Ajker Patrika

কপ২৬ সম্মেলনের আগেই কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের রূপরেখা চান শেখ হাসিনা

আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২১, ১২: ৪৮
কপ২৬ সম্মেলনের আগেই কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের রূপরেখা চান শেখ হাসিনা

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় উন্নত দেশগুলোর দায় উল্লেখ করে সর্বাধিক ভুক্তভোগী দেশগুলোর জন্য আরো বেশি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলতি বছরের শেষ নাগাদ গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত হবে ২৬তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন। এ সম্মেলনের আগেই উন্নত দেশগুলোর পক্ষ থেকে বড় পরিকল্পনাও আশা করেন তিনি।

৪৮টি উন্নয়নশীল দেশের জোট ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব বিষয় নিয়ে ডিপ্লোম্যাট সাময়িকীর এপ্রিল সংখ্যায় একটি নিবন্ধ লিখেছেন। নিবন্ধে আসন্ন জলবায়ু সম্মেলনকে অর্থবহ করতে সিভিএফ-কপ২৬ ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

নিবন্ধে শেখ হাসিনা লিখেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার এই যুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ না হলে আমাদের পরাজয় নিশ্চিত। যে প্রকৃতি আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে, খুব সচেতনভাবে আমরা তাকে ধ্বংস করে চলেছি। গ্রেটা থুনবার্গ অথবা বাংলাদেশের কোস্টাল ইয়ুথ অ্যাকশন হাবের তরুণ পরিবেশকর্মীদের আমরা কোন পৃথিবী রেখে যাব? কপ২৬ এ তাদের ভবিষ্যত আমরা জলাঞ্জলি দিতে পারি না।

২০১৯ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত অভিযোজন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা লিখেছেন, আমরা তাদের (উন্নত দেশ) হুঁশিয়ার করে বলেছিলাম, প্রকৃতির রোষ থেকে সুরক্ষার চূড়ান্ত নিশ্চয়তা কোনো দেশ বা কারো নেই।

নিবন্ধে প্রধানমন্ত্রী লেখেন, সেই সম্মেলনে হিলডা হাইন (মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের প্রেসিডেন্ট) যখন বাংলাদেশকে সিভিএফের পরবর্তী সভাপতি হওয়ার প্রস্তাব করলেন, তখন তার মনে হয়েছিল, জলবায়ু সঙ্কটে বিশ্ব যেখানে পৌঁছেছে, আর অভিযোজনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে সাফল্য দেখিয়েছে, তাতে সিভিএফের নেতৃত্ব দেওয়া বাংলাদেশের দায়িত্ব।

জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুন সেই সম্মেলেন উপস্থিত ছিলেন। তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন সম্মেলনের কো-চেয়ার। 

সেই সম্মেলনে শেখ হাসিনা, সেসব উন্নত দেশকে সতর্ক করেন যারা সর্বাধিক দূষণ ঘটাচ্ছে। তাদের উদ্দেশে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতির যে মাত্রা, তার তুলনায় বিশ্বের নেওয়া অভিযোজন পদক্ষেপ নিতান্তই অপ্রতুল। 

শেখ হাসিনা লিখেছেন, বাংলাদেশকে বলা হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ‘গ্রাউন্ড জিরো’। এ দেশের বহু মানুষের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন মানে অস্তিত্বের সঙ্কট। ৬০ লাখ বাংলাদেশি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুহারা হয়েছে। এরপরও আমরা ১ কোটি ১০ লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করে চলেছি। এর জন্য আমাদের পরিবেশগত মূল্যও চুকাতে হচ্ছে। এর ক্ষতিপূরণ আমাদের কে দেবে? 

ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সদস্যদেরই জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা যে সবচেয়ে কম সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘জলবায়ু অবিচার’ বন্ধে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। 

প্যারিস সম্মেলনে জলবায়ু অর্থায়নের জন্য প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন ডলার থেকে খুব কমই পাওয়া গেছে, এ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বিশ্বে মোট কার্বন নিঃসরণের ৮০ শতাংশের জন্য দায়ী জি২০–ভুক্ত দেশগুলো জলবায়ু অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি পূরণে রাজনৈতিক সদিচ্ছা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। 

প্রধানমন্ত্রী লেখেন, ঢাকায় গ্লোবাল সেন্টার ফর অ্যাডপটেশনের আঞ্চলিক কার্যালয় আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব জোরদারে ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময়কে ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি দশক’ ঘোষণা করে সিভিএফের সদস্য দেশগুলোকে ‘জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ নিতে বলেছে, সেটিও লেখায় উল্লেখ করেন তিনি। 

তবে শুধু সিভিএফের একক চেষ্টায় যথেষ্ট অভিযোজন যে সম্ভব হবে না সে কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা লেখেন, সেজন্য সিভিএফ-কপ২৬ শক্তিশালী ঐক্য গড়ে তোলা গুরুত্বপূর্ণ। আগামী নভেম্বরে জলবায়ু সম্মেলনে আমরা ঢাকা-গ্লাসগো-সিভিএফ-কপ২৬ ঐক্যের ঘোষণা চাই। 

সেই সম্মেলনের আগেই উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের রূপরেখা দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি জলবায়ু তহবিলের প্রতিশ্রুত অর্থ ছাড় করারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত