Ajker Patrika

‘বিধবাকে পেটালেন’ ইউপি সদস্য, ঠেকাতে এলে ছেলেকেও মারধর 

বাজিতপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৯: ০৩
Thumbnail image

কিশোরগঞ্জের নিকলীতে বিধবা মোছা. খেলু আক্তার ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে জারইতলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. চাঁন মিয়ার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত চাঁন মিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। 

অভিযোগকারী খেলু আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চাঁন মিয়া মেম্বার গত ৭ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টার দিকে আমাকে ঘর থেকে টেনেহিঁচড়ে জনসম্মুখে মাটিতে ফেলে গলা চেপে ধরে। মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে আসলে ছেলে আবুল কাশেম ঠেকাতে আসে। তখন তাকেও মারতে যায় চায় মিয়া। জীবন বাঁচাতে ছেলে রাস্তার পাশের দোকানঘরে আশ্রয় নেয়। মেম্বার সেখানে গিয়েও ছেলেকে কিলঘুষি মেরে আহত করে। আমার ছেলের বউ এগিয়ে এলে তাকেও মারধর ও শ্লীলতাহানি করে।’ 

এ বিষয়ে আবুল কাশেম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চাঁন মিয়া মেম্বার অত্যাচারী লোক। তার অত্যাচারে আমার বাবার মৃত্যু হয়েছে। এই বিষয়ে অভিযোগ দিয়েও তার প্রভাবের কারণে বিচার পাইনি। আমি মেম্বারের কাছে জায়গা-জমি পাই। ক্ষমতার বলে সে আমার জায়গা দখলে রেখেছে। এ ছাড়া আমার চাচাতো ভাইয়ের পক্ষ নিয়ে মেম্বার গত বছরের ১০ এপ্রিল আমার ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করে। তখন এ ঘটনায় আমি নিকলী থানায় মামলা করি। এই মামলায় গত পরশু আদালতের নির্দেশে পুলিশ মেম্বারকে ধরে নিয়ে যায়। হাজতে থেকে ফিরে এসেই ৭ ফেব্রুয়ারি প্রতিশোধ নিতে আমাকে, মাকে ও স্ত্রীকে মারধর ও লাঞ্ছিত করে মেম্বার।’

আবুল কাশেম আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি প্রতিকার চেয়ে ৭ ফেব্রুয়ারি নিকলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। হাসপাতাল থেকে ফিরে গতকাল বৃহস্পতিবার নিকলী থানাতেও লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। অতীতেও চাঁন মিয়া বহুবার আমাকে, মাকে ও স্ত্রীকে মারধর করেছে। তার বিরুদ্ধে বিচার চেয়ে এই পর্যন্ত কোনো দিন বিচার পাইনি। উল্টো আমাকেই আতঙ্কে থাকতে হয়েছে। এখনো জীবননাশের হুমকি দিয়ে চলেছে।’ 

ইউপি সদস্য চাঁন মিয়া ও তাঁর পরিবার সম্পর্কে খোঁজ নিতে গেলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয়রা জানান, চাঁন মিয়া ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা জঘন্য প্রকৃতির লোক। তাঁরা পারেন না এমন কোনো খারাপ কাজ নেই। এলাকার ছাত্র ও যুবকদের নারী দিয়ে দেহ ব্যবসা করেন তাঁরা। প্রভাবশালী হওয়ার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে এলাকার কেউ মুখ খোলার সাহস পান না। এ পর্যন্ত যারা সাহস দেখিয়েছেন, তাঁরাই বিপদে পড়েছেন। 

স্থানীয়রা আরও জানান, গ্রামের প্রতিবন্ধী মরু মিয়ার স্ত্রী হরিনা বেগমকেও চাঁন মিয়া কয়েক বছর আগে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দিয়েছিলেন। হরিনা আদালতে গিয়েও বিচার পাননি। এখন তিনি হতাশা ও ভয়ে থমকে গেছেন। এক কিশোরীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিলেন চাঁন মিয়া। তখন কিশোরীর বাবা থানায় অভিযোগ দিলে উল্টো তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছিলেন। 

ইউপি সদস্য চাঁন মিয়া নিজের ও পরিবারের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে বলেন, ‘কাশেমকে থাপ্পড় মেরেছি, তবে তার মা ও স্ত্রীকে মারধর করিনি। আমার নামে সে কয়েকটি মামলা দিয়েছে। তার বাবা হত্যার মিথ্যা মামলাটাও কয়েক দিন আগে শেষ করেছি। এ ছাড়া অন্য কেউ বর্তমানে আমার নামে মামলা দেয়নি। আপনারা খবর নিয়ে দেখেন, আমার নামে আর কোনো মামলা এখন নাই।’ 

আজকের পত্রিকার এ প্রতিবেদককে তিনি উল্টো প্রশ্নে বলেন, ‘মামলা দিলে কি আমি মেম্বার হতে পারতাম? আগে আমার বিরুদ্ধে বহু মামলা ছিল, আগে খারাপ ছিলাম। এরশাদ আমলে ১৯৮৪ সালে জেল খেটেছি। তখন অনেক কিছুই করেছি। এখন ভালো হয়ে গেছি। ছেলেরা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে হাজতে আছে, ওরা ভালো না বলেই আমি তাদের খবর রাখি না।’

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আজমল হোসেন আফরোজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘটনাটি আমি শুনেছি। ইউপি সদস্য চাঁন মিয়া মারধরের কথা আমার সঙ্গে অস্বীকার করেছেন। এ ধরনের কাজ করে থাকলে, এটা অন্যায়। এটা মেনে নেওয়া যায় না।’ 

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. শাকিলা পারভিন বলেন, ‘কাশেম নামের এক যুবক তাঁর মা ও স্ত্রীকে মারধরের বিষয়ে আমার এখানে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন, তিনি ইউপি সদস্য কি না—এটা আমার জানা ছিল না। তবে যে-ই হোক, ঘটনার প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

নিকলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনসুর আলী আরিফের বলেন, ‘পাঁচ দিন আগেও চাঁন মিয়াকে ধরে এনে কোর্টে চালান দিয়েছিলাম। এখন আবার তাঁর বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ পেয়েছি। এই বিষয়ে পুলিশ তদন্তে যাবে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত