ বা হতাশা। আবার কারও মতে এর অর্থ সুগন্ধী ফুলের গাছ। যেটা জুঁইয়ের কাছাকাছি। ইয়াসের পরে যে ঝড়টি আসবে তার নাম দেওয়া হবে ‘গুলাব’। এই নামটি ঠিক করে রেখেছে পাকিস্তান। তার পরে আসবে পরের ঘূর্ণিঝড়ের নাম হবে শাহিন। নামটির প্রস্তাবক দেশ কাতার।

আবহাওয়াবিদ কাউসারা পারভীন আজকের পত্রিকাকে জানান, বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লুএমও) এর আঞ্চলিক কমিটি একেকটি ঝড়ের নামকরণ করে। ভারত মহাসাগরের ঝড়গুলোর নামকরণ করে এই সংস্থার অন্তর্ভুক্ত ১৩টি দেশ। দেশগুলি হল বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মায়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ওমান, ইরান, শ্রীলঙ্কা, কাতার, সৌদি আরব ও ইয়ামেন। এই প্যানেলকে বলা হয় ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড দা প্যাসিফিক (এএসসিএপি)। ভারতের তরফ থেকে এর আগে অনেক ঘূর্ণিঝড়ের নাম প্রস্তাব করা হয়। তা হলো–অগ্নি, আকাশ, বিজলি, জল, লহর, মেঘ, সাগর।
২০২০ সালে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক তাণ্ডব তালিয়ে অনেক এলাকা লন্ডভন্ড করে দিয়েছিলো ঘূর্ণিঝড় ‘আমপান’। এর নামকরণ করেছিল থাইল্যান্ড। আবার ‘ফণী’ ঝড়ের নাম দিয়েছিল বাংলাদেশ। ‘বুলবুল’ নাম ছিল পাকিস্তানের দেওয়া।

একটা সময়ে বিভিন্ন সংখ্যা দিয়ে ঝড়কে চিহ্নিত করা হতো। কিন্তু তাতে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে অসুবিধা দেখা দেয়। মানুষের কাছে দুর্বোধ্য হয়ে থাকত সেই সব সংখ্যা। নামকরণের মাধ্যমে প্রতিটি ঝড়কে আলাদাভাবে চিহ্নিত করার পাশাপাশি তার সবিস্তার তথ্য নথিভুক্ত করাও সহজ হয়।

নামকরণের ক্ষেত্রে কিছু নিয়মও মানা হয়। যেমন, এমন নামই দেওয়া হয় যা ছোট হবে এবং সাধারণ মানুষ সহজে উচ্চারণ করতে পারে। যে দেশ নাম রাখবে তার সঙ্গে ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে। খেয়াল রাখতে হয় ওই শব্দ যেন কাউকে আঘাত না করে। কোনো রকম ব্যঙ্গ, বিদ্রূপ বা আতঙ্ক ছড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে এমন নামও রাখা যাবে না। কোনো ধর্মীয় সম্পর্ক বা ব্যক্তি নামও ব্যবহার করা হয় না।

বাংলাদেশর ইতিহাসে নানা কারণে আলোচিত ঝড় হয়েছিল ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর। বিবিসির বাংলা নিউজের তথ্যমতে, ওই ঝড়ে প্রাণহানির সংখ্যা ছিল তিন থেকে পাঁচ লাখ। ওই ঝড়টিকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করতে ভোলা সাইক্লোন বলা হলেও মূলত ওই ঝড়ের আলাদা কোনো নাম ছিল না।

আবহাওয়াবিদ কাউসারা পারভীন জানান, বাংলাদেশে সাধারণত ঘূর্ণিঝড় হয় মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে। জুন জুলাই আগস্ট সেপ্টেম্বর মাসে বৃষ্টি হয় বলে ঝড় আসে না। আবার অক্টোবর–নভেম্বর এই দুই মাস ঘূর্ণিঝড়ের সময়কাল।

তিনি জানান, এর আগে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ঝড়ের নাম দিত আমেরিকা। ২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর নাম দেওয়া শুরু করে। তবে ঝড়ের নামকরণের রেওয়াজ শুরু হয় ২০০৪ সালে। সেই বছর তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড়ের প্রথম নামকরণও করেছিল বাংলাদেশ। নাম ছিল ‘অনিল’।

আবহাওয়াবিদ শাহিনুল ইসলাম জানান, উপকূলের সরল–সোজা মানুষদের ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে সচেতন করতেই এই নামের প্রচলন করা হয়। তাদেরকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার ব্যাপারেও এটি সহায়ক ভূমিকা রাখে। তা ছাড়া ঝড়ের ক্ষয়–ক্ষতি বা পরিসংখ্যান বের করতেও ঝড়ের নাম থাকাটা জরুরি। এদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর নাম পাঠিয়ে থাকে নির্ধারিত সংস্থার কাছে। বেশ কয়েকটা নাম পাঠানো হয় তার মধ্যে অন্যান্য দেশ, ভাষা বা ধর্মীয় ব্যাপারে কোনো অসংগতি আছে কিনা তা দেখে নাম চূড়ান্ত হয়। নাম চূড়ান্ত করে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইউটিউবে ১০০০ ভিউতে আয় কত

বাকৃবির ৫৭ শিক্ষকসহ ১৫৪ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে পারে সরকার, ভয়ে কলকাতায় দিলীপ কুমারের আত্মহত্যা

স্ত্রী রাজি নন, সাবেক সেনাপ্রধান হারুনের মরদেহের ময়নাতদন্ত হবে না: পুলিশ

সাবেক সেনাপ্রধান হারুন ছিলেন চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউসে, দরজা ভেঙে বিছানায় মিলল তাঁর লাশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত